শোকাবহ আগস্ট: ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠা এক বাড়ি by আশীষ-উর-রহমান
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি। এটি স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে l প্রথম আলো |
দোতলার
খাবার জায়গায় সাদামাটা একটি টেবিল, চারপাশে আটটি কাঠের চেয়ার। তার ওপর
কয়েকটি থালা-বাটি, পেয়ালা, চামচ সাজানো। পাশেই কালো রেক্সিনে বাঁধানো হাতল
ছাড়া কয়েকটি সোফা। আহারের পরে এখানেই বসে খানিকটা সময় বিশ্রাম নিতেন তিনি।
পাইপে তামাক সাজাতেন। সে রকম একটি ছবিও টাঙানো আছে পাশের দেয়ালে।
এসব দেখে খুবই আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল সামাহ্ বিনতে আলম। মেহেরপুরের দশম শ্রেণি পড়ুয়া সামাহ্ ঢাকায় এসেছে চিকিৎসা নিতে। উঠেছে মামাবাড়ি, কল্যাণপুরে। গত মঙ্গলবার মামাতো ভাইবোনদের সঙ্গে এসেছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। তার ধারণা ছিল, যিনি স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছেন, ছিলেন রাষ্ট্রপতি, তাঁর বাড়ির জিনিসপত্রও নিশ্চয় খুব জমকালো ধরনের হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির আসবাব দেখে তার আগের ধারণা ভেঙেছে। বলছিল, ‘ওনার খাটটাও তো খুবই সাধারণ। অন্য সব জিনিসও তেমন দামি না। এ রকম হবে আগে ভাবি নাই।’
সামাহ্র মতো অনেকেরই পূর্বধারণা বদলায়, অনেকের বুক ভরে ওঠে বেদনায় এই বাড়িটিতে এলে। দেয়ালে, দরজায়, কপাটে, বইতে, মেঝেতে অজস্র বুলেটের ক্ষত। রক্তের ছোপ লাগা পোশাক। সব সাজিয়ে রাখা হয়েছে ঘরে ঘরে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের নিদর্শন। অথচ এই বাড়ি থেকেই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন বাঙালির স্বাধীনতা। এখান থেকেই সেই রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল পাকিস্তানি সেনারা। আরও নানান ঘটনায় জাতির ইতিহাসের সঙ্গে অচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে এই বাড়ি।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত বাড়িটি সিলগালা করে রাখা হয়েছিল। এরপর বাড়িটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে ১৯৯৪ সালের ১৫ আগস্ট থেকে। এখন এর নাম ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর’। প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় শ লোক আসে। সাপ্তাহিক ছুটি ও অন্য বিশেষ দিবসগুলোতে দর্শনার্থীর সংখ্যা বহু বেড়ে যায় বলে জানালেন জাদুঘরের কর্মকর্তারা।
ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়িটি তিনতলা। এটিকে হুবহু আগের মতোই রেখে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে। মোট নয়টি কক্ষে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন নিদর্শন। নিচের তলায় ড্রয়িংরুমের দেয়ালগুলোতে রয়েছে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সময়ের আলোকচিত্র। এক পাশে রাখা একটি শোকেস। পাশে পড়ার ঘর। গুলিবিদ্ধ বই ও আলমারি। দুই সারি ঘরের মাঝের দেয়ালে ১৫ আগস্টে নিহতদের তেলচিত্র।
দোতলায় এক পাশে বঙ্গবন্ধুর শয়নকক্ষ। বিছানার পাশে ছোট্ট টেবিলে সাজানো পাইপ, তামাকের কৌটা। মাথার কাছে রাখা টেবিলে সাদা, সবুজ ও কমলা তিনটি টেলিফোন সেট। একটি রেডিও। আসবাব বলতে এই। আর আছে রক্তমাখা কিছু পোশাক।
এই কক্ষের সামনেই খাবারের জায়গা। এক কোনায় রাখা শেখ রাসেলের একটি বাইসাইকেল আর মাছের অ্যাকুয়ারিয়াম। উল্টো দিকে শেখ জামালের কক্ষ। সেখানে তাঁর সামরিক পোশাক। ড্রেসিং টেবিল, তাঁর স্ত্রীর কিছু প্রসাধনী, অলংকার। বিছানা, পোশাক-আশাক। দেয়ালে আলোকচিত্র আর গুলির ক্ষত। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার কক্ষও এই তলায়। শেখ রেহানার কক্ষটিতে নিদর্শনগুলো সাজানোর কাজ চলছিল। বিপরীত পাশে সিঁড়ি। যেখানে লুটিয়ে পড়েছিলেন গুলিতে ঝাঁঝরা বুক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ধাপগুলো বেয়ে গড়িয়ে পড়েছিল রক্তধারা। সিঁড়িটি চলাচলের জন্য বন্ধ করা। পাশের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা জাতীয় পতাকা। ফুলদানিতে রক্ত গোলাপগুচ্ছ।
বাড়ির তৃতীয় তলায় শেখা কামালের কক্ষ। বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে ছিলেন সংগীতানুরাগী। তিনি ঘরটি যেভাবে সাজিয়েছিলেন, তেমন করেই রাখা হয়েছে। বিছানার পেছনে তাঁর সস্ত্রীক ছবি। সামনে কার্পেটের ওপর রাখা তানপুরা। এক পাশে অর্গান। শোকেসে রাখা শেখ কামালের সংগ্রহ করা বিভিন্ন ধরনের গানের রেকর্ড। সব অবিকল আছে, কেবল মানুষগুলো নেই।
বাড়ির সামনের জায়গায় এখন মৌসুমি ফুলের বাগান। উত্তর দিকের কোনায় টিনের ছাউনি দেওয়া কবুতরের ঘর। বঙ্গবন্ধুর খুব প্রিয় ছিল। এখন তারা সংখ্যায় অনেক। এর পাশেই রান্নাঘর। পেছনে জাদুঘরের সম্প্রসারিত নতুন ভবন। এর নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর বাবা-মায়ের নামে ‘শেখ লুৎফর রহমান ও শেখ সায়েরা খাতুন প্রদর্শনী গ্যালারি’। সহকারী কিউরেটর কাজী আফরিন জাহান জানালেন, ২০১১ সালের ২০ আগস্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে এই অংশটি। ছয়তলা ভবনের পঞ্চম তলায় পাঠাগার ও গবেষণা কেন্দ্র। চতুর্থ থেকে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত (ক্রম অনুসারে ওপর থেকে নিচে) বঙ্গবন্ধুর জীবনের শৈশব থেকে জীবনের বিভিন্ন সময়ের আলোকচিত্র ও বিভিন্ন নিদর্শনের প্রদর্শনী। এক হাজারের বেশি আলোকচিত্র রয়েছে এখানে। এ ছাড়া এই ভবনে আছে একটি ছোট্ট মিলনায়তন। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত জাদুঘর সবার জন্য খেলা।
ফটক পেরিয়ে ভেতরে এলে বাড়ির নিচের তলার বসার ঘরের সামনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি আবক্ষ প্রতিকৃতি। সেখানে সবাই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাঙালির এই অবিসংবাদিত নেতার প্রতি। এই বাড়িতেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল ৪০ বছর আগে। কিন্তু তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে আছেন।
এসব দেখে খুবই আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল সামাহ্ বিনতে আলম। মেহেরপুরের দশম শ্রেণি পড়ুয়া সামাহ্ ঢাকায় এসেছে চিকিৎসা নিতে। উঠেছে মামাবাড়ি, কল্যাণপুরে। গত মঙ্গলবার মামাতো ভাইবোনদের সঙ্গে এসেছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। তার ধারণা ছিল, যিনি স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছেন, ছিলেন রাষ্ট্রপতি, তাঁর বাড়ির জিনিসপত্রও নিশ্চয় খুব জমকালো ধরনের হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির আসবাব দেখে তার আগের ধারণা ভেঙেছে। বলছিল, ‘ওনার খাটটাও তো খুবই সাধারণ। অন্য সব জিনিসও তেমন দামি না। এ রকম হবে আগে ভাবি নাই।’
সামাহ্র মতো অনেকেরই পূর্বধারণা বদলায়, অনেকের বুক ভরে ওঠে বেদনায় এই বাড়িটিতে এলে। দেয়ালে, দরজায়, কপাটে, বইতে, মেঝেতে অজস্র বুলেটের ক্ষত। রক্তের ছোপ লাগা পোশাক। সব সাজিয়ে রাখা হয়েছে ঘরে ঘরে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের নিদর্শন। অথচ এই বাড়ি থেকেই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন বাঙালির স্বাধীনতা। এখান থেকেই সেই রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল পাকিস্তানি সেনারা। আরও নানান ঘটনায় জাতির ইতিহাসের সঙ্গে অচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে এই বাড়ি।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত বাড়িটি সিলগালা করে রাখা হয়েছিল। এরপর বাড়িটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে ১৯৯৪ সালের ১৫ আগস্ট থেকে। এখন এর নাম ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর’। প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় শ লোক আসে। সাপ্তাহিক ছুটি ও অন্য বিশেষ দিবসগুলোতে দর্শনার্থীর সংখ্যা বহু বেড়ে যায় বলে জানালেন জাদুঘরের কর্মকর্তারা।
ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়িটি তিনতলা। এটিকে হুবহু আগের মতোই রেখে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে। মোট নয়টি কক্ষে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন নিদর্শন। নিচের তলায় ড্রয়িংরুমের দেয়ালগুলোতে রয়েছে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সময়ের আলোকচিত্র। এক পাশে রাখা একটি শোকেস। পাশে পড়ার ঘর। গুলিবিদ্ধ বই ও আলমারি। দুই সারি ঘরের মাঝের দেয়ালে ১৫ আগস্টে নিহতদের তেলচিত্র।
দোতলায় এক পাশে বঙ্গবন্ধুর শয়নকক্ষ। বিছানার পাশে ছোট্ট টেবিলে সাজানো পাইপ, তামাকের কৌটা। মাথার কাছে রাখা টেবিলে সাদা, সবুজ ও কমলা তিনটি টেলিফোন সেট। একটি রেডিও। আসবাব বলতে এই। আর আছে রক্তমাখা কিছু পোশাক।
এই কক্ষের সামনেই খাবারের জায়গা। এক কোনায় রাখা শেখ রাসেলের একটি বাইসাইকেল আর মাছের অ্যাকুয়ারিয়াম। উল্টো দিকে শেখ জামালের কক্ষ। সেখানে তাঁর সামরিক পোশাক। ড্রেসিং টেবিল, তাঁর স্ত্রীর কিছু প্রসাধনী, অলংকার। বিছানা, পোশাক-আশাক। দেয়ালে আলোকচিত্র আর গুলির ক্ষত। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার কক্ষও এই তলায়। শেখ রেহানার কক্ষটিতে নিদর্শনগুলো সাজানোর কাজ চলছিল। বিপরীত পাশে সিঁড়ি। যেখানে লুটিয়ে পড়েছিলেন গুলিতে ঝাঁঝরা বুক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ধাপগুলো বেয়ে গড়িয়ে পড়েছিল রক্তধারা। সিঁড়িটি চলাচলের জন্য বন্ধ করা। পাশের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা জাতীয় পতাকা। ফুলদানিতে রক্ত গোলাপগুচ্ছ।
বাড়ির তৃতীয় তলায় শেখা কামালের কক্ষ। বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে ছিলেন সংগীতানুরাগী। তিনি ঘরটি যেভাবে সাজিয়েছিলেন, তেমন করেই রাখা হয়েছে। বিছানার পেছনে তাঁর সস্ত্রীক ছবি। সামনে কার্পেটের ওপর রাখা তানপুরা। এক পাশে অর্গান। শোকেসে রাখা শেখ কামালের সংগ্রহ করা বিভিন্ন ধরনের গানের রেকর্ড। সব অবিকল আছে, কেবল মানুষগুলো নেই।
বাড়ির সামনের জায়গায় এখন মৌসুমি ফুলের বাগান। উত্তর দিকের কোনায় টিনের ছাউনি দেওয়া কবুতরের ঘর। বঙ্গবন্ধুর খুব প্রিয় ছিল। এখন তারা সংখ্যায় অনেক। এর পাশেই রান্নাঘর। পেছনে জাদুঘরের সম্প্রসারিত নতুন ভবন। এর নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর বাবা-মায়ের নামে ‘শেখ লুৎফর রহমান ও শেখ সায়েরা খাতুন প্রদর্শনী গ্যালারি’। সহকারী কিউরেটর কাজী আফরিন জাহান জানালেন, ২০১১ সালের ২০ আগস্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে এই অংশটি। ছয়তলা ভবনের পঞ্চম তলায় পাঠাগার ও গবেষণা কেন্দ্র। চতুর্থ থেকে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত (ক্রম অনুসারে ওপর থেকে নিচে) বঙ্গবন্ধুর জীবনের শৈশব থেকে জীবনের বিভিন্ন সময়ের আলোকচিত্র ও বিভিন্ন নিদর্শনের প্রদর্শনী। এক হাজারের বেশি আলোকচিত্র রয়েছে এখানে। এ ছাড়া এই ভবনে আছে একটি ছোট্ট মিলনায়তন। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত জাদুঘর সবার জন্য খেলা।
ফটক পেরিয়ে ভেতরে এলে বাড়ির নিচের তলার বসার ঘরের সামনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি আবক্ষ প্রতিকৃতি। সেখানে সবাই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাঙালির এই অবিসংবাদিত নেতার প্রতি। এই বাড়িতেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল ৪০ বছর আগে। কিন্তু তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে আছেন।
No comments