পুরুষকে মানুষ করো, বাঙালিকে সভ্য by আনিসুল হক
বহুদিন
আগে একজন তরুণী আমাকে বলেছিলেন, আপনারা, পুরুষেরা কখনোই আমাদের বেদনাটা
বুঝবেন না। একটা ছোট উদাহরণ দিই। চৈত্রের রাত ১১টায় ধরুন বিদ্যুৎ নেই, গরমে
ছটফট করতে করতে আপনি ভাবলেন, যাই, ঘর থেকে বেরিয়ে একটু রাস্তায় যাই, হাওয়া
খেয়ে আসি, আপনি চাইলে একটা স্যান্ডো গেঞ্জি পরে এটা করতে পারবেন, কিন্তু
আমি কি সেটা পারব? রাত ১১টায় একটা ২৫ বছরের তরুণী রাস্তায় পায়চারি করছেন,
শুধু ঘরে প্রচণ্ড গরম বলে, এটা কি এই দেশে হওয়ার জো আছে?
আমি উত্তর দিতে পারিনি। সেই সামান্য না পারার অসামান্য বেদনাটা বুঝে চলার চেষ্টা করছি আজও।
একদিন আমার ছোট্ট মেয়েটি, আমার হাত ধরে রিকশায় করে ফিরছিল স্কুল থেকে, ধানমন্ডি ৮ নম্বরের খেলার মাঠের দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা, কত ছেলে ক্রিকেট খেলছে, ফুটবল খেলছে, এর মধ্যে একজনও মেয়ে নেই কেন?
আমার বুক বিদীর্ণ হয়ে গিয়েছিল, এই প্রশ্নের কী জবাব আমি দেব আমার চার-পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে?
আমি ভিতু ধরনের মানুষ। আপনাদের কাছে আমি স্বীকার করি, আমার মেয়েকে আমি কোনো দিন কোনো ভিড়ের অনুষ্ঠানে নিয়ে যাইনি। আমার ফোবিয়া আছে, ভিড়-আতঙ্ক, বলা ভালো, পুরুষদের ভিড়ের আতঙ্ক। আমরা একবার কয়েকটা নিকটাত্মীয় পরিবার আজমির শরিফ গিয়েছিলাম, মাজারঘরটা ছোট, সেখানে নারী-পুরুষ গিজগিজ করছে, এক দরজা দিয়ে ঢুকে আরেক দরজা দিয়ে বেরোতে হয়, আমার মেয়ের হাত আমার মুঠোয়, দরজায় পা রেখেই আমি মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম।
কিন্তু আমার স্ত্রীকে নিয়ে, তাঁর হাত ধরে আমি অনেক জায়গায় যাই, যেখানে ভিড় আছে। বইমেলায়, কিংবা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ধরা যাক, ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গিয়েছি। বাংলাদেশ জয়লাভ করেছে। বন্ধুবান্ধবও সঙ্গে আছে। আনন্দ করতে করতে ফিরছি। ফেরার পর গাড়িতে উঠে অবধারিতভাবেই স্ত্রী বলবেন, পুরুষ কোনো দিনও মানুষ হবে না। ভিড়ের মধ্যে নারী পেলে পুরুষ পশু হয়ে যায়।
কী জানি, পশু বললে পশুদের অপমান করা হয় কি না।
পশুদের সমাজে কি যৌন হয়রানি আছে? ইভ টিজিং আছে? ভিড়ের মধ্যে পুরুষ পশুরা নারী পশুর গায়ে থাবা দেয়? পশুরা কাপড় পরে না, পরলে পুরুষ পশু নারী পশুর কাপড় কি ছিঁড়ে ফেলত?
ইভ টিজিং কিছুদিন আগে আমাদের জাতীয় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। কয়েকটা হত্যা ও আত্মহত্যার ঘটনার পরে সরকারকে জনপদে জনপদে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে হয়েছিল।
আমি মনোবিদ নই। মনোবিদ ও সমাজবিদেরা বলতে পারবেন, এই রোগটা কী রোগ? বাঙালি পুরুষ ভিড়ের মধ্যে কেন পশুরও অধম হয়ে ওঠে? কেন তাদের লেজ গজায়, থাবা প্রশস্ত হয়, নখর বেরিয়ে আসে, জিব লকলক করে, মাংসাশী দাঁত আগ্রাসী হয়ে ওঠে? এইটা কোন ধরনের আনন্দ? কী চরিতার্থ হয় এতে? একটা মেয়েকে অসহায় ভিকটিমে পরিণত করে কতগুলো থাবা হামলে পড়ে তার শরীরে, এমনকি ছিঁড়ে ফেলে তার পোশাক? এইটা কি যৌন-আনন্দ? নাকি স্যাডিজম? একটা লোক বিকৃতমনা হতে পারে, স্যাডিস্ট হতে পারে, কিন্তু একদল ছেলেপুলে একযোগে কী করে হিংস্র পশু হয়ে ওঠে? তা-ও এক মুহূর্তের জন্য নয়।
আমি উত্তর দিতে পারিনি। সেই সামান্য না পারার অসামান্য বেদনাটা বুঝে চলার চেষ্টা করছি আজও।
একদিন আমার ছোট্ট মেয়েটি, আমার হাত ধরে রিকশায় করে ফিরছিল স্কুল থেকে, ধানমন্ডি ৮ নম্বরের খেলার মাঠের দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা, কত ছেলে ক্রিকেট খেলছে, ফুটবল খেলছে, এর মধ্যে একজনও মেয়ে নেই কেন?
আমার বুক বিদীর্ণ হয়ে গিয়েছিল, এই প্রশ্নের কী জবাব আমি দেব আমার চার-পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে?
আমি ভিতু ধরনের মানুষ। আপনাদের কাছে আমি স্বীকার করি, আমার মেয়েকে আমি কোনো দিন কোনো ভিড়ের অনুষ্ঠানে নিয়ে যাইনি। আমার ফোবিয়া আছে, ভিড়-আতঙ্ক, বলা ভালো, পুরুষদের ভিড়ের আতঙ্ক। আমরা একবার কয়েকটা নিকটাত্মীয় পরিবার আজমির শরিফ গিয়েছিলাম, মাজারঘরটা ছোট, সেখানে নারী-পুরুষ গিজগিজ করছে, এক দরজা দিয়ে ঢুকে আরেক দরজা দিয়ে বেরোতে হয়, আমার মেয়ের হাত আমার মুঠোয়, দরজায় পা রেখেই আমি মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম।
কিন্তু আমার স্ত্রীকে নিয়ে, তাঁর হাত ধরে আমি অনেক জায়গায় যাই, যেখানে ভিড় আছে। বইমেলায়, কিংবা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ধরা যাক, ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গিয়েছি। বাংলাদেশ জয়লাভ করেছে। বন্ধুবান্ধবও সঙ্গে আছে। আনন্দ করতে করতে ফিরছি। ফেরার পর গাড়িতে উঠে অবধারিতভাবেই স্ত্রী বলবেন, পুরুষ কোনো দিনও মানুষ হবে না। ভিড়ের মধ্যে নারী পেলে পুরুষ পশু হয়ে যায়।
কী জানি, পশু বললে পশুদের অপমান করা হয় কি না।
পশুদের সমাজে কি যৌন হয়রানি আছে? ইভ টিজিং আছে? ভিড়ের মধ্যে পুরুষ পশুরা নারী পশুর গায়ে থাবা দেয়? পশুরা কাপড় পরে না, পরলে পুরুষ পশু নারী পশুর কাপড় কি ছিঁড়ে ফেলত?
ইভ টিজিং কিছুদিন আগে আমাদের জাতীয় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। কয়েকটা হত্যা ও আত্মহত্যার ঘটনার পরে সরকারকে জনপদে জনপদে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে হয়েছিল।
আমি মনোবিদ নই। মনোবিদ ও সমাজবিদেরা বলতে পারবেন, এই রোগটা কী রোগ? বাঙালি পুরুষ ভিড়ের মধ্যে কেন পশুরও অধম হয়ে ওঠে? কেন তাদের লেজ গজায়, থাবা প্রশস্ত হয়, নখর বেরিয়ে আসে, জিব লকলক করে, মাংসাশী দাঁত আগ্রাসী হয়ে ওঠে? এইটা কোন ধরনের আনন্দ? কী চরিতার্থ হয় এতে? একটা মেয়েকে অসহায় ভিকটিমে পরিণত করে কতগুলো থাবা হামলে পড়ে তার শরীরে, এমনকি ছিঁড়ে ফেলে তার পোশাক? এইটা কি যৌন-আনন্দ? নাকি স্যাডিজম? একটা লোক বিকৃতমনা হতে পারে, স্যাডিস্ট হতে পারে, কিন্তু একদল ছেলেপুলে একযোগে কী করে হিংস্র পশু হয়ে ওঠে? তা-ও এক মুহূর্তের জন্য নয়।
আগের ঘটনার বিচার কি হয়েছিল? এবারের ঘটনার বিচার ও কি হবে? বস্ত্রহরণরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগ নেতা রাসেল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিত বিভাগের ছাত্র ছাত্রলীগ নেতা আলম |
পয়লা
বৈশাখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসির নিকটবর্তী ফটকের কাছে যা ঘটেছে বলে
কাগজে পড়ছি, তাতে তো ওই হিংস্র পুরুষ হায়েনার দল অনেকক্ষণ ধরে একটার পর
একটা নারীকে টার্গেট করছিল, আর তাঁকে অবমানিত ক্ষতবিক্ষত করে মেতে উঠছিল
পাশবিক আনন্দে!
পাশবিক কথাটা বারবার উচ্চারণ করছি বটে, কিন্তু পশুদের কাছেও ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে এই বাঙালি পুরুষদের সঙ্গে তাদের তুলনা করার জন্য!
সমস্যা অনেক গভীরে। বিবিসির ইন্ডিয়া’স ডটার শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্রে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে ধর্ষকদের মনস্তত্ত্ব, খানিকটা। ভারতের উচ্চ আদালতের আইনজীবীরা, যাঁরা দিল্লির বাসে গণধর্ষণ ও হত্যার মামলার আসামিপক্ষের উকিল ছিলেন, তাঁদের ভাষ্যে, পুরুষতন্ত্রের খানিকটা বোঝা গেছে। তাঁরা বলছেন, রাতের বেলায় একটা মেয়ে কেন বেরোবেন? এটা ভারতীয় কালচার নয়। একজন উকিল তো বলেই বসলেন, আমার নিজের মেয়েও যদি প্রেম করে, আমি তাকে পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে মেরে ফেলব। বুঝুন, পিতৃতন্ত্র কত ভয়ংকর, কত নিষ্ঠুর। মেয়েকে তার সম্পত্তি মনে করে, বাঁচা-মরার অধিকার বাপের হাতে বলে গণ্য করে।
আর আছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। আমরা খুব শুনি, এবার পয়লা বৈশাখে তিন স্তরের নিরাপত্তা চার স্তরের নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হবে। সেই স্তরের পর স্তরের বলয়ের মধ্যে সব ঘটে, কিন্তু পুলিশ কখনো তৎপর হয় না। অভিজিৎকে মেরে ফেলা হলো, পুলিশ এগোলো না, একজনের পর একজন নারী নিগৃহীত হলেন, পুলিশ এগোলো না। কী করলে পুলিশ তৎপর হবে?
তবু একজন-দুজন এগোয়। এবার যিনি এগিয়েছেন, তিনিও পুরুষ। ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দী। ওয়াশিকুর হত্যার পর খুনিদের ধরতে এগিয়ে গিয়েছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা। এঁরা আছেন বলে আজও এই দেশে সূর্য ওঠে, আকাশে মেঘ জমে, ভোর হয়, পাখি গায়, পয়লা বৈশাখ আসে।
এসব ক্ষেত্রে সব সময় আমার নিজের কথাটাই মনে পড়ে। মনে হয়, প্রত্যেক পুরুষের ভেতরেই হয়তো একটা পশু বসবাস করে; আমার জ্ঞান, আমার সভ্যতা, আমার সংস্কৃতি, আমার শিক্ষা আমাকে বলে ভেতরের পশুটাকে খাঁচাবন্দী করে রাখো। আর মনে হয়, ওই মেয়েটি যদি আমার মেয়ে হতো! ধরা যাক, আমার কিশোরীকন্যাকে নিয়ে আমি বেরোচ্ছি। মা, ওঠো, ভোর হচ্ছে, নতুন বছরের নতুন দিনের ভোর। শাড়ি পরো। চলো, বেরিয়ে পড়ি। আমার দুহিতা উঠল, অনভ্যস্তভাবে শাড়ি পরল, সুতির শাড়ি ফুলে রইল তার শরীরটাজুড়ে। মাথায় ফুল জড়াল, চোখে-মুখে হাসি। হয়তো ওর মা-ও সঙ্গে রইলেন, মেয়ের শাড়িতে সেফটিপিন জুড়ে দিলেন, মেয়ে মেঝেতে বসে মায়ের শাড়ি টেনে দিল। তারপর আমরা হাসিমুখে চললাম রমনার দিকে, টিএসসির দিকে। ‘এসো হে বৈশাখ’ গাইতে লাগলাম নিজেরাই, বেসুরো গলায়। কিংবা গাইলাম শিরোনামহীন ব্যান্ডেরই গান, ‘প্রতিটি রাস্তায় প্রতিটি জানালায় হাসিমুখ, হাসিমুখে আনন্দধারা...’
তারপর পড়ে গেলাম ভিড়ের মধ্যে, পরিকল্পিত ভিড়, একদল শিয়াল হামলে পড়ল, ছিঁড়ে গেল শাড়ি, কাপড়ের অংশ গেঁথে রইল সব নখরে নখরে...
আমি আর কল্পনা করতে পারছি না। পুরুষ, কবে তুমি মানুষ হবে, বাঙালি কবে তুমি সভ্য হবে?
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
পাশবিক কথাটা বারবার উচ্চারণ করছি বটে, কিন্তু পশুদের কাছেও ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে এই বাঙালি পুরুষদের সঙ্গে তাদের তুলনা করার জন্য!
সমস্যা অনেক গভীরে। বিবিসির ইন্ডিয়া’স ডটার শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্রে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে ধর্ষকদের মনস্তত্ত্ব, খানিকটা। ভারতের উচ্চ আদালতের আইনজীবীরা, যাঁরা দিল্লির বাসে গণধর্ষণ ও হত্যার মামলার আসামিপক্ষের উকিল ছিলেন, তাঁদের ভাষ্যে, পুরুষতন্ত্রের খানিকটা বোঝা গেছে। তাঁরা বলছেন, রাতের বেলায় একটা মেয়ে কেন বেরোবেন? এটা ভারতীয় কালচার নয়। একজন উকিল তো বলেই বসলেন, আমার নিজের মেয়েও যদি প্রেম করে, আমি তাকে পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে মেরে ফেলব। বুঝুন, পিতৃতন্ত্র কত ভয়ংকর, কত নিষ্ঠুর। মেয়েকে তার সম্পত্তি মনে করে, বাঁচা-মরার অধিকার বাপের হাতে বলে গণ্য করে।
আর আছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। আমরা খুব শুনি, এবার পয়লা বৈশাখে তিন স্তরের নিরাপত্তা চার স্তরের নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হবে। সেই স্তরের পর স্তরের বলয়ের মধ্যে সব ঘটে, কিন্তু পুলিশ কখনো তৎপর হয় না। অভিজিৎকে মেরে ফেলা হলো, পুলিশ এগোলো না, একজনের পর একজন নারী নিগৃহীত হলেন, পুলিশ এগোলো না। কী করলে পুলিশ তৎপর হবে?
তবু একজন-দুজন এগোয়। এবার যিনি এগিয়েছেন, তিনিও পুরুষ। ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দী। ওয়াশিকুর হত্যার পর খুনিদের ধরতে এগিয়ে গিয়েছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা। এঁরা আছেন বলে আজও এই দেশে সূর্য ওঠে, আকাশে মেঘ জমে, ভোর হয়, পাখি গায়, পয়লা বৈশাখ আসে।
এসব ক্ষেত্রে সব সময় আমার নিজের কথাটাই মনে পড়ে। মনে হয়, প্রত্যেক পুরুষের ভেতরেই হয়তো একটা পশু বসবাস করে; আমার জ্ঞান, আমার সভ্যতা, আমার সংস্কৃতি, আমার শিক্ষা আমাকে বলে ভেতরের পশুটাকে খাঁচাবন্দী করে রাখো। আর মনে হয়, ওই মেয়েটি যদি আমার মেয়ে হতো! ধরা যাক, আমার কিশোরীকন্যাকে নিয়ে আমি বেরোচ্ছি। মা, ওঠো, ভোর হচ্ছে, নতুন বছরের নতুন দিনের ভোর। শাড়ি পরো। চলো, বেরিয়ে পড়ি। আমার দুহিতা উঠল, অনভ্যস্তভাবে শাড়ি পরল, সুতির শাড়ি ফুলে রইল তার শরীরটাজুড়ে। মাথায় ফুল জড়াল, চোখে-মুখে হাসি। হয়তো ওর মা-ও সঙ্গে রইলেন, মেয়ের শাড়িতে সেফটিপিন জুড়ে দিলেন, মেয়ে মেঝেতে বসে মায়ের শাড়ি টেনে দিল। তারপর আমরা হাসিমুখে চললাম রমনার দিকে, টিএসসির দিকে। ‘এসো হে বৈশাখ’ গাইতে লাগলাম নিজেরাই, বেসুরো গলায়। কিংবা গাইলাম শিরোনামহীন ব্যান্ডেরই গান, ‘প্রতিটি রাস্তায় প্রতিটি জানালায় হাসিমুখ, হাসিমুখে আনন্দধারা...’
তারপর পড়ে গেলাম ভিড়ের মধ্যে, পরিকল্পিত ভিড়, একদল শিয়াল হামলে পড়ল, ছিঁড়ে গেল শাড়ি, কাপড়ের অংশ গেঁথে রইল সব নখরে নখরে...
আমি আর কল্পনা করতে পারছি না। পুরুষ, কবে তুমি মানুষ হবে, বাঙালি কবে তুমি সভ্য হবে?
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
No comments