কুয়েতের শ্রমবাজারে আর অ্যামনেস্টি নয়

আগামী বছরের গোড়ায় কুয়েতের শ্রমের বাজার বাংলাদেশ সহ বিদেশী রাষ্ট্রের জন্য খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ বছরে আর অবৈধ শ্রমিকদের জন্য কোন সুখবর মিলছে না। সেখানে ধরপাকড় চলছে। অ্যামনেস্টি দেয়ার সম্ভাবনা নির্দিষ্টভাবে নাকচ করা হয়েছে। প্রায় ১ লাখ অবৈধ শ্রমিকের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শ্রমিক বাংলাদেশী বলে সন্দেহ করা হয়ে থাকে। এ বছরে গত ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত ১৫ হাজার বিদেশী শ্রমিক গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজারকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আরও ১ হাজার ডিটেনশন কেন্দ্রে আছেন। গতকাল কুয়েত টাইমস এ খবর দিয়েছে। ওই পত্রিকার প্রতিবেদন মতে, আগামী বছরের গোড়ায় কুয়েতে চাকরি পেতে হলে সম্পূর্ণ নতুন বিধান অনুসরণ করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা চলমান স্পন্সর সিস্টেম কুয়েত বিলোপ করতে চাইছে। তবে ডিপেন্ডেন্ট ভিসার জন্য বেতনের সিলিং বৃদ্ধির গুজব নাকচ করে দিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ফর সিটিজেনশিপ অ্যান্ড পাসপোর্ট মেজর জেনারেল শেখ মাজেন জারা আল সাবাহ। গতকাল তিনি বলেছেন, যে সব প্রবাসীর বেতন ন্যূনতম ৬৭,৩৫২ টাকা (২৫০ দিনার) তারা এখনও তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য স্পন্সর হতে পারবেন। আর সব দেশের নাগরিকের জন্যই ভিজিট ভিসা চালু থাকবে। তবে কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় কঠোরতা আনা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থে এটা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, কুয়েত বাংলাদেশী শ্রমিকদের অন্যতম সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্যের অন্যতম। এক দিনার ভাঙালে প্রায় ২৮০ টাকা পাওয়া যায়। ৪০ লাখ মানুষের দেশ কুয়েতের মোট জনসংখ্যার ৭০ ভাগ মানে ২৮ লাখই প্রবাসী। এর মধ্যে জনশক্তি ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৭৬ থেকে কুয়েতে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশী গেছেন। ২০০৭ সালে জনশক্তি রপ্তানি দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে কুয়েত সরকার বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। গত জানুয়ারিতে কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাস ঘোষণা দিয়েছিল, বাংলাদেশের জন্য বন্ধ শ্রমের বাজার খুলে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তা সত্য প্রমাণিত হয়নি। অবশ্য কুয়েতের শ্রমের দুয়ার সব বিদেশী রাষ্ট্রের জন্য নিষিদ্ধ রয়েছে। কয়েক দিন ধরে কুয়েতি মিডিয়ায় বলাবলি হচ্ছে, সরকার প্রবাসী শ্রমিকদের স্ত্রী ও সন্তানদের কুয়েতে আনতে বিদ্যমান মাসিক বেতন ২৫০ দিনারের সিলিং বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে। এটা ২৫০ দিনার থেকে বাড়িয়ে সোয়া এক লাখ টাকা (৪৫০ দিনার) করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বাংলাদেশী শ্রমিকদের জীবনে এর বিরাট নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ স্বল্প বেতনভোগী বাংলাদেশীরা তখন আর তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য স্পন্সর ভিসা জারি করতে অপারগ থাকবে। কুয়েত টাইমস গতকাল বিদেশী শ্রমিকদের ওপরে দু’টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, চলতি বছরে তারা আর কোন বিদেশী শ্রমিকদের চাকরি দেবে না। তবে বিদেশী শ্রমিকদের জন্য যে সব নতুন নিয়ম-কানুন প্রচলনের কাজ তারা হাতে নিয়েছে সেটা এ বছরের মধ্যে সম্পন্ন করবে। আল আনবা পত্রিকার বরাতে কুয়েত টাইমস আরও জানায়, শেখ মাজেন বলেছেন, অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিতে আরও একবার সুযোগ দেয়া হবে বলে যে ধরনের জল্পনা-কল্পনা বাজারে রয়েছে, তার কোন ভিত্তি নেই। আর কোন অ্যামনেস্টি দেয়া হবে না। কারণ সরকারের জেনারেল ডিপার্টমেন্ট অব রেসিডেন্ট অ্যাফায়ার্স এ ধরনের প্রস্তাব তৈরি করে থাকে। তারা এ বছরে কোন প্রস্তাব তৈরি করেনি। ২০১১ সালে চার মাসের জন্য সবশেষ অ্যামনেস্টি দেয়া হয়েছিল। ওই সময় ৪২ হাজার অবৈধ শ্রমিক এর সুবিধা গ্রহণ করেছিল। আরবি দৈনিক আল কাবাসের বরাতে পত্রিকাটি আরও জানায়, কুয়েতি শ্রমমন্ত্রী হিন্দ আল সুবিয়া ভিসা ট্রাফিকিংয়ের দায়ে চারটি কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। এ কোম্পানিগুলো ৬০০ বিদেশী শ্রমিককে নিয়োগ দিয়েছিল। এদের নামধাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে ভবিষ্যতে আরও রিক্রুটিং কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলার বিষয় প্রক্রিয়াধীন। তবে সেটা করা হবে ওই চারটিকে দোষী সাব্যস্ত করার পর। এরই মধ্যে প্রায় ৩০০ মালিককে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তারা আর শ্রমিক আমদানি করতে পারবে না। এ ছাড়া ভিসা ট্রাফিকিংয়ে সন্দেহভাজন ৪০০ কোম্পানিকে স্পন্সরশিপ ব্লকের আওতায় আনা হয়েছে। এসব কারণকে প্রচলিত কাফেলা পদ্ধতিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.