অর্ধশত ছাত্রছাত্রী প্রতারণার শিকার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
পৌর কলেজের নতুন বর্ষের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী জোনাকী আক্তার। তার ক্রমিক
নম্বর ২৮৮, ৩৫৮ ও ৩৬৮। তবে এর কোনটিই আসল নয়। জোনাকী কলেজ কর্তৃপক্ষের
ভর্তি জালিয়াতির শিকার। শুধু এই জোনাকীই নয়, এমন ঘটনা ঘটেছে আরও অর্ধশত
ছাত্রছাত্রীর ভাগ্যে। কলেজের খাতায় নাম নেই তাদের। বেতন আদায়ের রশিদে
একেকবার দেয়া হয়েছে তাদের একেক রকম রোল নম্বর। অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা দিতে
এসে এই ছাত্রছাত্রীরা জানতে পারে তারা কলেজের শিক্ষার্থীই নয়। এরপরই
বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পরে তাদের পরীক্ষার সুযোগ দিয়ে পরিস্থিতি আপাতত সামাল
দেয়া হয়। কলেজ ও এই ছাত্রছাত্রী সূত্রে জানা যায়- বিশেষ সুযোগে ৪৬ জন
ছাত্রছাত্রীকে ভর্তি করানোর জন্য নামের তালিকাসহ বোর্ডের কাছে আবেদন করেন
কলেজের অধ্যক্ষ। অভিযোগ রয়েছে বোর্ড এই আবেদন মঞ্জুর করলেও ছাত্রছাত্রীদের
ভাগ্যে ভর্তি জুটেনি। বেতন রশিদ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রাখা হয় তাদের ভর্তি।
নিয়ামানুসারে ভর্তিকৃত ছাত্রছাত্রীদের নামের তালিকা বোর্ডে প্রেরণ করতে হয়।
সেই সঙ্গে জমা করতে হয় ভর্তি ফি। কিন্তু তা করা হয়নি। জমা করা হয়নি কলেজের
ফি-ও। আর সে কারণেই ভর্তি জটিলতায় পড়েন তারা। এই ছাত্রছাত্রীদের
প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা নেয়ার উল্লেখ রয়েছে বেতন রশিদে।
কিন্তু বাস্তবে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা
করে। আর ভর্তি জালিয়াতির মাধ্যমে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ
উঠেছে। অভিযোগ কলেজ অধ্যক্ষ আবদুর রহিমের ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে পরিচিত ল্যাব
অ্যাসিসট্যান্ট জিয়াউল আলম খান ভর্তি জালিয়াতির অন্যতম হোতা। প্রত্যেকটি
বেতন রশিদে কলেজের ক্লার্ক এর পরিবর্তে স্বাক্ষর রয়েছে এই জিয়াউলের। ঘটনাটি
এতোদিন চাপাই ছিল। গত ১২ই জানুয়ারি থেকে শুরু হয় কলেজের একাদশ শ্রেণীর
অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। এর কয়েক দিন আগে ৬ মাসের বেতন ও পরীক্ষার ফি দিয়ে
প্রবেশপত্র নিতে এলে শিক্ষার্থীরা জানতে পারে তারা এই কলেজের শিক্ষার্থী
নয়। এর আগে ক্লাস করলেও সেখানে শুধু রোল নম্বর কল করার কারণে বিষয়টি ধরা
পড়েনি। বেতন রশিদের রোল নম্বর উল্লেখ করে তারা বেতন ও ফি পরীক্ষার ফি দিতে
চাইলে দেখেন সেখানে অন্য আরেক ছাত্র বা ছাত্রীর নাম। এ রকম ঘটনার শিকার ৪৬
শিক্ষার্থীর হদিস পাওয়া গেছে। যারা ভর্তি জালিয়াতির শিকার। জোনাকী ছাড়াও
ভুয়া রোল নম্বরপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী সাংবাদিকদের কাছে তাদের বেতন
রশিদ দেখায় ভর্তির প্রমাণ হিসেবে। এরা হচ্ছে- ৩২৯ রোল নম্বরের জাহাঙ্গীর
আলম, ৩৪০ রোল জান্নাতুল ফেরদৌস, ৮১৬ রোল মাহিবুল আলম, ৫৫৭ রোল স্বর্ণালী
রানী দাশ, ৩৪৪ রোল মো. শাহ কামাল, ৩৮১ রোল আকলিমা আক্তার, ৩৫১ রোল সুমন
দেবনাথ, ৫৭৪ রোল নম্বরের মো. রেফাত উল্লাহ। তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম জোনাকী।
তার রোল নম্বর ৩। জোনাকী আক্তার বলে, আমাকে একেকবার একেক রকম রোল নম্বর
দেয়া হয়েছে। যতবার বলেছি এই নম্বর আমার না আরেকজনের তখনই নতুন আরেকটি নম্বর
দেয়া হয়েছে। বিষয়টি জানার পর সব শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে কলেজ
অধ্যক্ষের কক্ষে গেলে অধ্যক্ষ তাদের উল্টো গালাগাল করেন বলে জানায়-
শিক্ষার্থীরা। বলেন, জিয়াউল কলেজে আসে না তারে তোমরা বাড়ি থেকে ধইরা এনে
মারো, টাকা আদায় করো।
কলেজ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির জন্য ২’শ জন করে করে মোট ৬শ’ জনের ভর্তির অনুমোদন ছিল। এর বাইরে মানবিক ও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে অতিরিক্ত দেড়শ’ করে ছাত্রছাত্রী ভর্তির জন্য শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করা হয়েছিল। এ পর্যন্ত মানবিকে ভর্তি করা হয়েছে ২৬০ জনকে, ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ১৯০ জনকে এবং বিজ্ঞানে ১৭ জনকে।
কলেজে দু’জন ক্লার্ক থাকার পরও ল্যাব অ্যাসিসট্যান্ট জিয়াউল আলম খান কিভাবে এই ভর্তি জালিয়াতির সুযোগ পেলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার বিরুদ্ধে এবারই প্রথম এই অভিযোগ উঠেনি। ২০১১ সালেও কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে ভর্তির টাকা নিয়ে সে কলেজে জমা করেনি। ভর্তি ও ফরম পূরণ সংক্রান্ত কাজে জড়িত থেকে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম করার অভিযোগ কলেজ পরিচালনা কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়। এনিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয় তার বিরুদ্ধে। কিন্তু সে তদন্ত রিপোর্ট আর আলোর মুখ দেখেনি। তার সঙ্গে কথা বলার জন্য কলেজে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি তার ফোন বন্ধ থাকার কারনে। কলেজের ক্লার্ক আশরাফুল ইসলাম বলেন- কতজনের কাছ থেকে এমন রশিদ দিয়ে টাকা নেয়া হয়েছে তা আমি জানি না। ভর্তির সময় কর্মচারী ঘাটতি ও ভিড় থাকায় জিয়াউলকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন- কোন ফাঁকে সে এসব রশিদ দিয়েছে সেটি আমরা দেখিনি।
কলেজ অধ্যক্ষ আবদুর রহিম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। যাদের রিসিট আছে তাদের সবাইকে ভর্তি করিয়ে নেয়া হবে। তার ব্যাপারে আগেও এই অভিযোগ ছিল আমি সেটা কলেজ সভাপতিকে জানাবো।
এদিকে পৌর কলেজে অনার্স প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি ফরম পূরণ করার পর নেয়া হচ্ছে নির্বাচনী পরীক্ষা। এটিও এক রহস্যময় ব্যাপার হিসেবে ঠেকছে শিক্ষার্থীদের কাছে।
কলেজ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির জন্য ২’শ জন করে করে মোট ৬শ’ জনের ভর্তির অনুমোদন ছিল। এর বাইরে মানবিক ও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে অতিরিক্ত দেড়শ’ করে ছাত্রছাত্রী ভর্তির জন্য শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করা হয়েছিল। এ পর্যন্ত মানবিকে ভর্তি করা হয়েছে ২৬০ জনকে, ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ১৯০ জনকে এবং বিজ্ঞানে ১৭ জনকে।
কলেজে দু’জন ক্লার্ক থাকার পরও ল্যাব অ্যাসিসট্যান্ট জিয়াউল আলম খান কিভাবে এই ভর্তি জালিয়াতির সুযোগ পেলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার বিরুদ্ধে এবারই প্রথম এই অভিযোগ উঠেনি। ২০১১ সালেও কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে ভর্তির টাকা নিয়ে সে কলেজে জমা করেনি। ভর্তি ও ফরম পূরণ সংক্রান্ত কাজে জড়িত থেকে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম করার অভিযোগ কলেজ পরিচালনা কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়। এনিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয় তার বিরুদ্ধে। কিন্তু সে তদন্ত রিপোর্ট আর আলোর মুখ দেখেনি। তার সঙ্গে কথা বলার জন্য কলেজে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি তার ফোন বন্ধ থাকার কারনে। কলেজের ক্লার্ক আশরাফুল ইসলাম বলেন- কতজনের কাছ থেকে এমন রশিদ দিয়ে টাকা নেয়া হয়েছে তা আমি জানি না। ভর্তির সময় কর্মচারী ঘাটতি ও ভিড় থাকায় জিয়াউলকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন- কোন ফাঁকে সে এসব রশিদ দিয়েছে সেটি আমরা দেখিনি।
কলেজ অধ্যক্ষ আবদুর রহিম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। যাদের রিসিট আছে তাদের সবাইকে ভর্তি করিয়ে নেয়া হবে। তার ব্যাপারে আগেও এই অভিযোগ ছিল আমি সেটা কলেজ সভাপতিকে জানাবো।
এদিকে পৌর কলেজে অনার্স প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি ফরম পূরণ করার পর নেয়া হচ্ছে নির্বাচনী পরীক্ষা। এটিও এক রহস্যময় ব্যাপার হিসেবে ঠেকছে শিক্ষার্থীদের কাছে।
No comments