তথ্য ধরে রাখলে জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়
ঢাকায়
নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, বিনামূল্যে
সংগৃহীত, পরীক্ষাকৃত ও ভাগাভাগি করা তথ্য আন্তর্জাতিক যে কোন অপরাধের
বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি শক্তিশালী অস্ত্র। তথ্য ধরে রাখা হলে জীবন হুমকির
সম্মুখীন হয়। রাজধানীর মিরপুরস্থ পুলিশ স্টাফ কলেজে আন্তর্জাতিক অপরাধবিষয়ক
এক সম্মেলনে গতকাল দেয়া বক্তৃতায় রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ
সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যৌথভাবে ৩ দিনের ওই সম্মেলন আয়োজন
করে। সেখানে পশ্চিমা ওই দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে দেশের
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আইনজীবী এবং বিচার বিভাগের সদস্যরা অংশ নেন। মার্কিন
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের উদ্দেশে বলেন, আমি বহুবার বলেছি, আজও বলছি, বাংলাদেশ
বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে অপেক্ষাকৃত নতুন হলেও উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি ও
ধর্মনিরপেক্ষতায় দেশটির উল্লেখযোগ্য রেকর্ড রয়েছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক
অপরাধ সংগঠনগুলোর কাছে বাংলাদেশ বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। তিনি সতর্ক করেন এই
বলে ‘ভুল করবেন না যে, এ লড়াইয়ে আপনারাও জড়িত এবং এ থেকে আপনারা নিরাপদ
নন।’ দেশের নাগরিকদের ওপর তার পূর্ণ আস্থা রয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, এ
দেশের মানুষ আত্মত্যাগ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের মানুষের
স্বপ্নের মধ্যে যে আন্তর্জাতিক অপরাধ মোকাবিলা এবং এর ধ্বংসাত্মক প্রভাব
থেকে রক্ষার অবিরাম সতর্কতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এতে আমার কোন সন্দেহ নেই। এ
সময় বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ে তার প্রস্তুতির কথা
দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত। পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর ফাতেমা
বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তৃতার শুরুতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত
নিরাপত্তা হুমকি এবং বাংলাদেশে দু’জন বিদেশী হত্যার পটভূমিতে এখানকার
নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে সে
প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা
প্রকাশ করেন। বলেন, প্রথমে আমি পুলিশ এবং সকল নিরাপত্তা বাহিনীকে ধন্যবাদ
জানাই, বাংলাদেশের সকল বিদেশীকে নিরাপদ রাখার জন্য তারা গত দুই সপ্তাহের
হুমকির মুখে ও ঘটনার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন। আন্তর্জাতিক সঙ্গবদ্ধ
অপরাধের কাছে সকল দেশই অরক্ষিত উল্লেখ করে মার্কিন দূত বলেন, জনগণের
নিরাপত্তার জন্য এটি একটি প্রতিবন্ধকতা, এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিও।
এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে নষ্ট করে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে
ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ সময় তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ চিহ্নিতকরণে যুক্তরাষ্ট্র ও
বাংলাদেশের চমৎকার অংশীদারিত্বের বিষয়টি স্মরণ করেন। বাংলাদেশ একা নয়-
উল্লেখ করে তিনি বলেন, সহিংস চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ নতুন
নীতিমালা প্রণয়ন করে বেশ দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়েছে। এই বছরের
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চরমপন্থা ও
সন্ত্রাসবাদের সর্বজনীন হুমকিকে চিহ্নিত করতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ
অন্য বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে এক হয়েছেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, একটি অপরাধের
বিস্তার অন্যদেরও পথ দেখায়। যার ফল হতে পারে বিচার ব্যবস্থা ও সরকারের
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কার্যক্ষমতার ওপর থেকে আস্থা হারানো। যেসব নাগরিক
তাদের সরকারের ওপর থেকে বিশ্বাস হারায় তারা এই সহিংস চরমপন্থি দলের
নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয়। বিশ্বের প্রতিটি দেশকেই এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে
এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বায়নের পৃথিবীতে ভালো বা মন্দ
যা-ই হোক এক দেশের ঘটনা অন্য দেশের নাগরিকদের ওপর প্রভাব ফেলে। দক্ষিণ
এশিয়ার উন্নয়ন এবং কল্যাণের বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায়
শান্তি এবং স্থিতিশীলতা পুরো পৃথিবীকে আরও বেশি শান্তিপূর্ণ এবং স্থিতিশীল
করতে অবদান রাখছে। তিনি সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অপরাধী এবং বিদ্রোহী
গোষ্ঠীগুলোকে দমনে গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে
অবশ্যই নিজেদের মধ্যে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সঙ্গে
সহযোগিতার ক্ষেত্রে মডেল হিসেবে কাজ করতে হবে।
No comments