দুই কামরাতেই খালেদার দিনরাত by কাজী সুমন
গুলশান
২-এর ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়ি। বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতা ও বিএনপি
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়। কার্যালয়ের মূলফটকে
সার্বক্ষণিক পাহারা দিচ্ছেন অর্ধশতাধিক নারী ও পুরুষ পুলিশ সদস্য।
কার্যালয়ে সামনের রাস্তার উত্তরদিকে কয়েক গজ দূরেই দুটি পুলিশ ভ্যান ও
দক্ষিণ দিকে একটি জলকামান আড়াআড়িভাবে রাখা। ওই সড়কের দুইপ্রান্তে পুলিশের
তল্লাশি চৌকি। এভাবেই তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে দীর্ঘ ১৪ দিন ধরে
অবরুদ্ধ জীবন কাটাচ্ছেন সাবেক তিনবারের এই প্রধানমন্ত্রী। কার্যালয়টির
দোতলার দুটি কক্ষেই সীমাবদ্ধ তার চলাচল। নাওয়া-খাওয়া, বিশ্রাম নিচ্ছেন এই
দু’টি কক্ষেই। দলের সিনিয়র নেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি যারা যাচ্ছেন
তাদের সঙ্গে কার্যালয়ে দোতলায় সাক্ষাৎ করছেন তিনি। জোটের ডাকা
অনির্দিষ্টকালের অবরোধ পরিস্থিতির সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। বিভিন্ন
জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। আন্দোলনের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। সময়ে
সময়ে বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও প্রেস সচিব মারুফ কামাল
খান সোহেলকে ডেকে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
চাঙ্গা রাখছেন তৃণমূল কর্মীদেরও। প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় চোখ বুলানোর
পাশাপাশি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সংবাদ দেখছেন নিয়মিত। দলের মহিলা নেত্রীদের
সঙ্গে গল্প-গুজব করে সময় পার করেন তিনি। দুপুরের পর থেকে সারা দেশের
অবরোধের চিত্রের খোঁজ নেন। এছাড়া ওয়াক্তমতো নামাজ পড়ছেন। আত্মীয়স্বজনের
বাসা থেকে আসা খাবারই খাচ্ছেন তিনি। অবরুদ্ধ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সংবাদ
মাধ্যমকে সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন তিনি। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির একতরফা
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুলশানের নিজ বাসভবনে দীর্ঘ ১৫ দিন অবরুদ্ধ ছিলেন
খালেদা জিয়া। এছাড়া ওয়ান-ইলেভেন সরকার আমলে জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে বিশেষ
কারাগারে দীর্ঘ এক বছর কারাজীবন কাটিয়েছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে মহিলা নেত্রীদের মধ্যে অবরুদ্ধ জীবন কাটাচ্ছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা ও আরেক মহিলা নেত্রী হেনা আলাউদ্দিন। খালেদা জিয়ার পাশাপাশি কক্ষেই থাকছেন তারা। প্রায় সময় একইসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া ও গুল্পগুজব করছেন। অবরুদ্ধ জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সেলিমা রহমান মানবজমিনকে বলেন, এটা একটা রাজনৈতিক কার্যালয়। বাসার মতো থাকার পরিবেশ নেই। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া)সহ আমরা সবাই খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। ম্যাডাম একটি কক্ষে কখনও শুয়ে আবার কখনও সোফায় হেলান দিয়ে সময় পার করছেন। খাওয়া-দাওয়ারও অনেক কষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় খাবার আসতে দেরি হয়। তিনি বলেন, ম্যাডাম ঘুম থেকে উঠে প্রায় সময় আমাদের নিয়ে নাস্তা করেন। পত্রিকা পড়েন। টিভি চ্যানেলগুলোর সংবাদ দেখেন। এছাড়া বিবিসি, সিএনএনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর সংবাদ দেখেন নিয়মিত। দুপুরে ও রাতে খুব অল্প খাবার খান। মাঝে মাঝে রঙ চা খান। এছাড়া উনার বোন, ভাইয়ের স্ত্রী, বড় ছেলে তারেক রহমানের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনরা প্রায়ই খাবার নিয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে সময় কাটান। এছাড়া ওয়াক্তমতো নামাজ পড়ছেন। বিভিন্ন দোয়া-দরুদসহ ধর্মীয় গ্রন্থ পড়ে তার সময় কাটাচ্ছেন।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, প্রায়ই আমরা উনার রুমে যাই। আবার প্রয়োজনে প্রায়ই তিনি নিজেই আমাদের ডাকেন। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। সরকারের নির্যাতনের শিকার দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মাঝে মাঝে জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়া রাতে দলের সিনিয়র নেতা ও সুশীল সমাজের যারা আসেন তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় দীর্ঘ ১ বছর কারাগারে ছিলেন ম্যাডাম। তার ভেতরের কষ্ট কারও কাছে প্রকাশ করেননি। দেশের মানুষের স্বার্থে মনোবল শক্ত রেখে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। এবারও তার মনের কষ্ট প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। তার মনোবল অত্যন্ত দৃঢ়। দলের সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার ও হামলা করে বিচ্ছিন্ন রাখার পরও মনোবল হারাননি। নতুন কোন কর্মসূচির নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা- এ ব্যাপারে তিনি বলেন, তিনি দেশের ১৬ কোটি মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য এই আন্দোলন করছেন। নিজের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি একেক সময় একেক রকম হয়। আমাদের অবরোধ কর্মসূচি চলছে। দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়েছে। আন্দোলনের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে পরবর্তী কর্মসূচি। তবে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিনি। নিজের কষ্টের বর্ণনা দিয়ে সেলিমা রহমান বলেন, কার্যালয়ে ঘুমানোর কোন ব্যবস্থা নেই। আমি ছোট্ট একটি সোফায় কোনমতে রাত কাটাচ্ছি। আর শিরিন সুলতানাসহ কয়েকজন মহিলা নেত্রী ফ্লোরে কম্বল বিছিয়ে রাতে ঘুমান। গাদাগাদি করেই সবাই থাকছি। অবরুদ্ধ জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান বলেন, দীর্ঘ ১৪ দিন ধরে কারাগারের মতো জীবন-যাপন করছি। শুধুমাত্র খাবার, ওষুধ, পানি ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয় পুলিশ। ফ্লোরে কম্বল বিছিয়ে কোনরকম রাত কাটাই। এছাড়া অন্য যারা কার্যালয়ে অবরুদ্ধ আছেন তারা কেউ চেয়ারে, কেউ সোফায়, আবার কেউ ফ্লোরে ঘুমান। খাওয়া-দাওয়া ও গোছল কার্যালয়েই সারতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ম্যাডামও কার্যালয়ের দোতলার দুটি কক্ষে অবরুদ্ধ জীবন কাটাচ্ছেন। উনার ব্যক্তিগত কক্ষটিতে রাতে থাকেন। আর দলের নেতারা যারা সাক্ষাৎ করতে যান তাদের সঙ্গে সভাকক্ষটিতে বৈঠক করেন। প্রায় সময় দলের নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। নেতারাও ম্যাডামকে ফোন করেন। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। ৩রা জানুয়ারি রাত থেকে পুরুষদের মধ্যে কার্যালয়ে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাহবুব আল-আমিন ডিউ, চেয়ারপারসনের প্রধান নিরাপত্তা সমন্বয়কারী লে. কর্নেল (অব.) আবদুল মজিদ, মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খানসহ কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এছাড়া সিএসএফের ৩৪ জন সদস্য পালাক্রমে কার্যালয়ের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
গত ৩রা জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় কার্যালয়ে আসেন খালেদা জিয়া। এর পরপরই কার্যালয়ের সামনে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অর্ধশতাধিক নারী পুলিশ সদস্যকে মোতায়েন করা হয় কার্যালয়ের সামনে। কার্যালয়ের দক্ষিণ পাশে একটি জলকামান ও পুলিশ ভ্যান ও উত্তর পাশে আরেকটি জলকামান ও পুলিশ ভ্যান দিয়ে ব্যারিকেড। ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অসুস্থ দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদকে দেখতে যেতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের পথরোধ করে পুলিশ। প্রায় আধাঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে ফের কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন তিনি। পূর্ব ঘোষিত ৫ই জানুয়ারির সমাবেশে যাওয়া ঠেকাতে শনিবার রাত ১২টার পর থেকেই একে একে কার্যালয়ের সামনের রাস্তার দুইপাশে এনে রাখা হয় ১১টি ইট ও বালুভর্তি ট্রাক। এরপর থেকেই কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনবারের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী। কার্যালয়টিতে ঘুমানোর ব্যবস্থা না থাকায় ওই রাতেই বাইরে থেকে একটি খাট আনানো হয়। তবে আকারে বড় হওয়ায় ওই রাতে সেটি আর পাতা যায়নি। পরদিন দলের স্থায়ী কমিটির সভাকক্ষে খাটটি পাতা হয়। ফলে ওই রাত সোফায় হেলান দিয়েই কাটান খালেদা জিয়া। ৫ই জানুয়ারি দুপুরে কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ। বিকাল পৌনে ৪টায় কার্যালয়ের দোতলা থেকে নিচে নামেন তিনি। এসময় বের হওয়ার চেষ্টা করলে খালেদা জিয়ার গাড়ি লক্ষ্য করে পেপার সেপ্র ছোড়ে পুলিশ। প্রায় এক ঘণ্টা গাড়ি থেকে বের হয়ে উপস্থিত গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এদিকে ওই দিন সন্ধ্যার পর পেপার সেপ্রর গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। রাতেই একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রতিনিধি দল কার্যালয়ে প্রবেশ তাকে চিকিৎসা দেন। ৬ই জানুয়ারি কার্যালয়ের দুই পাশে বালু ও ইটের ট্রাক সরিয়ে নেয়া হয়।
এদিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে মহিলা নেত্রীদের মধ্যে অবরুদ্ধ জীবন কাটাচ্ছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা ও আরেক মহিলা নেত্রী হেনা আলাউদ্দিন। খালেদা জিয়ার পাশাপাশি কক্ষেই থাকছেন তারা। প্রায় সময় একইসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া ও গুল্পগুজব করছেন। অবরুদ্ধ জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সেলিমা রহমান মানবজমিনকে বলেন, এটা একটা রাজনৈতিক কার্যালয়। বাসার মতো থাকার পরিবেশ নেই। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া)সহ আমরা সবাই খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। ম্যাডাম একটি কক্ষে কখনও শুয়ে আবার কখনও সোফায় হেলান দিয়ে সময় পার করছেন। খাওয়া-দাওয়ারও অনেক কষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় খাবার আসতে দেরি হয়। তিনি বলেন, ম্যাডাম ঘুম থেকে উঠে প্রায় সময় আমাদের নিয়ে নাস্তা করেন। পত্রিকা পড়েন। টিভি চ্যানেলগুলোর সংবাদ দেখেন। এছাড়া বিবিসি, সিএনএনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর সংবাদ দেখেন নিয়মিত। দুপুরে ও রাতে খুব অল্প খাবার খান। মাঝে মাঝে রঙ চা খান। এছাড়া উনার বোন, ভাইয়ের স্ত্রী, বড় ছেলে তারেক রহমানের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনরা প্রায়ই খাবার নিয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে সময় কাটান। এছাড়া ওয়াক্তমতো নামাজ পড়ছেন। বিভিন্ন দোয়া-দরুদসহ ধর্মীয় গ্রন্থ পড়ে তার সময় কাটাচ্ছেন।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, প্রায়ই আমরা উনার রুমে যাই। আবার প্রয়োজনে প্রায়ই তিনি নিজেই আমাদের ডাকেন। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। সরকারের নির্যাতনের শিকার দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মাঝে মাঝে জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়া রাতে দলের সিনিয়র নেতা ও সুশীল সমাজের যারা আসেন তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় দীর্ঘ ১ বছর কারাগারে ছিলেন ম্যাডাম। তার ভেতরের কষ্ট কারও কাছে প্রকাশ করেননি। দেশের মানুষের স্বার্থে মনোবল শক্ত রেখে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। এবারও তার মনের কষ্ট প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। তার মনোবল অত্যন্ত দৃঢ়। দলের সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার ও হামলা করে বিচ্ছিন্ন রাখার পরও মনোবল হারাননি। নতুন কোন কর্মসূচির নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা- এ ব্যাপারে তিনি বলেন, তিনি দেশের ১৬ কোটি মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য এই আন্দোলন করছেন। নিজের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি একেক সময় একেক রকম হয়। আমাদের অবরোধ কর্মসূচি চলছে। দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়েছে। আন্দোলনের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে পরবর্তী কর্মসূচি। তবে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিনি। নিজের কষ্টের বর্ণনা দিয়ে সেলিমা রহমান বলেন, কার্যালয়ে ঘুমানোর কোন ব্যবস্থা নেই। আমি ছোট্ট একটি সোফায় কোনমতে রাত কাটাচ্ছি। আর শিরিন সুলতানাসহ কয়েকজন মহিলা নেত্রী ফ্লোরে কম্বল বিছিয়ে রাতে ঘুমান। গাদাগাদি করেই সবাই থাকছি। অবরুদ্ধ জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান বলেন, দীর্ঘ ১৪ দিন ধরে কারাগারের মতো জীবন-যাপন করছি। শুধুমাত্র খাবার, ওষুধ, পানি ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয় পুলিশ। ফ্লোরে কম্বল বিছিয়ে কোনরকম রাত কাটাই। এছাড়া অন্য যারা কার্যালয়ে অবরুদ্ধ আছেন তারা কেউ চেয়ারে, কেউ সোফায়, আবার কেউ ফ্লোরে ঘুমান। খাওয়া-দাওয়া ও গোছল কার্যালয়েই সারতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ম্যাডামও কার্যালয়ের দোতলার দুটি কক্ষে অবরুদ্ধ জীবন কাটাচ্ছেন। উনার ব্যক্তিগত কক্ষটিতে রাতে থাকেন। আর দলের নেতারা যারা সাক্ষাৎ করতে যান তাদের সঙ্গে সভাকক্ষটিতে বৈঠক করেন। প্রায় সময় দলের নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। নেতারাও ম্যাডামকে ফোন করেন। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। ৩রা জানুয়ারি রাত থেকে পুরুষদের মধ্যে কার্যালয়ে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাহবুব আল-আমিন ডিউ, চেয়ারপারসনের প্রধান নিরাপত্তা সমন্বয়কারী লে. কর্নেল (অব.) আবদুল মজিদ, মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খানসহ কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এছাড়া সিএসএফের ৩৪ জন সদস্য পালাক্রমে কার্যালয়ের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
গত ৩রা জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় কার্যালয়ে আসেন খালেদা জিয়া। এর পরপরই কার্যালয়ের সামনে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অর্ধশতাধিক নারী পুলিশ সদস্যকে মোতায়েন করা হয় কার্যালয়ের সামনে। কার্যালয়ের দক্ষিণ পাশে একটি জলকামান ও পুলিশ ভ্যান ও উত্তর পাশে আরেকটি জলকামান ও পুলিশ ভ্যান দিয়ে ব্যারিকেড। ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অসুস্থ দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদকে দেখতে যেতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের পথরোধ করে পুলিশ। প্রায় আধাঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে ফের কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন তিনি। পূর্ব ঘোষিত ৫ই জানুয়ারির সমাবেশে যাওয়া ঠেকাতে শনিবার রাত ১২টার পর থেকেই একে একে কার্যালয়ের সামনের রাস্তার দুইপাশে এনে রাখা হয় ১১টি ইট ও বালুভর্তি ট্রাক। এরপর থেকেই কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনবারের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী। কার্যালয়টিতে ঘুমানোর ব্যবস্থা না থাকায় ওই রাতেই বাইরে থেকে একটি খাট আনানো হয়। তবে আকারে বড় হওয়ায় ওই রাতে সেটি আর পাতা যায়নি। পরদিন দলের স্থায়ী কমিটির সভাকক্ষে খাটটি পাতা হয়। ফলে ওই রাত সোফায় হেলান দিয়েই কাটান খালেদা জিয়া। ৫ই জানুয়ারি দুপুরে কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ। বিকাল পৌনে ৪টায় কার্যালয়ের দোতলা থেকে নিচে নামেন তিনি। এসময় বের হওয়ার চেষ্টা করলে খালেদা জিয়ার গাড়ি লক্ষ্য করে পেপার সেপ্র ছোড়ে পুলিশ। প্রায় এক ঘণ্টা গাড়ি থেকে বের হয়ে উপস্থিত গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এদিকে ওই দিন সন্ধ্যার পর পেপার সেপ্রর গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। রাতেই একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রতিনিধি দল কার্যালয়ে প্রবেশ তাকে চিকিৎসা দেন। ৬ই জানুয়ারি কার্যালয়ের দুই পাশে বালু ও ইটের ট্রাক সরিয়ে নেয়া হয়।
No comments