সীমাহীন আনন্দের গোসল by রাসেল আহমেদ
আমার ছোটবেলা কেটেছে গ্রামের বাড়িতে। ছোট একটি গ্রাম, নাম তার কেশরাঙা। খুব অল্প বয়সে মনে প্রশ্ন জেগেছিল আমার, গ্রামের এই নাম কেন? বয়সে যারা বড় তাদেরও জিজ্ঞেস করেছিলাম। কারও কাছে সঠিক উত্তর পাইনি। তবে উত্তর না পেলেও, আমি খুশি এই মিষ্টি নামে। যার অর্থ রঙিন চুল।
আমাদের বাড়িটি ছিল অনেক গাছগাছালি দিয়ে ভরপুর। পাশেই ছিল তিনটি পুকুর ও একটি বিরাট দিঘি। দিঘিটির গভীরতা খুব কম ছিল তখন। চৈত্রের দুপুরে আমদের গোসলের কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম ছিল না। হেঁটে হেঁটে দিঘিটির একপাশ থেকে অন্যপাশে যেতে পারতাম। কোথাও কোমর সমান পানি, কোথাও বুক সমান আবার কোথাও গলা সমান পানি। গরমের দিনে আমাদের গোসল ছিল কমপক্ষে দুই, তিন ঘণ্টা ধরে। সঙ্গে থাকত অনেক বিচিত্র গ্রামীণ জলের খেলার আয়োজন। একটা খেলা ছিল অনেকটা এ রকম—এটা কি মরিচ, এক ডুবে ধরিস, তারপর সবাই মিলে ধরার চেষ্টা চলত।
অনেক দেশ, অনেক শহর, অনেক সুইমিং পুলে গোসল করার ভাগ্য হয়েছে। কিন্তু সেই সীমাহীন আনন্দের গোসল আমি আমার জীবনে আর কোনো দিন করিনি।
আমরা ওটাকে দিঘি বলেই ডাকতাম। সুদূর জার্মানিতে বসে নীরবে আমি আমার দিঘিকে ডাকি, আমার মন খুব দ্রুত চলে যায় চৈত্রের দুপুরের দিঘির পাড়ে। দিঘির উত্তর ও পশ্চিম পাড়ে অনেক বড় জঙ্গল ছিল। দুপুরের প্রচণ্ড রোদে জঙ্গলের গাছের ভেতর থাকত হালকা বাতাস আর ছায়া। কত ঘুরে বেড়িয়েছি সেই জঙ্গলে! ঘুরে ঘুরে আমরা জঙ্গলের গাব ফল, কাউ ফল খেতাম।
গাব ফলটা আমার খুব ভালো লাগত না, কিন্তু গাছ পাকা কাউ ফলটি আমার খুব ভালো লাগত, সাধ ছিল টকমিষ্টি। ফল দুটির শুদ্ধ নাম এটি কি না আমি জানি না। তবে আজকে আর শুদ্ধ কোনো কিছু খুঁজতে ইচ্ছে করছে না। ভুল হলে পাঠক নিজ গুনে ক্ষমা করবেন।
দিঘিতে অনেক মাছ ছিল। যখন জেলেরা জাল ফেলত, অনেক বড় বড় রুই, কাতল, মৃগেল মাছ পাওয়া যেত। আমাদের আর্থিক অবস্থা ছিল মধ্যবিত্ত। তাই বাজার থেকে অনেক বড় রুই আর কাতল মাছ নিয়মিত কেনা হতো না। কিন্তু দিঘিতে জাল ফেলা হলে, সেখান থেকে মাছ ভাগে পেতাম। সারা বাড়ির মানুষ মাছ ভাগ করে নিত। আমার মা সেই মাছগুলো বড় বড় টুকরো করে, পেঁয়াজ দিয়ে মাখা মাখা ঝোল করে রান্না করতেন। আমার মা সেই মাছকে ছোট টুকরো করতেন না। হয়তো ভাবতেন, সুযোগ পেলে সন্তানদের বড় টুকরো খাওয়ালে মন বড় হবে (smile emotion)।
বর্ষার সময় দিঘিটি থাকত পানিতে টইটম্বুর। দিঘির বিশালতা অনেক ছিল, কিন্তু গভীরতা কম ছিল। তাই তো আমার দিঘিটি মনের অজান্তে আমার খুব প্রিয় ছিল। মনে হতো এই দিঘি আর যাই হোক, অন্তত আমাকে ডুবিয়ে মারবে না। আমি জানি না, কেন জানি, আমার মনের ভেতরে সবসময় গভীরতা আর উচ্চতা ভীতি কাজ করে।
দিঘিটি এখন বদলে গেছে। আসলে দিঘি বদলাতে চায়নি। মানুষ জোর বদলিয়েছে, মানুষের প্রয়োজনে আমরা দিঘিটির বুক কেটে ছিঁড়ে গভীর করেছি।
দিঘিটিতে এখন ঝাঁপ দিলে হয়তো আর আমি আগের মতো হেঁটে বেড়াতে পারব না। সেই আমার আনন্দের গোসলও হবে না। তারপর ও আমি ওকে ভালোবাসি, এখন দিঘিটির পাড়ে গিয়ে বসতে চাই।
আমার দিঘি আমাকে কি ডাকে...আমি জানি না, তবে জিজ্ঞেস করতে খুব ইচ্ছে করে। আমি কল্পনা করি, আমার দিঘি আমার পথ চেয়ে আছে, তাকিয়ে আছে নিল আকাশের দিকে, চেয়ে আছে আমার পথের দিকে। আমি ঝাঁপ দিতে চাই, দিঘির বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে উন্মাতাল গোসলে মেতে উঠতে চাই...।
আমাদের বাড়িটি ছিল অনেক গাছগাছালি দিয়ে ভরপুর। পাশেই ছিল তিনটি পুকুর ও একটি বিরাট দিঘি। দিঘিটির গভীরতা খুব কম ছিল তখন। চৈত্রের দুপুরে আমদের গোসলের কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম ছিল না। হেঁটে হেঁটে দিঘিটির একপাশ থেকে অন্যপাশে যেতে পারতাম। কোথাও কোমর সমান পানি, কোথাও বুক সমান আবার কোথাও গলা সমান পানি। গরমের দিনে আমাদের গোসল ছিল কমপক্ষে দুই, তিন ঘণ্টা ধরে। সঙ্গে থাকত অনেক বিচিত্র গ্রামীণ জলের খেলার আয়োজন। একটা খেলা ছিল অনেকটা এ রকম—এটা কি মরিচ, এক ডুবে ধরিস, তারপর সবাই মিলে ধরার চেষ্টা চলত।
অনেক দেশ, অনেক শহর, অনেক সুইমিং পুলে গোসল করার ভাগ্য হয়েছে। কিন্তু সেই সীমাহীন আনন্দের গোসল আমি আমার জীবনে আর কোনো দিন করিনি।
আমরা ওটাকে দিঘি বলেই ডাকতাম। সুদূর জার্মানিতে বসে নীরবে আমি আমার দিঘিকে ডাকি, আমার মন খুব দ্রুত চলে যায় চৈত্রের দুপুরের দিঘির পাড়ে। দিঘির উত্তর ও পশ্চিম পাড়ে অনেক বড় জঙ্গল ছিল। দুপুরের প্রচণ্ড রোদে জঙ্গলের গাছের ভেতর থাকত হালকা বাতাস আর ছায়া। কত ঘুরে বেড়িয়েছি সেই জঙ্গলে! ঘুরে ঘুরে আমরা জঙ্গলের গাব ফল, কাউ ফল খেতাম।
গাব ফলটা আমার খুব ভালো লাগত না, কিন্তু গাছ পাকা কাউ ফলটি আমার খুব ভালো লাগত, সাধ ছিল টকমিষ্টি। ফল দুটির শুদ্ধ নাম এটি কি না আমি জানি না। তবে আজকে আর শুদ্ধ কোনো কিছু খুঁজতে ইচ্ছে করছে না। ভুল হলে পাঠক নিজ গুনে ক্ষমা করবেন।
দিঘিতে অনেক মাছ ছিল। যখন জেলেরা জাল ফেলত, অনেক বড় বড় রুই, কাতল, মৃগেল মাছ পাওয়া যেত। আমাদের আর্থিক অবস্থা ছিল মধ্যবিত্ত। তাই বাজার থেকে অনেক বড় রুই আর কাতল মাছ নিয়মিত কেনা হতো না। কিন্তু দিঘিতে জাল ফেলা হলে, সেখান থেকে মাছ ভাগে পেতাম। সারা বাড়ির মানুষ মাছ ভাগ করে নিত। আমার মা সেই মাছগুলো বড় বড় টুকরো করে, পেঁয়াজ দিয়ে মাখা মাখা ঝোল করে রান্না করতেন। আমার মা সেই মাছকে ছোট টুকরো করতেন না। হয়তো ভাবতেন, সুযোগ পেলে সন্তানদের বড় টুকরো খাওয়ালে মন বড় হবে (smile emotion)।
বর্ষার সময় দিঘিটি থাকত পানিতে টইটম্বুর। দিঘির বিশালতা অনেক ছিল, কিন্তু গভীরতা কম ছিল। তাই তো আমার দিঘিটি মনের অজান্তে আমার খুব প্রিয় ছিল। মনে হতো এই দিঘি আর যাই হোক, অন্তত আমাকে ডুবিয়ে মারবে না। আমি জানি না, কেন জানি, আমার মনের ভেতরে সবসময় গভীরতা আর উচ্চতা ভীতি কাজ করে।
দিঘিটি এখন বদলে গেছে। আসলে দিঘি বদলাতে চায়নি। মানুষ জোর বদলিয়েছে, মানুষের প্রয়োজনে আমরা দিঘিটির বুক কেটে ছিঁড়ে গভীর করেছি।
দিঘিটিতে এখন ঝাঁপ দিলে হয়তো আর আমি আগের মতো হেঁটে বেড়াতে পারব না। সেই আমার আনন্দের গোসলও হবে না। তারপর ও আমি ওকে ভালোবাসি, এখন দিঘিটির পাড়ে গিয়ে বসতে চাই।
আমার দিঘি আমাকে কি ডাকে...আমি জানি না, তবে জিজ্ঞেস করতে খুব ইচ্ছে করে। আমি কল্পনা করি, আমার দিঘি আমার পথ চেয়ে আছে, তাকিয়ে আছে নিল আকাশের দিকে, চেয়ে আছে আমার পথের দিকে। আমি ঝাঁপ দিতে চাই, দিঘির বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে উন্মাতাল গোসলে মেতে উঠতে চাই...।
No comments