ব্রিজের গোড়ায় অপরিকল্পিত টোল আদায় by সাহস রতন
বর্তমানে ঢাকা থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত যেতে প্রধান জ্যামটি সৃষ্টি হয় মেঘনা ব্রিজে ওঠার সময়। অবশ্য গৌরীপুরও এ কাজে কোন অংশে পিছিয়ে নেই। ঢাকা-চট্টগ্রাম যোগাযোগ সড়ককে বলা হচ্ছে হাইওয়ে। কিভাবে এটা হাইওয়ে বা মহাসড়ক হয়ে গেল তা আমার মাথায় ঢোকে না। অবশ্য আমার মাথায় না ঢুকলেই যে সেটা হাইওয়ে হবে না এমন কোন কথা নেই। তবে কথা হলো, যে সব গুণা থাকলে একটা রাস্তাকে হাইওয়ে বলা যায়, তার কোন কিছুই ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের নেই। উপরন্তু্তু এই রাস্তার মূল শরীর এবং তার দুই পাশের যা অবস্থা তাতে এটাকে বড় জোর আন্তঃজেলা সংযোগ সড়ক বলা যেতে পারে। এটাও বোধহয় তার জন্য বেশি বলা হয়ে যায়। আমাদের রাস্তাগুলোতে ট্রাফিক জ্যাম নিত্যদিনের ঘটনা। এটা শহরের ভেতরে এবং আন্তঃজেলা সংযোগ সড়ক উভয়ের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, পাকা রাস্তা তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অতি দ্রুত এর দু’পাশে বাজার, ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে। ফলে এসব রাস্তায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। আন্তঃজেলা সংযোগ সড়কগুলোর যেসব স্থানে টোল আদায়ের ব্যবস্থা আছে সেখানেই সৃষ্টি হয় জ্যাম। এর কারণ অপরিকল্পিত টোল আদায়। সদ্যনির্মিত গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারের সায়েদাবাদ পয়েন্ট, মেঘনা ও দাউদকান্দি ব্রিজের টোলঘর এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সারা দেশে বর্তমান রাস্তাগুলোর প্রায় সব ক’টিই দুই লেনবিশিষ্ট। ঢাকা থেকে মেঘনা ব্রিজ কিংবা কুমিল্লা থেকে দাউদকান্দি ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তায় পাশাপাশি সর্বোচ্চ দুইটা গাড়ি চলতে পারবে। মেঘনা ও দাউদকান্দি ব্রিজে ওঠার আগে একসঙ্গে ছয়-সাতটা গাড়ি থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে। একসঙ্গে এত গাড়ি টোল দিলেও সামনে এগিয়ে ব্রিজে উঠতে পারছে মাত্র একটা গাড়ি। তাহলে এভাবে টোল আদায়ের মানেটা কি? টোল আদায়কারীদের ভাবখানা এমন যেন, আগে টোলটা দিয়ে দাও। এরপর তোমার তুমি জাহান্নামে যাও। নয়তো সারাদিন জ্যামে বইসা থাকো। ব্রিজের ওপর দিয়ে একটা মাত্র গাড়ি পারাপারের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন একসঙ্গে এত গাড়ি থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে? এভাবে টোল আদায়ের ফলে টোল আদায়কারীরাই তো জ্যাম বাঁধার উপলক্ষ তৈরি করে দিচ্ছে। মেঘনা ও দাউদকান্দি ব্রিজের আগে এবং পরে কোথাও একসঙ্গে ছয়-সাতটা গাড়ি চলার সুযোগ নেই। তাহলে শুধুমাত্র ব্রিজে ওঠার আগে কেন ছয়টা গাড়ি থেকে একসঙ্গে টোল নেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে? গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারের সায়েদাবাদ পয়েন্ট, মেঘনা ও দাউদকান্দি ব্রিজের টোলঘর সব জায়গায় একই দৃশ্য। ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর এই মুহূর্তে মেঘনা ও দাউদকান্দি ব্রিজে ওঠার পয়েন্টগুলোতে ভয়াবহ জ্যাম তৈরি হচ্ছে। এর প্রধান কারণ একসঙ্গে অনেক গাড়ি থেকে টোল আদায়। মেঘনা ও দাউদকান্দি ব্রিজের টোলঘরগুলো জ্যাম তৈরির ফাঁদ পেতে বসে আছে। দুই লেনবিশিষ্ট রাস্তাটি হঠাৎ টোলঘরের এখানে এসে ছয় লেন পরিমাণ চওড়া হয়ে গেছে। শ’ শ’ কিলোমিটার পথ যদি দুই লেন ধরে চলা যায়, তাহলে টোল ঘরে এসে কেন ছয় লেনে চলতে হবে? পুরোপুরি হাস্যকর একটি ডিজাইন। কার বুদ্ধিতে টোল ঘরের এই ডিজাইন চালু হলো তাকে খুঁজে বের করা দরকার। পাশাপাশি লেনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে টোলঘরগুলোকেও দুই লেনের পরিমাণে নামিয়ে আনতে হবে। তবেই অহেতুক জ্যাম সৃষ্টিকারী এই টোলঘরগুলোর উপদ্রব থেকে দ্রুত আমরা মুক্তি পাবো।
No comments