দেশ বিভক্ত বলেই দুই পক্ষকে কবরস্থানে যেতে হচ্ছে -প্রকাশক হত্যায় বিশিষ্টজনের প্রতিক্রিয়া by মেহেদী হাসান
প্রতিবাদের
নতুন ভাষা- ‘আমি বিচার চাই না’। শনিবারের হামলায় নিহত প্রকাশক ফয়সাল
আরেফিন দীপনের পিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক প্রফেসর আবুল
কাসেম ফজলুল হকের এ উক্তিই এখন প্রতিবাদের নতুন স্লোগান হয়ে ফিরছে মানুষের
মুখে মুখে। পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গেলে একজন পিতা বলতে পারেন তিনি তার
সন্তান হত্যার বিচার চান না তা দায়িত্বশীল সবার প্রতি অনুধাবনের অনুরোধ
জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনেরা। অতি রাজনীতি ও
প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার নীতি পরিহার করে জাতীয়ভাবে সমস্যা মোকাবেলার উদ্যোগ
নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তা না হলে
জাতিকে বড় আকারে এর খেসারত দিতে হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সাবেক প্রফেসর, সমাজ ও রাজনীতি বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, আমরা দেখেছি বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের ঘটনার পর অতি রাজনীতি করা হয়েছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে আসল ব্যাপার চাপা পড়ে গেছে। অতীতে এ ধরনের কোনো ঘটনার সুরাহা হয়নি। পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকলে আজ এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। প্রফেসর মাহবুব উল্লাহ বলেন, দেশ নিয়ে ছেলেখেলা করা যায় না। দেশকে এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে জাতীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। কিন্তু তার কোনো কিছু লক্ষ করা যাচ্ছে না। বরং মানুষে মানুষে দূরত্ব সৃষ্টির চেষ্টা চলছে শুধু। এটা আমাদের কারোর জন্যই শুভ নয়।
প্রকাশক দীপন হত্যার পর দার্শনিক ও কবি ফরহাদ মজহার লিখিত আকারে ফেসবুকে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, জাগৃতি প্রকাশনার দীপনসহ শুদ্ধস্বরের আহমেদুর রশীদ টুটুল ও অন্য দুই লেখক সুদীপ কুমার ও তারেক রহিমের খবর পেয়ে পাথর হয়ে আছি। দীপনের বাবা আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেছেন, ‘আমি কোনো বিচার চাই না। আমি চাই শুভবুদ্ধির উদয় হোক। যারা ধর্মনিরপেতাবাদ নিয়ে রাজনীতি করছেন, যারা রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন উভয় প দেশের সর্বনাশ করছেন। উভয় পরে শুভবুদ্ধির উদয় হোক। এটুকুই আমার কামনা। জেল-ফাঁসি দিয়ে কী হবে।’
অবিশ্বাস্য শোক মাথায় নিয়ে আবুল কাশেম ফজলুল হক এই কথাটা স্পষ্টভাবে বলতে পেরেছেন।
আমরা দেশকে বিভক্ত করে দিয়েছি। আমরা দুই পই আমাদের সন্তানদের হারাতে থাকব। আমরা কাঁদতে ভুলে যাব। নিজ সন্তানের লাশ কাঁধে নিয়ে গোরস্থানের দিকে যাব আর সন্তানের রক্তে আমাদের শরীর ভিজে যাবে।
কে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সেকুলার মুক্ত বুদ্ধিওয়ালা আর কে ধর্মান্ধ বা ইসলামি জঙ্গি গোরস্থান তার বিচার করে না। শুধু কবরের ওপর ঘাস গজায়, আর একদা ঐতিহাসিকেরা গবেষণা করতে বসেন কিভাবে একটি জাতি তাদের বেকুবির জন্য ধ্বংস হয়ে গেলো।
যেহেতু আমরা মৃত্যু নিয়ে ভাবতে অভ্যস্ত নই, তাই জীবনের কোনো মূল্য আমরা দিতে জানি না। আমি দেখছি, বিভক্ত ও দ্বিখণ্ডিত বাংলাদেশে দুই দিক থেকে দুটো মিছিল গোরস্থানের দিকে যাচ্ছে। দীপন, আমি প্রাণপণ এই বিভক্তি ঠেকাতে চেষ্টা করেছি। এই ভয়াবহ বিভাজনের পরিণতি সম্পর্কে আমি জানপরান সবাইকে হুঁশিয়ার করার চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করে যাব। কিন্তু তাতে কি যারা চলে গেছে তারা ফিরে আসবে?
ফরহাদ মজহার লিখেছেন, এই লাশের ভার অনেক ভারী, বাংলাদেশ বহন করতে পারবে কি? সেই দূরদর্শিতা ও বিচণতার চর্চা আমরা করি না, যা আমাদের গোরস্থানের দিকে নয়, সপ্রতিভ জীবনের দিকে নিয়ে যায়। কে জাগে?
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) সাখাওয়াত হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রফেসর আবুল কাসেম ফজলুল হক একজন উঁচু স্তরের গুণী মানুষ। তার মতো লোক যখন বলেন, বিচার চাই না তখন আমরা বুঝতে পারি কতটা ক্ষোভ, দুঃখ-যন্ত্রণা নিয়ে তিনি এ ধরনের কথা বলেন। কোনো ধরনের ব্যবস্থার প্রতি যখন আর কারোর কোনো বিশ্বাস থাকে না, আস্থা থাকে না তখনই মানুষ এ ধরনের কথা বলেন। তার এ কথার মধ্য দিয়ে সব কিছু স্পষ্ট। সব কথাই তিনি বলে দিয়েছেন। এটাই সবার কথা এখন।
তিনি বলেন, একের পর এক হত্যার পর আমরা শুধু রাজনৈতিক কথাবার্তা শুনে আসছি। দোষারোপের রাজনীতি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এ ছাড়া আর কিছু হয় না। কথায় কথায় জঙ্গিবাদ মৌলবাদ বলা হচ্ছে। এর পরিণতি ভালো হতে পারে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর আসিফ নজরুল প্রকাশক ও ব্লগার হত্যা বিষয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, সার্বিক অবস্থার কতটা ধস নেমেছে তার প্রমাণ এটা। সন্তান হত্যার পর পিতা বলছেনÑ তিনি বিচার চান না। এর আগে আরেকজন বলেছেন, তিনি তার স্বামী হত্যার বিচার চান না। একজন প্রকাশক, যিনি নিজে লিখছেন না, অন্যের লেখা প্রকাশের কারণে তাকেও হত্যা করা হচ্ছে। দেশে এক ধরনের ত্রাসের রাজত্ব চলছে। মানুষের মন থেকে বিশ্বাস ও আস্থা ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতা আমাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। এ অবস্থায় একটি জাতি চলতে পারে না। পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গেলে একজন মানুষ বলতে পারেন তিনি বিচার চান না তা অনুধাবন করা উচিত দায়িত্বশীল সবার।
প্রফেসর আসিফ নজরুল বলেন, সরকারের ধারাবাহিক ব্যর্থতার ফলে একের পর এক এ ধররের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে রাজনীতি থাকতে পারে, সরকার হয়তো রাজনৈতিক ফায়দাও নিতে পারে কিন্তু সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. শাহ এহসান হাবীব বলেন, একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটে চলেছে কিন্তু এর কোনো বিচার হচ্ছে না। প্রকৃত খুনিরা ধরা পড়ছে না। অনেক ঘটনায় অনেককে ধরে আমাদের সামনে হাজির করা হচ্ছে কিন্তু তারা আসল অপরাধী কিনা তা জানা যাচ্ছে না। কিছুদিন পর আর কোনো খোঁজখবর থাকে না। ফলে সাধারণ মানুষের মনে নানা ধরনের সন্দেহ দানা বাঁধছে। মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফল অত্যন্ত খারাপ হতে বাধ্য। প্রফেসর আবুল কাসেম বিচার চাই না মর্মে যে উক্তি করেছেন তারপরও যদি কর্তৃপক্ষের টনক না নড়ে তাহলে সামনে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একজন লিখেছেন, কে কার কাছে কিসের প্রতিবাদ করবে? কে কার কাছে কিসের বিচার চাইবে? কে চিহ্নিত করবে আততায়ীকে? রক্তের এই স্রোত, মৃত্যুর এই ধারা দেশকে কোথায় নিয়ে যাবে? কতটা অন্ধকার নামলে আমরা বুঝব যে আলো নেই? কে জেগে আছে এই রাত্রির গুহায়? জীবনের এই অপচয়, এই অপঘাত, এই মৃত্যু, এই রক্তের স্রোত কি আমাদের প্রশ্ন করতে শেখাবেÑ আমি কী ভূমিকা পালন করেছিলাম?
একের পর এক হত্যা, ধর্ষণসহ নানা কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে প্রচণ্ড নিরাপত্তাহীনতা। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু শনিবারের হামলায় আহতদের হাসপাতালে দেখতে গিয়ে বলেছেন, গোপন-অতর্কিত হামলা থেকে কেউই নিরাপদ নয়, আমিও নই। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, পরিকল্পিত কিলিং মিশন প্রতিরোধ ঠেকানো সহজ নয়। অনেকে প্রশ্ন করেছেনÑ এ যদি হয় অবস্থা তাহলে সাধারণ মানুষের আর থাকল কী?
২০১৩ সালে নিহত হন ব্লগার রাজীব হায়দার। এরপর চলতি বছরই হত্যা করা হয় চারজন ব্লগারকে। সর্বশেষ গতকাল হত্যা করা হলো নিহত ব্লগার অভিজিৎ রায়ের লেখার প্রকাশক ফয়সাল আরফিন দীপনকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সাবেক প্রফেসর, সমাজ ও রাজনীতি বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, আমরা দেখেছি বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের ঘটনার পর অতি রাজনীতি করা হয়েছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে আসল ব্যাপার চাপা পড়ে গেছে। অতীতে এ ধরনের কোনো ঘটনার সুরাহা হয়নি। পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকলে আজ এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। প্রফেসর মাহবুব উল্লাহ বলেন, দেশ নিয়ে ছেলেখেলা করা যায় না। দেশকে এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে জাতীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। কিন্তু তার কোনো কিছু লক্ষ করা যাচ্ছে না। বরং মানুষে মানুষে দূরত্ব সৃষ্টির চেষ্টা চলছে শুধু। এটা আমাদের কারোর জন্যই শুভ নয়।
প্রকাশক দীপন হত্যার পর দার্শনিক ও কবি ফরহাদ মজহার লিখিত আকারে ফেসবুকে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, জাগৃতি প্রকাশনার দীপনসহ শুদ্ধস্বরের আহমেদুর রশীদ টুটুল ও অন্য দুই লেখক সুদীপ কুমার ও তারেক রহিমের খবর পেয়ে পাথর হয়ে আছি। দীপনের বাবা আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেছেন, ‘আমি কোনো বিচার চাই না। আমি চাই শুভবুদ্ধির উদয় হোক। যারা ধর্মনিরপেতাবাদ নিয়ে রাজনীতি করছেন, যারা রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন উভয় প দেশের সর্বনাশ করছেন। উভয় পরে শুভবুদ্ধির উদয় হোক। এটুকুই আমার কামনা। জেল-ফাঁসি দিয়ে কী হবে।’
অবিশ্বাস্য শোক মাথায় নিয়ে আবুল কাশেম ফজলুল হক এই কথাটা স্পষ্টভাবে বলতে পেরেছেন।
আমরা দেশকে বিভক্ত করে দিয়েছি। আমরা দুই পই আমাদের সন্তানদের হারাতে থাকব। আমরা কাঁদতে ভুলে যাব। নিজ সন্তানের লাশ কাঁধে নিয়ে গোরস্থানের দিকে যাব আর সন্তানের রক্তে আমাদের শরীর ভিজে যাবে।
কে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সেকুলার মুক্ত বুদ্ধিওয়ালা আর কে ধর্মান্ধ বা ইসলামি জঙ্গি গোরস্থান তার বিচার করে না। শুধু কবরের ওপর ঘাস গজায়, আর একদা ঐতিহাসিকেরা গবেষণা করতে বসেন কিভাবে একটি জাতি তাদের বেকুবির জন্য ধ্বংস হয়ে গেলো।
যেহেতু আমরা মৃত্যু নিয়ে ভাবতে অভ্যস্ত নই, তাই জীবনের কোনো মূল্য আমরা দিতে জানি না। আমি দেখছি, বিভক্ত ও দ্বিখণ্ডিত বাংলাদেশে দুই দিক থেকে দুটো মিছিল গোরস্থানের দিকে যাচ্ছে। দীপন, আমি প্রাণপণ এই বিভক্তি ঠেকাতে চেষ্টা করেছি। এই ভয়াবহ বিভাজনের পরিণতি সম্পর্কে আমি জানপরান সবাইকে হুঁশিয়ার করার চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করে যাব। কিন্তু তাতে কি যারা চলে গেছে তারা ফিরে আসবে?
ফরহাদ মজহার লিখেছেন, এই লাশের ভার অনেক ভারী, বাংলাদেশ বহন করতে পারবে কি? সেই দূরদর্শিতা ও বিচণতার চর্চা আমরা করি না, যা আমাদের গোরস্থানের দিকে নয়, সপ্রতিভ জীবনের দিকে নিয়ে যায়। কে জাগে?
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) সাখাওয়াত হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রফেসর আবুল কাসেম ফজলুল হক একজন উঁচু স্তরের গুণী মানুষ। তার মতো লোক যখন বলেন, বিচার চাই না তখন আমরা বুঝতে পারি কতটা ক্ষোভ, দুঃখ-যন্ত্রণা নিয়ে তিনি এ ধরনের কথা বলেন। কোনো ধরনের ব্যবস্থার প্রতি যখন আর কারোর কোনো বিশ্বাস থাকে না, আস্থা থাকে না তখনই মানুষ এ ধরনের কথা বলেন। তার এ কথার মধ্য দিয়ে সব কিছু স্পষ্ট। সব কথাই তিনি বলে দিয়েছেন। এটাই সবার কথা এখন।
তিনি বলেন, একের পর এক হত্যার পর আমরা শুধু রাজনৈতিক কথাবার্তা শুনে আসছি। দোষারোপের রাজনীতি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এ ছাড়া আর কিছু হয় না। কথায় কথায় জঙ্গিবাদ মৌলবাদ বলা হচ্ছে। এর পরিণতি ভালো হতে পারে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর আসিফ নজরুল প্রকাশক ও ব্লগার হত্যা বিষয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, সার্বিক অবস্থার কতটা ধস নেমেছে তার প্রমাণ এটা। সন্তান হত্যার পর পিতা বলছেনÑ তিনি বিচার চান না। এর আগে আরেকজন বলেছেন, তিনি তার স্বামী হত্যার বিচার চান না। একজন প্রকাশক, যিনি নিজে লিখছেন না, অন্যের লেখা প্রকাশের কারণে তাকেও হত্যা করা হচ্ছে। দেশে এক ধরনের ত্রাসের রাজত্ব চলছে। মানুষের মন থেকে বিশ্বাস ও আস্থা ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতা আমাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। এ অবস্থায় একটি জাতি চলতে পারে না। পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গেলে একজন মানুষ বলতে পারেন তিনি বিচার চান না তা অনুধাবন করা উচিত দায়িত্বশীল সবার।
প্রফেসর আসিফ নজরুল বলেন, সরকারের ধারাবাহিক ব্যর্থতার ফলে একের পর এক এ ধররের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে রাজনীতি থাকতে পারে, সরকার হয়তো রাজনৈতিক ফায়দাও নিতে পারে কিন্তু সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. শাহ এহসান হাবীব বলেন, একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটে চলেছে কিন্তু এর কোনো বিচার হচ্ছে না। প্রকৃত খুনিরা ধরা পড়ছে না। অনেক ঘটনায় অনেককে ধরে আমাদের সামনে হাজির করা হচ্ছে কিন্তু তারা আসল অপরাধী কিনা তা জানা যাচ্ছে না। কিছুদিন পর আর কোনো খোঁজখবর থাকে না। ফলে সাধারণ মানুষের মনে নানা ধরনের সন্দেহ দানা বাঁধছে। মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফল অত্যন্ত খারাপ হতে বাধ্য। প্রফেসর আবুল কাসেম বিচার চাই না মর্মে যে উক্তি করেছেন তারপরও যদি কর্তৃপক্ষের টনক না নড়ে তাহলে সামনে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একজন লিখেছেন, কে কার কাছে কিসের প্রতিবাদ করবে? কে কার কাছে কিসের বিচার চাইবে? কে চিহ্নিত করবে আততায়ীকে? রক্তের এই স্রোত, মৃত্যুর এই ধারা দেশকে কোথায় নিয়ে যাবে? কতটা অন্ধকার নামলে আমরা বুঝব যে আলো নেই? কে জেগে আছে এই রাত্রির গুহায়? জীবনের এই অপচয়, এই অপঘাত, এই মৃত্যু, এই রক্তের স্রোত কি আমাদের প্রশ্ন করতে শেখাবেÑ আমি কী ভূমিকা পালন করেছিলাম?
একের পর এক হত্যা, ধর্ষণসহ নানা কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে প্রচণ্ড নিরাপত্তাহীনতা। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু শনিবারের হামলায় আহতদের হাসপাতালে দেখতে গিয়ে বলেছেন, গোপন-অতর্কিত হামলা থেকে কেউই নিরাপদ নয়, আমিও নই। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, পরিকল্পিত কিলিং মিশন প্রতিরোধ ঠেকানো সহজ নয়। অনেকে প্রশ্ন করেছেনÑ এ যদি হয় অবস্থা তাহলে সাধারণ মানুষের আর থাকল কী?
২০১৩ সালে নিহত হন ব্লগার রাজীব হায়দার। এরপর চলতি বছরই হত্যা করা হয় চারজন ব্লগারকে। সর্বশেষ গতকাল হত্যা করা হলো নিহত ব্লগার অভিজিৎ রায়ের লেখার প্রকাশক ফয়সাল আরফিন দীপনকে।
No comments