নির্যাতনে ওসামার খোঁজ মেলেনি
২০১১ সালের মে মাসে পাকিস্তানে গোপন মার্কিন কমান্ডো অভিযানে নিহত হন আল-কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেন। বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে সেই ঘটনা। সিআইএর শীর্ষ কর্তারা মার্কিন আইনপ্রণেতাদের জানালেন, নিষ্ঠুর নির্যাতনের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যই দীর্ঘদিন ধরে লাপাত্তা ওসামার হদিস দিয়েছে। সিআইএর পরিচালক লিওন প্যানেট্টা ঢাকঢোল পিটিয়ে তা জনসমক্ষেও বললেন। কিন্তু এখন জানা গেল, ওই সব দাবি মোটেই সত্যি নয়। সিনেট গোয়েন্দা কমিটির সদ্য প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওসামা হত্যাসহ যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদবিরোধী তৎপরতায় যে বড় ‘সফলতাগুলো’ এসেছে, তার কোনোটিই সিআইএর ওই নির্যাতনমূলক পদ্ধতির ফসল নয়। খবর এএফপি, এপি ও বিবিসির। ওসামা হত্যার অভিযান নিয়ে নির্মিত জিরো ডার্ক থার্টি চলচ্চিত্রে দেখানো হয়, একজন বন্দীকে নির্যাতনের মাধ্যমেই সিআইএ ওসামার বার্তাবাহক আল-কুয়েতির খোঁজ পায়। এরপর ওসামার হদিস মেলে। কিন্তু সিনেট কমিটির প্রতিবেদন বলছে, সিআইএ বা হলিউডি সিনেমা কোনোটির বর্ণনাই সত্যি নয়।
প্রথাগত পদ্ধতি’র ওপর নির্ভর করেই ওসামার সন্ধান মিলেছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজন আল-কায়েদা সদস্যদের ওপর সিআইএর নির্যাতন যতটা স্বীকার করা হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি নির্মম ছিল। এটি ততটা কার্যকরও হয়নি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে চালু হওয়া ওই বিতর্কিত জিজ্ঞাসাবাদ পদ্ধতির বিষয়ে প্রতিবেদনটিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদবিরোধী তৎপরতায় যে বড় ২০টি ‘সফলতা’ এসেছে, তার কোনোটিই সিআইএর ওই নির্যাতনমূলক পদ্ধতির ফসল নয়। গোয়েন্দা সংস্থাটি বরং জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া ‘ভুল’ তথ্য দিয়ে আল-কায়েদা ও সন্ত্রাসী হুমকি সম্পর্কে মার্কিন কংগ্রেস, হোয়াইট হাউস, বিচার বিভাগ ও জনগণকে বিভ্রান্ত করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানামতে যে ১১৯ জন সন্দেহভাজন আল-কায়েদা বন্দীকে সিআইএ নিজেদের হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে, তার মধ্যে অন্তত ২৬ জনকে অন্যায্যভাবে আটক রাখা হয়েছিল। আর অনেককে যে সময় পর্যন্ত আটক রাখার কথা ছিল, প্রকৃতপক্ষে রাখা হয় তার চেয়ে অনেক বেশি।
বন্দীদের জিজ্ঞাসাবাদে যেসব নির্যাতনমূলক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, তা-ও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল ওয়াটারবোর্ডিং ও পায়ুপথে পানি ঢালা। ওয়াটারবোর্ডিং হচ্ছে কাপড়ে মুখ বেঁধে তার ওপর পানি ঢেলে শ্বাস-প্রশ্বাস কষ্টকর করে তোলা, যাতে নির্যাতিত ব্যক্তির মনে হয়, তিনি পানিতে ডুবে যাচ্ছেন। এই দুটি পদ্ধতিই বন্দীদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বন্দীদের লম্বা সময় (টানা ১৮০ ঘণ্টা পর্যন্ত) ঘুমাতে না দিয়ে যন্ত্রণা দেওয়া হতো। সৌদি নাগরিক আবু জুবাইদাহকে কফিন-আকৃতির ছোট একটি বাক্সের ভেতরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এসব পদ্ধতিকে ‘নিষ্ঠুর নির্যাতন’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ‘টুইন টাওয়ার’-এ ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর আটক ওই বন্দীদের সঙ্গে সিআইএ কী ধরনের আচরণ করেছিল, তা নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনটি গত মঙ্গলবার প্রকাশ করে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের সংশ্লিষ্ট কমিটি।
No comments