কাশ্মীরের ধর্মনিরপেক্ষতা পুনরুদ্ধার by কুলদীপ নায়ার
যে পণ্ডিতেরা ফিরে এসেছেন, তাঁদের অনেকের মনই দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাঁরা লক্ষ করেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতার আবহ আসলে অতীতের ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। যেখানে তাঁরা ও তাঁদের পূর্বপুরুষেরা সুখে-দুঃখে বাস করেছেন, সে জায়গাতেই তাঁরা এখন আগন্তুকে পরিণত হয়েছেন।
ধর্মীয় পক্ষপাত হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদের দেয়াল তুলে দিয়েছে। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের মধ্যভাগে এই পণ্ডিতেরা বাড়ি ছাড়েন। তাঁরা এখন ফিরে এলেও এলাকার পরিস্থিতিতে বন্ধুত্বের আবহ ফেরেনি। অধিকাংশ পণ্ডিতই জম্মু শহর ও তার আশপাশে থাকেন, কিন্তু তাঁরা থাকেন শরণার্থী শিবিরে, নিজেদের বাড়িতে নয়। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর ফারুক আবদুল্লাহ বিষয়টি খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন, কিন্তু এতে কোনো কাজ হচ্ছে না।
পাঞ্জাবের হিন্দুদের মতো কাশ্মীরের পণ্ডিতদের ফেরার কোনো ঘর নেই। তাঁরা উভয়েই ফিরতে চান। কিন্তু যে জঙ্গিত্বের কারণে তাঁদের ঘর ছাড়তে হয়েছিল, সেটা এখনো বেশ শক্তিশালী।
বিজেপির বড় নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ওমরকে অনুরোধ করেছেন, এই পণ্ডিতদের যেন ভূমি দেওয়া হয়। এ কথা বলে তিনি আসলে পুরো ব্যাপারটাকে রাজনৈতিক করে ফেলেছেন। রাজনাথ সিং এ কথা বলার কে? তিনি এই কাশ্মীরি পণ্ডিতদের স্বার্থ সংরক্ষণ করছেন না, আবার এই পণ্ডিতেরা কেউই বাইরের মানুষ নন। তাঁরা কাশ্মীরি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই ভোগান্তির বিরুদ্ধে পণ্ডিতদের প্রতিবাদ বোধগম্য, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাঁদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনীতি ফেঁদে বসবেন।
এটা হিন্দু-মুসলমান ইস্যু নয়, এটার গায়ে সে রং চড়ানোও ঠিক নয়। সব রাজনৈতিক দল মিলে এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যাতে তাঁরা ফিরে আসতে পারেন। তাঁদের অধিকাংশেরই সম্পদ অক্ষত আছে, আর বাকিদের জমি যাঁরা জোরপূর্বক দখল করেছেন বা অন্যভাবে দখলভোগ করছেন, সেগুলো তাঁদের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
হুরিয়ত নেতা সৈয়দ শাহ বলেছিলেন, এটা হিন্দু-মুসলমানের ব্যাপার নয়। সে সময় পর্যন্ত গিলানির গায়ে মৌলবাদের হুল ফোটেনি। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়তো হয়নি, কিন্তু তাঁর নীরবতা সবার কাছেই দৃষ্টিকটু ঠেকেছে। গিলানির উচিত ছিল, তাঁর আগের অবস্থান পুনরায় ব্যক্ত করা: কাশ্মীরি পণ্ডিতেরা আমাদের সংস্কৃতিরই অবিচ্ছেদ্য অংশ, এটাকে সাধারণ হিন্দু-মুসলমান প্রশ্নের সঙ্গে মেলানো উচিত হবে না। গিলানি আমাকে বলেছিলেন, কাশ্মীরের সামগ্রিক সংকটের সঙ্গেই পণ্ডিতদের এই সমস্যা সমাধান করা উচিত—এ মর্মে তিনি যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, সেটা আসলে ভুল ছিল।
যাঁরা মনে করেন কাশ্মীর আসলে দেশভাগের একটি অপূরিত কাজ, রাজনাথ সিংয়ের উল্লিখিত মন্তব্য সে বিতর্কের দ্বার উন্মোচিত করেছে, এটার আসলে কোনো প্রয়োজনীয়তা ছিল না। তাঁরা ধর্মের ভিত্তিতেই রাষ্ট্রভাগের পক্ষ নিয়েছেন। পাকিস্তানেও তাঁরা এ প্রত্যয়ে শাণ দিয়ে বলবেন, যে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়েছিল, সেটা কাশ্মীরের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হোক। ওমর যদি পণ্ডিতদের জমি দেওয়ার আহ্বানে সাড়া দেন, তাহলে আসলে সমস্যাটির গায়ে সাম্প্রদায়িক রংই চড়ানো হবে।
অনেক চরমপন্থী দাবি করেছে, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের আলাদা জমি ও নিরাপত্তা দেওয়া হোক। বর্তমানে চার লাখ পণ্ডিতের মধ্যে ৩০ হাজার কাশ্মীরে অবস্থান করছেন। শেখ আবদুল্লাহ যত দিন কাশ্মীরের প্রভাবশালী ছিলেন, তত দিন সেখানে রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। আবদুল্লাহ হয়তো বলবেন, কাশ্মীর ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ায় পাকিস্তানের সঙ্গে রাজ্যটির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিরোধিতা করেছেন তিনি। সাম্প্রদায়িকতার চেয়ে বহুত্ববাদের ওপর তিনি আস্থাশীল, সে কারণেই তিনি একটি ইসলামি রাষ্ট্রে যোগ দিতে চাননি।
এমনকি স্বাধীনতাসংগ্রামের সময়ও তিনি কংগ্রেসের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন, মুসলিম লিগের নয়৷ যদিও মুসলিম লিগ মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের দাবি করেছিল। নয়াদিল্লি যে শক্তিশালী কেন্দ্র সরকারের নীতি গ্রহণ করেছিল, সেটার বিরোধিতা করার কারণে তাঁকে মূল্য দিতে হয়েছে। কোডাইকানালে তাঁকে ১২ বছর বন্দী রাখার পরও তিনি নেহরুর পক্ষাবলম্বন করেছিলেন। কারণ, নেহরু তাঁকে ভুল বুঝলেও পরে তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পারেন। শেখ দাবি করেছিলেন, কেন্দ্রের হাতে শুধু তিনটি বিষয় থাকবে— পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ, দেশভাগের সময় যেটা প্রস্তাব করা হয়েছিল। এটি নিয়েই নেহরু তাঁকে ভুল বুঝেছিলেন।
শেখের একটি কথা খুব বিখ্যাত হয়েছিল, কাশ্মীরিরা ভারতীয় গম খেলে যদি ধরা হয় তারা ভারতীয় ইউনিয়নের মধ্যে স্বায়ত্তশাসনের দাবি থেকে সরে এসেছে, তাহলে তারা সে গম খাবে না। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি তাঁর গভীর আস্থা ছিল, কিন্তু ভারত বেশি দিন তার বহুত্ববাদী রূপ ধরে রাখতে পারবে কি না, সে নিয়ে তাঁর মনে শঙ্কা ছিল।
মুখ্যমন্ত্রী ওমর ফারুকের মনেও সে শঙ্কা আছে বলে জানা যায়। তাঁর ধারণা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একজন মুসলিমবিদ্বেষী মানুষ। তবে কাশ্মীরের বন্যাকবলিত এলাকা হেলিকপ্টারে পরিদর্শন করার পর মোদি ও ওমর একই মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন, এটা বেশ ইতিবাচক ব্যাপার। মোদি এই বন্যাকে জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে আখ্যা দিয়ে এক হাজার কোটি টাকার ত্রাণ বরাদ্দ করেছেন, এর মাধ্যমে তিনি সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ ছাপিয়ে গেলেন।
এতে হয়তো মোদির মুসলিমবিদ্বেষী ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও দূর হবে (কাশ্মীরের ৮০ শতাংশ মানুষই মুসলমান)। পাকিস্তানের বন্যাকবলিত মানুষদের সহায়তা করতে মোদি দেশটির সরকারের প্রতি তাঁর সদিচ্ছার কথা জানিয়েছেন, এটাও ইতিবাচক একটা ব্যাপার। এটা দুই দেশের মধ্যকার শীতল সম্পর্কে কিছুটা উষ্ণতার জোগান দেবে। পাকিস্তানও অনুরূপ ইঙ্গিত দিয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রীকেই জানতে হবে, দুঃখ-দুর্দশার কোনো জাতপাত নেই, রাজনীতি নেই।
কাশ্মীরি জনগণ প্রশিক্ষিত মানুষদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, এটা তাঁরা বোঝেন কি না জানি না। এই পণ্ডিতেরা ভারতের অন্যান্য অংশে গিয়ে চাকরি করছেন, তাঁরা অত্যন্ত যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ। রাজ্যটি তাঁদের এই মর্যাদার চাকরি দিতে চাইলেও তাঁরা সেখানে যেতে ইচ্ছুক নন। কাশ্মীর প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ তরুণদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সেটা পেলে কাশ্মীরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতো।
তার পরও শ্রীনগরের উচিত হবে এই পণ্ডিতদের ফেরত আনার চেষ্টা করা। এতে তাদের ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার হবে, বছরের পর বছর ধরে তারা যেটা ভোগ করেছে। এ ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হলে কাশ্মীর সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, যদিও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কাশ্মীরের জনগণ ভালো বেতনে কর্মরত আছেন।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
কুলদীপ নায়ার: ভারতের সাংবাদিক।
ধর্মীয় পক্ষপাত হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদের দেয়াল তুলে দিয়েছে। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের মধ্যভাগে এই পণ্ডিতেরা বাড়ি ছাড়েন। তাঁরা এখন ফিরে এলেও এলাকার পরিস্থিতিতে বন্ধুত্বের আবহ ফেরেনি। অধিকাংশ পণ্ডিতই জম্মু শহর ও তার আশপাশে থাকেন, কিন্তু তাঁরা থাকেন শরণার্থী শিবিরে, নিজেদের বাড়িতে নয়। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর ফারুক আবদুল্লাহ বিষয়টি খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন, কিন্তু এতে কোনো কাজ হচ্ছে না।
পাঞ্জাবের হিন্দুদের মতো কাশ্মীরের পণ্ডিতদের ফেরার কোনো ঘর নেই। তাঁরা উভয়েই ফিরতে চান। কিন্তু যে জঙ্গিত্বের কারণে তাঁদের ঘর ছাড়তে হয়েছিল, সেটা এখনো বেশ শক্তিশালী।
বিজেপির বড় নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ওমরকে অনুরোধ করেছেন, এই পণ্ডিতদের যেন ভূমি দেওয়া হয়। এ কথা বলে তিনি আসলে পুরো ব্যাপারটাকে রাজনৈতিক করে ফেলেছেন। রাজনাথ সিং এ কথা বলার কে? তিনি এই কাশ্মীরি পণ্ডিতদের স্বার্থ সংরক্ষণ করছেন না, আবার এই পণ্ডিতেরা কেউই বাইরের মানুষ নন। তাঁরা কাশ্মীরি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই ভোগান্তির বিরুদ্ধে পণ্ডিতদের প্রতিবাদ বোধগম্য, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাঁদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনীতি ফেঁদে বসবেন।
এটা হিন্দু-মুসলমান ইস্যু নয়, এটার গায়ে সে রং চড়ানোও ঠিক নয়। সব রাজনৈতিক দল মিলে এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যাতে তাঁরা ফিরে আসতে পারেন। তাঁদের অধিকাংশেরই সম্পদ অক্ষত আছে, আর বাকিদের জমি যাঁরা জোরপূর্বক দখল করেছেন বা অন্যভাবে দখলভোগ করছেন, সেগুলো তাঁদের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
হুরিয়ত নেতা সৈয়দ শাহ বলেছিলেন, এটা হিন্দু-মুসলমানের ব্যাপার নয়। সে সময় পর্যন্ত গিলানির গায়ে মৌলবাদের হুল ফোটেনি। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়তো হয়নি, কিন্তু তাঁর নীরবতা সবার কাছেই দৃষ্টিকটু ঠেকেছে। গিলানির উচিত ছিল, তাঁর আগের অবস্থান পুনরায় ব্যক্ত করা: কাশ্মীরি পণ্ডিতেরা আমাদের সংস্কৃতিরই অবিচ্ছেদ্য অংশ, এটাকে সাধারণ হিন্দু-মুসলমান প্রশ্নের সঙ্গে মেলানো উচিত হবে না। গিলানি আমাকে বলেছিলেন, কাশ্মীরের সামগ্রিক সংকটের সঙ্গেই পণ্ডিতদের এই সমস্যা সমাধান করা উচিত—এ মর্মে তিনি যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, সেটা আসলে ভুল ছিল।
যাঁরা মনে করেন কাশ্মীর আসলে দেশভাগের একটি অপূরিত কাজ, রাজনাথ সিংয়ের উল্লিখিত মন্তব্য সে বিতর্কের দ্বার উন্মোচিত করেছে, এটার আসলে কোনো প্রয়োজনীয়তা ছিল না। তাঁরা ধর্মের ভিত্তিতেই রাষ্ট্রভাগের পক্ষ নিয়েছেন। পাকিস্তানেও তাঁরা এ প্রত্যয়ে শাণ দিয়ে বলবেন, যে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়েছিল, সেটা কাশ্মীরের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হোক। ওমর যদি পণ্ডিতদের জমি দেওয়ার আহ্বানে সাড়া দেন, তাহলে আসলে সমস্যাটির গায়ে সাম্প্রদায়িক রংই চড়ানো হবে।
অনেক চরমপন্থী দাবি করেছে, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের আলাদা জমি ও নিরাপত্তা দেওয়া হোক। বর্তমানে চার লাখ পণ্ডিতের মধ্যে ৩০ হাজার কাশ্মীরে অবস্থান করছেন। শেখ আবদুল্লাহ যত দিন কাশ্মীরের প্রভাবশালী ছিলেন, তত দিন সেখানে রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। আবদুল্লাহ হয়তো বলবেন, কাশ্মীর ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ায় পাকিস্তানের সঙ্গে রাজ্যটির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিরোধিতা করেছেন তিনি। সাম্প্রদায়িকতার চেয়ে বহুত্ববাদের ওপর তিনি আস্থাশীল, সে কারণেই তিনি একটি ইসলামি রাষ্ট্রে যোগ দিতে চাননি।
এমনকি স্বাধীনতাসংগ্রামের সময়ও তিনি কংগ্রেসের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন, মুসলিম লিগের নয়৷ যদিও মুসলিম লিগ মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের দাবি করেছিল। নয়াদিল্লি যে শক্তিশালী কেন্দ্র সরকারের নীতি গ্রহণ করেছিল, সেটার বিরোধিতা করার কারণে তাঁকে মূল্য দিতে হয়েছে। কোডাইকানালে তাঁকে ১২ বছর বন্দী রাখার পরও তিনি নেহরুর পক্ষাবলম্বন করেছিলেন। কারণ, নেহরু তাঁকে ভুল বুঝলেও পরে তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পারেন। শেখ দাবি করেছিলেন, কেন্দ্রের হাতে শুধু তিনটি বিষয় থাকবে— পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ, দেশভাগের সময় যেটা প্রস্তাব করা হয়েছিল। এটি নিয়েই নেহরু তাঁকে ভুল বুঝেছিলেন।
শেখের একটি কথা খুব বিখ্যাত হয়েছিল, কাশ্মীরিরা ভারতীয় গম খেলে যদি ধরা হয় তারা ভারতীয় ইউনিয়নের মধ্যে স্বায়ত্তশাসনের দাবি থেকে সরে এসেছে, তাহলে তারা সে গম খাবে না। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি তাঁর গভীর আস্থা ছিল, কিন্তু ভারত বেশি দিন তার বহুত্ববাদী রূপ ধরে রাখতে পারবে কি না, সে নিয়ে তাঁর মনে শঙ্কা ছিল।
মুখ্যমন্ত্রী ওমর ফারুকের মনেও সে শঙ্কা আছে বলে জানা যায়। তাঁর ধারণা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একজন মুসলিমবিদ্বেষী মানুষ। তবে কাশ্মীরের বন্যাকবলিত এলাকা হেলিকপ্টারে পরিদর্শন করার পর মোদি ও ওমর একই মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন, এটা বেশ ইতিবাচক ব্যাপার। মোদি এই বন্যাকে জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে আখ্যা দিয়ে এক হাজার কোটি টাকার ত্রাণ বরাদ্দ করেছেন, এর মাধ্যমে তিনি সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ ছাপিয়ে গেলেন।
এতে হয়তো মোদির মুসলিমবিদ্বেষী ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও দূর হবে (কাশ্মীরের ৮০ শতাংশ মানুষই মুসলমান)। পাকিস্তানের বন্যাকবলিত মানুষদের সহায়তা করতে মোদি দেশটির সরকারের প্রতি তাঁর সদিচ্ছার কথা জানিয়েছেন, এটাও ইতিবাচক একটা ব্যাপার। এটা দুই দেশের মধ্যকার শীতল সম্পর্কে কিছুটা উষ্ণতার জোগান দেবে। পাকিস্তানও অনুরূপ ইঙ্গিত দিয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রীকেই জানতে হবে, দুঃখ-দুর্দশার কোনো জাতপাত নেই, রাজনীতি নেই।
কাশ্মীরি জনগণ প্রশিক্ষিত মানুষদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, এটা তাঁরা বোঝেন কি না জানি না। এই পণ্ডিতেরা ভারতের অন্যান্য অংশে গিয়ে চাকরি করছেন, তাঁরা অত্যন্ত যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ। রাজ্যটি তাঁদের এই মর্যাদার চাকরি দিতে চাইলেও তাঁরা সেখানে যেতে ইচ্ছুক নন। কাশ্মীর প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ তরুণদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সেটা পেলে কাশ্মীরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতো।
তার পরও শ্রীনগরের উচিত হবে এই পণ্ডিতদের ফেরত আনার চেষ্টা করা। এতে তাদের ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার হবে, বছরের পর বছর ধরে তারা যেটা ভোগ করেছে। এ ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হলে কাশ্মীর সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, যদিও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কাশ্মীরের জনগণ ভালো বেতনে কর্মরত আছেন।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
কুলদীপ নায়ার: ভারতের সাংবাদিক।
No comments