আজকে আমরা ভয়াবহ জায়গায় চলে এসেছি -ড. কামাল হোসেন

৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের তীব্র সমালোচনা করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ জনের নির্বাচিত হওয়াকে ‘অসাধারণ’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, আগামীতে ৩০০ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেন হতে পারবে না? গত নির্বাচনে ২০ শতাংশেরও কম ভোট দিয়েছে মানুষ। বাকি ৮০ শতাংশ শুধু বিএনপি- জামায়াত নয়, আমি, আপনি সাধারণ মানুষ। আজকে আমরা ভয়াবহ জায়গায় চলে এসেছি। অপ্রিয় কথা বললেও এর জন্য আমিসহ সকলেই দায়ী। আমরা যার বিরুদ্ধে লড়াই করি, বড় বড় বুলি ছুড়ি, ক্ষমতায় গেলে সে কাজটাই করি। বরং তা আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে। আমরা সবাই আসলে মুনাফেকের পরিচয় দিচ্ছি। এরমধ্যে আমিও রয়েছি। বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের ইআরসি সেমিনার হলে ‘বিচারপতিদের অভিশংসন-ন্যায় বিচার-সুশাসন’ শীর্ষক গোলটেবিল  বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। গুড গভর্নেন্স ফোরাম নামের একটি সংগঠন এ গোলটেবিল  বৈঠকের আয়োজন করে। তিনি বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংসদকে ধ্বংস করছে। যেভাবে এটা প্রয়োগ হয়েছে, এতে সংসদকে ধ্বংস করছে। ষোড়শ সংশোধনী সুপারসনিক গতিতে কেন হবে? বিচার কিভাবে হবে, সে বিষয়ে তিন মাসের মধ্যে আইন করার কথা বলা হয়েছে। এর আগেই সংবিধান সংশোধন করা হলো। খসড়া আইন ও খসড়া সংশোধনী হতে পারতো। এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারতো। ড. কামাল হোসেন বলেন, আগে রাজনীতি ছিল মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য জীবন উৎসর্গ করা। সম্পত্তি করা, ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ গড়া এর মধ্যে ছিল না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন,  যোগ্যতা নেই, মেধা নেই, পিওর আনুগত্য পায়ের ধুলা নেয়াই একটা  যোগ্যতা। আদিষ্ট হয়ে সবকিছু করবো। কি বিচার বিভাগ, কি নির্বাহী পরিষদ, গণতান্ত্রিক সরকারে এটা হওয়ার কথা নয়। আইনানুগভাবে আদিষ্ট হতে হবে। আদিষ্ট হয়ে কাউকে খুন করা যায় না। পেট কাটা যায় না। যে কোন সভ্য সমাজে,  যেখানে আইনের শাসন আছে, সেখানে এটা অকল্পনীয়। ২০০৭ সালের বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনের উদাহরণ টেনে ড. কামাল হোসেন বলেন, ইয়াজ উদ্দিনের অধীনে যাতে সাজানো নির্বাচন না হতে পারে  সে জন্য আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছে রাজপথে, আর আমরা আদালতে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বিএনপির চেয়ে ন্যক্কারজনকভাবে একতরফা নির্বাচন করলো।

ছাত্র রাজনীতির বর্তমান অবস্থার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ষাটের দশকে আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম তখন বুঝতামই না যে চাঁদাবাজি বা  টেন্ডারবাজি কী! এ দুটো শব্দ আমাদের কাছে অপরিচিত ছিল। কিন্তু এখনকার ছাত্রনেতারা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে টেন্ডারবাজি করে। সেই ছবি আবার পত্রিকায়ও আসে। কর্মকাণ্ডের দিক থেকে তিনি ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে কোন পার্থক্য দেখতে পান না বলেও মন্তব্য করেন। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন হয়নি, ভণ্ডামি হয়েছে, শঠতা হয়েছে। এই সরকার নির্বাচিত সরকার নয়। পুরো বিচার ব্যবস্থা টিউটর করছে সরকার। অথচ সরকারই যেখানে আইনসম্মত নয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিচারপতি সিকদার মকবুল হক। প্রধান আলোচক ছিলেন ড. মিজানুর রহমান শেলী। ম?ূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইকতেদার আহমেদ। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, মানবাধিকার নেত্রী এডভোকেট সিগমা হুদা, সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.