প্রতিমায় দামি সোনা ও হীরার অলঙ্কার লাগানো নিয়ে বিতর্ক by পরিতোষ পাল

বনেদি বাড়ির পুজোতে দেবী দুর্গাকে সাজানো হয় স্বর্ণালঙ্কারে। এ রীতি প্রায় কলকাতার সব বনেদি বাড়িতেই। আর এই গহনা সারা বছর তুলে রাখা থাকে লকারের অন্ধকার কুঠুরিতে। কিন্তু কলকাতার সর্বজনীন পুজোতেও কোটি কোটি রুপির স্বর্নালঙ্কার দিয়ে প্রতিমা সজ্জার রেওয়াজ গত বছর থেকে চালু হযেছে। আর এই নতুন ট্রেন্ড ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাতেই শৃুরু হয়েছে বিতর্ক। বিতর্কটা শুরু হয়েছে নিরাপত্তার প্রশ্নে রাজ্য প্রশাসনের ব্যাপক ব্যবস্থাপনা নিয়ে। এ বছরই দমদম বিমানবন্দর থেকে কলকাতায় আসার পথে লেক টাউনে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের এক বিধায়কের পুজোতে প্রতিমা সজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে ১০ কোটি রুপির হীরা। হীরের দ্যুতিতে পুজো মন্ডপ ঝলমল করলেও এই হীরের সুরক্ষা দিতে পুলিশ কর্তাদের নাজেহাল অবস্থা। গত বছরও এরাই ১৪ কোটি রুপির স্বর্ণালঙ্কার দেবীর গায়ে ও মন্ডপ সজ্জায় ব্যবহার করে চমক দিয়েছিল। ভারতের একটি নামী স্বর্নালঙ্কার সংস্থা তাদের প্রচারের স্বার্থে ধার দিয়েছিলেন এই স্বর্ণালঙ্কার। এবার কলকাতার এক বিখ্যাত স্বর্ণালঙ্কার প্রস্তুতকারক সংস্থা হীরের গহনা উজাড় করে দিয়েছেন প্রতিমা সজ্জার জন্য। সেই হীরের গহনার সুরক্ষায় প্রায় হাজার খানেক নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করেছে পুজো কমিটি। কিন্তু বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীদের উপর ভরসা রেখে বসে থাকতে রাজি নয় পুলিশ প্রশাসন। কোনও অঘটন ঘটে গেলে দায়টা পড়বে তাদের উপরই। আর তাই এই একটি পুজোতে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযোগ করা হযেছে একজন ডেপুটি কমিশনার ও একজন অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার পদমর্যাদার অফিসারকে। এছাড়াও এএসআই থেকে এসিপি পদমর্যাদার ৩০ জন অফিসার থাকছেন প্রতিদিন। থাকছে মহিলা পুলিশ, অ্যান্টি রাউডি স্কোযাডের সদস্যরাও। একই অবস্থা কলকাতার আরেকটি পুজো কমিটিরও। রাজ্য মন্ত্রিসভার এক প্রবীন মন্ত্রী পৃষ্ঠপোষনায় পরিচালিত এই পুজোয় ভারতের একটি বিখ্যাত স্বর্ণালঙ্কার প্রস্তুতকারী সংস্থার ১৮ কেজির স্বর্ণালঙ্কারে সাজানো হয়েছে দেবী প্রতিমাকে। সেখানেও নিরাপত্তার বিশাল বহর। তাই প্রশ্ন উঠেছে, পুজো কমিটি বিশাল অঙ্কে পুজোর আযোজন করছে, এমনকি নিরাপত্তা রক্ষীও রাখছে অর্থ খরচ করে সেখানে পুলিশের জন্য অর্থ বরাদ্দ করায় কুণ্ঠা কেন ? তবে পুলিশের এক কর্তার মতে, কলকাতাসহ গোটা রাজ্যেই মন্ডপে ভিড় টানতে নতুন নতুন উপায় নিচ্ছে পুজো কমিটিগুলি। ফলে এ নিযে পুলিশকে ভাবতে হচ্ছে। পুলিশের আরেক মাঝারি কর্তা সরকারিভাবে কিছু না বলতে চাইলেও নাম না প্রকাশের সুত্রে জানিয়েছেন, যে ভাবে সর্বজনীন পুজোয় প্রতিমাকে দামি গহনা পরানোর চল শুরু হযেছে তাতে আগামী দিনে এই ট্রেন্ড বাড়বে। তাই পুজো কমিটিগুলির ভিড় টানার লড়াইয়ের দায় আর কতদিন পুলিশ নেবে তা ভাবার সময় এসেছে বলে তিনি মনে করেন। এই একই ভাবনা সমাজের অন্য স্তরের মানুষেরও।

No comments

Powered by Blogger.