দুশ্চিন্তায় পাঁচ মন্ত্রী by দীন ইসলাম
মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার চিন্তায় আছেন সরকারের ডাক সাইটে পাঁচ মন্ত্রী। এর মধ্যে তিন মন্ত্রী নানা কারণে বিতর্কিত। বাকি দুইজন বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়েছেন। গত ৯ই জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি ও গতকাল পুনরায় নতুন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব এবং ১৪ই জুলাই মন্ত্রিসভার কলেবর বাড়ানোর পর থেকে তাদের দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে। সরকারের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে খোঁজ রাখছেন ঈদের পর পরই মন্ত্রী বাদ বা দপ্তর পুনর্বণ্টন হবে কিনা। সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় আছেন এসব মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএস), সহকারী ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (এপিএস) এবং স্টাফরা। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে ‘নিজ মন্ত্রী’র সর্বশেষ অবস্থা জানার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত তিন মন্ত্রী সবচেয়ে বেশি টেনশনে আছেন। এ তালিকায় প্রথমেই নাম থাকা ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া টেনশনে রয়েছেন সবচেয়ে বেশি। নিজ মেয়ের জামাই র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা তারেক সাঈদ নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ চাঞ্চল্যকর ৭ খুনের মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই চাপের মুখে আছেন তিনি। তার মন্ত্রিসভায় থাকার নৈতিক অধিকার নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলে। এদিকে গত ১৪ই জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মায়াকে খালাস করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল করে নতুন করে আপিল শুনানির আদেশ দেয়া হয়েছে। এই আদেশের পর সবমহল থেকেই মায়ার মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্য পদে থাকা না থাকা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে ২০০৭ সালের ১৩ই জুন সম্পদের তথ্য গোপন ও অবৈধভাবে সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে মায়ার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। অন্যদিকে ব্রাজিল থেকে পচা গম আমদানি করে বেকায়দায় পড়েছেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। পচা গম আমদানির প্রক্রিয়া ও এর দর নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মন্ত্রী জাতীয় সংসদে পচা গমের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে আরও সমালোচনার মুখে পড়েন। ফলে ফেব্রুয়ারি থেকেই গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হচ্ছেন তিনি। গত ১৪ই জুলাই নতুন প্রতিমন্ত্রী নূরুজ্জামান আহমেদকে খাদ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়ার পর থেকেই মন্ত্রী কামরুলের ঘুম অনেকটা হারাম হয়ে গেছে বলে মনে করছেন তার ঘনিষ্ঠজনরা। এদিকে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কামরুল ও মায়ার বিতর্কিত ভূমিকার কারণেও তাদের উপর নাখোশ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। এ কারণেও তারা চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। অন্যদের মধ্যে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এবং এলাকায় একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেয়ার কারণে বিতর্কের খাতায় রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি চিকিৎসা ভাতা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তুলেছেন তিনি। এ খবরটিও আছে সরকারের ঊর্ধ্বতনদের কাছে। এসব কারণেও তিনি মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার আলোচনায় রয়েছেন। অন্যদিকে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামানিক ও ভূমিমন্ত্রী শরিফ উদ্দিন খান ডিলু বয়সের কারণে মন্ত্রণালয়ে আসতে কষ্ট হচ্ছে। তারা মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি দলেও সময় দিতে পারেন না। এ কারণেও তাদের ব্যক্তিগত স্টাফরা রয়েছেন চিন্তায়। কারণ মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়লে সমস্যার মুখে পড়তে হবে তাদের। সরকারের উচ্চ পর্যায় সূত্রে জানা গেছে, একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আমলনামার ফাইল এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতে। ঈদের পরই মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দল ও সরকারের ভাবমূর্তি আরও বাড়াতে চান। এরই অংশ হিসেবে মন্ত্রিসভা থেকে কিছু মন্ত্রী বাদ পড়ার পাশাপাশি দপ্তর পুনর্বন্টন হবে এটা অনেকটা নিশ্চিত।
No comments