প্রাথমিক শিক্ষকদের ছুটি হোক শিক্ষাবান্ধব by মোঃ সিদ্দিকুর রহমান
প্রত্যেক মানুষ জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্যে
পৌঁছানোর জন্য কিছু না কিছু পরিকল্পনা করেন। পেশাজীবী হিসেবে প্রাথমিক
শিক্ষকরাও এর ব্যতিক্রম নন। লক্ষ্যে সফল হওয়ার একমাত্র মূলমন্ত্র হচ্ছে
কাজ, কাজ এবং কাজ। মানবজাতি তার কাজের মাধ্যমেই গুহাজীবন ত্যাগ করে আজকের
সভ্যজীবনে প্রবেশ করেছে। এর পেছনে কি শুধুই কাজের ভূমিকা ছিল?
বিশ্রামও কিন্তু ভূমিকা রেখেছে। কাজের পাশাপাশি মানুষ তার চিত্তকে বিকশিত করতে নানা সময় নানাভাবে বিশ্রামের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। কারণ পর্যাপ্ত বিশ্রাম পরবর্তী কার্য সম্পাদনকে সহজ করে এবং সৃজনশীলতার নতুন মাত্রা যোগ করে। কবি যথার্থই বলেছেন-
বিশ্রাম কাজের অঙ্গ এক সাথে গাঁথা
নয়নের অঙ্গ যেন নয়নের পাতা।
বিশ্রাম কর্মপরিকল্পনাকে নষ্ট করে না বরং কর্মস্পৃহাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। শিশু শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের পাঠ গ্রহণকে সহজসাধ্য ও আনন্দদায়ক করতে এবং নবোদ্যমে বিদ্যার্জনে ব্রতী হতে বিদ্যালয়গুলোতে ছুটির বিধান রাখা হয়েছে। কাজের গুণগত মান বিকাশে বিশ্রামের গুরুত্ব যথেষ্ট। বিদ্যালয়ের কার্যধারা শুধু শিক্ষার্থীদের নিয়েই নয়। বিদ্যালয় কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে জড়িত নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক সমাজের প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণের পরিকল্পনা নির্ধারিত বিদ্যালয় কার্যকালকে মাথায় রেখেই। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুটি পৃথক মন্ত্রণালয়। শিক্ষাসংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পাদনই দুটি মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্য। কিন্তু লক্ষণীয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রীষ্মকালীন/শীতকালীন ছুটি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ছুটির মাঝে বিরাট সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এই সমন্বয়হীনতায় অভিভাবকদেরই বেশি ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়। একই পরিবারের ভাই-বোনেরা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত হলে গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন ছুটির সমন্বয়হীনতায় পিতা-মাতারা অবকাশযাপনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বার্ষিক ছুটি ৮৫ দিন অথচ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তালিকাভুক্ত ছুটি বছরে ৭৫ দিন। এর মধ্যে শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, জাতীয় শোক দিবস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিবস, বাংলা নববর্ষে ছুটি থাকা সত্ত্বেও দিবসগুলো উদযাপনের জন্য শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক উপস্থিত থাকতে হয়। এ দিবসগুলো উদযাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয় চেতনাবোধ জাগ্রত হয় ঠিকই, তবে শিক্ষকদের মাঝে কিছুটা হতাশা বিরাজ করে। কারণ দিনগুলো ছুটির তালিকাভুক্ত থাকে। তারপরও বাধ্য হয়ে তাদের কর্মদিবস হিসেবে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হয়।
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ৭৫ দিন ছুটির আওতাভুক্ত থেকে গ্রীষ্মের ছুটি ১৫ দিন করা হলে প্রাথমিক শিক্ষকরাও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মতো গ্রীষ্মকালীন ছুটিকে শ্রান্তি বিনোদনের ছুটি হিসেবে গণ্য করে তাদের প্রাপ্য শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পেতে পারেন। রমজানের বন্ধকে ছুটি হিসেবে গণ্য করা হলে প্রাথমিক শিক্ষকরা শ্রান্তি বিনোদন ভাতা তিন বছরের পরিবর্তে চার বছর অন্তর পাবেন। কারণ আরবি বছরে খ্রিস্টীয় বছরের চেয়ে ১১ দিন কম থাকে। এ অবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে অব্যাহত থাকে। সরকারি অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির আবেদনের প্রেক্ষিতে বিগত সময়ে গ্রীষ্মকালীন ছুটি ১৫ দিন রাখার বিধান রাখা হয়। এ বছর গ্রীষ্মকালীন ছুটি রাখা হয়েছে মাত্র ৫ দিন। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বঞ্চিত রাখা বা যথাসময়ে পাওনা না দেয়া যেন বিশাল কৃতিত্বের কাজ বলে মনে করা হয়।
এক বছর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক সংস্থাপন, অর্থ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা ও সহকারী শিক্ষকদের বৈষম্যমূলক বেতন প্রদানের আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু তা আদৌ শিক্ষকদের ভাগ্যে জুটছে না। শিক্ষকদের এই প্রাপ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন উত্থাপন শুরু হয়েছে। যেন শিক্ষকদের এই সামান্য অর্থ দিতে বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন। ভাবখানা এমন, শিক্ষকদের পাওনা সহজে দিতে মানা। শিক্ষকদের দিয়ে ছুটির দিনে মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বঙ্গবন্ধু ও বেগম ফজিলাতুননেছা গোল্ডকাপ অনুষ্ঠান, উপবৃত্তি প্রদান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ কমিটির কার্যক্রমের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করানো হয়। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটির দিনে কাজ করলে টিএ/ডিএ পেয়ে থাকেন। অথচ শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ভাতা তো দূরের কথা, তাদের ভোকেশনাল বিভাগের মতো ছুটিও দেয়া হচ্ছে না। আবার নন-ভোকেশনাল সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে।
এবার সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়/দফতরের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষকদের ছুটির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরছি। প্রাথমিক শিক্ষকরা বছরে সর্বমোট ৭৫ দিন তালিকাভুক্ত ছুটি পান। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বছরে ২৩ দিন সরকারি তালিকাভুক্ত ছুটি পান। এ ছুটি প্রাথমিক শিক্ষকদের ৭৫ দিন ছুটির অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের বাড়তি ছুটি থাকে (৭৫-২৩) ৫২ দিন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবক্ষেত্রে শুক্র ও শনি ২ দিন সাপ্তাহিক ছুটি পান। কিন্তু শিক্ষকরা শনিবারও কর্মরত থাকেন। তারা অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর তুলনায় ৫২ দিন ছুটি কম ভোগ করছেন। তাহলে তাদের বাড়তি ছুটি থাকে (৫২-৫২) ০ দিন। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় দিবস ৬ দিন, যা ছুটির তালিকায় ছুটি হিসেবে দেখানো হয়েছে, কিন্তু বাধ্যতামূলক উপস্থিতিরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ছুটির নামে এই প্রবঞ্চনা দীর্ঘ ছয় বছর ধরে চলছে। অর্থাৎ শিক্ষকরা ৬ দিন ছুটি কম পাচ্ছেন। এছাড়াও ছুটির দিনে শিক্ষকদের দিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করানো হয়। বাস্তবতার নিরিখে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রাথমিক শিক্ষকরা সরকারের অন্যান্য কর্মচারীর চেয়ে কম ছুটি ভোগ করেন। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতালব্ধ কিছু সুপারিশ রাখতে চাই-
ছুটির তালিকা সংশোধন করে জাতীয় দিবসগুলোকে কর্মদিবস দেখানো হোক। শিক্ষকদের শ্রান্তি বিনোদন ভাতা প্রতি ৩ বছর পরপর প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধানের জন্য জাতীয় দিবসের ছুটিসহ প্রয়োজনে অন্যান্য ছুটি কমিয়ে ১৫ দিন গ্রীষ্মের ছুটির বিধান রাখা হোক। প্রাথমিক শিক্ষকদের ছুটি অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর চেয়ে কম। অথচ শিক্ষকরা কেন ভোকেশনাল বিভাগের অন্তর্ভুক্ত থেকে চিকিৎসা ছুটি অর্ধ-বেতনে ভোগ করবে? চাকরি লাম্পগ্র্যান্ট কেন সরকারি অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো পাবে না? অর্জিত ছুটিতে কেন বৈষম্য থাকবে? প্রাথমিক শিক্ষকদের নন-ভোকেশনাল বিভাগের আওতাভুক্ত করে তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হোক। বাংলাদেশ শিক্ষার্থী-শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা কমিটি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করছে। এ বিষয়ে তারা শিগ্গিরই সংগঠিত হবে।
আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করবেন। কতিপয় স্বার্থান্বেষী কর্মকর্তার ভুলের জন্য বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি মোটেই কাম্য নয়। শিগ্গিরই প্রতিষ্ঠিত হবে শিক্ষকদের অধিকার- অধীর আগ্রহে সেই প্রত্যাশায় রয়েছে শিক্ষক সমাজ।
মো. সিদ্দিকুর রহমান : শিক্ষক নেতা ও প্রাথমিক শিক্ষাবিষয়ক গবেষক
বিশ্রামও কিন্তু ভূমিকা রেখেছে। কাজের পাশাপাশি মানুষ তার চিত্তকে বিকশিত করতে নানা সময় নানাভাবে বিশ্রামের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। কারণ পর্যাপ্ত বিশ্রাম পরবর্তী কার্য সম্পাদনকে সহজ করে এবং সৃজনশীলতার নতুন মাত্রা যোগ করে। কবি যথার্থই বলেছেন-
বিশ্রাম কাজের অঙ্গ এক সাথে গাঁথা
নয়নের অঙ্গ যেন নয়নের পাতা।
বিশ্রাম কর্মপরিকল্পনাকে নষ্ট করে না বরং কর্মস্পৃহাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। শিশু শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের পাঠ গ্রহণকে সহজসাধ্য ও আনন্দদায়ক করতে এবং নবোদ্যমে বিদ্যার্জনে ব্রতী হতে বিদ্যালয়গুলোতে ছুটির বিধান রাখা হয়েছে। কাজের গুণগত মান বিকাশে বিশ্রামের গুরুত্ব যথেষ্ট। বিদ্যালয়ের কার্যধারা শুধু শিক্ষার্থীদের নিয়েই নয়। বিদ্যালয় কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে জড়িত নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক সমাজের প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণের পরিকল্পনা নির্ধারিত বিদ্যালয় কার্যকালকে মাথায় রেখেই। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুটি পৃথক মন্ত্রণালয়। শিক্ষাসংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পাদনই দুটি মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্য। কিন্তু লক্ষণীয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রীষ্মকালীন/শীতকালীন ছুটি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ছুটির মাঝে বিরাট সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এই সমন্বয়হীনতায় অভিভাবকদেরই বেশি ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়। একই পরিবারের ভাই-বোনেরা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত হলে গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন ছুটির সমন্বয়হীনতায় পিতা-মাতারা অবকাশযাপনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বার্ষিক ছুটি ৮৫ দিন অথচ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তালিকাভুক্ত ছুটি বছরে ৭৫ দিন। এর মধ্যে শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, জাতীয় শোক দিবস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিবস, বাংলা নববর্ষে ছুটি থাকা সত্ত্বেও দিবসগুলো উদযাপনের জন্য শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক উপস্থিত থাকতে হয়। এ দিবসগুলো উদযাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয় চেতনাবোধ জাগ্রত হয় ঠিকই, তবে শিক্ষকদের মাঝে কিছুটা হতাশা বিরাজ করে। কারণ দিনগুলো ছুটির তালিকাভুক্ত থাকে। তারপরও বাধ্য হয়ে তাদের কর্মদিবস হিসেবে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হয়।
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ৭৫ দিন ছুটির আওতাভুক্ত থেকে গ্রীষ্মের ছুটি ১৫ দিন করা হলে প্রাথমিক শিক্ষকরাও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মতো গ্রীষ্মকালীন ছুটিকে শ্রান্তি বিনোদনের ছুটি হিসেবে গণ্য করে তাদের প্রাপ্য শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পেতে পারেন। রমজানের বন্ধকে ছুটি হিসেবে গণ্য করা হলে প্রাথমিক শিক্ষকরা শ্রান্তি বিনোদন ভাতা তিন বছরের পরিবর্তে চার বছর অন্তর পাবেন। কারণ আরবি বছরে খ্রিস্টীয় বছরের চেয়ে ১১ দিন কম থাকে। এ অবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে অব্যাহত থাকে। সরকারি অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির আবেদনের প্রেক্ষিতে বিগত সময়ে গ্রীষ্মকালীন ছুটি ১৫ দিন রাখার বিধান রাখা হয়। এ বছর গ্রীষ্মকালীন ছুটি রাখা হয়েছে মাত্র ৫ দিন। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বঞ্চিত রাখা বা যথাসময়ে পাওনা না দেয়া যেন বিশাল কৃতিত্বের কাজ বলে মনে করা হয়।
এক বছর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক সংস্থাপন, অর্থ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা ও সহকারী শিক্ষকদের বৈষম্যমূলক বেতন প্রদানের আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু তা আদৌ শিক্ষকদের ভাগ্যে জুটছে না। শিক্ষকদের এই প্রাপ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন উত্থাপন শুরু হয়েছে। যেন শিক্ষকদের এই সামান্য অর্থ দিতে বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন। ভাবখানা এমন, শিক্ষকদের পাওনা সহজে দিতে মানা। শিক্ষকদের দিয়ে ছুটির দিনে মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বঙ্গবন্ধু ও বেগম ফজিলাতুননেছা গোল্ডকাপ অনুষ্ঠান, উপবৃত্তি প্রদান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ কমিটির কার্যক্রমের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করানো হয়। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটির দিনে কাজ করলে টিএ/ডিএ পেয়ে থাকেন। অথচ শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ভাতা তো দূরের কথা, তাদের ভোকেশনাল বিভাগের মতো ছুটিও দেয়া হচ্ছে না। আবার নন-ভোকেশনাল সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে।
এবার সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়/দফতরের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষকদের ছুটির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরছি। প্রাথমিক শিক্ষকরা বছরে সর্বমোট ৭৫ দিন তালিকাভুক্ত ছুটি পান। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বছরে ২৩ দিন সরকারি তালিকাভুক্ত ছুটি পান। এ ছুটি প্রাথমিক শিক্ষকদের ৭৫ দিন ছুটির অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের বাড়তি ছুটি থাকে (৭৫-২৩) ৫২ দিন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবক্ষেত্রে শুক্র ও শনি ২ দিন সাপ্তাহিক ছুটি পান। কিন্তু শিক্ষকরা শনিবারও কর্মরত থাকেন। তারা অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর তুলনায় ৫২ দিন ছুটি কম ভোগ করছেন। তাহলে তাদের বাড়তি ছুটি থাকে (৫২-৫২) ০ দিন। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় দিবস ৬ দিন, যা ছুটির তালিকায় ছুটি হিসেবে দেখানো হয়েছে, কিন্তু বাধ্যতামূলক উপস্থিতিরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ছুটির নামে এই প্রবঞ্চনা দীর্ঘ ছয় বছর ধরে চলছে। অর্থাৎ শিক্ষকরা ৬ দিন ছুটি কম পাচ্ছেন। এছাড়াও ছুটির দিনে শিক্ষকদের দিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করানো হয়। বাস্তবতার নিরিখে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রাথমিক শিক্ষকরা সরকারের অন্যান্য কর্মচারীর চেয়ে কম ছুটি ভোগ করেন। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতালব্ধ কিছু সুপারিশ রাখতে চাই-
ছুটির তালিকা সংশোধন করে জাতীয় দিবসগুলোকে কর্মদিবস দেখানো হোক। শিক্ষকদের শ্রান্তি বিনোদন ভাতা প্রতি ৩ বছর পরপর প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধানের জন্য জাতীয় দিবসের ছুটিসহ প্রয়োজনে অন্যান্য ছুটি কমিয়ে ১৫ দিন গ্রীষ্মের ছুটির বিধান রাখা হোক। প্রাথমিক শিক্ষকদের ছুটি অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর চেয়ে কম। অথচ শিক্ষকরা কেন ভোকেশনাল বিভাগের অন্তর্ভুক্ত থেকে চিকিৎসা ছুটি অর্ধ-বেতনে ভোগ করবে? চাকরি লাম্পগ্র্যান্ট কেন সরকারি অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো পাবে না? অর্জিত ছুটিতে কেন বৈষম্য থাকবে? প্রাথমিক শিক্ষকদের নন-ভোকেশনাল বিভাগের আওতাভুক্ত করে তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হোক। বাংলাদেশ শিক্ষার্থী-শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা কমিটি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করছে। এ বিষয়ে তারা শিগ্গিরই সংগঠিত হবে।
আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করবেন। কতিপয় স্বার্থান্বেষী কর্মকর্তার ভুলের জন্য বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি মোটেই কাম্য নয়। শিগ্গিরই প্রতিষ্ঠিত হবে শিক্ষকদের অধিকার- অধীর আগ্রহে সেই প্রত্যাশায় রয়েছে শিক্ষক সমাজ।
মো. সিদ্দিকুর রহমান : শিক্ষক নেতা ও প্রাথমিক শিক্ষাবিষয়ক গবেষক
No comments