পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের বকেয়া আদায় হ্রাস ৪৯৫ কোটি টাকা
কৃষি ও পল্লী খাতে ঋণ বিতরণে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রদত্ত পুনঃঅর্থায়ন আদায় প্রক্রিয়া থমকে গেছে। বকেয়া বেড়ে যাওয়ায় গত সেপ্টেম্বরে কোন পুনঃঅর্থায়ন তহবিল ছাড় করা হয়নি। যদিও চলতি অর্থবছরের শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তার পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগ কর্তৃক সমপ্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের বকেয়া ৯০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময় ছিল ৫২৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের বকেয়া আদায় কমেছে ৪৯৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বা ৯৪%। চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাস তথা সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক কোন পুনঃঅর্থায়ন তহবিল ছাড় করেনি, তবে এ মাসে আদায় হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম ২ মাসে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৫০০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে, যা গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে ছিল ৩০০ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকগুলো কৃষি খাতে ২,৭৫০ কোটি ৪১ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ১৭,৬৯%। এর আগের বছরের একই সময় বিতরণের পরিমাণ ছিল ২,৮৬১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বা লক্ষ্যমাত্রার ১৯.৬১%। সে হিসেবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে কৃষিতে ঋণ বিতরণ কম হয়েছে ১১১ কোটি ১৭ লাখ টাকা বা ৩.৮৮%। যদিও অর্থবছরের প্রথম ২ মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩০ কোটি টাকা বা ৮.১৫% বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায়, কৃষি খাতে চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময় ৩,২৫৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বকেয়া আদায় করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময় ছিল ৩,১০৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সে হিসেবে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বকেয়া ঋণ আদায় বেড়েছে ১৫১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আর শুধু সেপ্টেম্বর মাসে আদায় হয়েছে ১,১৫৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যা আগস্ট মাসে ছিল ১,০৮৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং গত অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে ছিল ১,৩০৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। প্রতিবেদনে দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলে আয় বাড়ার উৎপাদনশীল খাতে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে ৪,৫৪১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, টিএমএসএস, আরডিআরএস, কারিতাস, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন, এসএসএস, শক্তি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এসব বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ৯,৪১৬টি শাখার মাধ্যমে দেশের ২ কোটি ৩২ লাখ ৬০ হাজার সদস্যকে ক্ষুদ্রঋণ সুবিধা দেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণের ৮৭.৮০% বিতরণ করা হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক ও আশার মাধ্যমে। এ ছাড়া পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) উদ্যোগে এর সদস্য এনজিওদের মাধ্যমে জুলাই মাসে ১১৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা অর্থায়ন করা হয়েছে। এ মাসে বকেয়া আদায় হয়েছে ১৩৯ কোটি ৪ লাখ টাকা। বর্তমানে পিকেএসএফের মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩,৬৮০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ও বকেয়া দাঁড়িয়েছে ২১৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
No comments