বড় হচ্ছে ঈদের অর্থনীতি, বেড়েছে কেনার সামর্থ্য by আবুল হাসনাত ও শুভংকর কর্মকার
কার্টুন: শিশির -প্রথম আলো |
সময় অনেকটাই
পাল্টে গেছে। স্বল্প আয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশ সদ্যই নিম্নমধ্য আয়ের দেশে
উন্নীত হয়েছে। মানুষের আয় আগের চেয়ে বেড়েছে। বেড়েছে কেনার সামর্থ্যও। আর এই
কেনার সামর্থ্যকে পুঁজি করে বেড়ে গেছে ঈদকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ। বড়
হচ্ছে ঈদের অর্থনীতিও। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে পরিচালিত অর্থনৈতিক
কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ঈদকেন্দ্রিক এই অর্থনীতির আকার ১৫
থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা। ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতির বিস্তার এখন শাড়ি থেকে
শুরু করে গাড়িতে গিয়েও ঠেকেছে। ঈদের এই অর্থনীতির বিষয়ে জানতে চাইলে
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)
অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন,
মানুষের আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভোগ্যপণ্যের চাহিদায়ও বৈচিত্র্য এসেছে।
ঈদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এত দিন পোশাক আর জুতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন
মানুষ ইলেকট্রনিক পণ্য যেমন কিনছে, তেমনি উপহার দিচ্ছে। আবার অনলাইনে
ব্যবসা (ই-বিজনেস) বেড়েছে, এমনকি দেশে-বিদেশে ভ্রমণেও যাচ্ছে। সিপিডির এই
গবেষক আরও বলেন, ঈদের অর্থনীতির আকার যা-ই হোক না কেন, দেশের
ভেতরে এর মূল্য সংযোজন কতটুকু, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেক পণ্যই এ
উপলক্ষে আমদানি হয়ে আসে। তবে ঈদকে ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি
ঘটায় শহর ও গ্রামে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ঈদকেন্দ্রিক
অর্থনীতির বড় অংশজুড়েই পোশাকেরই রাজত্ব। ঈদ এবং পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করেই
দেশে গড়ে উঠেছে ফ্যাশন হাউসকেন্দ্রিক বেশ বড় দেশীয় পোশাকশিল্প। দেশে সাড়ে
চার হাজারের মতো ফ্যাশন হাউস আছে। এর বেশির ভাগই ঢাকা ও চট্টগ্রামে। ফ্যাশন
হাউসগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমিতির (এফইএবি বা
ফ্যাশন উদ্যোগ) তথ্য অনুযায়ী, দেশের ফ্যাশন হাউসগুলোতে বছরে আনুমানিক ছয়
হাজার কোটি টাকার পোশাক বেচাকেনা হয়। সারা বছর তাঁদের যে ব্যবসা হয়, তার
অর্ধেকই হয় রোজার ঈদে।
এফইএবির পরিচালক (অর্থ) ও ফ্যাশন হাউস রঙ-এর অন্যতম কর্ণধার সৌমিক দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবছরই ফ্যাশন হাউসগুলোর বিক্রি বাড়ছে। এবারও বিক্রি হচ্ছে। তবে যতটা আশা করেছিলাম, ততটা হয়নি।’ এমন অনুকূল পরিবেশেও কেন বিক্রি ভালো হচ্ছে না—জানতে চাইলে সৌমিক দাসের জবাব, ফ্যাশন হাউসগুলো মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। এর বাইরেও ঈদের পোশাকের একটা বিরাট বাজার আছে। সেটি আবার দখল করে আছে ভারত-পাকিস্তান থেকে আসা নানা পোশাক। ওই বাজারটা কত বড়—এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এটা তাঁদের বিক্রির অন্তত তিন গুণ হবে। সব মিলিয়ে এই পোশাকের বাজার ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো বলেই মনে করছেন দেশীয় পোশাকের কয়েকটি বড় পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা। সালোয়ার-কামিজ, শার্ট-প্যান্ট, শাড়ি-লুঙ্গির কাপড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের থান ও গজ কাপড়ের সম্ভার ইসলামপুর এখন দেশের বৃহত্তম কাপড়ের বাজার। ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির নিবন্ধিত ছোট-বড় দোকানের সংখ্যা প্রায় চার হাজার। এর বাইরে আছে আরও দুই হাজার ছোট-মাঝারি দোকান। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইসলামপুরে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ কোটি টাকার কাপড়ের ব্যবসা হয়। ঈদের আগে কখনো কখনো তা শতকোটি টাকায়ও গিয়ে ঠেকে। ইসলামপুরের ব্যবসায়ীদের অনুমান, এখানে বছরে ১৮-২০ হাজার কোটি টাকার পোশাকের বেচাকেনা হয়। এর ৩০-৪০ শতাংশ বিক্রি হয় রোজার মাসে।
জানতে চাইলে ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুস সাত্তার ঢালী প্রথম আলোকে বলেন, এখানকার দোকানগুলোতে শবে বরাতের পর থেকে ১৫ রমজান পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় থাকে। তবে এবার বিক্রি একটু কম। কারণ অনেক ব্যবসায়ীই এখন নরসিংদীর বাবুরহাট এবং রূপগঞ্জের ভুলতা-গাউছিয়া থেকে কাপড় কিনে নিয়ে আনেন। দেশে পাইকারি কাপড়ের আরেক বড় বাজার নরসিংদীর বাবুরহাটে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, থানকাপড়, পাঞ্জাবির কাপড়, গামছা, বিছানার চাদরসহ সব কাপড়ই পাওয়া যায়। এমনিতে এখানে প্রতি শুক্র, শনি ও রোববার হাট বসলেও ঈদের আগে হাট প্রতিদিনই জমজমাট। বাবুরহাট বণিক সমিতির সভাপতি জি এম তালেব হোসেন জানান, গত তিন ঈদে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বেচাকেনা বেশি হয়নি। তবে এবারের বিক্রি ভালো। প্রতি হাটেই সাত-আট শ কোটি টাকার কাপড় বিক্রি হচ্ছে।
ঈদের বাহারি পাদুকা: পোশাকের পর ঈদে বেশি চাহিদা থাকে পাদুকার। পছন্দের স্যান্ডেল ও জুতা ছাড়া যেন ঈদই হয় না। এটি মাথায় রেখেই ঈদুল ফিতরের আগে এবার সারা দেশে অন্তত ২০টি শোরুম খুলেছে পাদুকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। জানা যায়, দেশে প্রতিবছর আনুমানিক ২০ কোটি জোড়া পাদুকা বিক্রি হয়। পাদুকার স্থানীয় বাজার বছরে আনুমানিক চার হাজার কোটি টাকার। সারা বছর যত পাদুকা বিক্রি হয়, তার ৩০ শতাংশ বিক্রি হয় ঈদুল ফিতরে। সে হিসাবে, আনুমানিক ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার পাদুকা বিক্রি হয় ঈদে। এই হিসাব দিয়েছেন পাদুকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বে এম্পোরিয়ামের প্রধান নির্বাহী আবদুল কাদের। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বাটার বিপণন ব্যবস্থাপক থাকাকালে দেশে পাদুকার বাজারের আকার নিয়ে কাজ করেছিলেন তিনি।
শতকোটি ছাড়ানো সেমাইয়ের বাজার: ঈদ আপ্যায়নের অন্যতম অনুষঙ্গ সেমাই। লাচ্ছা সেমাই, বাংলা সেমাইসহ নানা ধরনের সেমাই ঈদের দিন পরিবেশিত হয়। সেমাই প্রস্তুতকারক বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরে দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ কেজি সেমাইয়ের চাহিদা থাকে। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সেমাইয়ের ২০০ গ্রামের প্যাকেট ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সর্বনিম্ন দাম ধরলেও ঈদে সেমাই বেচাকেনা হয় আনুমানিক ১০৫ কোটি টাকার। পুরান ঢাকার কয়েকজন সেমাই ব্যবসায়ী জানান, রাজধানীতে এখনো শতাধিক কারখানায় সেমাই তৈরি হয়। কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বড় বড় ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানও এখন সেমাই তৈরিতে এগিয়ে এসেছে।
কেনার তালিকায় অলংকার: ঈদের পরপরই বিয়েশাদির ধুম পড়ে। তাই অনেকে ঈদের আগেই বিয়ের গয়লা-অলংকার কেনেন। আর ঈদ উপলক্ষে গয়না উপহার দেওয়া তো আছেই। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বলছে, সারা দেশে ১০ হাজার জুয়েলারির দোকান আছে। রমজান মাসে প্রতিটি দোকানে কমবেশি দুই ভরি করে বিক্রি হলেও ২০-২৫ হাজার ভরি স্বর্ণালংকার বেচাকেনা হয়েছে। টাকার অঙ্কে তা দাঁড়ায় ৯০ থেকে ১০০ কোটি। বাজুসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোজার ঈদের পর কোরবানির ঈদ পর্যন্ত অনেক বিয়েশাদির অনুষ্ঠান হয়। এর কার্যাদেশ রমজান মাসেই পান ব্যবসায়ীরা। তাই কম করে হলেও রমজান মাসে ২০-২৫ হাজার ভরি স্বর্ণালংকার বেচাবিক্রি হয়।’
ঈদে এখন নতুন গাড়ি: ঈদ সামনে রেখে লোকজন এখন গাড়িও কেনেন। এর সংখ্যাও কম নয়। এর প্রমাণ মেলে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারক ও বিক্রেতাদের সংগঠন বারভিডার তথ্যে। সংগঠনটি বলছে, এই রমজানে সারা দেশে এ পর্যন্ত ৩৫০টি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বিক্রি এবং কার্যাদেশ পাওয়া গেছে। ঈদ পর্যন্ত তা ৪০০-তে গিয়ে ঠেকবে। বারভিডার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘একেক গাড়ি একেক দামের। তবে গড়ে ২০ লাখ টাকা ধরলে এই ঈদে প্রায় ৮০ কোটি টাকার গাড়ি বিক্রি হয়েছে।’ তবে গত ঈদে গাড়ির ব্যবসা আরও ভালো ছিল বলে জানান বারভিডার সাধারণ সম্পাদক। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত রোজায় ৫০০ থেকে ৫৫০টি গাড়ি বিক্রি হয়। প্রতিটি গাড়ির দাম গড়ে ১৮ লাখ টাকা ধরলে গত বছর অন্তত ৯০ কোটি টাকার গাড়ি বিক্রি হয়।
বেচাকেনা চলে ঈদমেলায়ও: একসময় শুধু পয়লা বৈশাখকে ঘিরে মৌসুমি মেলার আয়োজন করা হতো। এখন একই ধরনের মেলা বসে ঈদুল ফিতরের আগেও। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদের সপ্তাহ খানেক এমন মেলা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক স্থানে মেলা চলে রমজান মাসব্যাপী। এসব মেলায় শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজের পাশাপাশি পাদুকা, ব্যাগসহ অলংকারের বেচাকেনাও চলে। তবে মেলায় কী পরিমাণ পণ্য বেচাকেনা হয়, তার কোনো পরিসংখ্যান মেলেনি। বিভিন্ন পণ্য প্রস্তুতকারকের ধারণা, সাত দিনের এসব মেলায় বেচাবিক্রিও কম হয় না।
এফইএবির পরিচালক (অর্থ) ও ফ্যাশন হাউস রঙ-এর অন্যতম কর্ণধার সৌমিক দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবছরই ফ্যাশন হাউসগুলোর বিক্রি বাড়ছে। এবারও বিক্রি হচ্ছে। তবে যতটা আশা করেছিলাম, ততটা হয়নি।’ এমন অনুকূল পরিবেশেও কেন বিক্রি ভালো হচ্ছে না—জানতে চাইলে সৌমিক দাসের জবাব, ফ্যাশন হাউসগুলো মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। এর বাইরেও ঈদের পোশাকের একটা বিরাট বাজার আছে। সেটি আবার দখল করে আছে ভারত-পাকিস্তান থেকে আসা নানা পোশাক। ওই বাজারটা কত বড়—এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এটা তাঁদের বিক্রির অন্তত তিন গুণ হবে। সব মিলিয়ে এই পোশাকের বাজার ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো বলেই মনে করছেন দেশীয় পোশাকের কয়েকটি বড় পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা। সালোয়ার-কামিজ, শার্ট-প্যান্ট, শাড়ি-লুঙ্গির কাপড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের থান ও গজ কাপড়ের সম্ভার ইসলামপুর এখন দেশের বৃহত্তম কাপড়ের বাজার। ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির নিবন্ধিত ছোট-বড় দোকানের সংখ্যা প্রায় চার হাজার। এর বাইরে আছে আরও দুই হাজার ছোট-মাঝারি দোকান। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইসলামপুরে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ কোটি টাকার কাপড়ের ব্যবসা হয়। ঈদের আগে কখনো কখনো তা শতকোটি টাকায়ও গিয়ে ঠেকে। ইসলামপুরের ব্যবসায়ীদের অনুমান, এখানে বছরে ১৮-২০ হাজার কোটি টাকার পোশাকের বেচাকেনা হয়। এর ৩০-৪০ শতাংশ বিক্রি হয় রোজার মাসে।
জানতে চাইলে ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুস সাত্তার ঢালী প্রথম আলোকে বলেন, এখানকার দোকানগুলোতে শবে বরাতের পর থেকে ১৫ রমজান পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় থাকে। তবে এবার বিক্রি একটু কম। কারণ অনেক ব্যবসায়ীই এখন নরসিংদীর বাবুরহাট এবং রূপগঞ্জের ভুলতা-গাউছিয়া থেকে কাপড় কিনে নিয়ে আনেন। দেশে পাইকারি কাপড়ের আরেক বড় বাজার নরসিংদীর বাবুরহাটে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, থানকাপড়, পাঞ্জাবির কাপড়, গামছা, বিছানার চাদরসহ সব কাপড়ই পাওয়া যায়। এমনিতে এখানে প্রতি শুক্র, শনি ও রোববার হাট বসলেও ঈদের আগে হাট প্রতিদিনই জমজমাট। বাবুরহাট বণিক সমিতির সভাপতি জি এম তালেব হোসেন জানান, গত তিন ঈদে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বেচাকেনা বেশি হয়নি। তবে এবারের বিক্রি ভালো। প্রতি হাটেই সাত-আট শ কোটি টাকার কাপড় বিক্রি হচ্ছে।
ঈদের বাহারি পাদুকা: পোশাকের পর ঈদে বেশি চাহিদা থাকে পাদুকার। পছন্দের স্যান্ডেল ও জুতা ছাড়া যেন ঈদই হয় না। এটি মাথায় রেখেই ঈদুল ফিতরের আগে এবার সারা দেশে অন্তত ২০টি শোরুম খুলেছে পাদুকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। জানা যায়, দেশে প্রতিবছর আনুমানিক ২০ কোটি জোড়া পাদুকা বিক্রি হয়। পাদুকার স্থানীয় বাজার বছরে আনুমানিক চার হাজার কোটি টাকার। সারা বছর যত পাদুকা বিক্রি হয়, তার ৩০ শতাংশ বিক্রি হয় ঈদুল ফিতরে। সে হিসাবে, আনুমানিক ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার পাদুকা বিক্রি হয় ঈদে। এই হিসাব দিয়েছেন পাদুকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বে এম্পোরিয়ামের প্রধান নির্বাহী আবদুল কাদের। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বাটার বিপণন ব্যবস্থাপক থাকাকালে দেশে পাদুকার বাজারের আকার নিয়ে কাজ করেছিলেন তিনি।
শতকোটি ছাড়ানো সেমাইয়ের বাজার: ঈদ আপ্যায়নের অন্যতম অনুষঙ্গ সেমাই। লাচ্ছা সেমাই, বাংলা সেমাইসহ নানা ধরনের সেমাই ঈদের দিন পরিবেশিত হয়। সেমাই প্রস্তুতকারক বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরে দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ কেজি সেমাইয়ের চাহিদা থাকে। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সেমাইয়ের ২০০ গ্রামের প্যাকেট ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সর্বনিম্ন দাম ধরলেও ঈদে সেমাই বেচাকেনা হয় আনুমানিক ১০৫ কোটি টাকার। পুরান ঢাকার কয়েকজন সেমাই ব্যবসায়ী জানান, রাজধানীতে এখনো শতাধিক কারখানায় সেমাই তৈরি হয়। কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বড় বড় ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানও এখন সেমাই তৈরিতে এগিয়ে এসেছে।
কেনার তালিকায় অলংকার: ঈদের পরপরই বিয়েশাদির ধুম পড়ে। তাই অনেকে ঈদের আগেই বিয়ের গয়লা-অলংকার কেনেন। আর ঈদ উপলক্ষে গয়না উপহার দেওয়া তো আছেই। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বলছে, সারা দেশে ১০ হাজার জুয়েলারির দোকান আছে। রমজান মাসে প্রতিটি দোকানে কমবেশি দুই ভরি করে বিক্রি হলেও ২০-২৫ হাজার ভরি স্বর্ণালংকার বেচাকেনা হয়েছে। টাকার অঙ্কে তা দাঁড়ায় ৯০ থেকে ১০০ কোটি। বাজুসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোজার ঈদের পর কোরবানির ঈদ পর্যন্ত অনেক বিয়েশাদির অনুষ্ঠান হয়। এর কার্যাদেশ রমজান মাসেই পান ব্যবসায়ীরা। তাই কম করে হলেও রমজান মাসে ২০-২৫ হাজার ভরি স্বর্ণালংকার বেচাবিক্রি হয়।’
ঈদে এখন নতুন গাড়ি: ঈদ সামনে রেখে লোকজন এখন গাড়িও কেনেন। এর সংখ্যাও কম নয়। এর প্রমাণ মেলে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারক ও বিক্রেতাদের সংগঠন বারভিডার তথ্যে। সংগঠনটি বলছে, এই রমজানে সারা দেশে এ পর্যন্ত ৩৫০টি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বিক্রি এবং কার্যাদেশ পাওয়া গেছে। ঈদ পর্যন্ত তা ৪০০-তে গিয়ে ঠেকবে। বারভিডার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘একেক গাড়ি একেক দামের। তবে গড়ে ২০ লাখ টাকা ধরলে এই ঈদে প্রায় ৮০ কোটি টাকার গাড়ি বিক্রি হয়েছে।’ তবে গত ঈদে গাড়ির ব্যবসা আরও ভালো ছিল বলে জানান বারভিডার সাধারণ সম্পাদক। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত রোজায় ৫০০ থেকে ৫৫০টি গাড়ি বিক্রি হয়। প্রতিটি গাড়ির দাম গড়ে ১৮ লাখ টাকা ধরলে গত বছর অন্তত ৯০ কোটি টাকার গাড়ি বিক্রি হয়।
বেচাকেনা চলে ঈদমেলায়ও: একসময় শুধু পয়লা বৈশাখকে ঘিরে মৌসুমি মেলার আয়োজন করা হতো। এখন একই ধরনের মেলা বসে ঈদুল ফিতরের আগেও। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদের সপ্তাহ খানেক এমন মেলা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক স্থানে মেলা চলে রমজান মাসব্যাপী। এসব মেলায় শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজের পাশাপাশি পাদুকা, ব্যাগসহ অলংকারের বেচাকেনাও চলে। তবে মেলায় কী পরিমাণ পণ্য বেচাকেনা হয়, তার কোনো পরিসংখ্যান মেলেনি। বিভিন্ন পণ্য প্রস্তুতকারকের ধারণা, সাত দিনের এসব মেলায় বেচাবিক্রিও কম হয় না।
No comments