এই কষ্টেও আছে খুশির ঝিলিক by ইমরান আহম্মেদ
ভারী
সব ব্যাগ। কারও কাঁধে, কারওবা হাতে। মাথায় বস্তা নিয়ে কেউবা দাঁড়িয়ে।
ছেলে-বুড়ো কারও হাতই খালি নেই। সবার অপেক্ষা—কখন আসবে গাড়ি, ফিরবে বাড়ি,
প্রিয়জনের হাতে তুলে দেবে অনেক প্রতীক্ষার উপহার। গত বৃহস্পতিবার রাত নয়টায়
দিকে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ লাইনসের সামনে ঘরমুখো ব্যাকুল মানুষের এই অপেক্ষা
দেখা যায়। সবাই বিভিন্ন পোশাক কারখানার কর্মী। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে
পোশাক কারখানার কাজ শেষ হওয়ার পর তড়িঘড়ি করে ভাড়া বাসায় ফেরেন। বাড়ি যাওয়ার
জন্য তাঁদের আগাম টিকিট কাটার সুযোগ হয়নি। তাই ঝটপট প্রস্তুতি নিয়ে বেরিয়ে
পড়া।
পুলিশ লাইনসের প্রবেশদ্বারের পশ্চিম পাশে প্রায় ১০০ জনের জটলা। অপেক্ষায় থেকে থেকে ক্লান্ত নারী ও শিশু অনেকে বসে পড়েছেন। জামিলা খাতুন নামের এক নারী বললেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে যাবেন। সেখানেই তাঁর বাড়ি। তিনি জানান, শাহজাদপুরের কয়েকটি গ্রামের বেশ কিছু লোক একসঙ্গে নারায়ণগঞ্জে থাকেন। তাঁরা বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কাজ করেন। সন্ধ্যা সাতটা থেকে গাড়ির অপেক্ষায় তাঁরা। রাত নয়টা বেজে গেছে, তবু গাড়ির দেখা নেই।
পুলিশ লাইনসের প্রবেশদ্বারের পশ্চিম পাশে প্রায় ১০০ জনের জটলা। অপেক্ষায় থেকে থেকে ক্লান্ত নারী ও শিশু অনেকে বসে পড়েছেন। জামিলা খাতুন নামের এক নারী বললেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে যাবেন। সেখানেই তাঁর বাড়ি। তিনি জানান, শাহজাদপুরের কয়েকটি গ্রামের বেশ কিছু লোক একসঙ্গে নারায়ণগঞ্জে থাকেন। তাঁরা বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কাজ করেন। সন্ধ্যা সাতটা থেকে গাড়ির অপেক্ষায় তাঁরা। রাত নয়টা বেজে গেছে, তবু গাড়ির দেখা নেই।
পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে খোলা ছাদের পিকআপ ভ্যানে চড়ে বাড়ি ফিরছেন পোশাক কারখানার কয়েকজন কর্মী। ছবিটি বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনসের সামনে থেকে তোলা। ছবি: ইমরান আহম্মেদ |
একটু
পুবে এগোতেই একটি খোলা পিকআপ ভ্যান চোখে পড়ল। নারী ও শিশুসহ ২৪ জন
গাদাগাদি করে বসেছেন সেখানে। অবস্থা নট-নড়নচড়ন। বস্তা ও ব্যাগের স্তূপও
রয়েছে। সামনের দিকে ছাদেও বসে আছেন কয়েকজন। এর পরও চালকের গাড়িটি ছাড়ার নাম
নেই। আরও যাত্রী চাই। তাদের ঠাঁই কোথায় হবে, তা চালকই জানেন।
পিকআপে বসে দরদর করে ঘামছিলেন হিরা বেগম (৩৫)। জানালেন, ৪০০ টাকা ভাড়া দিয়ে টাঙ্গাইলের নাগরপুর যাচ্ছেন। স্বামী নেই তাঁর। ১০ বছরের একমাত্র ছেলেকে নাগরপুরে মায়ের কাছে রেখে নারায়ণগঞ্জে কাজে এসেছেন। ছয় মাস ধরে কাজ করছেন। এর মধ্যে একবারের জন্যও ছেলেকে দেখতে যাওয়া হয়নি। ঈদে সপ্তাহ খানেক ছুটি পেয়েছেন। এমন ছুটি পোশাক কারখানায় কমই জোটে। অল্প দিনের চাকরিতে মাত্র ৬০০ টাকা বোনাস পেয়েছেন। তা দিয়ে মা ও ছেলের জন্য ঈদের পোশাক কিনেছেন। তাঁর কথা, ‘এই যাত্রা যত কষ্টেরই হোক, বাড়ি ফিলে ছেলের মুখ দেখলে সব মুছে যাবে।’
দীর্ঘ পথে অনেক যাত্রীকেই প্রাকৃতিক কাজ সাড়া নিয়ে বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গুটিকয়েক পেট্রলপাম্পের শৌচাগার এ ক্ষেত্রে ভরসা। এ ব্যাপারে সুখী বেগম বলেন, ‘এই কষ্টের কতা আর কইয়েন না, বাজান!’
পিকআপে বসে দরদর করে ঘামছিলেন হিরা বেগম (৩৫)। জানালেন, ৪০০ টাকা ভাড়া দিয়ে টাঙ্গাইলের নাগরপুর যাচ্ছেন। স্বামী নেই তাঁর। ১০ বছরের একমাত্র ছেলেকে নাগরপুরে মায়ের কাছে রেখে নারায়ণগঞ্জে কাজে এসেছেন। ছয় মাস ধরে কাজ করছেন। এর মধ্যে একবারের জন্যও ছেলেকে দেখতে যাওয়া হয়নি। ঈদে সপ্তাহ খানেক ছুটি পেয়েছেন। এমন ছুটি পোশাক কারখানায় কমই জোটে। অল্প দিনের চাকরিতে মাত্র ৬০০ টাকা বোনাস পেয়েছেন। তা দিয়ে মা ও ছেলের জন্য ঈদের পোশাক কিনেছেন। তাঁর কথা, ‘এই যাত্রা যত কষ্টেরই হোক, বাড়ি ফিলে ছেলের মুখ দেখলে সব মুছে যাবে।’
দীর্ঘ পথে অনেক যাত্রীকেই প্রাকৃতিক কাজ সাড়া নিয়ে বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গুটিকয়েক পেট্রলপাম্পের শৌচাগার এ ক্ষেত্রে ভরসা। এ ব্যাপারে সুখী বেগম বলেন, ‘এই কষ্টের কতা আর কইয়েন না, বাজান!’
আরেকটু
সামনে চোখে পড়ল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কপথের বন্ধন পরিবহনের একটি বাস। পাশে
পাওয়া গেল সাইদউদ্দিনকে। তিনিও পোশাক কারখানার কর্মী। বাড়ি বগুড়ার
শাজাহানপুরে। তিনি আসার আগেই ভাড়া করা গাড়িটির সব আসন দখল হয়ে গেছে। ভেতরে
দাঁড়ানোর অবস্থা নেই। তাই ছাদে বসে যেতে হবে। ব্যাগটা রেখে এর মধ্যে ছাদের
জায়গা দখল করেছেন।
দলবেঁধে এমন ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফেরা নিয়ে সাইদ বলেন, আসলে এঁরা সবাই কোনো না কোনো পোশাক কারখানায় কাজ করেন। বছরে দুই ঈদে কেবল এক সপ্তাহ করে ছুটি পাওয়া যায়। কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় অনেকে ওই ঈদে বাড়ি যান না। এই ঈদে বোনাস হিসেবে কিছু টাকা পাওয়া গেছে। তা দিয়ে প্রিয়জনদের জন্য কিছু কিনেছেন। তাই কষ্ট হলেও বাড়ি ফিরতে তাঁরা উদগ্রীব।
মাসদাইর কবরস্থান এলাকায় আরেকটি ছাদখোলা পিকআপে প্রায় ৩০ জন ঠেসেঠুসে বসে আছেন। পেছনের দিকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসেছেন ছয়জন। জাকির নামের এক যাত্রী জানান, জামালপুর যাবেন। চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করতেই তিনি বলেন, ‘সমস্যা নাই। অভ্যাস আছে।’
কথা বলার সময় বৃষ্টি শুরু হলো। ছাতাহীন ঘরমুখো মানুষেরা অসহায়ভাবে ভিজতে লাগলেন। তবু জাকিরের চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। বললেন, ‘দোয়া করবেন, সহিসালামতে যেন বাড়ি যাইতে পারি। বৃষ্টি যেন আর না হয়।’
দলবেঁধে এমন ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফেরা নিয়ে সাইদ বলেন, আসলে এঁরা সবাই কোনো না কোনো পোশাক কারখানায় কাজ করেন। বছরে দুই ঈদে কেবল এক সপ্তাহ করে ছুটি পাওয়া যায়। কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় অনেকে ওই ঈদে বাড়ি যান না। এই ঈদে বোনাস হিসেবে কিছু টাকা পাওয়া গেছে। তা দিয়ে প্রিয়জনদের জন্য কিছু কিনেছেন। তাই কষ্ট হলেও বাড়ি ফিরতে তাঁরা উদগ্রীব।
মাসদাইর কবরস্থান এলাকায় আরেকটি ছাদখোলা পিকআপে প্রায় ৩০ জন ঠেসেঠুসে বসে আছেন। পেছনের দিকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসেছেন ছয়জন। জাকির নামের এক যাত্রী জানান, জামালপুর যাবেন। চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করতেই তিনি বলেন, ‘সমস্যা নাই। অভ্যাস আছে।’
কথা বলার সময় বৃষ্টি শুরু হলো। ছাতাহীন ঘরমুখো মানুষেরা অসহায়ভাবে ভিজতে লাগলেন। তবু জাকিরের চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। বললেন, ‘দোয়া করবেন, সহিসালামতে যেন বাড়ি যাইতে পারি। বৃষ্টি যেন আর না হয়।’
No comments