অভিনব ছিনতাইয়ে নারী

রাত প্রায় ৯টা। রিকশায় ওঠার পর রফিকুলের শরীর ঘেঁষে বসে তরুণী। রফিকুল তা উপভোগ করছিলেন। অল্প সময়েই শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হয়ে যায় তরুণী। রিকশাটি সোবহানবাগের মসজিদের পাশে যেতেই রফিকুলের মানিব্যাগ হাতিয়ে নিয়ে নেমে যায় সে। রফিকুল এগিয়ে গেলে সে হুমকি দেয়, চিৎকার করবে, আপনি আমার শরীরে হাত দিয়েছেন। বলেই সে মুহূর্তের মধ্যে উধাও হয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার। ফার্মগেট থেকে ধানমন্ডি যেতে রিকশায় উঠেছিলেন রফিকুল ইসলাম। সঙ্গে সঙ্গে ওই তরুণী তাকে ভাইয়া সম্বোধন করে জানায়, সে-ও ধানমন্ডি যাবে। তাকে সঙ্গে নেয়া যাবে কিনা জানতে চায় সে। চেহারা-পোশাক দেখে তরুণীকে বেশ ভালই মনে হয় তার। সাত-পাঁচ না ভেবেই রফিকুল সম্মতি জানান। তারপরেই ঘটে এই ঘটনা। তবে এ বিষয়ে কোন অভিযোগ করতে চাননি একটি টেলিকম কোম্পানিতে কর্মরত রফিকুল।
সূত্রে জানা গেছে, প্রায়ই এরকম ঘটনা ঘটছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। ঈদকে সামনে রেখে নানা কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছে ছিনতাইকারীরা। ছিনতাইয়ের অভিনব পন্থা হিসেবেই মাঠে নেমেছে নারী ছিনতাইকারী চক্র। রিকশা আরোহী ছাড়াও নানাভাবে পুরুষদের প্রলুব্ধ করে তারা লুটে নেয় সর্বস্ব। এমনকি নারীদের ক্ষেত্রেও তারা বিশেষ কায়দায় ছিনতাই করে থাকে। গতকাল গুলিস্তান থেকে নারী ছিনতাইকারী চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা স্বীকার করেছে, শহরের বিভিন্ন স্থানেই তারা ছিনতাই করে থাকে। নারী হিসেবে বিশেষ কৌশলে ছিনতাই করা যায় বলে জানায় তারা। পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুর্শেদ আলম জানান, পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌন সুড়সুড়ি সৃষ্টি করে সবকিছু লুটে নেয় এই চক্র। এক্ষেত্রে প্রথমে টার্গেটকৃত পুরুষকে তাদের যে কোন একজন অনুসরণ করে। পরে ওই পুরুষের রিকশায় ওঠার চেষ্টা করে। উঠতে পারলে সুযোগ বুঝে টাকা বা ব্যাগ হাতিয়ে নেয়। ছিনতাইকারী নারী হওয়ার কারণে ছিনতাইয়ের শিকার পুরুষ সেভাবে অভিযোগ করতে পারেন না। অনেক সময় নারী ছিনতাইকারী চক্রে পুরুষ সদস্যরাও থাকে। তারা সাধারণ মানুষ হিসেবে ওই ছিনতাইকারী নারীর পক্ষে অবস্থান নেয়।
আটককৃত নারী ছিনতাইকারীরা জানিয়েছে, বিভিন্ন শপিং মল, নিরিবিলি সড়ক, বিয়ে অনুষ্ঠান, পার্টিই তাদের ছিনতাইয়ে মূল কেন্দ্রস্থল। এছাড়া ফোনে প্রেমের ফাঁদ পেতে নির্জন ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয় এই চক্রের সদস্যরা।
ভিড়ের মধ্যে শপিং মলগুলোতে নারী ক্রেতাদের সঙ্গে তারা মিশে যায়। সুযোগ বুঝে ভ্যানিটি ব্যাগ, মালপত্র হাতিয়ে নেয়। গণপরিবহনগুলোতেও এই চক্র সক্রিয় বলে স্বীকার করে তারা। কিন্তু ছিনতাইয়ের শিকার অনেক ব্যক্তি ঝামেলা এড়াতে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করতে চান না। গতকাল গুলিস্তান থেকে আটককৃত নারী ছিনতাইকারীরা হচ্ছে- নাজমা (২৬), তাসলিমা (২৩), দিলারা (২৪), কুলসুমা (৩৪) ও নিলময় (৩৫)। তারা সবাই হাজারীবাগের বেড়িবাঁধ এলাকার সুমনের বস্তির বাসিন্দা। দীর্ঘদিন থেকেই তারা ছিনতাইয়ে লিপ্ত। একাধিকবার পুলিশ তাদের আটক করেছে বলে জানা গেছে।
শান্তিনগর মোড় থেকে ইস্টার্ন প্লাজা মার্কেট, মালিবাগের এসবি অফিসের সামনে থেকে কাকরাইল মোড়, রাজারবাগ থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনের আগে পীরজঙ্গি মাজার, মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর থেকে  টেকনিক্যাল মোড়, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে গুলশান শ্যুটিং ক্লাব, মহাখালী কাঁচাবাজার, পান্থপথ মোড় থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট থেকে সোবহানবাগ, সংসদ ভবন এলাকা, আগারগাঁও, যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে কাজলার পাড়, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে জনপথ মোড় হয়ে ধলপুর সিটি, মেরুল বাড্ডা থেকে রামপুরা ব্রিজ, মৌচাক থেকে মগবাজার মোড়, গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া ও বাবুবাজার স্পটে নারী ছিনতাইকারীরা সক্রিয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানিয়েছেন, নারী ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা পুলিশ তৎপর রয়েছে। ছিনতাই প্রতিরোধ ও ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা পুলিশের চারটি স্পেশাল টিম ও ১৬টি জোনাল টিম কাজ করছে।

No comments

Powered by Blogger.