মা ইলিশ রক্ষায় সময়সীমার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন- বাজারে ডিমওয়ালা ইলিশই বেশি
মা
ইলিশ রক্ষায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন
নদ-নদী ও সাগরে জাল ফেলা নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। কিন্তু এখন জেলেদের জালে
বেশির ভাগই ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ছে। এ অবস্থায় মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের
সময়সীমার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
গত শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুর সদরের পুরানবাজার, সাখুয়া ও হরিণা এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, শত শত জেলে গুটি জাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে ইলিশ শিকারের পর নদীর পাড়ে ফিরছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন বছর ধরে একই সময়ে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারি অভিযান চলছে। এবার অভিযান শেষে শনিবার ভোর থেকে তাঁরা নদীতে নামেন। কিন্তু নদীতে ইলিশ তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে তার সবই ডিমওয়ালা। সাখুয়ার জেলে আবদুল হালিম বলেন, এ বছর মা ইলিশ রক্ষার সময় নির্ধারণ ঠিক হয়নি। আরও কদিন পর অভিযান বা নিষেধাজ্ঞা দিলে সব ইলিশই ডিম ছাড়ার সুযোগ পেত।
মঙ্গলবার পর্যন্ত মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদর বাজার, মুন্সীরহাট, নারায়ণপুর, বরদিয়া আড়ং, মাছুয়াখাল বাজার এবং মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর, আমিরাবাদ, এখলাশপুর, মোহনপুর বাজারসহ আরও কয়েকটি হাটবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বড় ও মাঝারি আকারের ডিমওয়ালা ইলিশের ছড়াছড়ি। বিক্রেতারা বরফে ঢেকে রাখছেন এসব ইলিশ। মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের কলাদী এলাকার বাসিন্দা মো. হান্নান বলেন, ‘ডিমওয়ালা ইলিশ কিনতে বিবেকে বাধে। তবু তিন কেজি কিনলাম। এত ডিমওয়ালা মাছ বাজারে আসবে তা ভাবিনি। আসলে কি এবার ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষা হয়েছে?’
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে চার দিন ধরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে বলে জানান জেলেরা। কিন্তু এসব ইলিশের অধিকাংশেরই পেটভর্তি ডিম। এখানকার মাছ ব্যবসায়ী বাদল বিশ্বাস বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় অনেকে ইলিশ ধরে লুকিয়ে রেখেছিলেন। সেগুলো এখন আনছেন। পাশাপাশি এখন যে ইলিশ ধরা পড়ছে সেগুলোরও অধিকাংশ ডিমওয়ালা। ছোট ইলিশেও ডিম পাওয়া যাচ্ছে।’
রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রতন দত্ত বলেন, ‘কী কারণে এমনটা হচ্ছে তা নিয়ে বর্তমানে ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে আলোচনা চলছে। তবে আমার মতে, অঞ্চলভেদে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা আরও বাড়ানো দরকার।’
মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুরের রায়পুর শহরের মেইন রোড ও পীরবাড়ীসংলগ্ন দুটি বাজারে গিয়ে পাঁচ খারি ইলিশ দেখা যায়। একেকটি খারিতে আড়াই শতাধিক ইলিশ ছিল। একটি খারির ইলিশ ধরে দেখা যায়, সেগুলোর ৮০টির পেটে ডিম নেই। বাকিগুলোর পেটে ডিম ছিল।
খাসেরহাট নাইয়াপাড়া জেলেভুক্ত সমিতির সভাপতি মো. মোস্তফা বেপারী প্রথম আলোকে বলেন, অনেক ইলিশ এখনো ডিম ছাড়েনি। জালে ধরা পড়া অধিকাংশ ইলিশেরই পেটে ডিম।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম মহিব উল্যাহ বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময়ে কিছু ইলিশ ডিম ছাড়েনি। বিষয়টি মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালককে জানানো হবে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সফিকুর রহমান বলেন, আশ্বিনে ভরা পূর্ণিমায় মা ইলিশ প্রচুর ডিম পাড়ে। পূর্ণিমার আগের ও পরের ১৫ দিনকে ইলিশের প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এ সময়ে মা ইলিশ উপকূলীয় এলাকা থেকে ডিম ছাড়ার জন্য পদ্মা-মেঘনায় চলে আসে। তিনি বলেন, সরকারের এই অভিযান সফল হয়েছে। ভবিষ্যতে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, চাঁদপুর ইলিশের বিচরণক্ষেত্র, প্রজননক্ষেত্র নয়। ইলিশ ডিম ছাড়া না-ছাড়া নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।
{প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর চাঁদপুর ও মতলব দক্ষিণ, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) ও গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধ|
গত শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুর সদরের পুরানবাজার, সাখুয়া ও হরিণা এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, শত শত জেলে গুটি জাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে ইলিশ শিকারের পর নদীর পাড়ে ফিরছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন বছর ধরে একই সময়ে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারি অভিযান চলছে। এবার অভিযান শেষে শনিবার ভোর থেকে তাঁরা নদীতে নামেন। কিন্তু নদীতে ইলিশ তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে তার সবই ডিমওয়ালা। সাখুয়ার জেলে আবদুল হালিম বলেন, এ বছর মা ইলিশ রক্ষার সময় নির্ধারণ ঠিক হয়নি। আরও কদিন পর অভিযান বা নিষেধাজ্ঞা দিলে সব ইলিশই ডিম ছাড়ার সুযোগ পেত।
মঙ্গলবার পর্যন্ত মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদর বাজার, মুন্সীরহাট, নারায়ণপুর, বরদিয়া আড়ং, মাছুয়াখাল বাজার এবং মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর, আমিরাবাদ, এখলাশপুর, মোহনপুর বাজারসহ আরও কয়েকটি হাটবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বড় ও মাঝারি আকারের ডিমওয়ালা ইলিশের ছড়াছড়ি। বিক্রেতারা বরফে ঢেকে রাখছেন এসব ইলিশ। মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের কলাদী এলাকার বাসিন্দা মো. হান্নান বলেন, ‘ডিমওয়ালা ইলিশ কিনতে বিবেকে বাধে। তবু তিন কেজি কিনলাম। এত ডিমওয়ালা মাছ বাজারে আসবে তা ভাবিনি। আসলে কি এবার ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষা হয়েছে?’
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে চার দিন ধরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে বলে জানান জেলেরা। কিন্তু এসব ইলিশের অধিকাংশেরই পেটভর্তি ডিম। এখানকার মাছ ব্যবসায়ী বাদল বিশ্বাস বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় অনেকে ইলিশ ধরে লুকিয়ে রেখেছিলেন। সেগুলো এখন আনছেন। পাশাপাশি এখন যে ইলিশ ধরা পড়ছে সেগুলোরও অধিকাংশ ডিমওয়ালা। ছোট ইলিশেও ডিম পাওয়া যাচ্ছে।’
রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রতন দত্ত বলেন, ‘কী কারণে এমনটা হচ্ছে তা নিয়ে বর্তমানে ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে আলোচনা চলছে। তবে আমার মতে, অঞ্চলভেদে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা আরও বাড়ানো দরকার।’
মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুরের রায়পুর শহরের মেইন রোড ও পীরবাড়ীসংলগ্ন দুটি বাজারে গিয়ে পাঁচ খারি ইলিশ দেখা যায়। একেকটি খারিতে আড়াই শতাধিক ইলিশ ছিল। একটি খারির ইলিশ ধরে দেখা যায়, সেগুলোর ৮০টির পেটে ডিম নেই। বাকিগুলোর পেটে ডিম ছিল।
খাসেরহাট নাইয়াপাড়া জেলেভুক্ত সমিতির সভাপতি মো. মোস্তফা বেপারী প্রথম আলোকে বলেন, অনেক ইলিশ এখনো ডিম ছাড়েনি। জালে ধরা পড়া অধিকাংশ ইলিশেরই পেটে ডিম।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম মহিব উল্যাহ বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময়ে কিছু ইলিশ ডিম ছাড়েনি। বিষয়টি মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালককে জানানো হবে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সফিকুর রহমান বলেন, আশ্বিনে ভরা পূর্ণিমায় মা ইলিশ প্রচুর ডিম পাড়ে। পূর্ণিমার আগের ও পরের ১৫ দিনকে ইলিশের প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এ সময়ে মা ইলিশ উপকূলীয় এলাকা থেকে ডিম ছাড়ার জন্য পদ্মা-মেঘনায় চলে আসে। তিনি বলেন, সরকারের এই অভিযান সফল হয়েছে। ভবিষ্যতে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, চাঁদপুর ইলিশের বিচরণক্ষেত্র, প্রজননক্ষেত্র নয়। ইলিশ ডিম ছাড়া না-ছাড়া নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।
{প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর চাঁদপুর ও মতলব দক্ষিণ, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) ও গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধ|
No comments