ঢাকার কাঁধে নতুন বোঝা রোহিঙ্গারা- ‘বাংলাদেশী’ হলে বর্মী নাগরিকত্ব!

ঢাকার কাঁধে ইয়াঙ্গুন নতুন বোঝা চাপালো। কারণ জাতিসংঘে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী হওয়ার ফর্মুলা দিয়েছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গারা তাদের জাতিসত্তা বিসর্জন দিয়ে নিজেদের  “বাংলাদেশী” বলে পরিচয় দিতে রাজি হলে তারা এর বিনিময়ে বর্মী নাগরিকত্ব পাবে। জাতিসংঘের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের জাতিসত্তা বিসর্জনের এই প্রস্তাবে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, এটা রোহিঙ্গাদের নতুন করে বহিষ্কার এবং পাইকারি গ্রেপ্তারের পূর্ব লক্ষণ। মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রশ্নে জাতিসংঘে ওই ভয়ানক মনোভাব প্রকাশ করলেও বাংলাদেশ এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখাতে নীরবতা পালন করছে। বর্মী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন ইঙ্গিতও করেছেন যে, যারা ‘বাংলাদেশী’ হতে চাইবে না তারা তাদেরকে বিদেশে কোথাও বসতি স্থাপন করে দিতে উদ্বাস্তু হাইকমিশনকে অনুরোধ জানাবে।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বহু বছরের জল্পনা-কল্পনা, এমনকি নোবেল বিজয়ী গণতন্ত্রের কন্যা অং সান সু চির দীর্ঘ নীরবতার প্রেক্ষাপটে মিয়ানমার অবশেষে রোহিঙ্গা প্রশ্নে তাঁর ভয়ানক গোপন মনোভাব আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে। গত ৩০শে সেপ্টেম্বর মিয়ানমার জাতিসংঘকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, রোহিঙ্গারা যদি নিজেদের জাতিসত্তা পরিবর্তন করতে রাজি হয়, যদি তারা নিজেদের বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বলে স্বীকার করে, তাহলে তারা তাদেরকে বর্মী নাগরিকত্ব দেবে। ইয়াঙ্গুন থেকে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমার বলেছে, এ বিষয়ে তারা তাদের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। সে কারণে বিষয়টি তারা জাতিসংঘকেও নিশ্চিত করেছে।  তবে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, বর্মী সরকারের এই নতুন অবস্থানের কারণে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিক্ষেপ করা হতে পারে।
গত সোমবার জাতিসংঘে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ান্নামংলিউন ওই পরিকল্পনা প্রকাশ করে তা বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক সহায়তা কামনা করেন। রয়টার্স বলেছে, ১১ লাখ রোহিঙ্গার বেশির ভাগই রাষ্ট্রহীন অবস্থায় আছে। প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা স্থানচ্যুত আছে। বিতর্কিত ওই কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে মিয়ানমার এই প্রথম জনসমক্ষে স্বীকার করলো। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক ফিল রবার্টসন সতর্ক করেছেন, এই ঘোষণার পর রোহিঙ্গাদের জোর করে ডিটেনশন ক্যাম্পে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাখার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.