ফেসবুকে এক পিতার কৈফিয়ত
‘আমার বারবার মনে হচ্ছিল, আমি আমার বাচ্চা
দু’টোকে বাঁচাতে পারিনি। চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছি। সারাক্ষণ ভেবেছি,
কোথায়-কোথায় ভুল করেছি। এখনও ভাবি, কোথায় ভুলটা হলো?’ এই লেখাটি একজন
পিতার। তিনি চিরশ্রী জামান মুনমুন ও মুহাম্মদ বিন আলিমের পিতা আলিমুল হক
টিপু। তার দুই সন্তানের প্রসঙ্গে গতকাল বিকালে তার ফেসবুক একাউন্টে তিনি
একটি দীর্ঘ লেখা পোস্ট করেছেন। এতে প্রাক্তন স্ত্রী সাংবাদিক জয়শ্রী
জামানের সঙ্গে ডিভোর্স প্রসঙ্গেও নানা কথা বলেছেন চীন প্রবাসী এ সাংবাদিক।
তার দুই সন্তানের মৃত্যু আত্মহত্যা কিনা এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
এজন্য ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত অপেক্ষায় আছেন বলে জানান। টিপু যখন দুই
সন্তানের মৃত্যুর খবর পান পেইচিংয়ে তখন রাত ২টা। তিনি লিখেছেন, যখন আমি
বাচ্চা দু’টোর মৃত্যুর খবর শুনি তখন তা বিশ্বাস হয়নি। সারারাত ছটফট করেছি।
মনে মনে আশা করেছি একটি এসএমএস আসবে চিরশ্রীর কাছ থেকে। আব্বু, আম্মুকে ভয়
দেখিয়েছি। কিন্তু কোন এসএমএস আসেনি। বেলা ১১টায় সহকর্মীরা যখন দল বেঁধে
এলো, তখন বুঝলাম সব শেষ। পরবর্তী দু’টি দিন আমার কিভাবে কেটেছে আমি বলতে
পারবো না। আমি এমনকি আমার বাবার ফোনও ধরিনি।
টিপু লিখেছেন, তার প্রথম সন্তান চিরশ্রী ইউরোপীয় মেয়েদের মতো সুন্দরী হতে চাইতো জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘চিরশ্রী বলতো আব্বু, বেহেশতে গেলে কি আমি ওদের মতো সুন্দর হতে পারবো? আমি বলতাম, তার চেয়ে কোটি গুণ বেশি সুন্দর হয়েই তুমি বেহেশতে যাবে।’ তিনি লিখেছেন, পিতা আলিমুল হক হিসেবে তিনি ওই লেখাটি লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘কোন শিশু যেন মনে না করে যে পিতা আলিমুল হক জঘন্য। এটা ভেবে যদি একটি শিশুর মনেও তার নিজের পিতার সম্পর্কে খারাপ ধারণা জন্মায়, তাহলে সেটা হবে আমার কাছে খুবই কষ্টের একটা বিষয়।’
টিপু লিখেছেন, তার প্রথম সন্তান চিরশ্রী ইউরোপীয় মেয়েদের মতো সুন্দরী হতে চাইতো জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘চিরশ্রী বলতো আব্বু, বেহেশতে গেলে কি আমি ওদের মতো সুন্দর হতে পারবো? আমি বলতাম, তার চেয়ে কোটি গুণ বেশি সুন্দর হয়েই তুমি বেহেশতে যাবে।’ তিনি লিখেছেন, পিতা আলিমুল হক হিসেবে তিনি ওই লেখাটি লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘কোন শিশু যেন মনে না করে যে পিতা আলিমুল হক জঘন্য। এটা ভেবে যদি একটি শিশুর মনেও তার নিজের পিতার সম্পর্কে খারাপ ধারণা জন্মায়, তাহলে সেটা হবে আমার কাছে খুবই কষ্টের একটা বিষয়।’
আলিমুল হক টিপু নিয়মিত তার সন্তান চিরশ্রী ও মুহাম্মদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন জানিয়ে লিখেছেন, গত মে মাসে চিরশ্রীর এ লেভেলের ফাইনাল পরীক্ষার ফি বাবদ ৭৫ হাজার টাকা দিয়েছি। তাদের মৃত্যুর কিছু দিন আগেও মুহাম্মদের বই কেনার জন্য আবদুল্লাহ (টিপুর ভাইপো)’র মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। দুই সন্তানের খরচের জন্য প্রতি মাসেই তিনি টাকা পাঠাতেন বলে দাবি করেন। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও দুই সন্তানের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে লিখেছেন টিপু। তিনি লিখেছেন, আমার মেয়ে একটা এসএমএস পাঠিয়ে বলতো: কল মি নাও। এমন হয়নি যে আমি সঙ্গে সঙ্গে ফোন করিনি। তা রাত দু’টো তিনটে হলেও। বিভিন্ন পত্রিকায় আলিমুল হক টিপুকে কেন্দ্র করে লেখার সমালোচনা করে তিনি লিখেছেন, আমি মহামানুষ নই। কিন্তু এতটা খারাপও নই, যতটা পত্র-পত্রিকাগুলো গত কয়েকদিন ধরে লিখেছে।
টিপু দাবি করেন, ‘চিরশ্রী ও মুহাম্মদ তাদের মায়ের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করতো। সেই বিরক্তি শেষ পর্যন্ত ঘৃণায় রূপ নেয়।’ তিনি লিখেছেন, ‘আমি তাদের বলতাম, খারাপ স্ত্রী বা স্বামী হয়, কিন্তু খারাপ মা বা বাবা হয় না।’ তিনি এতে আরও উল্লেখ করেছেন চিরশ্রী তাকে বলেছিল আব্বু, আম্মু বিয়ে করলে আমরা তোমার কাছে চলে আসবো। টিপু তাকে বলেছিলেন, ‘মা, এ লেভেলটা শেষ করলেই চীনে তোর স্কলারশিপ হয়ে যাবে। একটু ধৈর্য ধর।’
জয়শ্রী জামানের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, পরকীয়া প্রেমের কারণেই জয়শ্রীর সঙ্গে আমার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে। তবে তা তার পরকীয়া নয়। বরং জয়শ্রীর পরকীয়ার কারণেই বিচ্ছেদ ঘটেছে দাবি করে তিনি লিখেছেন, স্বামী ও ফুটফুটে দু’টি সন্তান থাকতে ১৪ বছর বিবাহিত জীবনের পর যদি কোন স্ত্রী অন্য পুরুষকে প্রেমপত্র লেখে, তাহলে তার সঙ্গে কি বাস করা যায়? এরকম একটি চিঠি তার কাছে রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। প্রধানমন্ত্রী সমীপে জয়শ্রী জামানের লেখা চিঠি প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, জয়শ্রী প্রধানমন্ত্রীকে আমার সম্পর্কে যে কথাগুলো লিখেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তিনি লিখেছেন, প্রেমের কারণে দিগন্ত টিভি থেকে তার চাকরি যায়নি। বরং বিয়ে করার কারণে দিগন্ত থেকে টিপু ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী মাহবুবার চাকরি চলে যায়। পরে অবশ্য আলিমুল হক টিপুকে নিউজ কনসালটেন্ট এবং মাহবুবাকেও পুনঃনিয়োগ দেয়া হয়।
জয়শ্রীর সঙ্গে ডিভোর্স প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, জয়শ্রী জোর করে দুই সন্তানকে নিয়ে তার বোন তিলোত্তমার বাসায় ওঠে। তাদের কন্যা চিরশ্রী সেদিন সারারাত কেঁদেছে। বলেছে, আমাকে আব্বুর কাছে দিয়ে আসো। পরের দিন সকালে জয়শ্রী বাধ্য হয়ে মেয়েকে দিয়ে যায়। এক মাস পর ছেলেটাকেও তার কাছে দিয়ে যায়। তারপর আটটি মাস ছেলেমেয়ে দু’টো টিপুর কাছে ছিল। ওই সময়ে জয়শ্রী তাকে এসএমএস করে আবার বিয়ে করার তাগিদ দিতো বলে তিনি জানান।
No comments