আইএসে যোগ দিতে গিয়ে আটক তিন ভাইবোন!
দুই ভাই ও এক বোন গোপনে ঘর ছেড়ে সিরিয়া রওনা হয়েছিল। উদ্দেশ্য, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দলে ভিড়ে ইসলামি জিহাদে অংশ নেবে। কঠোর ও নিয়মানুবর্তী মা-বাবা এর কিছুই জানতেন না। হঠাৎ তাঁদের দরজায় পুলিশ এসে হাজির। পুলিশ শফি খান ও জরিন খান দম্পতিকে জানায়, শিকাগো বিমানবন্দর হয়ে তুরস্ক যাওয়ার সময় তাঁদের তিন সন্তানকে আটক করা হয়েছে। কথা শুনে আকাশ থেকে পড়েন মা-বাবা। গত ৪ অক্টোবরের এই ঘটনা সবিস্তারে প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা। পত্রিকার তথ্য অনুসারে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় তিন দশক ধরে বসবাসরত শফি খান ও জরিন খানের তিন সন্তান সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটার ও ফেসবুকের মাধ্যমে জিহাদের দীক্ষা পায়। মোটের ওপর ধার্মিক হলেও খান পরিবার ধর্ম নিয়ে কখনো বাড়াবাড়ি করেনি। তবে সন্তানদের কঠোর নিয়মানুবর্তিতায় বড় করেছে। ঘরে টেলিভিশন পর্যন্ত রাখেনি।
ইন্টারনেট থাকলেও ব্যবহারের সময় বেঁধে দিয়েছে। তবে ছেলেমেয়েরা সম্ভবত মুঠোফোনের মাধ্যমে জিহাদি প্রচারণায় প্রভাবিত হয়েছে। কার্যত মার্কিন সমাজের মূলধারার অন্তর্গত ও মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারের সদ্য কৈশোর পেরোনো এই তিন ছেলেমেয়ে কীভাবে জিহাদি মন্ত্রে দীক্ষিত হলো, তা নিয়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে। তাদের বয়স যথাক্রমে ১৯, ১৭ ও ১৬। প্রথমে তারা পাসপোর্ট সংগ্রহ করে ও ব্যক্তিগত সঞ্চিত অর্থ দিয়ে একমুখী বিমানযাত্রার টিকিট কেনে। ৪ অক্টোবর ভোরে ট্যাক্সি ডেকে শিকাগোর ও’হেয়ার বিমানবন্দরে পৌঁছালে গোয়েন্দা পুলিশ তাদের আটক করে। যাওয়ার আগে তিন ছেলেমেয়ে যে চিঠি লিখে গেছে, তাতে বোঝা যায় তাদের সিদ্ধান্ত আকস্মিক ছিল না। সবচেয়ে বড় ভাই, মোহাম্মদ হামজাহ খান লিখেছেন, ‘(সিরিয়ায়) একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি সক্ষম মুসলমানের দায়িত্ব সেখানে যোগ দেওয়া।’ মা জরিন খান সাংবাদিকদের বলেছেন, ছেলেমেয়েদের তাঁরা সুশিক্ষিত করার কোনো চেষ্টা বাদ রাখেননি।
বড় ছেলেটি, আপাতদৃষ্টে এই পরিকল্পনার যে হোতা, স্থানীয় ইসলামিক স্কুল থেকে পাস করার পর বিখ্যাত রোমান ক্যাথলিক বেনেডিকটাইন কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সায়েন্স পড়ার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। জরিন খান বিলাপ করে বলেছেন, ‘যে জিহাদি মন্ত্রের কথা ওরা লিখেছে, তা আমাদের কথা নয়। এ কথা ইসলামেরও নয়।’ ইসলামিক স্টেট ও অন্যান্য জিহাদি সংগঠনের প্রচার-প্রচারণা মার্কিন তরুণ-তরুণীদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছে, সে কথা মার্কিন কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে। ওই প্রচারণা রোধে সরকারও টুইটার ও ফেসবুকে পাল্টা প্রচারণার উদ্যোগ নিয়েছে। তাতে যে খুব কাজ হচ্ছে না, এ ঘটনা তার এক প্রমাণ। কোন কোন পর্যবেক্ষকের ধারণা, ৯/১১ এ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার ঘটনা ও পরবর্তী সময়ে আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন হস্তক্ষেপ বিদেশের মুসলমানদের মধ্যে যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও তেমনি গভীর ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় কোন কোন মুসলিম পরিবার সন্তানদের মার্কিন প্রভাব থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতির বদলে মাদ্রাসাভিত্তিক ধর্মীয় শিক্ষায় উৎসাহিত করেছেন। দেখা যাচ্ছে, তেমন চেষ্টার ফল সবসময় ইতিবাচক হয় না। এ দেশের মাদ্রাসায় জঙ্গিবাদের দীক্ষা দেওয়া হয়, এমন অভিযোগ অনেক আগে থেকেই শোনা গেছে।
No comments