বন্দরে আটকে আছে ৫০,০০০ কোটি টাকার পণ্য by মহিউদ্দীন জুয়েল
দেশের
চলমান হরতাল-অবরোধ পরিস্থিতিতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে
চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য। ২০ দলীয় জোটের লাগাতার রাজনৈতিক কর্মসূচিতে
ইতিমধ্যে গত এক সপ্তাহে ১২০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে আমদানিকারকদের।
বন্দরের অভ্যন্তরে আটকা পড়েছে পণ্যবাহী ২৫০০০ কনটেইনার। যার ভেতর রয়েছে ৫০
হাজার কোটি টাকার পণ্য। কেবল তাই নয়, গার্মেন্ট মালিকরা আশঙ্কা প্রকাশ
করছেন, এভাবে চলতে থাকলে চলতি সপ্তাহ থেকে বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি হবে পোশাক
শিল্পে। গতকাল মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানিয়েছেন বন্দরনগরীর বড়
ব্যবসায়ীরা। দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ। লাগাতার
হরতাল-অবরোধে ধস নেমে এসেছে ভোগ্যপণ্যের এই বাজারে। গত ৭ দিনের সংঘাতময়
পরিস্থিতিতে এখানে ক্ষতি হয়েছে ১২০০ কোটি টাকা। প্রতিদিন যেখানে গড়ে ৪০০
কোটি টাকা লেনদেন হয় সেখানে এখন চলছে হতাশা। অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে এই
ভোগ্যপণ্যের বাজার থেকে কোন গাড়ি চট্টগ্রাম ছেড়ে যেতে পারেনি। যদিও সরকার
থেকে পুলিশ প্রহরায় গাড়ি চালানোর ব্যাপারে আশ্বাস দেয়া হয়েছে কিন্তু তাতেও
আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান একাধিক ব্যবসায়ী।
ব্যবসায়ী নেতারা জানান, বিদেশ থেকে পণ্য নিয়ে জাহাজ ভিড়লেও তা অবরোধের কারণে খালাস হচ্ছে না। ফলে কন্টেইনার জমে থাকার কারণে বাজারে পণ্যের সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। এতে করে দামের ওপরও প্রভাব পড়ছে। যথাসময়ে এসব পণ্য পৌঁছে দিতে না পারায় ক্ষতির মাশুল দিতে হচ্ছে তাদেরকে। বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য খালাস হলেও দূরের গুদামে পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রাম থেকে বাইরে পণ্য নিয়ে কোন পরিবহন যাচ্ছে না। একই সঙ্গে মহাসড়কে জ্বালাও, পোড়াও এর আশঙ্কায় কোন গাড়িও বন্দরনগরীতে আসছে না। অবরোধের কারণে বেড়ে গেছে ট্রাক, লরি ও কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহনের ভাড়া। হরতাল ছাড়া স্বাভাবিক সময়ে সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১০০০ ট্রাক প্রবেশ করে আসে দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে। বিশেষ করে পিয়াজ, আদা, রসুনসহ কয়েক ধরনের পণ্য সরাসরি আমদানি হয় সড়কপথে। অবরোধের কারণে পিয়াজ পচনশীল হওয়ায় এগুলোর সরবরাহ নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন বড় ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে হরতাল-অবরোধে ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমদ। তিনি বলেন, হরতালের কারণে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে দিনে ৩০০ কোটি টাকা। অথচ অন্য সময়ে ১০০০ কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয় এখানে। সীমান্ত দিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে আসতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ যদি কোন নাশকতা হয় তাহলে তার দায়ভার নেবে কে।
চট্টগ্রাম বন্দরের একটি সূত্র জানায়, বিদেশ থেকে আসা ভোগ্যপণ্যের ২৫ হাজার কন্টেইনার আটকা পড়ে রয়েছে সেখানে। এসব কন্টেইনারের সব ক’টিতেই ভোগ্যপণ্যসহ নানান প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক জিনিসপত্র রয়েছে। ব্যবসায়ীরা এসব কন্টেইনার ছাড়িয়ে নিতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। বন্দরের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পণ্যবাহী ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যানের দীর্ঘ লাইন। বাইরে বসে আছেন অন্তত কয়েক শ’ ব্যবসায়ী। বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে জমে থাকা হাজার হাজার কনটেইনার খালাস করতে তারা ভিড় করছেন এখানে। আবু সাইদ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি এসেছি সাভার থেকে। বন্দরে কনটেইনার খালাস করার অনুমতি পেয়েছি। আমার সঙ্গে যারা এসেছেন তারা এখনও পাননি। কারণ হিসেবে জানানো হয়েছে জট রয়েছে। প্রচুর আবেদন জমা পড়েছে। দুশ্চিন্তায় আছি, পথে কোন ঝামেলা হয় কিনা। আমরা পরিস্থিতির স্বাভাবিকতা ফিরে চাই।
প্রতিদিন বন্দর দিয়ে দুই থেকে আড়াই হাজার কনটেইনার খালাস হয়ে বলে জানা গেছে। কিন্তু গত এক সপ্তাহে এই চিত্র ছিল খুবই নাজুক। হরতাল-অবরোধে ক্ষতির মুখে পড়েছেন গার্মেন্ট মালিকরাও। সর্বশেষ গত সোমবার ঢাকায় বিজিএমই ভবনে এই সংক্রান্ত এক জরুরি বৈঠক হয় সংগঠনের নেতাদের। সেখানে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের পোশাক শিল্পের মালিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, এভাবে চলতে থাকলে বিদেশী ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে তাদের অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেবেন। এই বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেছেন, যেভাবে হরতাল অবরোধের মুখে পড়েছে দেশের আমদানি- রপ্তানি তাতে আমাদের শিল্পকে বাঁচিয়ে নেয়া কঠিন হবে। কেননা বিদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে সংগঠনটির একাধিক নেতা জানান, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা রপ্তানি ধরা হয়েছে গার্মেন্ট শিল্পে। কিন্তু বছরের শুরুতেই এমন অবস্থা তৈরি হওয়ায় তাতে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রামসহ সারা দেশে একদিনের হরতালে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয় পোশাক শিল্পে। এই ক্ষতি দিন দিন বাড়ছে। এই ব্যাপারে জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। কেননা আমরা বর্তমানে এমন পর্যায়ে রয়েছি যেখান থেকে আসলে ব্যবসায়ীদের লস ছাড়া অন্যকিছু হচ্ছে না। পোশাক শিল্প বাংলাদেশের এখন লাভজনক খাত। এই খাতকে বাঁচিয়ে তুলতে চাইলে রাজনৈতিক অস্থিরতা কমাতে হবে।
ব্যবসায়ী নেতারা জানান, বিদেশ থেকে পণ্য নিয়ে জাহাজ ভিড়লেও তা অবরোধের কারণে খালাস হচ্ছে না। ফলে কন্টেইনার জমে থাকার কারণে বাজারে পণ্যের সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। এতে করে দামের ওপরও প্রভাব পড়ছে। যথাসময়ে এসব পণ্য পৌঁছে দিতে না পারায় ক্ষতির মাশুল দিতে হচ্ছে তাদেরকে। বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য খালাস হলেও দূরের গুদামে পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রাম থেকে বাইরে পণ্য নিয়ে কোন পরিবহন যাচ্ছে না। একই সঙ্গে মহাসড়কে জ্বালাও, পোড়াও এর আশঙ্কায় কোন গাড়িও বন্দরনগরীতে আসছে না। অবরোধের কারণে বেড়ে গেছে ট্রাক, লরি ও কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহনের ভাড়া। হরতাল ছাড়া স্বাভাবিক সময়ে সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১০০০ ট্রাক প্রবেশ করে আসে দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে। বিশেষ করে পিয়াজ, আদা, রসুনসহ কয়েক ধরনের পণ্য সরাসরি আমদানি হয় সড়কপথে। অবরোধের কারণে পিয়াজ পচনশীল হওয়ায় এগুলোর সরবরাহ নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন বড় ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে হরতাল-অবরোধে ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমদ। তিনি বলেন, হরতালের কারণে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে দিনে ৩০০ কোটি টাকা। অথচ অন্য সময়ে ১০০০ কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয় এখানে। সীমান্ত দিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে আসতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ যদি কোন নাশকতা হয় তাহলে তার দায়ভার নেবে কে।
চট্টগ্রাম বন্দরের একটি সূত্র জানায়, বিদেশ থেকে আসা ভোগ্যপণ্যের ২৫ হাজার কন্টেইনার আটকা পড়ে রয়েছে সেখানে। এসব কন্টেইনারের সব ক’টিতেই ভোগ্যপণ্যসহ নানান প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক জিনিসপত্র রয়েছে। ব্যবসায়ীরা এসব কন্টেইনার ছাড়িয়ে নিতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। বন্দরের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পণ্যবাহী ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যানের দীর্ঘ লাইন। বাইরে বসে আছেন অন্তত কয়েক শ’ ব্যবসায়ী। বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে জমে থাকা হাজার হাজার কনটেইনার খালাস করতে তারা ভিড় করছেন এখানে। আবু সাইদ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি এসেছি সাভার থেকে। বন্দরে কনটেইনার খালাস করার অনুমতি পেয়েছি। আমার সঙ্গে যারা এসেছেন তারা এখনও পাননি। কারণ হিসেবে জানানো হয়েছে জট রয়েছে। প্রচুর আবেদন জমা পড়েছে। দুশ্চিন্তায় আছি, পথে কোন ঝামেলা হয় কিনা। আমরা পরিস্থিতির স্বাভাবিকতা ফিরে চাই।
প্রতিদিন বন্দর দিয়ে দুই থেকে আড়াই হাজার কনটেইনার খালাস হয়ে বলে জানা গেছে। কিন্তু গত এক সপ্তাহে এই চিত্র ছিল খুবই নাজুক। হরতাল-অবরোধে ক্ষতির মুখে পড়েছেন গার্মেন্ট মালিকরাও। সর্বশেষ গত সোমবার ঢাকায় বিজিএমই ভবনে এই সংক্রান্ত এক জরুরি বৈঠক হয় সংগঠনের নেতাদের। সেখানে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের পোশাক শিল্পের মালিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, এভাবে চলতে থাকলে বিদেশী ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে তাদের অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেবেন। এই বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেছেন, যেভাবে হরতাল অবরোধের মুখে পড়েছে দেশের আমদানি- রপ্তানি তাতে আমাদের শিল্পকে বাঁচিয়ে নেয়া কঠিন হবে। কেননা বিদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে সংগঠনটির একাধিক নেতা জানান, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা রপ্তানি ধরা হয়েছে গার্মেন্ট শিল্পে। কিন্তু বছরের শুরুতেই এমন অবস্থা তৈরি হওয়ায় তাতে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রামসহ সারা দেশে একদিনের হরতালে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয় পোশাক শিল্পে। এই ক্ষতি দিন দিন বাড়ছে। এই ব্যাপারে জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। কেননা আমরা বর্তমানে এমন পর্যায়ে রয়েছি যেখান থেকে আসলে ব্যবসায়ীদের লস ছাড়া অন্যকিছু হচ্ছে না। পোশাক শিল্প বাংলাদেশের এখন লাভজনক খাত। এই খাতকে বাঁচিয়ে তুলতে চাইলে রাজনৈতিক অস্থিরতা কমাতে হবে।
No comments