কাঁদতেও ভুলে গেছে কুড়িগ্রামের মানুষ! by তুহিন ওয়াদুদ
স্বাধীনতার সাড়ে চার দশকে বাংলাদেশে
দারিদ্র্যের হার কমেছে, বেড়েছে শিক্ষিতের হার। রাজধানীর চকচকে গাড়ির বহর
আর আকাশছোঁয়া অট্টালিকা বলে দেয়, দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে অনেকখানি।
দারিদ্র্য-মানচিত্রে অভাবী মানুষের সংখ্যাও কমে আসছে। বেড়েছে জিডিপি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিলে জমার পরিমাণ রেকর্ড করেছে। শিক্ষা-স্বাস্থ্যে
অভাবনীয় উন্নতিও চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো,
বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ২০১০ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গত
বছর বাংলাদেশের দারিদ্র্য-মানচিত্র প্রকাশ করে। সেই গবেষণা অনুযায়ী, দেশে
দারিদ্র্যের হার ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। উন্নয়ন দেশের সর্বত্র সমানভাবে না হওয়ার
কারণে কুড়িগ্রাম জেলায় দারিদ্র্যের হার শতকরা ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ আর
কুষ্টিয়ায় ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানে কুড়িগ্রামের নয়টি উপজেলার
মধ্যে সব উপজেলারই অবস্থা করুণ। কোনো কোনো উপজেলায় ৬৮ শতাংশ পর্যন্ত
দরিদ্র। এসব উপজেলায় হতদরিদ্রের হার প্রায় ৩০ শতাংশ।
বাংলাদেশের সবচেয়ে গরিব জেলা কুড়িগ্রামে ২০ লাখ জনগণের মধ্যে প্রায় ১৩ লাখই দরিদ্র। এই ১৩ লাখের মধ্যে ৯ লাখ মানুষ অতিদরিদ্র। দেশের কোনো মন্ত্রী-সাংসদকে বলতে শোনা যায় না, হতদরিদ্র কুড়িগ্রামবাসীর জন্য সরকারের কোনো করণীয় আছে কি না। কুড়িগ্রামের যে কজন সাংসদ আছেন এবং বিগত সময়ে সাংসদ ছিলেন, তাঁরা কেউই কুড়িগ্রামের উন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি, বরং ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদেরা তাঁদের ব্যবসার কলেবর বৃদ্ধি করেছেন।
স্বাধীনতার সাড়ে চার দশকেও কুড়িগ্রামের অনাহারী বাসন্তীদের তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। রাজনৈতিক ক্ষমতাধরেরা এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। রাষ্ট্রনায়কেরা বরাবরই সম্পদের বৈষম্যপূর্ণ ব্যবহারের দিকে নজর দেননি।
ধনী জেলাগুলো আরও ধনী হতে থাকবে আর গরিব জেলাগুলো আরও গরিব হতে থাকবে? গরিব জেলার প্রতি রাষ্ট্রের কি কোনো দায়িত্ব নেই? সরকারের গবেষণা করে বের করতে হবে কোন উপায়ে কুড়িগ্রামের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে।
সবচেয়ে গরিব জেলা হিসেবে চিহ্নিত কুড়িগ্রামে অভাবী মানুষদের শুধু অর্থ, ত্রাণ দিয়ে অভাব দূর করা যাবে না। সে জন্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশে সবচেয়ে কম দরিদ্র্য বিভাগ হচ্ছে চট্টগ্রাম। দ্বিতীয় কম দরিদ্র বিভাগ সিলেট। বিদেশে শ্রম বিনিয়োগ করতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা এই দুই বিভাগে সবচেয়ে বেশি। সরকারি ব্যবস্থাপনায় যদি কুড়িগ্রামে এমন একটি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র থাকত, যেখানে কুড়িগ্রামের বেকার যুবকেরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বিনা সুদে সরকারি ঋণ নিয়ে বিদেশে যেতে পারতেন, তাহলে এখানকার মানুষের অভাব কমানো সম্ভব হতো। কুড়িগ্রাম থেকে প্রচুর শ্রমিক প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়া-আসা করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসের ছাদে করেই দূরদূরান্তে যান। গরিব জেলার কথা বিবেচনা করেও সরকার দুটি ট্রেন দিতে পারত ঢাকার সঙ্গে কম খরচে যাওয়া-আসার জন্য। কুড়িগ্রামে ছোট-বড় মিলে ১৬টি নদ-নদী রয়েছে। নদীর রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া কুড়িগ্রামের উন্নয়ন অসম্ভব। কুড়িগ্রামে নদীতীরবর্তী মানুষ নয় মাস ধরে যা সঞ্চয় করে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ ক্ষতি সাধিত হয় তিন মাসের বন্যায়।
কুড়িগ্রামের বিত্তহীন মানুষগুলোর মাথার ওপর কয়েকটি করে বেসরকারি সংস্থার ঋণের বোঝা রয়েছে। এই ঋণের বোঝা মওকুফ করা সম্ভব হলে ঋণগ্রহীতারা অনেকটাই নিস্তার পেতেন সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, বিশ্বব্যাংক এবং ইফাদের আয়োজনে ‘দারিদ্র্য মানচিত্রে রংপুর এবং অপুষ্টি মানচিত্রে রংপুর’ শীর্ষক একটি কর্মশালায় উপস্থিত ছিলাম। আয়োজকেরা রংপুর বিভাগের প্রতিটি জেলায় একটি করে, উপজেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন করে খাদ্য কর্মসূচি গ্রহণ করার ঘোষণা দেন। কুড়িগ্রাম থেকে কোন উপজেলা বাছাই করা হবে, এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যানসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে। তখন চিলমারী উপজেলার চেয়ারম্যান শওকত আলী বীর বিক্রম করুণভাবে আবেদন জানাচ্ছিলেন কর্মসূচি তাঁর উপজেলায় দেওয়া হোক। অনেকে অনেক রকম মত দিচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি কিছুতেই ছাড়তে রাজি নন। তিনি বারবার বলছিলেন, প্রতিবছর বন্যার ভাঙনে অসহায় মানুষগুলোর সহায়-সম্বল বলতে কিছুই থাকে না। সে জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খাদ্য কর্মসূচি তাঁর উপজেলায় পাওয়ার জন্য আকুতি জানাচ্ছিলেন।
দেশি ও আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থা কর্তৃক দারিদ্র্য-মানচিত্র প্রকাশের পর বাংলাদেশ সরকারের প্রথমত করণীয় ছিল দেশের জেলাভিত্তিক উন্নয়নবৈষম্য দূরীকরণে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শুধু তা-ই নয়, কোন কোন সূচকে উন্নয়ন ঘটালে স্বাধীনতা-পরবর্তী গ্রহণ করা প্রতিটি বাজেটের বৈষম্য দূর করা যেতে পারে, তার একটি গবেষণা হওয়াও প্রয়োজন ছিল। সরকারের চোখের সামনে একটি জেলা সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত থাকার পরও বৈষম্য দূরীকরণে কোনো উদ্যোগ থাকবে না, তা কী করে সম্ভব? স্বাধীনতার পর কোনো অর্থমন্ত্রী রংপুর আসেননি। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোরশেদ হোসেন রংপুরের উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলেন, ‘২০১২ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবে অর্থমন্ত্রীকে বলেছিলাম দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তো কোনো মন্ত্রী রংপুরে যাননি। এ কথা শুনে তিনি রংপুরে আসবেন কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁরা রংপুর আসেননি।’
কুড়িগ্রামের বিত্তহীন মানুষগুলোর মাথার ওপর কয়েকটি করে বেসরকারি সংস্থার ঋণের বোঝা রয়েছে। এই ঋণের বোঝা মওকুফ করা সম্ভব হলে ঋণগ্রহীতারা অনেকটাই নিস্তার পেতেন।
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল সমস্যা সমাধানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের ১১১টি ছিটমহলের মানুষ বাংলাদেশে থাকার সুযোগ পাচ্ছে। সেই বিবেচনায় শুধু কুড়িগ্রামে প্রায় ১৫ হাজার বেকার-অদক্ষ ভারতীয় কুড়িগ্রামের বাসিন্দা হবে। এতে করে কুড়িগ্রামের দারিদ্র্যের হার আরও বাড়বে।
রংপুর-কুড়িগ্রামের মানুষের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের উন্নয়নবৈষম্য রোধে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে সরকারের কাছে অনুরোধ করার মতো উল্লেখযোগ্য রাজনীতিবিদও নেই। উত্তরাঞ্চলের জনগণকে তাই কাঁদতে হয় নিভৃতে। সে কান্নার শব্দ কিংবা জল কোনোটাই সরকারের কাছে পৌঁছায় না। তাই, কুড়িগ্রামের মানুষ হয়তো কাঁদতেও ভুলে গেছে। একেই বলে অতি শোকে পাথর।
তুহিন ওয়াদুদ: শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
wadudtuhin@gmail.com
বাংলাদেশের সবচেয়ে গরিব জেলা কুড়িগ্রামে ২০ লাখ জনগণের মধ্যে প্রায় ১৩ লাখই দরিদ্র। এই ১৩ লাখের মধ্যে ৯ লাখ মানুষ অতিদরিদ্র। দেশের কোনো মন্ত্রী-সাংসদকে বলতে শোনা যায় না, হতদরিদ্র কুড়িগ্রামবাসীর জন্য সরকারের কোনো করণীয় আছে কি না। কুড়িগ্রামের যে কজন সাংসদ আছেন এবং বিগত সময়ে সাংসদ ছিলেন, তাঁরা কেউই কুড়িগ্রামের উন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি, বরং ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদেরা তাঁদের ব্যবসার কলেবর বৃদ্ধি করেছেন।
স্বাধীনতার সাড়ে চার দশকেও কুড়িগ্রামের অনাহারী বাসন্তীদের তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। রাজনৈতিক ক্ষমতাধরেরা এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। রাষ্ট্রনায়কেরা বরাবরই সম্পদের বৈষম্যপূর্ণ ব্যবহারের দিকে নজর দেননি।
ধনী জেলাগুলো আরও ধনী হতে থাকবে আর গরিব জেলাগুলো আরও গরিব হতে থাকবে? গরিব জেলার প্রতি রাষ্ট্রের কি কোনো দায়িত্ব নেই? সরকারের গবেষণা করে বের করতে হবে কোন উপায়ে কুড়িগ্রামের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে।
সবচেয়ে গরিব জেলা হিসেবে চিহ্নিত কুড়িগ্রামে অভাবী মানুষদের শুধু অর্থ, ত্রাণ দিয়ে অভাব দূর করা যাবে না। সে জন্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশে সবচেয়ে কম দরিদ্র্য বিভাগ হচ্ছে চট্টগ্রাম। দ্বিতীয় কম দরিদ্র বিভাগ সিলেট। বিদেশে শ্রম বিনিয়োগ করতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা এই দুই বিভাগে সবচেয়ে বেশি। সরকারি ব্যবস্থাপনায় যদি কুড়িগ্রামে এমন একটি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র থাকত, যেখানে কুড়িগ্রামের বেকার যুবকেরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বিনা সুদে সরকারি ঋণ নিয়ে বিদেশে যেতে পারতেন, তাহলে এখানকার মানুষের অভাব কমানো সম্ভব হতো। কুড়িগ্রাম থেকে প্রচুর শ্রমিক প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়া-আসা করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসের ছাদে করেই দূরদূরান্তে যান। গরিব জেলার কথা বিবেচনা করেও সরকার দুটি ট্রেন দিতে পারত ঢাকার সঙ্গে কম খরচে যাওয়া-আসার জন্য। কুড়িগ্রামে ছোট-বড় মিলে ১৬টি নদ-নদী রয়েছে। নদীর রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া কুড়িগ্রামের উন্নয়ন অসম্ভব। কুড়িগ্রামে নদীতীরবর্তী মানুষ নয় মাস ধরে যা সঞ্চয় করে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ ক্ষতি সাধিত হয় তিন মাসের বন্যায়।
কুড়িগ্রামের বিত্তহীন মানুষগুলোর মাথার ওপর কয়েকটি করে বেসরকারি সংস্থার ঋণের বোঝা রয়েছে। এই ঋণের বোঝা মওকুফ করা সম্ভব হলে ঋণগ্রহীতারা অনেকটাই নিস্তার পেতেন সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, বিশ্বব্যাংক এবং ইফাদের আয়োজনে ‘দারিদ্র্য মানচিত্রে রংপুর এবং অপুষ্টি মানচিত্রে রংপুর’ শীর্ষক একটি কর্মশালায় উপস্থিত ছিলাম। আয়োজকেরা রংপুর বিভাগের প্রতিটি জেলায় একটি করে, উপজেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন করে খাদ্য কর্মসূচি গ্রহণ করার ঘোষণা দেন। কুড়িগ্রাম থেকে কোন উপজেলা বাছাই করা হবে, এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যানসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে। তখন চিলমারী উপজেলার চেয়ারম্যান শওকত আলী বীর বিক্রম করুণভাবে আবেদন জানাচ্ছিলেন কর্মসূচি তাঁর উপজেলায় দেওয়া হোক। অনেকে অনেক রকম মত দিচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি কিছুতেই ছাড়তে রাজি নন। তিনি বারবার বলছিলেন, প্রতিবছর বন্যার ভাঙনে অসহায় মানুষগুলোর সহায়-সম্বল বলতে কিছুই থাকে না। সে জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খাদ্য কর্মসূচি তাঁর উপজেলায় পাওয়ার জন্য আকুতি জানাচ্ছিলেন।
দেশি ও আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থা কর্তৃক দারিদ্র্য-মানচিত্র প্রকাশের পর বাংলাদেশ সরকারের প্রথমত করণীয় ছিল দেশের জেলাভিত্তিক উন্নয়নবৈষম্য দূরীকরণে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শুধু তা-ই নয়, কোন কোন সূচকে উন্নয়ন ঘটালে স্বাধীনতা-পরবর্তী গ্রহণ করা প্রতিটি বাজেটের বৈষম্য দূর করা যেতে পারে, তার একটি গবেষণা হওয়াও প্রয়োজন ছিল। সরকারের চোখের সামনে একটি জেলা সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত থাকার পরও বৈষম্য দূরীকরণে কোনো উদ্যোগ থাকবে না, তা কী করে সম্ভব? স্বাধীনতার পর কোনো অর্থমন্ত্রী রংপুর আসেননি। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোরশেদ হোসেন রংপুরের উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলেন, ‘২০১২ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবে অর্থমন্ত্রীকে বলেছিলাম দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তো কোনো মন্ত্রী রংপুরে যাননি। এ কথা শুনে তিনি রংপুরে আসবেন কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁরা রংপুর আসেননি।’
কুড়িগ্রামের বিত্তহীন মানুষগুলোর মাথার ওপর কয়েকটি করে বেসরকারি সংস্থার ঋণের বোঝা রয়েছে। এই ঋণের বোঝা মওকুফ করা সম্ভব হলে ঋণগ্রহীতারা অনেকটাই নিস্তার পেতেন।
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল সমস্যা সমাধানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের ১১১টি ছিটমহলের মানুষ বাংলাদেশে থাকার সুযোগ পাচ্ছে। সেই বিবেচনায় শুধু কুড়িগ্রামে প্রায় ১৫ হাজার বেকার-অদক্ষ ভারতীয় কুড়িগ্রামের বাসিন্দা হবে। এতে করে কুড়িগ্রামের দারিদ্র্যের হার আরও বাড়বে।
রংপুর-কুড়িগ্রামের মানুষের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের উন্নয়নবৈষম্য রোধে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে সরকারের কাছে অনুরোধ করার মতো উল্লেখযোগ্য রাজনীতিবিদও নেই। উত্তরাঞ্চলের জনগণকে তাই কাঁদতে হয় নিভৃতে। সে কান্নার শব্দ কিংবা জল কোনোটাই সরকারের কাছে পৌঁছায় না। তাই, কুড়িগ্রামের মানুষ হয়তো কাঁদতেও ভুলে গেছে। একেই বলে অতি শোকে পাথর।
তুহিন ওয়াদুদ: শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
wadudtuhin@gmail.com
No comments