জনজীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠাই বেশি জরুরি by মইনুল হোসেন
শেষ
পর্যন্ত ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনে এগিয়ে এসে-ছেন। দেশের
অর্থনীতির বিপুল ক্ষতি এবং দুই নেত্রীর সাংঘর্ষিক রাজনীতি দেখতে দেখতে
তারাও ক্লান্ত ও বিরক্ত। যে কোনো দেশে ব্যবসায়ীদের শক্তিকে বড় শক্তি হিসেবে
গণ্য করা হয়। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ রাজনীতিতেও সহযোগিতা
জুগিয়ে এসেছেন। এখন যে রাজনীতিকে তারা অসুস্থ রাজনীতি বলে স্বীকার করছেন।
তাদের অধিকাংশই দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন এবং এই অসুস্থ রাজনীতি
চালিয়ে অসুস্থ সরকার পেতে উৎসাহ জুগিয়েছিলেন। আমাদের অদূরদর্শিতার জন্যই
দেশ ও জনগণ আজ চরম বিপর্যয়ের মধ্যে। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ সম্মিলিত ও
বলিষ্ঠভাবে একথা বলেছেন যে, দুই নেত্রী যদি অচলাবস্থার ইতি না ঘটান তাহলে
তাদের উচিত হবে পদত্যাগ করা। সন্দেহ নেই, তাদের এই পরিষ্কার বার্তা যথেষ্ট
গুরুত্ব বহন করবে, তথাপিও তাদের সংকল্প বাস্তবায়নে চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।
দীর্ঘকাল ধরে ব্যক্তিস্বার্থান্ধ কতিপয় ব্যক্তির ক্ষমতার ক্ষুধা মেটাতে
জাতিকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। দুঃখের কথা, দেশকে আজ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে
ক্ষমতা ভাগাভাগির জন্য জীবন-মরণ লড়াই প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে। নির্বাচনে
বিজয় লাভের এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য শাসনতন্ত্র পরিবর্তনসহ সবকিছু করেছে
সরকার। যেটা অধিকতর বিরক্তিকর তা হল, নির্বাচনে বিজয় অর্জনের
পূর্বপরিকল্পনা জাতিকে পরিষ্কারভাবে দ্বিধাবিভক্ত করেছে। আওয়ামী লীগ অবাধ
নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সর্বদলীয় সরকার গঠন করার ধোঁকাপূর্ণ পরিকল্পনা
নিয়েছে। কিন্তু সব দলকে নিয়ে সরকার গঠন করতে গিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা
হস্তান্তরের কোনো বিকল্প রাখা হয়নি এবং গোটা ব্যাপারটা অবাস্তব ও
স্ববিরোধী। ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা আছে এমন কোনো রাজনৈতিক দল সর্বদলীয়
সরকারে যোগ দিতে পারে না। এই পরিকল্পনার সঙ্গে দেশে বিরোধী রাজনীতি না
রাখার নীলনকশার মিল রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৯৭৫ সালে সব দলকে নিয়ে
ঠিক একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছিল একদলীয় বাকশাল সরকার গঠনের সময়। এখনকার
মতো তখনও শাসনতন্ত্র এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়েছিল যাতে আওয়ামী লীগের
নেতৃত্বাধীন শাসক জোট তাদের ইচ্ছামতো ক্ষমতায় থাকতে পারে। তখন কোনো
নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তাও মানা হয়নি। এক্ষেত্রে যেটা বোধগম্য নয় তা হল,
আওয়ামী লীগ যদি এককভাবে শাসনতন্ত্র পরিবর্তন করতে পারে তাহলে অন্যরা কেন
সম্মিলিতভাবে শাসনতন্ত্রে যুক্তিসঙ্গত পরিবর্তন আনার দাবি তুলতে পারবে না?
সংসদীয় ব্যবস্থায় সংসদ ভেঙে না দিয়ে কোথাও সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না। কারণ, এছাড়া সংসদের আসন শূন্য হয় না। যে কথা আমি বারবার বলে এসেছি তা হল, সংসদ ভেঙে দেয়ার পর নির্বাচনকালে কোনো সরকারই নির্বাচিত থাকতে পারে না। কিন্তু শাসনতন্ত্র পরিবর্তন করা হয়েছে, যাতে সরকার ও সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ পদে থেকেই নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এরূপ দৃষ্টান্ত পৃথিবীর অন্য কোনো সংসদীয় ব্যবস্থায় নেই। শাসনতন্ত্র পরিবর্তনের মাধ্যমে নির্বাচনকে সরকার-পরিবর্তনের জন্য অকার্যকর করা হয়েছে। নিজেদের ক্ষমতায় রাখার ব্যবস্থাই নিশ্চিত করা হচ্ছে। শাসনতন্ত্র পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ প্রকারান্তরে ক্ষমতা দখলের ‘সিভিলিয়ান ক্যু’ করেছে।
যেটা আমাদের কাছে বিপজ্জনক মনে হচ্ছে তা হল, আওয়ামী লীগের ভেতরে কিছু লোক আসন্ন নির্বাচনকে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হিসেবে দেখছেন। বিগত দিনে ভারতে থেকে তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, এবার তারা বাংলাদেশে থেকেই মুক্তিযুদ্ধ করবেন। বাংলাদেশে কোনো পাকিস্তানি দখলদার সেনা নেই। তাই এরূপ যুদ্ধ হবে তাদের পছন্দমতো এদেশের জনগণের এক বা একাধিক অংশের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে আমাদের ভারতের সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিতে হয়েছিল। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা শুধু নিজেদের শক্তিবলে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে পারেননি।
আশা করি এবার মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করবেন বাইরের সাহায্য না নিয়ে। এর একটাই অর্থ হতে পারে যে, এদেশের লোকেরা একে অন্যের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে লড়বেন। এ ধরনের ধারণার অর্থ হচ্ছে গৃহযুদ্ধ ডেকে আনা। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা জানেন যুদ্ধ বলতে কী বোঝায়। তাই তাদের মাথা থেকে এ ধারণা আসতে পারে না। তাছাড়া হাতেগোনা কিছু লোক কখনও জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয়ী হতে পারে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনগণের মুক্তিযুদ্ধ। এই সত্য কোনো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা অস্বীকার করতে পারেন না এবং এজন্যই তিনি গর্ববোধ করেন। একমাত্র পুলিশি তৎপরতা ছাড়া অন্য সব বিবেচনায় সরকারের সব কার্যক্রমকে অচল করে দিয়েছে দেশব্যাপী অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আন্দোলন। দেশের রাজধানী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেশের অন্যতম প্রবীণ সাংবাদিক জনাব এবিএম মূসা, মনেপ্রাণে যিনি একজন আওয়ামী লীগের সমর্থক, তিনি এক টেলিভিশন টকে বলেছেন, শেখ হাসিনা এখন ঢাকার প্রধানমন্ত্রী। অবশ্য এ কথার মধ্যে তার হতাশাই ব্যক্ত হয়েছে, কারণ সরকার দেশের অস্বস্তিকর অবস্থার প্রতি উদাসীন। জনগণের মুক্তিযুদ্ধের অখণ্ড চেতনাকে খণ্ডিত করে যারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভঙ্গিতে নিজেদের কর্তৃত্ব (অকুপেশান) মুক্তিযুদ্ধের নামে প্রতিষ্ঠার কথা বলেন, তাদের সর্বপ্রথম কর্তব্য হচ্ছে এই চেতনা বলতে কী বোঝায় তার একটা ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা।
জনগণ মুক্তিযুদ্ধে এজন্য রক্ত দিয়েছে যে, তারা গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করার নিশ্চয়তা পাবে। তারা নির্বাচিত সরকারের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এই মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই বাংলাদেশের জনগণের মাথাব্যথা, অন্য কোনো মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযুদ্ধের অন্য কোনো উদ্দেশ্যের কথা তাদের অজানা। নিজেদের সমস্যা সমাধানে নিজেদের অপারগতা যে একটা স্বাধীন জাতির জন্য কত লজ্জাজনক তাও আমাদের নেতারা বুঝতে চাচ্ছেন না। পাকিস্তান ছেড়ে এসেছি পাকিস্তানি আমলের স্বৈরশাসকদের মতো ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার মনমানসিকতা ধারণ করার জন্য নয়। দেশের মানুষ আর জীবনহানি, দেশের ভবিষ্যৎ ধ্বংসকারী আন্দোলন দেখতে চায় না। তাদের প্রার্থনা, এই ভয়াবহ সহিংসতা ও রাজনৈতিক সংঘাতের অবসান ঘটুক এবং দেশে শান্তি-শৃংখলা ফিরে আসুক। দেশের এখন শান্তিতে থাকা দরকার। সরকার এখন নিজের নির্বাচন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সামনে অগ্রসর হতে চাচ্ছে বলে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে। আগেই প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসও বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারির সম্ভাবনার আভাস দিয়েছে।
আমরা শুধু এতটুকু বলতে পারি যে, পরিস্থিতি ভয়াবহ। তারপরও আমরা আশার কথা বলতে পারি না। কারণ আমরা জানি, আমাদের ক্ষমতাসীন নেতাদের একথা বোঝানো যাবে না যে অযথা দেরি না করে রাজনীতিতে ক্ষমতা ত্যাগ করার মধ্যে মহানুভবতা বিদ্যমান। নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে সমবেদনা প্রকাশের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। দক্ষিণ আফ্রিকার জাতির পিতা হিসেবে নেলসন ম্যান্ডেলা একবারের জন্য ক্ষমতায় আসার পর দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় থাকাকে বিজ্ঞচিত কাজ মনে না করে নিজের জীবদ্দশায় নতুন নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ করে দেন এবং পরিবর্তনকে স্বাগত জানান। আমাদের দেশের চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ এবং তথাপিও তারা এর নাম দিয়েছেন গণতন্ত্র। রাজনীতিকদের কাছে অসহায় থাকাও স্বাধীন দেশের নাগরিকের কথা হতে পারে না। যে কোনো মূল্যে দেশে শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করাই যে সবচেয়ে জরুরি তা বুঝতে হবে। রাজনীতিকদের ক্ষমতার লড়াইয়ের কাছে সমগ্র জাতি অসহায় থাকতে পারে না।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন : আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
সংসদীয় ব্যবস্থায় সংসদ ভেঙে না দিয়ে কোথাও সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না। কারণ, এছাড়া সংসদের আসন শূন্য হয় না। যে কথা আমি বারবার বলে এসেছি তা হল, সংসদ ভেঙে দেয়ার পর নির্বাচনকালে কোনো সরকারই নির্বাচিত থাকতে পারে না। কিন্তু শাসনতন্ত্র পরিবর্তন করা হয়েছে, যাতে সরকার ও সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ পদে থেকেই নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এরূপ দৃষ্টান্ত পৃথিবীর অন্য কোনো সংসদীয় ব্যবস্থায় নেই। শাসনতন্ত্র পরিবর্তনের মাধ্যমে নির্বাচনকে সরকার-পরিবর্তনের জন্য অকার্যকর করা হয়েছে। নিজেদের ক্ষমতায় রাখার ব্যবস্থাই নিশ্চিত করা হচ্ছে। শাসনতন্ত্র পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ প্রকারান্তরে ক্ষমতা দখলের ‘সিভিলিয়ান ক্যু’ করেছে।
যেটা আমাদের কাছে বিপজ্জনক মনে হচ্ছে তা হল, আওয়ামী লীগের ভেতরে কিছু লোক আসন্ন নির্বাচনকে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হিসেবে দেখছেন। বিগত দিনে ভারতে থেকে তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, এবার তারা বাংলাদেশে থেকেই মুক্তিযুদ্ধ করবেন। বাংলাদেশে কোনো পাকিস্তানি দখলদার সেনা নেই। তাই এরূপ যুদ্ধ হবে তাদের পছন্দমতো এদেশের জনগণের এক বা একাধিক অংশের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে আমাদের ভারতের সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিতে হয়েছিল। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা শুধু নিজেদের শক্তিবলে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে পারেননি।
আশা করি এবার মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করবেন বাইরের সাহায্য না নিয়ে। এর একটাই অর্থ হতে পারে যে, এদেশের লোকেরা একে অন্যের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে লড়বেন। এ ধরনের ধারণার অর্থ হচ্ছে গৃহযুদ্ধ ডেকে আনা। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা জানেন যুদ্ধ বলতে কী বোঝায়। তাই তাদের মাথা থেকে এ ধারণা আসতে পারে না। তাছাড়া হাতেগোনা কিছু লোক কখনও জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয়ী হতে পারে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনগণের মুক্তিযুদ্ধ। এই সত্য কোনো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা অস্বীকার করতে পারেন না এবং এজন্যই তিনি গর্ববোধ করেন। একমাত্র পুলিশি তৎপরতা ছাড়া অন্য সব বিবেচনায় সরকারের সব কার্যক্রমকে অচল করে দিয়েছে দেশব্যাপী অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আন্দোলন। দেশের রাজধানী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেশের অন্যতম প্রবীণ সাংবাদিক জনাব এবিএম মূসা, মনেপ্রাণে যিনি একজন আওয়ামী লীগের সমর্থক, তিনি এক টেলিভিশন টকে বলেছেন, শেখ হাসিনা এখন ঢাকার প্রধানমন্ত্রী। অবশ্য এ কথার মধ্যে তার হতাশাই ব্যক্ত হয়েছে, কারণ সরকার দেশের অস্বস্তিকর অবস্থার প্রতি উদাসীন। জনগণের মুক্তিযুদ্ধের অখণ্ড চেতনাকে খণ্ডিত করে যারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভঙ্গিতে নিজেদের কর্তৃত্ব (অকুপেশান) মুক্তিযুদ্ধের নামে প্রতিষ্ঠার কথা বলেন, তাদের সর্বপ্রথম কর্তব্য হচ্ছে এই চেতনা বলতে কী বোঝায় তার একটা ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা।
জনগণ মুক্তিযুদ্ধে এজন্য রক্ত দিয়েছে যে, তারা গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করার নিশ্চয়তা পাবে। তারা নির্বাচিত সরকারের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এই মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই বাংলাদেশের জনগণের মাথাব্যথা, অন্য কোনো মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযুদ্ধের অন্য কোনো উদ্দেশ্যের কথা তাদের অজানা। নিজেদের সমস্যা সমাধানে নিজেদের অপারগতা যে একটা স্বাধীন জাতির জন্য কত লজ্জাজনক তাও আমাদের নেতারা বুঝতে চাচ্ছেন না। পাকিস্তান ছেড়ে এসেছি পাকিস্তানি আমলের স্বৈরশাসকদের মতো ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার মনমানসিকতা ধারণ করার জন্য নয়। দেশের মানুষ আর জীবনহানি, দেশের ভবিষ্যৎ ধ্বংসকারী আন্দোলন দেখতে চায় না। তাদের প্রার্থনা, এই ভয়াবহ সহিংসতা ও রাজনৈতিক সংঘাতের অবসান ঘটুক এবং দেশে শান্তি-শৃংখলা ফিরে আসুক। দেশের এখন শান্তিতে থাকা দরকার। সরকার এখন নিজের নির্বাচন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সামনে অগ্রসর হতে চাচ্ছে বলে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে। আগেই প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসও বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারির সম্ভাবনার আভাস দিয়েছে।
আমরা শুধু এতটুকু বলতে পারি যে, পরিস্থিতি ভয়াবহ। তারপরও আমরা আশার কথা বলতে পারি না। কারণ আমরা জানি, আমাদের ক্ষমতাসীন নেতাদের একথা বোঝানো যাবে না যে অযথা দেরি না করে রাজনীতিতে ক্ষমতা ত্যাগ করার মধ্যে মহানুভবতা বিদ্যমান। নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে সমবেদনা প্রকাশের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। দক্ষিণ আফ্রিকার জাতির পিতা হিসেবে নেলসন ম্যান্ডেলা একবারের জন্য ক্ষমতায় আসার পর দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় থাকাকে বিজ্ঞচিত কাজ মনে না করে নিজের জীবদ্দশায় নতুন নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ করে দেন এবং পরিবর্তনকে স্বাগত জানান। আমাদের দেশের চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ এবং তথাপিও তারা এর নাম দিয়েছেন গণতন্ত্র। রাজনীতিকদের কাছে অসহায় থাকাও স্বাধীন দেশের নাগরিকের কথা হতে পারে না। যে কোনো মূল্যে দেশে শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করাই যে সবচেয়ে জরুরি তা বুঝতে হবে। রাজনীতিকদের ক্ষমতার লড়াইয়ের কাছে সমগ্র জাতি অসহায় থাকতে পারে না।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন : আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
No comments