এমআরপি নিয়ে সৌদি, মালয়েশিয়া ইউএইতে হ-য-ব-র-ল by দীন ইসলাম
মেশিন
রিডেবল পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আরিমাতে চলছে
হ-য-ব-র-ল কারবার। এ তিন দেশে পাসপোর্টের আবেদন জমা গ্রহণ ও বিতরণ কাজে
নিয়োজিত মালয়েশীয় কোম্পানি আইরিশ করপোরেশন বারহাডের কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে
মনে করছে স্বরাষ্ট্র, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং বহিরাগমন ও
পাসপোর্ট অধিদপ্তর। বিষয়টি সম্পর্কে এরই মধ্যে মালয়েশীয় কোম্পানিকে কয়েক
দফা সতর্ক বার্তা দিয়েছে প্রবাসে এমআরপি বিতরণ সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের
উপদেষ্টা কমিটি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। গত সোমবার সৌদি আরবে
নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আইরিশের
এমআরপি সংক্রান্ত অর্থ জমাদান নিয়ে নয়-ছয়ের চিত্র তুলে ধরে একটি চিঠি দেয়া
হয়েছে। বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে
আইরিশের নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। গত ১২ই এপ্রিল
রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, আইরিশ বর্তমানে
রিয়াদ, দাম্মাম ও বুরাইদাহ এলাকায় এমআরপি প্রসেসিং এর কাজ করছে। এসব এলাকায়
তারা প্রতিদিন ১৭০০ এমআরপি প্রসেসিং করছে। গত ৭ই এপ্রিল দূতাবাসে পাঠানো
প্রতিবেদন অনুযায়ী ২৭ হাজার ৬২৭টি পাসপোর্টের প্রসেস করেছে। এর বিপরীতে
নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সাত কোটি ১৪ লাখ ৮৪ হাজার ৮৬২ টাকা জমা হওয়ার
কথা। কিন্তু তারা মাত্র দুই কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার ২৬৫ টাকা জমা করেছে।
জন্ম নিবন্ধন ফি’র নির্ধারিত টাকাও তারা জমা করেনি। এ কারণে অতি দ্রুত
আইরিশকে অর্থ জমা দেয়ার নির্দেশনা দিতে চিঠি দেয়া হয়েছে। প্রবাসীকল্যাণ
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার এমআরপি বিতরণ সংক্রান্ত উপদেষ্টা
কমিটির বৈঠক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
এ সভায় সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশী মেশিন
রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বিতরণে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রবাসীকল্যাণ
মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এমআরপি বিতরণে আরও যত্নবান হওয়ার
পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এর ব্যতিক্রম হলে আগামী এক মাস পর চুক্তি বাতিল
করা হবে। বৈঠকে পাসপোর্টের ডিজি এনএম জিয়াউল আলম সভাকে জানান, সৌদিতে
বসবাসরত প্রবাসীদের মধ্যে আইরিশ প্রতিদিন এক হাজার দুই শ’ ৫৮টি এমআরপি
প্রসেস করছে। যদিও গত ১৯শে মার্চ তারা অঙ্গীকার করেছিল প্রতিদিন নয় হাজার
পাসপোর্ট প্রসেস করবেন। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে তারা প্রতিদিন ১২৫
থেকে ১৫০টি এবং মালয়েশিয়াতে ৮৯টি পাসপোর্ট প্রসেস করছেন। যদিও তারা এ দুই
দেশে পাঁচ হাজার করে পাসপোর্ট প্রসেসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। পাসপোর্টের
ডিজির কথা শোনার পর প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
আসাদুজ্জামান খান কামালকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রবাসীদের একটি বড় কর্মযজ্ঞে
ভুয়া কোম্পানিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ সময় প্রতিমন্ত্রী বিষয়টি গভীরভাবে
দেখার প্রতিশ্রুতি দেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আইরিশের সিনিয়র
অফিসিয়ালদের মধ্যে কেউ ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। শুধুমাত্র দুই জন
প্রতিনিধি তাদের অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা করে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর
মনোভাব বুঝতে পেরে তারা বলেন, আমরা আগামীতে আরও প্রস্তুতি নিয়ে এ সভায় আসব।
তবে আইরিশের সেলস ম্যানেজার পাসপোর্ট প্রসেসে দেরি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা
করে বলেন, ইনশাআল্লাহ এ অবস্থা শিগগিরই কেটে যাবে। তার কথা কেড়ে নিয়ে
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী তাদেরকে মিথ্যাবাদী হিসেবে আখ্যা দিয়ে
বলেন, এমআরপি পাসপোর্টের মতো বিশাল কর্মযজ্ঞে আইরিশ কোন মতেই উপযুক্ত
কোম্পানি নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশী
রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ, মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশী হাই কমিশনার শহিদুল
ইসলাম এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ
ইমরান ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ফলে
উচ্চপর্যায়ের কমিটির সদস্যদের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে কোন অসুবিধা
হয়নি। তারা বলেন, গত এক বছর ধরে আইরিশ সরকারকে নানাভাবে ঘুরাচ্ছে। এর
বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অন্যদিকে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর
ঠিকভাবে এমআরপি না দিতে পারার দায় কোনভাবেই এড়াতে পারে না। পররাষ্ট্র ও
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইরিশকে কাজ দেয়ার মূল কলকাঠি
নাড়েন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি আবদুল মাবুদ, প্রকল্প পরিচালক মাসুদ
রেজওয়ান ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব সফিকুল ইসলাম। পাশাপাশি তারা আইরিশের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সব সময় অনীহা প্রকাশ করেছেন। এ কারণে প্রায় দেড় বছর
সময় নষ্ট হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
ব্যর্থতার কারণে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসীদের এমআরপি’র বিষয়টি
দেখভালের জন্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন
করে দিয়েছেন। তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পাসপোর্টের ডিজিকে আইরিশের
কর্মকাণ্ড মনিটরিং করার নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে আইরিশ তাদের প্রতিদিনের
প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে জানাবে। স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয় তা এক সঙ্গে করে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীকে দেবেন। আজ এ
সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে
আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন সংস্থার (আইকাও) বেঁধে দেয়া ২৪শে নভেম্বরের
মধ্যে সৌদি আরবে ২১ লাখ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে চার লাখ এবং মালয়েশিয়াতে পাঁচ
লাখ বাংলাদেশী এমআরপি দিতে হবে। এর অন্যথা হলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেশে
ফিরে আসতে হবে। এ নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের মাথা ব্যথা চরমে উঠলেও অনেকটা
ঘুমুচ্ছে আউটসোর্সিং কোম্পানি আইরিশ।
No comments