খালেদা’র সঙ্গে বৈঠকে ৩২ কর্মকর্তা-কর্মচারী- বিএনপি’র এক গ্রুপের ফাঁদে আরেক গ্রুপ
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ৩২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এর মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৮ জন। বাকি ১৪ জন সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ বৈঠকে কর্মচারীদের দু’টি গ্রুপের মধ্যে সমঝোতা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সহকারী সচিব মো. আবদুল খালেক গ্রুপ বৈঠকে অনুপস্থিত থাকায় সমঝোতা ভেস্তে যায়। ফলে বিএনপির এক গ্রুপের ফাঁদে আটকে যায় আরেক গ্রুপ। গত ৭ই নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে একটি শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান ও সাবেক এ সব কর্মকর্তা-কর্মচারী সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন কৌশলে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে থাকেন। বৈঠকের মূল পরিকল্পনাকারী ওএসডি যুগ্ম সচিব ও সাবেক এপিডি একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন এবং অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে ওএসডি সিনিয়র সহকারী সচিব এহসানুল হককে চিহ্নিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠককারী সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছেন ওএসডি যুগ্ম সচিব একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন, ওএসডি সিনিয়র সহকারী সচিব এহসানুল হক, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম (সাবেক মহাসচিব বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ এবং সাবেক সম্পাদক, বাংলাদেশ সচিবালয় বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ), বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইব্রাহীম মিয়াজী (সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ (বিএনপিপন্থি), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের (বর্তমানে বেপজায় কর্মরত) ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বাদিউল কবির (সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ স্টেনো টাইপিস্ট সমিতি), স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল মান্নান ও একেএম হুমায়ুন কবির, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (বাংলাদেশ সচিবালয় পিও সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) তৌফিকুল ইসলাম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন লেজিসলেটিভ বিভাগের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন, পরিসংখ্যান ব্যুরোর কি পাঞ্চ অপারেটর লকীত উল্লাহ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অফিস সহায়ক (বাংলাদেশ সচিবালয় চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সভাপতি) মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, আইএমইডি’র অফিস সহায়ক মো. মজিবুল হক, এজি অফিসের মাস্টার রোল অফিস সহায়ক মামুন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক শহিদুল হক, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন লেজিসলেটিভ বিভাগের অফিস সহায়ক আবুল হাসনাত এবং তথ্য অধিদপ্তরের (প্রেষণে তথ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মরত) অফিস সহায়ক বেলাল হোসেন। প্রতিবেদনে নূরুল ইসলাম, ইব্রাহীম মিয়াজী, তৌফিকুল ইসলাম ও লকিত উল্লাহ’র বিরুদ্ধে ১৯৯৯ সালে সচিবালয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বদিউল কবির, একেএম হুমায়ুন কবির, মো. জহিরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ হোসেন, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মো. মজিবুল হক, মামুন, শহিদুল হক, আবুল হাসনাত ও বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সচিবালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্যদিকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বগুড়ার সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর ভাইপো বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে কর্মচারীদের নিয়ে আসার নেতৃত্ব দেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ১৮ জনের বাইরে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এসব কর্মকর্তারা বিএনপিপন্থি সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এ তালিকায় রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এএসএম আবদুল হালিম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, ড্যাবের সাবেক মহাসচিব ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, পুলিশের সাবেক আইজি এমএ কাইয়ুম, সাবেক সচিব ব্যারিস্টার মো. হায়দার আলী, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো যুগ্ম সচিব বিজন কান্তি সরকার, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব আবদুল বারী, সাবেক উপ-সচিব এমকে বশির, আফতাব আহমেদ, মোশাররফ হোসেন ও আসলাম ইকবাল, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল মান্নান এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের চাকরিচ্যুত ক্যাশ সরকার আবু তোহা। ওই বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈঠকে খালেদা জিয়াকে বিএনপিপন্থি সরকারি কর্মকর্তাদের সাংগঠনিক অবস্থা, ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের বঞ্চনা, নির্যাতন, ভাল ডেস্কে পদায়ন না করা ও পদোন্নতি বঞ্চিত করার বিষয়টি আলোচিত হয়। নির্যাতন ও বঞ্চনার হাত থেকে রেহাই পেতে তারা বেগম জিয়ার কাছে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার ঘোষণা শুনতে চান। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিষয়গুলো দেখবেন বলে বেগম জিয়া আশ্বাস দেন। বৈঠক সম্পর্কে মন্তব্য আকারে বলা হয়েছে, বিএনপিপন্থি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একত্র করে জনতার মঞ্চের আদলে সরকার পতনের আন্দোলনে শামিল করার চেষ্টা হিসেবে বৈঠকটি করা হয়েছে। আগামী ৫ই জানুয়ারি বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্তি হবে। এ পূর্তিকে সামনে রেখে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সরকার পতনের আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে এটা প্রস্তুতি পর্ব। প্রতিবেদনে সুপারিশ আকারে বলা হয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিয়ে সরকার পতন আন্দোলনে সক্রিয় থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া যায়। এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশাসন ও গোয়েন্দাসংস্থাগুলোর নজরদারি বাড়ানো যায়।
No comments