‘দলীয়’ স্থানীয় সরকার নির্বাচনটি কেমন হবে? by সোহরাব হাসান
সরকার
স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর নির্বাচন দলীয়ভাবে করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর
থেকে এর পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক চলছে। যারা এর পক্ষে, তাদের যুক্তি হলো
নির্বাচনটি অরাজনৈতিক বলা হলেও রাজনৈতিকভাবেই হতো। রাজনৈতিক দলই প্রার্থীর
সমর্থন দিত। দলের নেতারা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারও চালাতেন। তাহলে আর ঘোমটা
দিয়ে লাভ কী?
আবার যারা এর বিপক্ষে, তাদের যুক্তি হলো দলীয় কারণে জাতীয় নির্বাচনে হানাহানির ঘটনা ঘটে। এখন তৃণমূলেও সেটি ছড়িয়ে পড়বে। এ ছাড়া এলাকায় অনেক যোগ্য ও সৎ ব্যক্তি আছেন, যাঁরা দলের বৃত্তে আসতে চান না। এখন তাঁদের পক্ষে নির্বাচন করে জিতে আসা কঠিন হবে।
এত দিন স্থানীয় সরকারের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ ছিল। অনেক ক্ষেত্রেই তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি, পারছে না। প্রতিটি ব্যাপারে সরকারের আদেশ-নির্দেশ মেনে চলতে হয়। দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে ভবিষ্যতে দলের কথাও শুনতে হবে? দলের সঙ্গে স্থানীয় সরকারের সম্পর্ক কী হবে? দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে কে মনোনয়ন দেবে—দলের স্থানীয় শাখা, না কেন্দ্রীয় কমিটি? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন সংশোধন করে অনেক সংস্কার করা হয়েছিল, যার মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি স্থানীয় কমিটির মাধ্যমে করার কথা ছিল। কিন্তু সেটি রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে গ্রহণীয় মনে হয়নি। তাঁরা সেটি সংশোধন করেছেন। এভাবে আমরা সবকিছু কেন্দ্রায়িত করে ফেলেছি। আমরা একের পর এক বিভাগ করেছি। উপজেলার সংখ্যা বেড়েছে। নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলে আমরা একজন ভাইস চেয়ারম্যানের স্থলে দুজন ভাইস চেয়ারম্যান করেছি। কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন হয়নি। তাদের কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
ক্ষমতাহীন স্থানীয় সরকার দলীয়ভাবে হোক আর নির্দলীয়ভাবে হোক মানুষ কেন আগ্রহী হবে? তারা দেখতে চাইবে স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোকে ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে কি না? স্থানীয় সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে কি না? সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে তিন স্তরবিশিষ্ট স্থানীয় সরকার চালু আছে। গ্রামাঞ্চলে ইউনিয়ন পরিষদ, শহরাঞ্চলে পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ। এর মধ্যে জেলা পরিষদে কখনোই নির্বাচন হয়নি। অনির্বাচিত প্রশাসক দিয়ে জেলা পরিষদ চালানো হচ্ছে।
আশির দশকে সামরিক শাসক এরশাদ নিজের ক্ষমতার ভিত তৈরি করতে উপজেলা পরিষদ গঠন করে দুই দফা নির্বাচন করেন বিরোধী দলের বাধা উপেক্ষা করে। এরপর বিএনপির আমলে সেই উপজেলা ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে উপজেলাব্যবস্থা পুনর্বহাল হলেও নির্বাচন হয় বহু বছর পরে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে। সেই নির্বাচন নিয়েও নানা বিতর্ক আছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভাগুলোর নির্বাচন মোটামুটি নিয়মিতই হয়ে আসছে।
সব রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণায় স্থানীয় সরকার সংস্থাকে ক্ষমতায়িত করার কথা আছে। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে সেটি ভুলে যান। বর্তমানে উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা করা হয়েছে স্থানীয় সাংসদকে। স্থানীয় প্রশাসন যেহেতু সাংসদকে উপজেলা চেয়ারম্যানের চেয়ে ক্ষমতাবান ভাবে, সেহেতু তারা তাঁকেই অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলো মোটামুটি কাজ করতে পারলেও রাজনৈতিক চাপ ও হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত নয়।
এখন যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে, তা হলো এই নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা কী হবে? তারা কীভাবে মনোনয়ন দেবে? একজন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ আলোচনা প্রসঙ্গে বললেন, এতে মনোনয়ন বাণিজ্য আরও বাড়তে পারে। দলের নেতৃত্ব সেই বাণিজ্য ঠেকাতে কী ব্যবস্থা নেবে? দলবদলের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। নির্বাচনে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো কি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে, না হুকুম বরদার হবে? এ ব্যাপারে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নির্বাচন কমিশনের। নতুন পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচনটি করতে তারা প্রস্তুত আছে কি না?
এই নির্বাচনে সরকার ও বিরোধী দলের ভূমিকাই বা কী হবে? ক্ষমতাসীন দল কি নির্বাচনটি সুষ্ঠুভাবে করতে দেবে? বিরোধী দল কি নির্বাচনে অংশ নেবে? জাতীয় নির্বাচন জোটগতভাবে হয়েছে। এটিও কি তা-ই হবে? সরকারি দলের চ্যালেঞ্জ হবে নির্বাচনটি ঠিকভাবে করতে দেওয়া। বিরোধী দলের, বিশেষ করে বিএনপির চ্যালেঞ্জ হলো নির্বাচনে গিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না যাওয়া যে ভুল ছিল, তা বিএনপির নেতারা এখন প্রকাশ্যেই স্বীকার করছেন। বিএনপি প্রকাশ্যে সভাসমাবেশ করতে পারছে না। এই নির্বাচন সামনে রেখে তারা সেই সুযোগটি নিতে পারে। প্রশ্ন হলো সরকারি দল সেই সুযোগ দেবে কি না? তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।
সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। সেটি তারা সেবারে করতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। এবারে পারবে কি? সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের পৌর নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মাস্তানির প্রতিবাদে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করে দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। এ রকম দৃষ্টান্ত দেখানোর কেউ কি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে আছেন? না হুকুম বরদার হিসেবেই তাঁরা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করে যাবেন?
দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার সংস্থার এই নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও অবাধ হলে জাতীয় রাজনীতির কালো মেঘ অনেকটা কেটে যেতে পারে। আর যদি সেটি না যায়, তাহলে বুঝতে হবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কপালে অনেক দুঃখ আছে।
আবার যারা এর বিপক্ষে, তাদের যুক্তি হলো দলীয় কারণে জাতীয় নির্বাচনে হানাহানির ঘটনা ঘটে। এখন তৃণমূলেও সেটি ছড়িয়ে পড়বে। এ ছাড়া এলাকায় অনেক যোগ্য ও সৎ ব্যক্তি আছেন, যাঁরা দলের বৃত্তে আসতে চান না। এখন তাঁদের পক্ষে নির্বাচন করে জিতে আসা কঠিন হবে।
এত দিন স্থানীয় সরকারের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ ছিল। অনেক ক্ষেত্রেই তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি, পারছে না। প্রতিটি ব্যাপারে সরকারের আদেশ-নির্দেশ মেনে চলতে হয়। দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে ভবিষ্যতে দলের কথাও শুনতে হবে? দলের সঙ্গে স্থানীয় সরকারের সম্পর্ক কী হবে? দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে কে মনোনয়ন দেবে—দলের স্থানীয় শাখা, না কেন্দ্রীয় কমিটি? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন সংশোধন করে অনেক সংস্কার করা হয়েছিল, যার মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি স্থানীয় কমিটির মাধ্যমে করার কথা ছিল। কিন্তু সেটি রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে গ্রহণীয় মনে হয়নি। তাঁরা সেটি সংশোধন করেছেন। এভাবে আমরা সবকিছু কেন্দ্রায়িত করে ফেলেছি। আমরা একের পর এক বিভাগ করেছি। উপজেলার সংখ্যা বেড়েছে। নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলে আমরা একজন ভাইস চেয়ারম্যানের স্থলে দুজন ভাইস চেয়ারম্যান করেছি। কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন হয়নি। তাদের কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
ক্ষমতাহীন স্থানীয় সরকার দলীয়ভাবে হোক আর নির্দলীয়ভাবে হোক মানুষ কেন আগ্রহী হবে? তারা দেখতে চাইবে স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোকে ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে কি না? স্থানীয় সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে কি না? সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে তিন স্তরবিশিষ্ট স্থানীয় সরকার চালু আছে। গ্রামাঞ্চলে ইউনিয়ন পরিষদ, শহরাঞ্চলে পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ। এর মধ্যে জেলা পরিষদে কখনোই নির্বাচন হয়নি। অনির্বাচিত প্রশাসক দিয়ে জেলা পরিষদ চালানো হচ্ছে।
আশির দশকে সামরিক শাসক এরশাদ নিজের ক্ষমতার ভিত তৈরি করতে উপজেলা পরিষদ গঠন করে দুই দফা নির্বাচন করেন বিরোধী দলের বাধা উপেক্ষা করে। এরপর বিএনপির আমলে সেই উপজেলা ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে উপজেলাব্যবস্থা পুনর্বহাল হলেও নির্বাচন হয় বহু বছর পরে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে। সেই নির্বাচন নিয়েও নানা বিতর্ক আছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভাগুলোর নির্বাচন মোটামুটি নিয়মিতই হয়ে আসছে।
সব রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণায় স্থানীয় সরকার সংস্থাকে ক্ষমতায়িত করার কথা আছে। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে সেটি ভুলে যান। বর্তমানে উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা করা হয়েছে স্থানীয় সাংসদকে। স্থানীয় প্রশাসন যেহেতু সাংসদকে উপজেলা চেয়ারম্যানের চেয়ে ক্ষমতাবান ভাবে, সেহেতু তারা তাঁকেই অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলো মোটামুটি কাজ করতে পারলেও রাজনৈতিক চাপ ও হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত নয়।
এখন যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে, তা হলো এই নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা কী হবে? তারা কীভাবে মনোনয়ন দেবে? একজন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ আলোচনা প্রসঙ্গে বললেন, এতে মনোনয়ন বাণিজ্য আরও বাড়তে পারে। দলের নেতৃত্ব সেই বাণিজ্য ঠেকাতে কী ব্যবস্থা নেবে? দলবদলের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। নির্বাচনে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো কি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে, না হুকুম বরদার হবে? এ ব্যাপারে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নির্বাচন কমিশনের। নতুন পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচনটি করতে তারা প্রস্তুত আছে কি না?
এই নির্বাচনে সরকার ও বিরোধী দলের ভূমিকাই বা কী হবে? ক্ষমতাসীন দল কি নির্বাচনটি সুষ্ঠুভাবে করতে দেবে? বিরোধী দল কি নির্বাচনে অংশ নেবে? জাতীয় নির্বাচন জোটগতভাবে হয়েছে। এটিও কি তা-ই হবে? সরকারি দলের চ্যালেঞ্জ হবে নির্বাচনটি ঠিকভাবে করতে দেওয়া। বিরোধী দলের, বিশেষ করে বিএনপির চ্যালেঞ্জ হলো নির্বাচনে গিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না যাওয়া যে ভুল ছিল, তা বিএনপির নেতারা এখন প্রকাশ্যেই স্বীকার করছেন। বিএনপি প্রকাশ্যে সভাসমাবেশ করতে পারছে না। এই নির্বাচন সামনে রেখে তারা সেই সুযোগটি নিতে পারে। প্রশ্ন হলো সরকারি দল সেই সুযোগ দেবে কি না? তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।
সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। সেটি তারা সেবারে করতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। এবারে পারবে কি? সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের পৌর নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মাস্তানির প্রতিবাদে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করে দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। এ রকম দৃষ্টান্ত দেখানোর কেউ কি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে আছেন? না হুকুম বরদার হিসেবেই তাঁরা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করে যাবেন?
দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার সংস্থার এই নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও অবাধ হলে জাতীয় রাজনীতির কালো মেঘ অনেকটা কেটে যেতে পারে। আর যদি সেটি না যায়, তাহলে বুঝতে হবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কপালে অনেক দুঃখ আছে।
No comments