তালার পাখিমারা বিলে জোয়ারাধার: জলাবদ্ধতা দূর করতে ডুবিয়ে মারার ফাঁদ! by কল্যাণ ব্যানার্জি
জোয়ারাধারের সঙ্গে কপোতাক্ষ নদের সংযোগ খালের মুখের বাঁধ গতকাল ভেঙে যায়। প্রবল স্রোতে পানি ঢোকে লোকালয়ে -জাহিদুল করিম |
কপোতাক্ষ
নদ সচল করা ও এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য সাতক্ষীরার তালা উপজেলার
পাখিমারা বিলে জোয়ারাধার (টিআরএম-টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) চালু করা হয়।
স্থানীয় লোকজনেরও অভিযোগ, নকশা অনুযায়ী বাঁধ না করেই জোয়ারাধার চালু করার
ফলে সেটি এখন ডুবিয়ে মারার ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
জোয়ারাধারের সঙ্গে কপোতাক্ষ নদের সংযোগ খালের মুখে স্থানীয় লোকজন ১২ দিন চেষ্টা করে বাঁধ দেওয়ার তিন দিন পর গতকাল মঙ্গলবার তা ভেঙে গেছে। সংযোগ খালে দুই পাশের বাঁধ দ্রুত ধসে যাচ্ছে। ফলে ৩০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হওয়ার আশঙ্কা করছে। ওই বাঁধ ভাঙার আগেই বিভিন্ন স্থানে বাঁধের ছিদ্র দিয়ে পানি ঢুকে ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়।
জোয়ারাধারের সংযোগ খালের ধসে যাওয়া বাঁধ এলাকায় কথা হয় দোহার গ্রামের ইমাদুল হক শেখ, শ্রীমন্তকাটি গ্রামের আফিলউদ্দীন ও শুভকরকাটি গ্রামের আবদুল মালেকের সঙ্গে। তাঁদের অভিযোগ, নকশা অনুযায়ী বাঁধ না করেই জোয়ারাধার চালু করা হয়েছে। ফলে জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচানোর জন্য করা জোয়ারাধার এখন ডুবিয়ে মারার ফাঁদ হয়েছে। তাঁরা অভিযোগ করেন, এলাকাবাসীর মতামত উপেক্ষা করে বর্ষার মধ্যেই গত ১১ জুলাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা জোয়ারাধার চালু করার জন্য সংযোগ খালের মুখ কেটে দেন। তাঁরা জানান, এক মাস ধরে বৃষ্টি হওয়ায় ও জোয়ারাধারের বেসিনে জমা পানিতে কয়েকটি এলাকা ডুবে গেছে। ১২ দিন চেষ্টা করে স্থানীয় প্রচেষ্টায় সংযোগ খালের ওই মুখে বাঁধ দেওয়া হয়। গতকাল ভোরে তা ধসে যাওয়ায় আটুলিয়া, দোহার, বালিয়া, সাতপাকিয়া, গৌতমকাটিসহ অন্তত ৩০টি গ্রামে পানি উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংযোগ খালের পাশে গালে হাত দিয়ে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে বসে ছিলেন সাতপাখিয়া গ্রামের নার্গিস বেগম। তিনি জানালেন, জলাবদ্ধতার কারণে তাঁরা দেড় মাস বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র ছিলেন। কয়েক দিন আগে সংযোগ খালের মুখ বাঁধ দেওয়ায় পানি ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বাড়ি ফিরে এসেছেন সোমবার। গতকাল বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তিনি আবারও চিন্তায় পড়েছেন।
স্থানীয় খেসরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী বলেন, ‘বর্তমানে ভাটা চলছে, তাতেই যেভাবে পানি লোকালয়ে ঢুকছে, জোয়ারের সময় কী হয় কে জানে!’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দূরদর্শিতার অভাবে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কপোতাক্ষ নদ সচল করতে ২৬২ কোটি টাকার চার বছর মেয়াদি প্রকল্পের ২০১১ সালে অনুমোদন দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ২০১২-১৩ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পাখিমারা বিলে জোয়ারাধার চালু করার কথা। এ জন্য জমির ক্ষতিপূরণ ও বাঁধ নির্মাণ বাবদ ব্যয় ধরা হয় ১৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ১ হাজার ৫৬১ দশমিক ৯৬ একর একর জমির ওপর জোয়ারাধার বাস্তবায়ন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জোয়ারাধার চালু করার জন্য বাঁধ নির্মাণ করতে হবে ১২ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। বাঁধের তলদেশ হবে ৪০ থেকে ৫০ মিটার, উচ্চতা হবে ৩ থেকে ৪ মিটার ও উপরিভাগ হবে ৩ মিটার।
গতকাল সরেজমিন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জোয়ারাধারের জন্য নির্মিত বাঁধ প্রাক্কলন অনুযায়ী নির্মাণ করা হয়নি অনেক স্থানে। প্রায় ১৩ কিলোমিটার লম্বা এ বাঁধের ২০ থেকে ২৫টি স্থানে ত্রুটি চোখে পড়বে যে কারও। বাঁধের উচ্চতা দুই থেকে আড়াই মিটারের বেশি হবে না। তলদেশও কম রয়েছে অধিকাংশ স্থানে। বিশেষ করে মাধবখালি, দোহার, গৌতমকাটি, সাতপাখিয়া, তেঘরিয়া, বিটেরচক এলাকায় বাঁধের অবস্থা নাজুক। এসব স্থানের বাঁধ মেরামত না করে তড়িঘড়ি করে গত ১১ জুলাই জোয়ারাধার চালু করা হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে। মেরামত না করে জোয়ারাধার চালু করায় ওই সব এলাকা দিয়ে ছিদ্র হয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে ছয়টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা কয়েক দিন ধরে পানিতে পচনশীল নয় এমন বস্তায় বালু ভরে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু এলাকার মানুষ তাঁদের কাজ করতে দিচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অত বড় বেসিনের জন্য যত বড় সংযোগ খাল কাটা দরকার ছিল, তা কাটতে পারেননি। ফলে জোয়ারের সময় ওঠা পানি নামার আগেই আবার জোয়ার এসে যায়। তিনি দাবি করেন, এক বছর এমন হতে পারে। পরে ঠিক হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, এলাকার মানুষ কাজ করতে দিলে তাঁরা সংযোগ খালের ধসের স্থানসহ জোয়ারাধারের বাঁধ মেরামতের কাজ করবেন।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুর রহমান জানান, পরিকল্পিত ও নকশা অনুযায়ী কাজ না করার বিষয়টি তিনি পর্যবেক্ষণ কমিটির প্রধান হিসেবে একাধিকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেছেন। কিন্তু তারা গুরুত্বসহকারে পরামর্শ নেয়নি। তারপর কপোতাক্ষ নদ খনন না করেই জোয়ারাধার চালু করার পাশাপাশি বর্ষাকালে এটি চালু করায় সমস্যা বেড়েছে। তিনি বলেন, গতকাল সকালে তিনি সংযোগ খাল এলাকা পরিদর্শন করে দেখেছেন, আসলে পাশের বাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
জোয়ারাধারের সঙ্গে কপোতাক্ষ নদের সংযোগ খালের মুখে স্থানীয় লোকজন ১২ দিন চেষ্টা করে বাঁধ দেওয়ার তিন দিন পর গতকাল মঙ্গলবার তা ভেঙে গেছে। সংযোগ খালে দুই পাশের বাঁধ দ্রুত ধসে যাচ্ছে। ফলে ৩০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হওয়ার আশঙ্কা করছে। ওই বাঁধ ভাঙার আগেই বিভিন্ন স্থানে বাঁধের ছিদ্র দিয়ে পানি ঢুকে ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়।
জোয়ারাধারের সংযোগ খালের ধসে যাওয়া বাঁধ এলাকায় কথা হয় দোহার গ্রামের ইমাদুল হক শেখ, শ্রীমন্তকাটি গ্রামের আফিলউদ্দীন ও শুভকরকাটি গ্রামের আবদুল মালেকের সঙ্গে। তাঁদের অভিযোগ, নকশা অনুযায়ী বাঁধ না করেই জোয়ারাধার চালু করা হয়েছে। ফলে জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচানোর জন্য করা জোয়ারাধার এখন ডুবিয়ে মারার ফাঁদ হয়েছে। তাঁরা অভিযোগ করেন, এলাকাবাসীর মতামত উপেক্ষা করে বর্ষার মধ্যেই গত ১১ জুলাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা জোয়ারাধার চালু করার জন্য সংযোগ খালের মুখ কেটে দেন। তাঁরা জানান, এক মাস ধরে বৃষ্টি হওয়ায় ও জোয়ারাধারের বেসিনে জমা পানিতে কয়েকটি এলাকা ডুবে গেছে। ১২ দিন চেষ্টা করে স্থানীয় প্রচেষ্টায় সংযোগ খালের ওই মুখে বাঁধ দেওয়া হয়। গতকাল ভোরে তা ধসে যাওয়ায় আটুলিয়া, দোহার, বালিয়া, সাতপাকিয়া, গৌতমকাটিসহ অন্তত ৩০টি গ্রামে পানি উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংযোগ খালের পাশে গালে হাত দিয়ে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে বসে ছিলেন সাতপাখিয়া গ্রামের নার্গিস বেগম। তিনি জানালেন, জলাবদ্ধতার কারণে তাঁরা দেড় মাস বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র ছিলেন। কয়েক দিন আগে সংযোগ খালের মুখ বাঁধ দেওয়ায় পানি ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বাড়ি ফিরে এসেছেন সোমবার। গতকাল বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তিনি আবারও চিন্তায় পড়েছেন।
স্থানীয় খেসরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী বলেন, ‘বর্তমানে ভাটা চলছে, তাতেই যেভাবে পানি লোকালয়ে ঢুকছে, জোয়ারের সময় কী হয় কে জানে!’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দূরদর্শিতার অভাবে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কপোতাক্ষ নদ সচল করতে ২৬২ কোটি টাকার চার বছর মেয়াদি প্রকল্পের ২০১১ সালে অনুমোদন দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ২০১২-১৩ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পাখিমারা বিলে জোয়ারাধার চালু করার কথা। এ জন্য জমির ক্ষতিপূরণ ও বাঁধ নির্মাণ বাবদ ব্যয় ধরা হয় ১৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ১ হাজার ৫৬১ দশমিক ৯৬ একর একর জমির ওপর জোয়ারাধার বাস্তবায়ন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জোয়ারাধার চালু করার জন্য বাঁধ নির্মাণ করতে হবে ১২ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। বাঁধের তলদেশ হবে ৪০ থেকে ৫০ মিটার, উচ্চতা হবে ৩ থেকে ৪ মিটার ও উপরিভাগ হবে ৩ মিটার।
গতকাল সরেজমিন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জোয়ারাধারের জন্য নির্মিত বাঁধ প্রাক্কলন অনুযায়ী নির্মাণ করা হয়নি অনেক স্থানে। প্রায় ১৩ কিলোমিটার লম্বা এ বাঁধের ২০ থেকে ২৫টি স্থানে ত্রুটি চোখে পড়বে যে কারও। বাঁধের উচ্চতা দুই থেকে আড়াই মিটারের বেশি হবে না। তলদেশও কম রয়েছে অধিকাংশ স্থানে। বিশেষ করে মাধবখালি, দোহার, গৌতমকাটি, সাতপাখিয়া, তেঘরিয়া, বিটেরচক এলাকায় বাঁধের অবস্থা নাজুক। এসব স্থানের বাঁধ মেরামত না করে তড়িঘড়ি করে গত ১১ জুলাই জোয়ারাধার চালু করা হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে। মেরামত না করে জোয়ারাধার চালু করায় ওই সব এলাকা দিয়ে ছিদ্র হয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে ছয়টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা কয়েক দিন ধরে পানিতে পচনশীল নয় এমন বস্তায় বালু ভরে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু এলাকার মানুষ তাঁদের কাজ করতে দিচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অত বড় বেসিনের জন্য যত বড় সংযোগ খাল কাটা দরকার ছিল, তা কাটতে পারেননি। ফলে জোয়ারের সময় ওঠা পানি নামার আগেই আবার জোয়ার এসে যায়। তিনি দাবি করেন, এক বছর এমন হতে পারে। পরে ঠিক হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, এলাকার মানুষ কাজ করতে দিলে তাঁরা সংযোগ খালের ধসের স্থানসহ জোয়ারাধারের বাঁধ মেরামতের কাজ করবেন।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুর রহমান জানান, পরিকল্পিত ও নকশা অনুযায়ী কাজ না করার বিষয়টি তিনি পর্যবেক্ষণ কমিটির প্রধান হিসেবে একাধিকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেছেন। কিন্তু তারা গুরুত্বসহকারে পরামর্শ নেয়নি। তারপর কপোতাক্ষ নদ খনন না করেই জোয়ারাধার চালু করার পাশাপাশি বর্ষাকালে এটি চালু করায় সমস্যা বেড়েছে। তিনি বলেন, গতকাল সকালে তিনি সংযোগ খাল এলাকা পরিদর্শন করে দেখেছেন, আসলে পাশের বাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
No comments