ঈদ ও আত্মহত্যা by মাজহার মুনতাসসির
ঈদ
মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে পরিবার, বন্ধ, স্বজন সবার সাথে সুখের
সময়টুকু ভাগ করে নেয়া। ঈদের সময় সড়ক, নৌ ও রেলপথে গাঁয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য
মানুষ কতই না কষ্ট শিকার করে। শুধুমাত্র মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনের
সাথে ঈদ কাটানোর জন্য।
উৎসব উপলক্ষে বিশেষ করে রমযানের ঈদের সময় ধনী-গরিব সবাই চেষ্টা করে নতুন জামা কেনার জন্য। যে যার সাধ্যমত জামা কাপড় কিনে থাকে। অনেকে আবার নিজের পরিবারের পাশাপাশি আশপাশের গরিব প্রতিবেশিদেরও জামা, সেমাই-চিনি কিনে দিয়ে ঈদের খুশিতে অংশীদার করে। এ যেন বন্ধনের অনুপম নিদর্শন।
এবার আসা যাক উপরের শিরোনামের কথায়। ঈদের সাথে আত্মহত্যার কি সম্পর্ক। মানুষ আত্মহত্যা করে বিষাদে বা বেদনায়। আনন্দের সাথে তো আত্মহত্যার কোন সম্পর্কই থাকতে পারেনা। কিন্তু গত বছরের রমযানের ঈদের সময় যে আত্মহত্যার রেওয়াজ চালু হয়েছিল এবার ঈদ না আসলেও ইতিমধ্যে রোজার ভেতর আত্মহত্যা শুরু হয়ে গেছে।
বাংলার ঘরে ঘরে বঙ্গনারীদের কাছে শাড়ির চেয়ে যেটা সবচেয়ে প্রিয় সেটা হচ্ছে ভারতীয় কয়েকটা চ্যানেলের সপ্তাহের ৬ দিনব্যাপী সিরিয়াল। একদিন সিরিয়াল না দেখলে তাদের দৈনন্দিন কাজ যেন শেষ হয় না। সিরিয়াল যে বঙ্গনারীদের স্বামী-সন্তানের চেয়ে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মানে ‘জীবন মানে জি-বাংলা’।
গত বছর রোজার ঈদের বাজারে সয়লাব হয়ে গিয়েছিল পাখি নাম একটি যাদুগরি জামা। যে জামা গায়ে দিলে তরুণীরা সব হয়ে যাবে ওই সিরিয়ালের পাখি। পাখি হলেই কাছে পাওয়া যাবে ওই সিরিয়ালের নায়ক অরণ্যকে। সিরিয়ালের বিষয়ে না গিয়ে পাঠকদের স্বরণ করিয়ে দিই শুধু মাত্র এই পাখি জামার জন্য ৭ম শ্রেণির ছাত্রী থেকে শুরু করে ৩০ উর্ধ্ব নারীও আত্মহত্যা করতে পিছ পা হয়নি। সবচেয়ে নাটকীয় দৃশ্য দেখা গেছে পাখি জামার জন্য স্বামীকে তালাক দিয়ে সিনেমার মত স্ত্রী ডায়ালগ ছুড়ে বলে, ‘দেখিস এই পাখি জামা পড়ে আমার নতুন স্বামী নিয়ে তোর বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যাব’। খুবই এক্সাইটিং না।
গত বছর এই ঘটনার পর কয়েকটা মহল ছাড়া সর্ব মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। আমাদের নীতি নির্ধারকরা এই বিষয়টা নিয়ে বিবৃতি তো দূরের কথা কোন টু শব্দও করেনি। তাদের অভিব্যক্তি গেলে কোম্পানির যাবে তাতে আমার কি। আর আমাদের চলচ্চিত্র, নাটক, মডেলিং এর তারকার তো সবচেয়ে বেশি দেউলিয়া। তারা অভিনয়ের সময় ভারতীয় তারকার যেটা গায়ে দিয়ে ফেলে দেয় সেটাই লেটেস্ট মাল মনে করে গায়ে জড়িয়ে অভিনয় কওে আর তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। তাই গত বছরের পাখি ড্রেস নিয়ে এমন ঘটনার পর আমাদের তারকারা দাঁত কেলিয়ে মুচকি মুচকি হাসছিল। তাদের কাছে মনে হচ্ছিল এটা একটা কমেডি ড্রামা।
আমাদের তারকাদের কাছে নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি বলতে কিছু নেই। সবই আকাশ সংস্কৃতির দান। তাই সালমান শাহ মারা যাওয়ার পর সারা বাংলাদেশে যেভাবে ভক্তরা নিজের জীবনকে বলিদান দিয়েছিল সেটার নজির এখনো বিরল। আর বর্তমান সময়ের স্ব-ঘোষিত কিং খান আর কুইনরা যদি মারা যান তবে তাদের জন্য বাংলার কোনায় কোনায় খোঁজ করে চোখের জল ফেলার কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ আছে।
গতবার আত্মহত্যার ক্লু ছিল পাখি আর এবারের ক্লু হল কিরণমালা। অলরেডি কিরণমালার জন্য আত্মহত্যার সিরিয়াল শুরু হয়েছিল। তবে কোথায় গিয়ে এই সিরিয়াল শেষ হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।
ভিনদেশিয় সংস্কৃতিতে প্রভাবিত হয়ে আমরা হারাচ্ছি আমাদের নিজস্ব স্বকীয়তা। এই জগাখিচুরি মার্কা চ্যানের বন্ধের ব্যাপারে কোন সম্ভাবনা দেখছি না। কারণ এগুলো বন্ধ হলে আমাদের নির্মাতারা কোথা থেকে উনাদের নাটক-চলচ্চিত্রের জন্য মশলাপাতি জোগার করবেন।
দেশিয় প্রেক্ষাগৃহে ভিনদেশি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হলে লোক দেখানো কিছু প্রতিবাদ করতে দেখা যায় পরে আবার তারাই গিয়ে ওই সিনেমাটি দেখে আর সাধারণ দর্শকদের সাথে তালি দিয়ে বলে ‘ইয়া লারা কিয়া মারা তুনে’।
জানিনা আপামর মানুষ সচেতন হবে কিনা। তবে একটাই কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি সেটা হলো ‘আশায় বাঁধিয়াছি ঘর, একদিন না একদিন আঁধার কাটিয়া আসিবে অবশ্যই আসিবে ভোর’।
সেই সোনালী ভোরের প্রতীক্ষায় রইলাম।
উৎসব উপলক্ষে বিশেষ করে রমযানের ঈদের সময় ধনী-গরিব সবাই চেষ্টা করে নতুন জামা কেনার জন্য। যে যার সাধ্যমত জামা কাপড় কিনে থাকে। অনেকে আবার নিজের পরিবারের পাশাপাশি আশপাশের গরিব প্রতিবেশিদেরও জামা, সেমাই-চিনি কিনে দিয়ে ঈদের খুশিতে অংশীদার করে। এ যেন বন্ধনের অনুপম নিদর্শন।
এবার আসা যাক উপরের শিরোনামের কথায়। ঈদের সাথে আত্মহত্যার কি সম্পর্ক। মানুষ আত্মহত্যা করে বিষাদে বা বেদনায়। আনন্দের সাথে তো আত্মহত্যার কোন সম্পর্কই থাকতে পারেনা। কিন্তু গত বছরের রমযানের ঈদের সময় যে আত্মহত্যার রেওয়াজ চালু হয়েছিল এবার ঈদ না আসলেও ইতিমধ্যে রোজার ভেতর আত্মহত্যা শুরু হয়ে গেছে।
বাংলার ঘরে ঘরে বঙ্গনারীদের কাছে শাড়ির চেয়ে যেটা সবচেয়ে প্রিয় সেটা হচ্ছে ভারতীয় কয়েকটা চ্যানেলের সপ্তাহের ৬ দিনব্যাপী সিরিয়াল। একদিন সিরিয়াল না দেখলে তাদের দৈনন্দিন কাজ যেন শেষ হয় না। সিরিয়াল যে বঙ্গনারীদের স্বামী-সন্তানের চেয়ে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মানে ‘জীবন মানে জি-বাংলা’।
গত বছর রোজার ঈদের বাজারে সয়লাব হয়ে গিয়েছিল পাখি নাম একটি যাদুগরি জামা। যে জামা গায়ে দিলে তরুণীরা সব হয়ে যাবে ওই সিরিয়ালের পাখি। পাখি হলেই কাছে পাওয়া যাবে ওই সিরিয়ালের নায়ক অরণ্যকে। সিরিয়ালের বিষয়ে না গিয়ে পাঠকদের স্বরণ করিয়ে দিই শুধু মাত্র এই পাখি জামার জন্য ৭ম শ্রেণির ছাত্রী থেকে শুরু করে ৩০ উর্ধ্ব নারীও আত্মহত্যা করতে পিছ পা হয়নি। সবচেয়ে নাটকীয় দৃশ্য দেখা গেছে পাখি জামার জন্য স্বামীকে তালাক দিয়ে সিনেমার মত স্ত্রী ডায়ালগ ছুড়ে বলে, ‘দেখিস এই পাখি জামা পড়ে আমার নতুন স্বামী নিয়ে তোর বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যাব’। খুবই এক্সাইটিং না।
গত বছর এই ঘটনার পর কয়েকটা মহল ছাড়া সর্ব মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। আমাদের নীতি নির্ধারকরা এই বিষয়টা নিয়ে বিবৃতি তো দূরের কথা কোন টু শব্দও করেনি। তাদের অভিব্যক্তি গেলে কোম্পানির যাবে তাতে আমার কি। আর আমাদের চলচ্চিত্র, নাটক, মডেলিং এর তারকার তো সবচেয়ে বেশি দেউলিয়া। তারা অভিনয়ের সময় ভারতীয় তারকার যেটা গায়ে দিয়ে ফেলে দেয় সেটাই লেটেস্ট মাল মনে করে গায়ে জড়িয়ে অভিনয় কওে আর তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। তাই গত বছরের পাখি ড্রেস নিয়ে এমন ঘটনার পর আমাদের তারকারা দাঁত কেলিয়ে মুচকি মুচকি হাসছিল। তাদের কাছে মনে হচ্ছিল এটা একটা কমেডি ড্রামা।
আমাদের তারকাদের কাছে নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি বলতে কিছু নেই। সবই আকাশ সংস্কৃতির দান। তাই সালমান শাহ মারা যাওয়ার পর সারা বাংলাদেশে যেভাবে ভক্তরা নিজের জীবনকে বলিদান দিয়েছিল সেটার নজির এখনো বিরল। আর বর্তমান সময়ের স্ব-ঘোষিত কিং খান আর কুইনরা যদি মারা যান তবে তাদের জন্য বাংলার কোনায় কোনায় খোঁজ করে চোখের জল ফেলার কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ আছে।
গতবার আত্মহত্যার ক্লু ছিল পাখি আর এবারের ক্লু হল কিরণমালা। অলরেডি কিরণমালার জন্য আত্মহত্যার সিরিয়াল শুরু হয়েছিল। তবে কোথায় গিয়ে এই সিরিয়াল শেষ হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।
ভিনদেশিয় সংস্কৃতিতে প্রভাবিত হয়ে আমরা হারাচ্ছি আমাদের নিজস্ব স্বকীয়তা। এই জগাখিচুরি মার্কা চ্যানের বন্ধের ব্যাপারে কোন সম্ভাবনা দেখছি না। কারণ এগুলো বন্ধ হলে আমাদের নির্মাতারা কোথা থেকে উনাদের নাটক-চলচ্চিত্রের জন্য মশলাপাতি জোগার করবেন।
দেশিয় প্রেক্ষাগৃহে ভিনদেশি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হলে লোক দেখানো কিছু প্রতিবাদ করতে দেখা যায় পরে আবার তারাই গিয়ে ওই সিনেমাটি দেখে আর সাধারণ দর্শকদের সাথে তালি দিয়ে বলে ‘ইয়া লারা কিয়া মারা তুনে’।
জানিনা আপামর মানুষ সচেতন হবে কিনা। তবে একটাই কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি সেটা হলো ‘আশায় বাঁধিয়াছি ঘর, একদিন না একদিন আঁধার কাটিয়া আসিবে অবশ্যই আসিবে ভোর’।
সেই সোনালী ভোরের প্রতীক্ষায় রইলাম।
No comments