প্রবীণ অবসরভোগীদের প্রত্যাশা by কাজী আশরাফ আলী
সিন্ডিকেট
শব্দটি অর্থবহ। প্রতিনিধিদের সভা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সভা বোঝাতে এবং
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিসভা বোঝাতে শব্দটির ব্যবহার হয়। কার্যকর সুবিধা
আদায়ে, মতের কেন্দ্রিকতায়, অস্তিত্বের সুরক্ষায়, চাপ সৃষ্টিতে, সিদ্ধান্ত
গ্রহণে এর সদস্য প্রতিনিধিরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করেন। দাম
বৃদ্ধি-কমাতে, কর সুবিধা আদায়ে, লাভ বাড়াতে, আমদানি-রফতানিতে সমগোত্রীয়
উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষার প্রয়াস অব্যাহত রাখতে সিন্ডিকেট নামের
মাধ্যমটির গুরুত্ব বহন করে। সমস্বার্থে, মতের সম্মিলন ঘটিয়ে জনকল্যাণে
ইচ্ছার প্রকাশ ও বাস্তবায়নে সিন্ডিকেট না হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি
আকর্ষিত হয় না। ফলে যথাযথ উপলব্ধি ব্যতিরেকে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও
বাস্তবায়ন করে থাকে যাতে জনকল্যাণের ইচ্ছা থাকলেও তা যথাযথ হয় না এবং
যথার্থ প্রতিফলন ঘটে না। বছরের ১ অক্টোবর ছিল আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস।
সারা বিশ্বে প্রবীণদের কল্যাণ, অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় জাতিসঙ্ঘের আহ্বানে
দিবসটি পালিত হয়।
বাংলাদেশে প্রবীণ হিতৈষী সঙ্ঘ যোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করে এবং প্রবীণদের কল্যাণে বিভিন্ন সামাজিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। প্রবীণদের চাহিদা ও সামর্থ্য বিবেচনার অপেক্ষা রাখে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা উপেক্ষিত হয়। প্রবীণেরা গ্রামে ও শহরে বসবাসরত। যারা এক সময়ে যুবক, যাদের শ্রমে সেবা সৃষ্টি হয়েছে তারাই আজ প্রবীণ, অবেহেলিত ও নির্যাতিত। বাস্তবতা হলো বার্ধক্য ও মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে সবাইকে। বাংলাদেশে প্রবীণের সংখ্যা এক কোটির ঊর্ধ্বে ছাড়িয়ে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলছে। তাদের প্রতি সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার পরিধি বিস্তৃত করা প্রয়োজন। প্রবীণদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কর্মচারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ইতোমধ্যে সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৫৯-৬০ এ উন্নীত হয়েছে। প্রবীণবিষয়ক জাতীয় নীতিমালা-২০১৩ প্রণয়ন, অবসর গ্রহণের সময়বৃদ্ধি, প্রবীণ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গঠন-প্রক্রিয়াধীন, স্বাস্থ্যভাতা বৃদ্ধি, একটি পৃথক ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব সরকারের প্রবীণ বান্ধবনীতির একটি মৌলিক অবদান যা প্রশংসনীয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে অবসরভোগীদের সামাজিক সুরক্ষায় শতবর্ষের পুরনো ব্রিটিশ ভারতের পেনশন আইনের সংস্কারসহ সময়ের চাহিদা উপযোগী সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণে আধুনিকায়নের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হতে পারে। উল্লেখ্য, এসব প্রবীণের নিজের মতো সিন্ডিকেট ব্যতিরেকে তাদের কিসে কল্যাণ হবে তা সরকারি পর্যায়ে উপস্থাপন করতে পারে না। তাই এরা পুরোপুরিভাবেই সরকারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কিন্তু দেখা যায় প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় অমানবিক, অসামঞ্জস্যপূর্ণ, অকল্যাণকর ও অনভিপ্রেত সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রবীণদের একাংশ অবসরভোগী ভীষণভাবে আশাহত হন এবং প্রতিকার হতেও বিরত থাকেন। এ ধরনের কিছু ন্যায্য মৌলিক বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হলো : (ক) প্রভিডেন্ট ফান্ডের জমা টাকা, চাকরিকালীন সঞ্চয়, নিজ প্রাপ্য টাকা করমুক্ত, অথচ চাকরি শেষে এ খাতের সমুদয় প্রাপ্তি দিয়ে বিশেষ সঞ্চয়পত্র- পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনলে তা উৎস করের আওতায় আসে- আয়কর দিতে হয়। (খ) মাসিক পেনশন যারা গ্রহণ করেন তা আয়করমুক্ত। কিন্তু যারা মাসিক পেনশন গ্রহণ করেননি শতভাগ সমর্পণ করে একমাত্র প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে পেনশনার সঞ্চয়পত্র নির্দিষ্ট অনুমোদিত সীমায় ক্রয় করেছেন এবং অন্য উৎসের আয় ছাড়া ওই নিরাপত্তা জামানতের আয় থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে পারিবারিক ব্যয় নির্বাহ করেন তাদের উৎসকর ও আয়কর দিতে হচ্ছে। (গ) অনুমোদিত সীমায় গ্র্যাচুইটির টাকা দিয়ে কেনা পেনশনার সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্ত আয়ে পারিবারিক ব্যয়, ছেলেমেয়ের বিয়ে, পড়ালেখা বাবদ ব্যয় হয় তাতেও উৎসকর ও আয়কর দিতে হয়। (ঘ) সরকার সময়ে সময়ে মুদ্রাস্ফীতির সমন্বয়ে মহার্ঘভাতা দিয়ে থাকে, যা মাসিক পেনশনাররা পেয়ে থাকেন। কিন্তু যাদের পেনশন বিক্রয় করা হয়েছে মাসিক টাকা পান না, দুই ঈদে উৎসবভাতা পান তাদের বেলায় কমিউটেশনের টাকা ছাড়া অতিরিক্ত কিছুই দেয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে মহার্ঘভাতা উৎসবভাতার সাথে যোগ হলে পেনশনাররা বর্ধিত টাকা পেতেন ও প্রাপ্যতা সময়োপযোগী হতো। (ঙ) বাংলাদেশ সঞ্চয় ব্যুরো ইতোমধ্যে বিভিন্ন হারে সঞ্চয়পত্রগুলোর সুদহার কমিয়েছে। নির্দিষ্ট সীমায় পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্র শুধু সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের ক্রয়ের জন্য নির্ধারিত হলেও এর সুদ হার কমানো হয়েছে। এতে যারা শুধু এ স্থির আয় দিয়ে পারিবারিক খরচ নির্বাহ করেন তাদের ওপর আঘাত করা হয়েছে।
অন্য দিকে উৎসকর বিলোপ না করে তা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। (চ) অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো কোনো ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের সংস্থাপন ও কল্যাণ বিভাগ অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণদের চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার নীতি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার করলেও ২৫ বছর চাকরির পর স্বেচ্ছায় অবসরে যারা যান তাদের এ সুবিধা দেয়া হয়নি। তাদের এ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, যা অনৈতিক ও অনভিপ্রেত। প্রত্যেক অবসরভোগীকে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে মানবিক কারণেই চিকিৎসার সহায়তা দিতে পারে। (ছ) প্রবীণ অবসরভোগীদের চিকিৎসা ও সাহায্যার্থে প্রতিষ্ঠানগুলোর সিএসআর কর্মসূচির শতকরা হারে কল্যাণ খাতে ব্যয় নির্দিষ্ট করা যেতে পারে। (জ) প্রবীণ অবসরভোগীদের যেহেতু বেতনাদি নেই, বাড়িভাড়া ভাতা নেই, শুধু দুই ঈদের দুই উৎসব ভাতা থাকে। তাদের জ্ঞাতার্থে কর প্রদান সম্পর্কিত পৃথক নির্দেশনা এনবিআর কর্তৃক প্রকাশ করা প্রয়োজন। (ঝ) অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণ হয়েছে। সম্মানজনক বেতনভাতা, টাইম স্কেল ও মর্যাদা অনুযায়ী বেতন নির্ধারণে সরকার সচেষ্ট। কিন্তু কর্মজীবীদের পাশাপাশি অবসরভোগী প্রবীণদের অবসর গ্রহণের সময় তাদের স্ব স্ব গ্রেড-মর্যাদা নতুন স্কেলে হিসাবায়ন পূর্বক নতুনভাবে কমিউটেশন হিসাবায়ন করা বা যে হারে বেতন বৃদ্ধি হচ্ছে সে হারে অবসরভোগীদের উৎসবভাতা বৃদ্ধি করে অন্তত দু’টি উৎসবভাতা প্রদান করা। এতে মুদ্রাস্ফীতি ও দুর্মূল্যের বাজারে তারা যথেষ্ট উপকৃত হবেন। (ঞ) অর্থ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রিত জাতীয়করণকৃত ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের প্রজ্ঞাপনে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরভোগীদের বকেয়া উৎসবভাতার নির্দেশ থাকলেও জনতা ও রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের প্রজ্ঞাপনে একই বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ নেই। এ ধরনের ভিন্ন ধর্মী ব্যবস্থা বোধগম্য নয়। (ট) শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীর উত্তরাধিকারীদের উৎসব বোনাস ও চিকিৎসাভাতা প্রদান করার সিদ্ধান্ত বিবেচনার অপেক্ষা রাখে।
বর্তমানে দেশে গড় আয়ু ৭০ বছর। অবসর নেয়ার পরবর্তী বছরগুলোতে প্রত্যেকের মেধা, মনন, জ্ঞান জাতীয় স্বার্থে ব্যবহার করা উচিত। তাই তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। প্রবীণ অবসরভোগীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সঞ্চয় ব্যুরো ও এনবিআর পারস্পরিক সহযোগিতা, সমন্বয় ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে গৃহীত ও গৃহীতব্য সংস্কারের মাধ্যমে অবসরভোগীরা বিশেষভাবে উপকৃত হতে পারেন এবং এতে তারা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে মর্যাদাবান থাকবেন।
লেখক : নির্বাহী কর্মকর্তা (অব:), রূপালী ব্যাংক লি.
বাংলাদেশে প্রবীণ হিতৈষী সঙ্ঘ যোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করে এবং প্রবীণদের কল্যাণে বিভিন্ন সামাজিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। প্রবীণদের চাহিদা ও সামর্থ্য বিবেচনার অপেক্ষা রাখে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা উপেক্ষিত হয়। প্রবীণেরা গ্রামে ও শহরে বসবাসরত। যারা এক সময়ে যুবক, যাদের শ্রমে সেবা সৃষ্টি হয়েছে তারাই আজ প্রবীণ, অবেহেলিত ও নির্যাতিত। বাস্তবতা হলো বার্ধক্য ও মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে সবাইকে। বাংলাদেশে প্রবীণের সংখ্যা এক কোটির ঊর্ধ্বে ছাড়িয়ে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলছে। তাদের প্রতি সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার পরিধি বিস্তৃত করা প্রয়োজন। প্রবীণদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কর্মচারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ইতোমধ্যে সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৫৯-৬০ এ উন্নীত হয়েছে। প্রবীণবিষয়ক জাতীয় নীতিমালা-২০১৩ প্রণয়ন, অবসর গ্রহণের সময়বৃদ্ধি, প্রবীণ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গঠন-প্রক্রিয়াধীন, স্বাস্থ্যভাতা বৃদ্ধি, একটি পৃথক ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব সরকারের প্রবীণ বান্ধবনীতির একটি মৌলিক অবদান যা প্রশংসনীয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে অবসরভোগীদের সামাজিক সুরক্ষায় শতবর্ষের পুরনো ব্রিটিশ ভারতের পেনশন আইনের সংস্কারসহ সময়ের চাহিদা উপযোগী সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণে আধুনিকায়নের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হতে পারে। উল্লেখ্য, এসব প্রবীণের নিজের মতো সিন্ডিকেট ব্যতিরেকে তাদের কিসে কল্যাণ হবে তা সরকারি পর্যায়ে উপস্থাপন করতে পারে না। তাই এরা পুরোপুরিভাবেই সরকারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কিন্তু দেখা যায় প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় অমানবিক, অসামঞ্জস্যপূর্ণ, অকল্যাণকর ও অনভিপ্রেত সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রবীণদের একাংশ অবসরভোগী ভীষণভাবে আশাহত হন এবং প্রতিকার হতেও বিরত থাকেন। এ ধরনের কিছু ন্যায্য মৌলিক বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হলো : (ক) প্রভিডেন্ট ফান্ডের জমা টাকা, চাকরিকালীন সঞ্চয়, নিজ প্রাপ্য টাকা করমুক্ত, অথচ চাকরি শেষে এ খাতের সমুদয় প্রাপ্তি দিয়ে বিশেষ সঞ্চয়পত্র- পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনলে তা উৎস করের আওতায় আসে- আয়কর দিতে হয়। (খ) মাসিক পেনশন যারা গ্রহণ করেন তা আয়করমুক্ত। কিন্তু যারা মাসিক পেনশন গ্রহণ করেননি শতভাগ সমর্পণ করে একমাত্র প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে পেনশনার সঞ্চয়পত্র নির্দিষ্ট অনুমোদিত সীমায় ক্রয় করেছেন এবং অন্য উৎসের আয় ছাড়া ওই নিরাপত্তা জামানতের আয় থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে পারিবারিক ব্যয় নির্বাহ করেন তাদের উৎসকর ও আয়কর দিতে হচ্ছে। (গ) অনুমোদিত সীমায় গ্র্যাচুইটির টাকা দিয়ে কেনা পেনশনার সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্ত আয়ে পারিবারিক ব্যয়, ছেলেমেয়ের বিয়ে, পড়ালেখা বাবদ ব্যয় হয় তাতেও উৎসকর ও আয়কর দিতে হয়। (ঘ) সরকার সময়ে সময়ে মুদ্রাস্ফীতির সমন্বয়ে মহার্ঘভাতা দিয়ে থাকে, যা মাসিক পেনশনাররা পেয়ে থাকেন। কিন্তু যাদের পেনশন বিক্রয় করা হয়েছে মাসিক টাকা পান না, দুই ঈদে উৎসবভাতা পান তাদের বেলায় কমিউটেশনের টাকা ছাড়া অতিরিক্ত কিছুই দেয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে মহার্ঘভাতা উৎসবভাতার সাথে যোগ হলে পেনশনাররা বর্ধিত টাকা পেতেন ও প্রাপ্যতা সময়োপযোগী হতো। (ঙ) বাংলাদেশ সঞ্চয় ব্যুরো ইতোমধ্যে বিভিন্ন হারে সঞ্চয়পত্রগুলোর সুদহার কমিয়েছে। নির্দিষ্ট সীমায় পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্র শুধু সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের ক্রয়ের জন্য নির্ধারিত হলেও এর সুদ হার কমানো হয়েছে। এতে যারা শুধু এ স্থির আয় দিয়ে পারিবারিক খরচ নির্বাহ করেন তাদের ওপর আঘাত করা হয়েছে।
অন্য দিকে উৎসকর বিলোপ না করে তা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। (চ) অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো কোনো ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের সংস্থাপন ও কল্যাণ বিভাগ অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণদের চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার নীতি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার করলেও ২৫ বছর চাকরির পর স্বেচ্ছায় অবসরে যারা যান তাদের এ সুবিধা দেয়া হয়নি। তাদের এ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, যা অনৈতিক ও অনভিপ্রেত। প্রত্যেক অবসরভোগীকে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে মানবিক কারণেই চিকিৎসার সহায়তা দিতে পারে। (ছ) প্রবীণ অবসরভোগীদের চিকিৎসা ও সাহায্যার্থে প্রতিষ্ঠানগুলোর সিএসআর কর্মসূচির শতকরা হারে কল্যাণ খাতে ব্যয় নির্দিষ্ট করা যেতে পারে। (জ) প্রবীণ অবসরভোগীদের যেহেতু বেতনাদি নেই, বাড়িভাড়া ভাতা নেই, শুধু দুই ঈদের দুই উৎসব ভাতা থাকে। তাদের জ্ঞাতার্থে কর প্রদান সম্পর্কিত পৃথক নির্দেশনা এনবিআর কর্তৃক প্রকাশ করা প্রয়োজন। (ঝ) অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণ হয়েছে। সম্মানজনক বেতনভাতা, টাইম স্কেল ও মর্যাদা অনুযায়ী বেতন নির্ধারণে সরকার সচেষ্ট। কিন্তু কর্মজীবীদের পাশাপাশি অবসরভোগী প্রবীণদের অবসর গ্রহণের সময় তাদের স্ব স্ব গ্রেড-মর্যাদা নতুন স্কেলে হিসাবায়ন পূর্বক নতুনভাবে কমিউটেশন হিসাবায়ন করা বা যে হারে বেতন বৃদ্ধি হচ্ছে সে হারে অবসরভোগীদের উৎসবভাতা বৃদ্ধি করে অন্তত দু’টি উৎসবভাতা প্রদান করা। এতে মুদ্রাস্ফীতি ও দুর্মূল্যের বাজারে তারা যথেষ্ট উপকৃত হবেন। (ঞ) অর্থ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রিত জাতীয়করণকৃত ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের প্রজ্ঞাপনে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরভোগীদের বকেয়া উৎসবভাতার নির্দেশ থাকলেও জনতা ও রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের প্রজ্ঞাপনে একই বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ নেই। এ ধরনের ভিন্ন ধর্মী ব্যবস্থা বোধগম্য নয়। (ট) শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীর উত্তরাধিকারীদের উৎসব বোনাস ও চিকিৎসাভাতা প্রদান করার সিদ্ধান্ত বিবেচনার অপেক্ষা রাখে।
বর্তমানে দেশে গড় আয়ু ৭০ বছর। অবসর নেয়ার পরবর্তী বছরগুলোতে প্রত্যেকের মেধা, মনন, জ্ঞান জাতীয় স্বার্থে ব্যবহার করা উচিত। তাই তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। প্রবীণ অবসরভোগীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সঞ্চয় ব্যুরো ও এনবিআর পারস্পরিক সহযোগিতা, সমন্বয় ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে গৃহীত ও গৃহীতব্য সংস্কারের মাধ্যমে অবসরভোগীরা বিশেষভাবে উপকৃত হতে পারেন এবং এতে তারা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে মর্যাদাবান থাকবেন।
লেখক : নির্বাহী কর্মকর্তা (অব:), রূপালী ব্যাংক লি.
No comments