এক মায়ের অন্য রকম ঈদ by মাসুদ আলম
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নূরজাহান বেগম (ডান থেকে দ্বিতীয়)। ছবিটি ১৩ জুলাই তোলা। ছবি: প্রথম আলো |
নূরজাহান
বেগমের ৩৭ বছর ঈদ কেটেছে অনেকটাই নিরানন্দে। ঈদের দিনগুলোতে মনটা খারাপ
থাকত। হয়তো পরিস্থিতির চাপে দুঃখ ভুলতে বাধ্য হয়েছিলেন। এবার ঈদটি তিনি
আনন্দেই কাটাতে চান। কারণ সেই হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে খুঁজে পেয়েছেন তিনি।
দীর্ঘ ৩৭ বছর পর শুনেছেন সেই সন্তানের প্রিয় ডাক ‘মা’।
নূরজাহান বেগমের (৬৫) বাড়ি খুলনার দাকোপ উপজেলার গুনারী গ্রামে। বর্তমানে তিনি বাগেরহাটের মংলা পৌরসভার মিয়াপাড়া বালুরমাঠ এলাকায় বসবাস করেন। তিনি বলেন, ‘৩৭ বছর হন্যে হয়ে ওকে আমি খুঁজেছি। সব সময় মনে হতো মেয়ে আমার বেঁচে আছে। সবচেয়ে ওর জন্য মনটা খারাপ হতো ঈদের দিনে। আমি আমার হারিয়ে যাওয়া মণিকে খুঁজে পেয়েছি। এর চেয়ে বড় খুশি আর কী হতে পারে। এবার ঈদটা আমার আনন্দেই কাটবে।’
নূরজাহান বেগমের ছেলে আবদুস সাত্তার গাজি বলেন, ‘বোনটার জন্য ঈদের দিনগুলোতে মার মন খুব খারাপ থাকত। ও ঘুরে যাওয়ার পর মা বেজায় খুশি। মার এবার ঈদটা ভালোই কাটবে।’ তিনি বলেন, ‘বোনের কাছে আমাদের কোনো প্রত্যাশা নেই। ওকে ফিরে পেয়েছি এটাই অনেক। ও সুখে-শান্তিতে থাকুক এটাই কামনা করি সব সময়।’
মেয়ে আমেনা বেগম বলেন, ‘আমি ও জামিলা পিঠাপিঠি। বুঝতে শিখে যখন শুনেছি ও হারিয়ে গেছে তখন থেকে ওর কথা মনে হলে মনটা খারাপ হতো। ওকে পেয়ে মনটা একদম ভালো হয়ে গেছে। এবার ঈদটা আমার কাছে অনেক আনন্দের।’
নূরজাহান বেগমের (৬৫) এক ছেলে ও চার মেয়ে। সবচেয়ে ছোট সন্তান জন্ম নেওয়ার তিন বছর পর মারা যান স্বামী মোহন গাজি। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে নূরজাহানের। শুরু হয় সন্তানদের নিয়ে তাঁর জীবনযুদ্ধ। কাজ নেন অন্যের বাড়িতে। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দারিদ্র্যের জাঁতাকল নির্দয়ভাবে পিষ্ট নূরজাহান ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারেননি। ছেলে আবদুস সাত্তার গাজিকে লাগিয়েছেন কাজে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন অপরিণত বয়সে। ব্যতিক্রম শুধু ছোট মেয়ে। তিনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। তাও আবার যুক্তরাষ্ট্রে।
নূরজাহানের জঠরে জন্ম নেওয়া চার সন্তান নিরক্ষর, দেশে জীবিকার তাগিদে নিরন্তর সংগ্রাম করে চলেছেন ঠিক তখনই অপর সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চপদে কর্মরত রয়েছেন। সুযোগই বদলে দিয়েছে তাঁর জীবনযাত্রা।
নূরজাহানের সন্তানদের মধ্যে ছেলে আবদুস সাত্তার গাজি (৪৫) সবার বড়। এরপর মেয়ে মনোয়ারা বেগম (৪৩), আনোয়ারা বেগম (৪১), আমেনা বেগম (৩৯) ও জামিলা (৩৭)। দেশে থাকা ছেলে ও তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। ইঞ্জিনচালিত ভ্যান চালান সাত্তার। মংলা পৌরসভার মিয়াপাড়া বালুরমাঠ এলাকায় টিনের ছাপড়ার একটি ছোট্ট ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী, মা, দুই ছেলে, এক মেয়ে, ছেলের বউ ও এক নাতিকে নিয়ে থাকেন তিনি। মনোয়ারা বেগমের বিয়ে হয়েছিল খুলনার কয়রা উপজেলায়। আট বছর আগে তাঁর স্বামী আসগার আলী মারা যাওয়ার পর থেকে দুই ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি থাকেন মংলায় মিয়াপাড়া বালুরমাঠ এলাকায়। শ্রমিকের কাজ করেন মেঘনা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে। মাত্র চার বছর বয়সে মেয়ে আনোয়ারা বেগমের বিয়ে হয়েছিল সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জে। স্বামী রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে দিনমজুরের কাজ করেন আনোয়ারা। আমেনা বেগমের বিয়ে হয়েছে মংলার দিগরাজে। স্বামী হজরত আলী ভ্যান চালান। স্বামী ও দুই মেয়ে নিয়ে আমেনার সংসার।
ছোট মেয়ে জামিলা বর্তমান নাম এস্থার জামিনা জডিং থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। এস্থার পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড ডগলাস হাই স্কুল ও ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। ইউনিভার্সিটি অব ফিনিক্স থেকে করেছেন এমবিএ। বর্তমানে তিনি ইউএস ব্যাংকে বিজনেস সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। স্বামী ল্যান্স জডিং পেশায় একজন কেমিস্ট। স্বামী ও তিন ছেলে জ্যাকসন বারলো (৭), লিংকন বারলো (৬) ও ট্যাফ জর্ডিংকে (৮ মাস) নিয়ে তিনি থাকেন ওয়াশিংটনের ভ্যাঙ্কুভারে।
গত ২৭ জুন এস্থার জামিনা জডিং প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘জন্মের পর প্রথম মাকে পেয়ে আমি ভীষণ খুশি। এ জন্য আমাকে অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। নানা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়েছে। মাকে দেখার অপেক্ষা আর সইছিল না। বারবার গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’
এস্থারের সঙ্গে আসা নাহিদ ব্রাউন এখনো দেশেই আছেন। তিনি জানান, দেশে দশদিন অবস্থানকালে এস্থার মা, ভাই, বোন, কেমন আছ, খোদা হাফেজসহ কিছু বাংলা শিখেছেন। যাওয়ার সময় কিছু বাংলাভাষা শেখার বইও কিনে নিয়ে গেছেন। মা-কে তিনি মাছ ধরতেও নিষেধ করে গেছেন। নাহিদ ব্রাউন জানান, এস্থার মূলত আর্থিক সহায়তার চেয়ে আগে মা ও ভাই-বোনদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে চাইছেন। তাঁদের জন্যও তিনি কিছু করতে চান। এই জন্য যাওয়ার সময় তিনি ভাষা আয়ত্ত করে দুই-তিন বছর পর আবার বাংলাদেশে আসার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। নিয়মিত যোগাযোগের জন্য তাঁর মোবাইল নম্বর দিয়ে গেছেন এবং তাঁদের মোবাইল নম্বর নিয়ে গেছেন।
নূরজাহান বেগমের (৬৫) বাড়ি খুলনার দাকোপ উপজেলার গুনারী গ্রামে। বর্তমানে তিনি বাগেরহাটের মংলা পৌরসভার মিয়াপাড়া বালুরমাঠ এলাকায় বসবাস করেন। তিনি বলেন, ‘৩৭ বছর হন্যে হয়ে ওকে আমি খুঁজেছি। সব সময় মনে হতো মেয়ে আমার বেঁচে আছে। সবচেয়ে ওর জন্য মনটা খারাপ হতো ঈদের দিনে। আমি আমার হারিয়ে যাওয়া মণিকে খুঁজে পেয়েছি। এর চেয়ে বড় খুশি আর কী হতে পারে। এবার ঈদটা আমার আনন্দেই কাটবে।’
নূরজাহান বেগমের ছেলে আবদুস সাত্তার গাজি বলেন, ‘বোনটার জন্য ঈদের দিনগুলোতে মার মন খুব খারাপ থাকত। ও ঘুরে যাওয়ার পর মা বেজায় খুশি। মার এবার ঈদটা ভালোই কাটবে।’ তিনি বলেন, ‘বোনের কাছে আমাদের কোনো প্রত্যাশা নেই। ওকে ফিরে পেয়েছি এটাই অনেক। ও সুখে-শান্তিতে থাকুক এটাই কামনা করি সব সময়।’
মেয়ে আমেনা বেগম বলেন, ‘আমি ও জামিলা পিঠাপিঠি। বুঝতে শিখে যখন শুনেছি ও হারিয়ে গেছে তখন থেকে ওর কথা মনে হলে মনটা খারাপ হতো। ওকে পেয়ে মনটা একদম ভালো হয়ে গেছে। এবার ঈদটা আমার কাছে অনেক আনন্দের।’
নূরজাহান বেগমের (৬৫) এক ছেলে ও চার মেয়ে। সবচেয়ে ছোট সন্তান জন্ম নেওয়ার তিন বছর পর মারা যান স্বামী মোহন গাজি। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে নূরজাহানের। শুরু হয় সন্তানদের নিয়ে তাঁর জীবনযুদ্ধ। কাজ নেন অন্যের বাড়িতে। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দারিদ্র্যের জাঁতাকল নির্দয়ভাবে পিষ্ট নূরজাহান ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারেননি। ছেলে আবদুস সাত্তার গাজিকে লাগিয়েছেন কাজে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন অপরিণত বয়সে। ব্যতিক্রম শুধু ছোট মেয়ে। তিনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। তাও আবার যুক্তরাষ্ট্রে।
নূরজাহানের জঠরে জন্ম নেওয়া চার সন্তান নিরক্ষর, দেশে জীবিকার তাগিদে নিরন্তর সংগ্রাম করে চলেছেন ঠিক তখনই অপর সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চপদে কর্মরত রয়েছেন। সুযোগই বদলে দিয়েছে তাঁর জীবনযাত্রা।
নূরজাহানের সন্তানদের মধ্যে ছেলে আবদুস সাত্তার গাজি (৪৫) সবার বড়। এরপর মেয়ে মনোয়ারা বেগম (৪৩), আনোয়ারা বেগম (৪১), আমেনা বেগম (৩৯) ও জামিলা (৩৭)। দেশে থাকা ছেলে ও তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। ইঞ্জিনচালিত ভ্যান চালান সাত্তার। মংলা পৌরসভার মিয়াপাড়া বালুরমাঠ এলাকায় টিনের ছাপড়ার একটি ছোট্ট ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী, মা, দুই ছেলে, এক মেয়ে, ছেলের বউ ও এক নাতিকে নিয়ে থাকেন তিনি। মনোয়ারা বেগমের বিয়ে হয়েছিল খুলনার কয়রা উপজেলায়। আট বছর আগে তাঁর স্বামী আসগার আলী মারা যাওয়ার পর থেকে দুই ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি থাকেন মংলায় মিয়াপাড়া বালুরমাঠ এলাকায়। শ্রমিকের কাজ করেন মেঘনা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে। মাত্র চার বছর বয়সে মেয়ে আনোয়ারা বেগমের বিয়ে হয়েছিল সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জে। স্বামী রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে দিনমজুরের কাজ করেন আনোয়ারা। আমেনা বেগমের বিয়ে হয়েছে মংলার দিগরাজে। স্বামী হজরত আলী ভ্যান চালান। স্বামী ও দুই মেয়ে নিয়ে আমেনার সংসার।
ছোট মেয়ে জামিলা বর্তমান নাম এস্থার জামিনা জডিং থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। এস্থার পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড ডগলাস হাই স্কুল ও ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। ইউনিভার্সিটি অব ফিনিক্স থেকে করেছেন এমবিএ। বর্তমানে তিনি ইউএস ব্যাংকে বিজনেস সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। স্বামী ল্যান্স জডিং পেশায় একজন কেমিস্ট। স্বামী ও তিন ছেলে জ্যাকসন বারলো (৭), লিংকন বারলো (৬) ও ট্যাফ জর্ডিংকে (৮ মাস) নিয়ে তিনি থাকেন ওয়াশিংটনের ভ্যাঙ্কুভারে।
গত ২৭ জুন এস্থার জামিনা জডিং প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘জন্মের পর প্রথম মাকে পেয়ে আমি ভীষণ খুশি। এ জন্য আমাকে অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। নানা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়েছে। মাকে দেখার অপেক্ষা আর সইছিল না। বারবার গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’
এস্থারের সঙ্গে আসা নাহিদ ব্রাউন এখনো দেশেই আছেন। তিনি জানান, দেশে দশদিন অবস্থানকালে এস্থার মা, ভাই, বোন, কেমন আছ, খোদা হাফেজসহ কিছু বাংলা শিখেছেন। যাওয়ার সময় কিছু বাংলাভাষা শেখার বইও কিনে নিয়ে গেছেন। মা-কে তিনি মাছ ধরতেও নিষেধ করে গেছেন। নাহিদ ব্রাউন জানান, এস্থার মূলত আর্থিক সহায়তার চেয়ে আগে মা ও ভাই-বোনদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে চাইছেন। তাঁদের জন্যও তিনি কিছু করতে চান। এই জন্য যাওয়ার সময় তিনি ভাষা আয়ত্ত করে দুই-তিন বছর পর আবার বাংলাদেশে আসার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। নিয়মিত যোগাযোগের জন্য তাঁর মোবাইল নম্বর দিয়ে গেছেন এবং তাঁদের মোবাইল নম্বর নিয়ে গেছেন।
No comments