নির্যাতন বিষয়ে বিশদ জানতেন না বুশ
জর্জ ডব্লিউ বুশ |
মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) জিজ্ঞাসাবাদের সময় বন্দীদের নির্যাতনের বিষয়টি তখনকার প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ অনুমোদন করেছিলেন। কিন্তু নির্যাতনের পদ্ধতি সম্পর্কে তাঁকে বিশদ কিছুই জানানো হয়নি। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত সিনেট গোয়েন্দা কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এদিকে তখনকার ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি গতকাল বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, সিআইএর জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল সম্পর্কে সবকিছুই জানতেন জর্জ ডব্লিউ বুশ। খবর ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সের। ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস-এর বিশেষ এক প্রতিবেদনে গতকাল বলা হয়, সিআইএর তথ্য অনুযায়ী, চার বছর ধরে গোয়েন্দা সংস্থাটির কেউই প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে জানাননি মার্কিন বন্দিশিবিরগুলোতে কী চলছিল। অথচ এ সময় ধরে সিআইএর কর্মকর্তারা সন্দেহভাজন জঙ্গিদের ওয়াটারবোর্ডিংয়ের মতো বিভিন্ন নৃশংস পদ্ধতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন। পত্রিকাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০০৬ সালের এপ্রিলে তখনকার সিআইএর পরিচালক যখন প্রেসিডেন্ট বুশকে জিজ্ঞাসাবাদের বিশেষ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রথমবার অবহিত করেন, ততক্ষণে ৩৬ জনেরও বেশি বন্দীকে সেই কায়দায় নির্যাতন করা হয়ে গেছে। যখন বুশকে জানানো হয়, একজন বন্দীকে ছাদের সঙ্গে শেকল দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে নিজের শরীরে মলমূত্র ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়, তখন প্রেসিডেন্ট ‘অস্বস্তি প্রকাশ’ করেছিলেন। মঙ্গলবার প্রকাশিত সিনেটের প্রতিবেদনে এ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সিনেটের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, প্রেসিডেন্ট বুশ ওই জিজ্ঞাসাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে কতটা কী জানতেন, আর সিআইএ-ই বা তাঁকে কী বলেছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিআইএ এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের তোলা সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের জবাব সততার সঙ্গে বা পূর্ণাঙ্গভাবে দেয়নি। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বুশের সময়কার ভাইস প্রেসিডেন্ট চেনি বলেন, সিআইএর জিজ্ঞাসাবাদ কৌশল সম্পর্কে সবকিছুই জানতেন প্রেসিডেন্ট। সিনেটের প্রতিবেদনকে ‘বাজে কথা’ বলেও আখ্যা দেন তিনি। সিনেটের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিআইএ সন্দেহভাজন জঙ্গি বন্দীদের কাছ থেকে তথ্য আদায়ে ‘নিষ্ঠুর নির্যাতন’ চালিয়েছিল। তাদের কাছ থেকে পাওয়া কথিত তথ্য দিয়ে অনেক সময় সন্ত্রাসী হুমকি সম্পর্কে মার্কিন সরকারকে বিভ্রান্ত করেছিল। চেনি আরও বলেন, ‘প্রতিবেদনে বলার চেষ্টা করা হয়েছে যে সিআইএ একগুঁয়েভাবে কাজ করেছে। আমাদের বা প্রেসিডেন্টকে কিছু জানানো হয়নি। কিন্তু এ কথা নির্জলা মিথ্যা।’ তবে তিনি এখনো পুরো প্রতিবেদনটি পড়েননি বলে স্বীকার করেন চেনি। ডিক চেনি বলেন, ‘সিআইএর জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল সম্পর্কে যা জানা দরকার, তার সবকিছুই জানতেন বুশ।’ গত মঙ্গলবার সিনেট কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের কিছুক্ষণ আগে ইউএসটিভির সঙ্গে আলাপকালে সিআইএর কার্যক্রমকে সমর্থন করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশ। তারও আগে গত রোববার সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য সিআইএতে কঠোর পরিশ্রম করার লোকজন পেয়ে আমরা ভাগ্যবান।’
প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান সাবেকদের: সিআইএর জিজ্ঞাসাবাদ কৌশল কোনো কাজে লাগেনি বলে সিনেট কমিটির প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্য প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মকর্তারা। তাঁদের দাবি, ওই কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্য দিয়ে হাজারো জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। সিআইএর সাবেক পরিচালক জর্জ টেনেট, পোর্টার গজ, মাইকেল হেইডেন ও তিনজন সাবেক উপপরিচালক গত বুধবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকায় নিবন্ধ লিখে এসব দাবি করেন।
আফগান প্রেসিডেন্টের দাবি: আল-কায়েদার সদস্য সন্দেহে মার্কিন বন্দিশালায় কতজন আফগান নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তা জানতে চেয়েছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। সিআইএর নির্মম নির্যাতনের পদ্ধতির কথা প্রকাশের পর বিশ্বজুড়ে যে নিন্দার ঝড় উঠেছে, তাতে গলা মিলিয়ে গত বুধবার এ প্রশ্ন তোলেন গনি। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি বুধবার কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সিআইএর নির্যাতন বিশ্বের মানবাধিকারসংক্রান্ত প্রচলিত সব শিষ্টাচারকে লঙ্ঘন করেছে। গনি মার্কিন সিনেটের প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যকে ‘বেদনাদায়ক’ আখ্যা দেন। তিনি বলেন, বিশ্বে এ ধরনের কর্মকাণ্ড ও মানুষকে নির্যাতনের কোনো বৈধতা নেই। এদিকে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা বুধবার জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে তাঁদের বাগরাম বিমানঘাঁটির পারওয়ান বন্দিশালা থেকে সর্বশেষ বন্দীরাও বিদায় নিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা জঙ্গিবিরোধী লড়াইয়ের সময় যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত সব কারাগার বন্ধ হয়ে গেল।
‘চাপ’ দিয়েছিল পোল্যান্ড: পোল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার কাসকিনেস্কি গত বুধবার বলেছেন, তাঁরা চাপ দিয়ে ২০০৩ সালে পোল্যান্ডে একটি গোপন কারাগারে সিআইএর নির্যাতন বন্ধ করেছিলেন। একটি এফএম বেতারকে তিনি বলেন, ‘সিআইএর নৃশংসতা’ বন্ধ করতে জর্জ বুশের প্রতি আহ্বান জানালে তা বন্ধ করা হয়।
লিথুয়ানিয়ার আহ্বান: লিথুয়ানিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কোন ঘাঁটিতে সিআইএ আটক বন্দীদের নির্যাতন করেছিল, গত বুধবার তা জানতে চেয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আলগিরদাস বুতকেভিসিয়াস।
আফগান প্রেসিডেন্টের দাবি: আল-কায়েদার সদস্য সন্দেহে মার্কিন বন্দিশালায় কতজন আফগান নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তা জানতে চেয়েছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। সিআইএর নির্মম নির্যাতনের পদ্ধতির কথা প্রকাশের পর বিশ্বজুড়ে যে নিন্দার ঝড় উঠেছে, তাতে গলা মিলিয়ে গত বুধবার এ প্রশ্ন তোলেন গনি। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি বুধবার কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সিআইএর নির্যাতন বিশ্বের মানবাধিকারসংক্রান্ত প্রচলিত সব শিষ্টাচারকে লঙ্ঘন করেছে। গনি মার্কিন সিনেটের প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যকে ‘বেদনাদায়ক’ আখ্যা দেন। তিনি বলেন, বিশ্বে এ ধরনের কর্মকাণ্ড ও মানুষকে নির্যাতনের কোনো বৈধতা নেই। এদিকে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা বুধবার জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে তাঁদের বাগরাম বিমানঘাঁটির পারওয়ান বন্দিশালা থেকে সর্বশেষ বন্দীরাও বিদায় নিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা জঙ্গিবিরোধী লড়াইয়ের সময় যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত সব কারাগার বন্ধ হয়ে গেল।
‘চাপ’ দিয়েছিল পোল্যান্ড: পোল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার কাসকিনেস্কি গত বুধবার বলেছেন, তাঁরা চাপ দিয়ে ২০০৩ সালে পোল্যান্ডে একটি গোপন কারাগারে সিআইএর নির্যাতন বন্ধ করেছিলেন। একটি এফএম বেতারকে তিনি বলেন, ‘সিআইএর নৃশংসতা’ বন্ধ করতে জর্জ বুশের প্রতি আহ্বান জানালে তা বন্ধ করা হয়।
লিথুয়ানিয়ার আহ্বান: লিথুয়ানিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কোন ঘাঁটিতে সিআইএ আটক বন্দীদের নির্যাতন করেছিল, গত বুধবার তা জানতে চেয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আলগিরদাস বুতকেভিসিয়াস।
No comments