চীনের নতুন ব্যাংক ও এশিয়ার বহুপাক্ষিকতা by জোসেফ স্টিগলিৎজ
আন্তর্জাতিক
অর্থ তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংক (ডব্লিউবি) তাদের বার্ষিক সভার
আয়োজন করছে। তবে সামনের দিনগুলোয় বৈশ্বিক অর্থনীতি পরিচালনার বড় সংবাদ আর
ওয়াশিংটনে ঘটবে না। সে রকম বড় সংবাদ জন্মেছিল গত মাসে, যখন আরও ৩০টা দেশসহ
যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে এশীয়
অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকে (এআইআইবি) যোগ দেয়। চীনের তৈরি করা এই
ব্যাংকের ৫০ বিলিয়ন ডলার এশিয়ার বিপুল অবকাঠামো চাহিদা মেটাতে সাহায্য
করবে। এই চাহিদা বিনিয়োগের বর্তমান বন্দোবস্তের সাধ্যের অনেক বাইরে।
কেউ ভাবতে পারত যে এআইআইবির প্রতিষ্ঠা ও দুনিয়ার এতগুলো সরকারের একে সমর্থনের সিদ্ধান্ত সর্বজনীন অভ্যর্থনা পাবে। এবং আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের জন্য ব্যাপারটা সে রকমই ছিল। কিন্তু ধনী ইউরোপীয় দেশগুলোর এহেন সিদ্ধান্তে অদ্ভুতভাবে মার্কিন কর্মকর্তারা গোস্যা করেছেন। একজন অনামা মার্কিন প্রতিনিধি যুক্তরাজ্যের প্রতি অভিযোগ করেছেন যে তারা ‘লাগাতারভাবে চীনকে আগলে’ রাখছে। যুক্তরাষ্ট্র গোপনে দুনিয়ার অনেক দেশকেই চীন থেকে দূরে থাকার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
বাস্তবে, এআইআইবির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বৈরিতা এশিয়ায় এর ঘোষিত অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারের পরিপন্থী। দুঃখজনকভাবে, এটা আমেরিকার বৈশ্বিক প্রভাব হারানোর ভয়েরই প্রকাশ। এর মাধ্যমে তারা সম্ভবত এশিয়ার উন্নয়নশীল অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার সুযোগকেই অবহেলা করছে। অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ কী অবদান রাখতে পারে, চীন নিজেই তার বড় প্রমাণ। এ ধরনের বিনিয়োগ কী করতে পারে, তা আমি গত মাসে চীনের সাবেক এক প্রত্যন্ত অঞ্চল সফর করে বুঝতে পারি। ওই এলাকাটা এখন সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে স্রেফ যোগাযোগ বাড়ার কারণে। এতে মানুষ, পণ্য ও চিন্তাভাবনা আগের চেয়ে অনেক মুক্তভাবে চলাচল করছে। এটা সম্ভব করেছে অবকাঠামোয় বিনিয়োগ।
এআইআইবি এশিয়ার অন্যান্য অংশে এ ধরনের সুবিধা এনে দিতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রহসনকে আরও গভীরই করবে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন বাণিজ্যবৃত্তির জয়গান গায়। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে বাণিজ্যের পথে শুল্কের চেয়ে বড় বাধা হলো অপ্রতুল অবকাঠামো।
এআইআইবির তহবিল বিশ্বকে আরও অনেক সুবিধাই দেবে। এ মুহূর্তে বিশ্বে মোট চাহিদার তুলনায় বিনিয়োগের সরবরাহ কম। যেখানে আয়ের থেকে ব্যয় বেশি, সেখান থেকে শুরু করে যেখানে বিনিয়োগ দরকার, সেসব জায়গায় সঞ্চয়কে পুনর্বিনিয়োগে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক বাজারের অসাম্য প্রমাণিত।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সভাপতি থাকার সময় বেন বার্নাকি ভুল করে এ সমস্যাকে ‘বৈশ্বিক সঞ্চয় প্রাচুর্য’ বলে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু যে পৃথিবীতে এত বিপুল পরিমাণ অবকাঠামো নির্মাণ বাকি আছে, সেখানে উদ্বৃত্ত সঞ্চয় অথবা ভালো বিনিয়োগ-সুবিধার ঘাটতি আসলে সমস্যা নয়। সমস্যা হলো এই আর্থিক ব্যবস্থা, যা বাজারের কারসাজি, ফাটকাবাজি ও অভ্যন্তরীণ যোগসাজশে ব্যবসায় পারদর্শিতা অর্জন করলেও এর মূল যে কাজ তাতেই ব্যর্থ: বৈশ্বিক পর্যায়ে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। এ কারণেই এআইআইবি বৈশ্বিক মোট চাহিদার অল্প হলেও অতীব প্রয়োজনীয় চাহিদার উল্লম্ফন ঘটাবে।
তাই বিনিয়োগের প্রবাহকে বহুপক্ষীয় করায় চীনের উদ্যোগকে আমাদের স্বাগত জানানো উচিত। কার্যত চীন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আমেরিকার নীতিরই অনুকরণ করছে। সে সময় উন্নয়নের তহবিলকে বহুপক্ষীয় করে তোলার জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। আর এই তহবিল ব্যাপকভাবে আসছিল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে (এই উদ্যোগের ফলে এক আন্তর্জাতিক প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা বাহিনী এবং উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ সৃষ্টি হয়েছিল)।
বিশ্বব্যাংকের এই সহযোগিতা অনেক সময় সে সময়ে প্রাধান্য করা মতাদর্শের দ্বারা ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ত। যেমন মুক্তবাজারনির্ভর ওয়াশিংটন সমঝোতার নীতির বেড়াজালে গছিয়ে দেওয়া ঋণ কার্যত সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোয় বিশিল্পায়ন ও আয় হ্রাস ঘটিয়ে দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও মোটের ওপর মার্কিন সহযোগিতা আরও কার্যকর হতো, যদি একে আরও বহুপক্ষীয় করা যেত। এই তহবিল যদি মার্কিন প্রশাসনের মাধ্যমে বিতরিত হতো, তাহলে তা বিভিন্ন প্রশাসনের উন্নয়নচিন্তা (অথবা সে ধরনের চিন্তার অনুপস্থিতির) খামখেয়ালের শিকার হতো।
সহযোগিতার প্রবাহকে বহুপক্ষীয় করে তোলার নতুন প্রচেষ্টা (যেমন গত জুলাইয়ে চালু করা ব্রিকস দেশগুলোর নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) বৈশ্বিক উন্নয়নে বড় আকারের অবদান রাখতে পারে। কয়েক বছর আগে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রতিযোগিতামূলক বহুপাক্ষিকতার নীতির পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। উন্নয়ন অর্থায়নে সেই ধারণাকে এআইআইবি পরীক্ষা করার সুযোগ এনে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে এআইআইবির বিরোধিতা দেখে আমার মনে পড়ছে সেই অর্থনৈতিক ঘটনার উদাহরণের কথা: কোম্পানিগুলো সবখানেই আরও বেশি প্রতিযোগিতা চায়, কেবল নিজের প্রতিষ্ঠান ছাড়া। এই অবস্থানের জন্য ইতিমধ্যে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে: যদি চিন্তার রাজ্যে প্রতিযোগিতামূলক বাজার থাকত, তাহলে সমস্যাজনক ওয়াশিংটন সমঝোতা আদৌ কোনো সমঝোতাই হয়ে উঠতে পারত না।
আমেরিকার এই এআইআইবির বিরোধিতা অভূতপূর্ব নয়। কার্যত এটা ১৯৯০-এর দশকে নেওয়া জাপানের নতুন মিয়াজাওয়া উদ্যোগের বিপক্ষতার কাছাকাছি, যেখানে জাপান পূর্ব এশিয়ার সংকটে পড়া দেশগুলোকে ৮০ বিলিয়ন ডলারের সহযোগিতার উদ্যোগ নিয়েছিল। এখনকার মতো তখনো বিষয়টা এমন ছিল না যে যুক্তরাষ্ট্র তহবিলের বিকল্প কোনো উৎস দেখিয়ে দিচ্ছে। তারা স্রেফ আধিপত্য করতে চেয়েছিল। ক্রমবর্ধমানভাবে বহুপক্ষীয় হয়ে ওঠা বিশ্বে তারা চাইছে এক নম্বর সরকার তথা জি-ওয়ান থাকতে। অথচ এখন অর্থের অভাবের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার ভুল সমাধানে জোর দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের জেদের ফলে তাদের অবনতি আরও গভীর ও দীর্ঘমেয়াদি হতে যাচ্ছে। অথচ নিজেদের শুধরে নিলে এমনটা হওয়ার কথা ছিল না।
বলা হয় যে যুক্তরাষ্ট্রের এআইআইবি বিরোধিতা পরিমাপ করা কঠিন। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, বিশ্বব্যাংকে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে তার মর্জিমাফিক বিশেষ স্বার্থে নীতিমালাকে প্রভাবিত করে, অবকাঠামো নীতির বিষয়টি ততটা মতাদর্শ প্রভাবিত এলাকা নয়। তা ছাড়া বহুপক্ষীয় কাঠামোর ভেতর দিয়ে নেওয়া অবকাঠামো বিনিয়োগে পরিবেশগত ও সামাজিক সুরক্ষার পদক্ষেপ আরও বেশি করে নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি এবং অন্য যে দেশগুলো এআইআইবিতে যোগ দিয়েছে, তাদের অভিনন্দন জানানো উচিত। আশা রাখাই যায় যে ইউরোপ ও এশিয়ার অন্য দেশগুলোও এতে যোগ দেবে। আর এতে চীন যেমন অবকাঠামোর উন্নতির মাধ্যমে মানুষের জীবনমান উন্নত করেছে, পৃথিবীর অন্যান্য অংশেও তেমন উচ্চাশা বাস্তবায়িত হবে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
জোসেফ স্টিগলিৎজ: নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিশ্বব্যাংকের সাবেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ।
কেউ ভাবতে পারত যে এআইআইবির প্রতিষ্ঠা ও দুনিয়ার এতগুলো সরকারের একে সমর্থনের সিদ্ধান্ত সর্বজনীন অভ্যর্থনা পাবে। এবং আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের জন্য ব্যাপারটা সে রকমই ছিল। কিন্তু ধনী ইউরোপীয় দেশগুলোর এহেন সিদ্ধান্তে অদ্ভুতভাবে মার্কিন কর্মকর্তারা গোস্যা করেছেন। একজন অনামা মার্কিন প্রতিনিধি যুক্তরাজ্যের প্রতি অভিযোগ করেছেন যে তারা ‘লাগাতারভাবে চীনকে আগলে’ রাখছে। যুক্তরাষ্ট্র গোপনে দুনিয়ার অনেক দেশকেই চীন থেকে দূরে থাকার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
বাস্তবে, এআইআইবির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বৈরিতা এশিয়ায় এর ঘোষিত অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারের পরিপন্থী। দুঃখজনকভাবে, এটা আমেরিকার বৈশ্বিক প্রভাব হারানোর ভয়েরই প্রকাশ। এর মাধ্যমে তারা সম্ভবত এশিয়ার উন্নয়নশীল অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার সুযোগকেই অবহেলা করছে। অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ কী অবদান রাখতে পারে, চীন নিজেই তার বড় প্রমাণ। এ ধরনের বিনিয়োগ কী করতে পারে, তা আমি গত মাসে চীনের সাবেক এক প্রত্যন্ত অঞ্চল সফর করে বুঝতে পারি। ওই এলাকাটা এখন সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে স্রেফ যোগাযোগ বাড়ার কারণে। এতে মানুষ, পণ্য ও চিন্তাভাবনা আগের চেয়ে অনেক মুক্তভাবে চলাচল করছে। এটা সম্ভব করেছে অবকাঠামোয় বিনিয়োগ।
এআইআইবি এশিয়ার অন্যান্য অংশে এ ধরনের সুবিধা এনে দিতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রহসনকে আরও গভীরই করবে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন বাণিজ্যবৃত্তির জয়গান গায়। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে বাণিজ্যের পথে শুল্কের চেয়ে বড় বাধা হলো অপ্রতুল অবকাঠামো।
এআইআইবির তহবিল বিশ্বকে আরও অনেক সুবিধাই দেবে। এ মুহূর্তে বিশ্বে মোট চাহিদার তুলনায় বিনিয়োগের সরবরাহ কম। যেখানে আয়ের থেকে ব্যয় বেশি, সেখান থেকে শুরু করে যেখানে বিনিয়োগ দরকার, সেসব জায়গায় সঞ্চয়কে পুনর্বিনিয়োগে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক বাজারের অসাম্য প্রমাণিত।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সভাপতি থাকার সময় বেন বার্নাকি ভুল করে এ সমস্যাকে ‘বৈশ্বিক সঞ্চয় প্রাচুর্য’ বলে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু যে পৃথিবীতে এত বিপুল পরিমাণ অবকাঠামো নির্মাণ বাকি আছে, সেখানে উদ্বৃত্ত সঞ্চয় অথবা ভালো বিনিয়োগ-সুবিধার ঘাটতি আসলে সমস্যা নয়। সমস্যা হলো এই আর্থিক ব্যবস্থা, যা বাজারের কারসাজি, ফাটকাবাজি ও অভ্যন্তরীণ যোগসাজশে ব্যবসায় পারদর্শিতা অর্জন করলেও এর মূল যে কাজ তাতেই ব্যর্থ: বৈশ্বিক পর্যায়ে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। এ কারণেই এআইআইবি বৈশ্বিক মোট চাহিদার অল্প হলেও অতীব প্রয়োজনীয় চাহিদার উল্লম্ফন ঘটাবে।
তাই বিনিয়োগের প্রবাহকে বহুপক্ষীয় করায় চীনের উদ্যোগকে আমাদের স্বাগত জানানো উচিত। কার্যত চীন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আমেরিকার নীতিরই অনুকরণ করছে। সে সময় উন্নয়নের তহবিলকে বহুপক্ষীয় করে তোলার জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। আর এই তহবিল ব্যাপকভাবে আসছিল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে (এই উদ্যোগের ফলে এক আন্তর্জাতিক প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা বাহিনী এবং উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ সৃষ্টি হয়েছিল)।
বিশ্বব্যাংকের এই সহযোগিতা অনেক সময় সে সময়ে প্রাধান্য করা মতাদর্শের দ্বারা ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ত। যেমন মুক্তবাজারনির্ভর ওয়াশিংটন সমঝোতার নীতির বেড়াজালে গছিয়ে দেওয়া ঋণ কার্যত সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোয় বিশিল্পায়ন ও আয় হ্রাস ঘটিয়ে দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও মোটের ওপর মার্কিন সহযোগিতা আরও কার্যকর হতো, যদি একে আরও বহুপক্ষীয় করা যেত। এই তহবিল যদি মার্কিন প্রশাসনের মাধ্যমে বিতরিত হতো, তাহলে তা বিভিন্ন প্রশাসনের উন্নয়নচিন্তা (অথবা সে ধরনের চিন্তার অনুপস্থিতির) খামখেয়ালের শিকার হতো।
সহযোগিতার প্রবাহকে বহুপক্ষীয় করে তোলার নতুন প্রচেষ্টা (যেমন গত জুলাইয়ে চালু করা ব্রিকস দেশগুলোর নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) বৈশ্বিক উন্নয়নে বড় আকারের অবদান রাখতে পারে। কয়েক বছর আগে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রতিযোগিতামূলক বহুপাক্ষিকতার নীতির পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। উন্নয়ন অর্থায়নে সেই ধারণাকে এআইআইবি পরীক্ষা করার সুযোগ এনে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে এআইআইবির বিরোধিতা দেখে আমার মনে পড়ছে সেই অর্থনৈতিক ঘটনার উদাহরণের কথা: কোম্পানিগুলো সবখানেই আরও বেশি প্রতিযোগিতা চায়, কেবল নিজের প্রতিষ্ঠান ছাড়া। এই অবস্থানের জন্য ইতিমধ্যে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে: যদি চিন্তার রাজ্যে প্রতিযোগিতামূলক বাজার থাকত, তাহলে সমস্যাজনক ওয়াশিংটন সমঝোতা আদৌ কোনো সমঝোতাই হয়ে উঠতে পারত না।
আমেরিকার এই এআইআইবির বিরোধিতা অভূতপূর্ব নয়। কার্যত এটা ১৯৯০-এর দশকে নেওয়া জাপানের নতুন মিয়াজাওয়া উদ্যোগের বিপক্ষতার কাছাকাছি, যেখানে জাপান পূর্ব এশিয়ার সংকটে পড়া দেশগুলোকে ৮০ বিলিয়ন ডলারের সহযোগিতার উদ্যোগ নিয়েছিল। এখনকার মতো তখনো বিষয়টা এমন ছিল না যে যুক্তরাষ্ট্র তহবিলের বিকল্প কোনো উৎস দেখিয়ে দিচ্ছে। তারা স্রেফ আধিপত্য করতে চেয়েছিল। ক্রমবর্ধমানভাবে বহুপক্ষীয় হয়ে ওঠা বিশ্বে তারা চাইছে এক নম্বর সরকার তথা জি-ওয়ান থাকতে। অথচ এখন অর্থের অভাবের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার ভুল সমাধানে জোর দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের জেদের ফলে তাদের অবনতি আরও গভীর ও দীর্ঘমেয়াদি হতে যাচ্ছে। অথচ নিজেদের শুধরে নিলে এমনটা হওয়ার কথা ছিল না।
বলা হয় যে যুক্তরাষ্ট্রের এআইআইবি বিরোধিতা পরিমাপ করা কঠিন। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, বিশ্বব্যাংকে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে তার মর্জিমাফিক বিশেষ স্বার্থে নীতিমালাকে প্রভাবিত করে, অবকাঠামো নীতির বিষয়টি ততটা মতাদর্শ প্রভাবিত এলাকা নয়। তা ছাড়া বহুপক্ষীয় কাঠামোর ভেতর দিয়ে নেওয়া অবকাঠামো বিনিয়োগে পরিবেশগত ও সামাজিক সুরক্ষার পদক্ষেপ আরও বেশি করে নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি এবং অন্য যে দেশগুলো এআইআইবিতে যোগ দিয়েছে, তাদের অভিনন্দন জানানো উচিত। আশা রাখাই যায় যে ইউরোপ ও এশিয়ার অন্য দেশগুলোও এতে যোগ দেবে। আর এতে চীন যেমন অবকাঠামোর উন্নতির মাধ্যমে মানুষের জীবনমান উন্নত করেছে, পৃথিবীর অন্যান্য অংশেও তেমন উচ্চাশা বাস্তবায়িত হবে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
জোসেফ স্টিগলিৎজ: নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিশ্বব্যাংকের সাবেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ।
No comments