কুমারী পূজা আজ

শারদীয় দুর্গাপূজার আজ মহাষ্টমী। মহাষ্টমীর মূল আকর্ষণ  কুমারী পূজা পালন হবে আজ। গতকাল বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে সারা দেশের পূজামণ্ডপগুলোতে পালিত হয়েছে মহাসপ্তমী। ভোরে নবপত্রিকা স্নান দিয়ে শুরু হয় শারদীয় দুুর্গোৎসবের সপ্তমীর দিন। এরপর ছিল স্থাপন ও সপ্তাদি কল্পারম্ভ, চণ্ডী ও মন্ত্রপাঠ, দেবীর পায়ে ভক্তদের পুষপাঞ্জলি প্রদান, ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার  চক্ষুদানসহ নানা আয়োজন। মহাসপ্তমী শেষে শারদীয় দুর্গাপূজার সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ দিন আজ। দেবীর সন্ধিপূজা আর রামকৃষ্ণ মিশনগুলোতে কুমারী পূজার মধ্য দিয়ে পালন হবে দিনটি। কুমারী বালিকার মধ্যে শুদ্ধ নারীর রূপ চিন্তা করে তাকে দেবী জ্ঞানে পূজা করবে ভক্তরা। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত ১ থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে পূজার উল্লেখ রয়েছে। ব্রাহ্মণ অবিবাহিত কন্যা অথবা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কন্যাকেও পূজা করার বিধান রয়েছে।  ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন সূত্রে জানা গেছে, বেলা ১১টায় দেশের সব রামকৃষ্ণ মিশনে পালন হবে কুমারী পূজা। এছাড়াও মিশনের নিয়ন্ত্রণাধীন নারায়ণগঞ্জ ও দিনাজপুরসহ কয়েকটি মঠ এবং কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী পূজামণ্ডপেও কুমারী পূজা হবে। কুমারী পূজা কেন করা হয়- এ প্রশ্নের জবাবে শ্রীরামকৃষ্ণের কথামৃতে বলা হয়েছে, সব স্ত্রীলোক ভগবতীর এক স্বরূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ। সকল নারীতে মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার প্রধান লক্ষ্য। বয়সভেদে কুমারীর নাম হয় ভিন্ন। শাস্ত্রমতে; এক বছর বয়সে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কালিকা, পাঁচে সুভগা, ছয়ে উমা, সাতে মালিনী, আটে কুব্জিকা, নয়ে অপরাজিতা, দশে কালসন্ধর্ভা, এগারোয় রুদ্রাণী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দয় পীঠনায়িকা, পনেরোয়  ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোল বছরে অম্বিকা বলা হয়ে থাকে। কুমারী পূজার দিন নির্বাচিত কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। হাতে দেয়া হয় ফুল, কপালে সিঁদুরের তিলক ও পায়ে আলতা। সঠিক সময়ে কুমারীকে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপচারে পূজা করা হয়। চারদিক মুখরিত হয় শঙ্খ, ঢাকের আওয়াজ, উলুধ্বনি আর মায়ের স্তুতিতে। আজ মহাষ্টমীতে রাজধানীসহ সারা দেশের প্রতিটি মণ্ডপে উদযাপিত হবে মহাষ্টমী। আজ পূজার্চনার পাশাপাশি অন্যান্য আয়োজনের সঙ্গে থাকছে আরতি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভক্তিমূলক সংগীতসহ নানা আয়োজন।

উৎসবের আমেজে মহাসপ্তমী উদযাপিত: এদিকে গতকাল বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে মহাসপ্তমী উদযাপিত হয়েছে সারা দেশে। ভোরে পূজা শুরু হয় নবপত্রিকা স্নান দিয়ে। ঘাটে ঘাটে তখন ভিড় কলাবউ স্নানের জন্য। দেবীকে নয়টি রূপে কল্পনা করে স্থাপন করা হয় নবপত্রিকা। একে একে চক্ষুদান ও প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপরই শুরু হয় মহাসপ্তমীর পূজা। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে অর্থাৎ ষোলটি উপাদানে দেবীর পূজা করা হয়। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। দেবীকে আসন, বস্ত্র,  নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করেন তার ভক্তরা। দিনব্যাপী এই কার্যক্রম চলে। সপ্তমী পূজা উপলক্ষে সন্ধ্যায় বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভক্তিমূলক সংগীত, রামায়ণ পালা, আরতিসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আর মাত্র তিনটি দিবানিশি পেরুলেই মা ‘উমা’ ফিরবেন  কৈলাশে। বছরান্তে আশ্বিন-কার্তিকের পঞ্চমী থেকে দশমী তিথির পাঁচটি দিবস ‘জগজ্জননী’ উমা দেবীর পিতৃগৃহ ঘুরে যাওয়া। মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাকের বোলে তাই যেন ধ্বনিত হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সমাজের হৃদয়তন্ত্রীতে বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ার। নানা আচার অনুষ্ঠান সেরে সকালে শুরু হয় তা। গতকাল রাজধানীর ঢাকেশ্বরী, রামকৃষ্ণ আশ্রম, শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজারসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ দল বেঁধে পূজা দেখতে আসছেন। উৎসবপ্রিয় বাঙালি মেতে উঠেছে পূজার আনন্দে। বিকাল থেকেই পূজামণ্ডপগুলোয় দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। বাহারী পোশাক আর অঙ্গসজ্জায় নিজেদের সাজিয়ে রাঙিয়ে উৎসব-আনন্দে মেতে উঠেছে শিশু-কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধরাও। হিন্দু সমপ্রদায়ের অনুসারীদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের মানুষেরাও ব্যাপক ভিড় করেন সুকমলা দেবী দুর্গার মায়াকাড়া মুখ দর্শনের জন্য।

No comments

Powered by Blogger.