ফাঁসি নয়, আমৃত্যু কারাদণ্ড -বাকি জীবন কারাগারে থাকবেন সাঈদী by মহিউদ্দিন ফারুক ও কুন্তল রায়
ফাঁসির মঞ্চে যেতে হচ্ছে না জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশে সেই সর্বোচ্চ সাজা থেকে তিনি রেহাই পেয়েছেন। এর পরিবর্তে তাঁকে বাকি জীবন কারাগারে থাকার দণ্ড দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথম আপিল নিষ্পত্তির ঠিক এক বছর পর গতকাল দ্বিতীয় আরেকটি মামলা নিষ্পত্তি করলেন আপিল বিভাগ। প্রথমটিতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার শাস্তি যাবজ্জীবন থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।
গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল আংশিক মঞ্জুর করে রায় দেন। রায়ে পাঁচটি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে তাঁকে দণ্ড দেওয়া হয়। এর মধ্যে একাত্তর সালে তিন নারীকে অপহরণ করে আটকে রেখে ধর্ষণ এবং কয়েকজন ব্যক্তিকে জোর করে ধর্মান্তরিত করার ঘটনায় জড়িত থাকাসহ তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাঈদীকে স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে সরকার ও আসামিপক্ষ উভয়েই বলেছে, রায়ে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবির। সহিংসতায় প্রথম তিন দিনেই ৭০ জন নিহত হন। এই মামলায় আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের করা দুটি আপিলের ওপর ৫০ দিনের মতো শুনানি শেষে গত ১৬ এপ্রিল আপিল বিভাগ রায় অপেক্ষমাণ রাখেন। ঠিক পাঁচ মাসের মাথায় গতকাল রায় ঘোষণা করা হয়। ট্রাইব্যুনালের রায়ে সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠিত ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণিত হয়। এগুলো হচ্ছে-৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগ। এর মধ্যে ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল সকাল সাড়ে আটটা থেকে আইনজীবী, গণমাধ্যমকর্মী ও পর্যবেক্ষকেরা আপিল বিভাগে জড়ো হন। সকাল ১০টা পাঁচ মিনিটে এজলাসে বসেন বিচারপতিরা। ততক্ষণে শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী, পাঁচ শতাধিক আইনজীবী, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে এজলাসকক্ষ ভরে যায়। এ সময় সাঈদীর ছেলে পিরোজপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদীও উপস্থিত ছিলেন।
১০টা সাত মিনিটে রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ পড়ে শোনান প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন। পিনপতন নীরবতায় মাত্র তিন মিনিটে রায় ঘোষণা শেষ হয়। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন: বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথম আপিল নিষ্পত্তির ঠিক এক বছর পর গতকাল দ্বিতীয় আরেকটি মামলা নিষ্পত্তি করলেন আপিল বিভাগ। প্রথমটিতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার শাস্তি যাবজ্জীবন থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।
গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল আংশিক মঞ্জুর করে রায় দেন। রায়ে পাঁচটি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে তাঁকে দণ্ড দেওয়া হয়। এর মধ্যে একাত্তর সালে তিন নারীকে অপহরণ করে আটকে রেখে ধর্ষণ এবং কয়েকজন ব্যক্তিকে জোর করে ধর্মান্তরিত করার ঘটনায় জড়িত থাকাসহ তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাঈদীকে স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে সরকার ও আসামিপক্ষ উভয়েই বলেছে, রায়ে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবির। সহিংসতায় প্রথম তিন দিনেই ৭০ জন নিহত হন। এই মামলায় আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের করা দুটি আপিলের ওপর ৫০ দিনের মতো শুনানি শেষে গত ১৬ এপ্রিল আপিল বিভাগ রায় অপেক্ষমাণ রাখেন। ঠিক পাঁচ মাসের মাথায় গতকাল রায় ঘোষণা করা হয়। ট্রাইব্যুনালের রায়ে সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠিত ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণিত হয়। এগুলো হচ্ছে-৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগ। এর মধ্যে ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল সকাল সাড়ে আটটা থেকে আইনজীবী, গণমাধ্যমকর্মী ও পর্যবেক্ষকেরা আপিল বিভাগে জড়ো হন। সকাল ১০টা পাঁচ মিনিটে এজলাসে বসেন বিচারপতিরা। ততক্ষণে শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী, পাঁচ শতাধিক আইনজীবী, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে এজলাসকক্ষ ভরে যায়। এ সময় সাঈদীর ছেলে পিরোজপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদীও উপস্থিত ছিলেন।
১০টা সাত মিনিটে রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ পড়ে শোনান প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন। পিনপতন নীরবতায় মাত্র তিন মিনিটে রায় ঘোষণা শেষ হয়। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন: বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
রায়ে বলা হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর করা ফৌজদারি আপিল ও সরকারের ফৌজদারি আপিল আংশিক মঞ্জুর করা হলো। ৬, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ থেকে সাঈদীকে খালাস দেওয়া হলো। অষ্টম অভিযোগের একটি অংশ থেকে তাঁকে খালাস এবং অপর অংশে দণ্ড পরিবর্তন করে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলো। সপ্তম অভিযোগে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হলো। সাজা ও খালাসের সব সিদ্ধান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে নেওয়া হয়।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে রায় দেওয়া হলেও কোন বিচারপতি কী মত দিয়েছেন, তা ঘোষিত রায়ে উল্লেখ করা হয়নি।
তিন অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড: ১০ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২ জুন সকাল ১০টার দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে সশস্ত্র দল পিরোজপুরের উমেদপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ার ২৫টি ঘরে আগুন দেয়। পরে সাঈদীর ইন্ধনে বিসাবালিকে নারিকেলগাছের সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন।
১৬ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, সাঈদীর নেতৃত্বে ১০-১২ জনের রাজাকার দল পারেরহাট বন্দরের একটি বাড়ি থেকে তিন বোনকে ধরে পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁদের তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়। এই অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও ট্রাইব্যুনাল কোনো সাজা দেননি। আপিল বিভাগ এই অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন।
১৯ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, সাঈদী জোর করে পারেরহাটসহ অন্য গ্রামের ১০০-১৫০ হিন্দুকে ধর্মান্তরিত করেন। এই অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও ট্রাইব্যুনাল কোনো সাজা দেননি। আপিল বিভাগ এই অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন।
দুটিতে দুই মেয়াদে কারাদণ্ড: ৭ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ৮ মে সাঈদী পাকিস্তানি সেনাদের বাদুরিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম খানের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে নুরুল ইসলাম খানকে আওয়ামী লীগার এবং তাঁর ছেলে শহীদুল ইসলামকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত করে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেন। পরে তাঁদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই অপরাধে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে কোনো দণ্ড দেননি। তবে গতকাল আপিল বিভাগ সাঈদীকে এই অপরাধে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
৮ নম্বর অভিযোগ অনুসারে, ১৯৭১ সালের ৮ মে সাঈদী ও তাঁর দলের সদস্যরা চিথোলিয়া গ্রামের মানিক পশারির গ্রাম লুট করেন। সেখান থেকে মানিক পশারির ভাই মফিজুদ্দিন ও ইব্রাহিম কুট্টিকে ধরে নিয়ে যান। পাঁচটি ঘরে আগুন দেন। সেনাক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার সময় সাঈদীর প্ররোচনায় পাকিস্তানি সেনারা ইব্রাহিমকে হত্যা করে। মফিজকে সেনাক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগ এই অভিযোগের অংশবিশেষ থেকে তাঁকে খালাস দিয়েছেন। বাকি অভিযোগের জন্য মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
তিন অভিযোগে খালাস: রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ৬, ১১ ও ১৪—এই তিন অভিযোগ থেকে সাঈদীকে খালাস দেওয়া হয়। ৬ নম্বর অভিযোগ হচ্ছে, পারেরহাট বাজারের আওয়ামী লীগ, হিন্দু সম্প্রদায় ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের বাড়িঘর ও দোকান লুট করা। ১১ নম্বর অভিযোগ ছিল, পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে গিয়ে টেংরাখালী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল আলম হাওলাদারের বড় ভাই আবদুল মজিদ হাওলাদারকে নির্যাতন এবং বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ।
১৪ নম্বর অভিযোগ ছিল, ৫০-৬০ জনের একটি রাজাকার বাহিনী নিয়ে গিয়ে হোগলাবুনিয়ার হিন্দুপাড়ায় কয়েকজনকে ধর্ষণ করা এবং পাড়ায় আগুন দেওয়া।
এই তিন অভিযোগ প্রমাণিত হলেও ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে কোনো সাজা দেননি। আপিল বিভাগ গতকালের রায়ে তাঁকে তিনটি অভিযোগ থেকেই খালাস দেন।
প্রতিক্রিয়া: রায়ে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি মন্তব্য করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকুক, এটাই ছিল আমার প্রত্যাশা। সেটা থাকেনি। এ জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে।’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রতিক্রিয়ায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। যে রায় হয়েছে, তা মাথা পেতে নিচ্ছি। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি বলব, কিছুটা হতাশ ও মর্মাহত হয়েছি। এটা আমার আবেগ। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর এ ব্যপারে কিছু করা যায় কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।’
রায় ঘোষণার পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে এক প্রতিক্রিয়ায় সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ বিবেচনায় নিয়ে রায় দিয়েছেন। আপিল বিভাগের রায় সবাইকে মেনে নিতে হবে।’
সাঈদীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সাঈদীর বিরুদ্ধে করা মামলাটি ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা। রায় পর্যালোচনা করে এর বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করা হবে। এখনো বিশ্বাস করি, আসামি ন্যায়বিচার পাবেন।’
রায়ে সংক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট জানিয়ে সাঈদীর অপর আইনজীবী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হবে।
সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রায়ে সন্তুষ্ট নই। আমরা প্রত্যাশিত ন্যায়বিচার পাইনি। আশা করেছিলাম তিনি খালাস পাবেন। পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর পুনর্বিবেচনার আবেদন করব।’
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন সাঈদী গ্রেপ্তার হন। ওই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ২৮ মার্চ দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর আপিলের শুনানি শুরু হয়।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে রায় দেওয়া হলেও কোন বিচারপতি কী মত দিয়েছেন, তা ঘোষিত রায়ে উল্লেখ করা হয়নি।
তিন অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড: ১০ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২ জুন সকাল ১০টার দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে সশস্ত্র দল পিরোজপুরের উমেদপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ার ২৫টি ঘরে আগুন দেয়। পরে সাঈদীর ইন্ধনে বিসাবালিকে নারিকেলগাছের সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন।
১৬ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, সাঈদীর নেতৃত্বে ১০-১২ জনের রাজাকার দল পারেরহাট বন্দরের একটি বাড়ি থেকে তিন বোনকে ধরে পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁদের তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়। এই অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও ট্রাইব্যুনাল কোনো সাজা দেননি। আপিল বিভাগ এই অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন।
১৯ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, সাঈদী জোর করে পারেরহাটসহ অন্য গ্রামের ১০০-১৫০ হিন্দুকে ধর্মান্তরিত করেন। এই অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও ট্রাইব্যুনাল কোনো সাজা দেননি। আপিল বিভাগ এই অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন।
দুটিতে দুই মেয়াদে কারাদণ্ড: ৭ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ৮ মে সাঈদী পাকিস্তানি সেনাদের বাদুরিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম খানের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে নুরুল ইসলাম খানকে আওয়ামী লীগার এবং তাঁর ছেলে শহীদুল ইসলামকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত করে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেন। পরে তাঁদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই অপরাধে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে কোনো দণ্ড দেননি। তবে গতকাল আপিল বিভাগ সাঈদীকে এই অপরাধে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
৮ নম্বর অভিযোগ অনুসারে, ১৯৭১ সালের ৮ মে সাঈদী ও তাঁর দলের সদস্যরা চিথোলিয়া গ্রামের মানিক পশারির গ্রাম লুট করেন। সেখান থেকে মানিক পশারির ভাই মফিজুদ্দিন ও ইব্রাহিম কুট্টিকে ধরে নিয়ে যান। পাঁচটি ঘরে আগুন দেন। সেনাক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার সময় সাঈদীর প্ররোচনায় পাকিস্তানি সেনারা ইব্রাহিমকে হত্যা করে। মফিজকে সেনাক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগ এই অভিযোগের অংশবিশেষ থেকে তাঁকে খালাস দিয়েছেন। বাকি অভিযোগের জন্য মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
তিন অভিযোগে খালাস: রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ৬, ১১ ও ১৪—এই তিন অভিযোগ থেকে সাঈদীকে খালাস দেওয়া হয়। ৬ নম্বর অভিযোগ হচ্ছে, পারেরহাট বাজারের আওয়ামী লীগ, হিন্দু সম্প্রদায় ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের বাড়িঘর ও দোকান লুট করা। ১১ নম্বর অভিযোগ ছিল, পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে গিয়ে টেংরাখালী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল আলম হাওলাদারের বড় ভাই আবদুল মজিদ হাওলাদারকে নির্যাতন এবং বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ।
১৪ নম্বর অভিযোগ ছিল, ৫০-৬০ জনের একটি রাজাকার বাহিনী নিয়ে গিয়ে হোগলাবুনিয়ার হিন্দুপাড়ায় কয়েকজনকে ধর্ষণ করা এবং পাড়ায় আগুন দেওয়া।
এই তিন অভিযোগ প্রমাণিত হলেও ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে কোনো সাজা দেননি। আপিল বিভাগ গতকালের রায়ে তাঁকে তিনটি অভিযোগ থেকেই খালাস দেন।
প্রতিক্রিয়া: রায়ে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি মন্তব্য করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকুক, এটাই ছিল আমার প্রত্যাশা। সেটা থাকেনি। এ জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে।’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রতিক্রিয়ায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। যে রায় হয়েছে, তা মাথা পেতে নিচ্ছি। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি বলব, কিছুটা হতাশ ও মর্মাহত হয়েছি। এটা আমার আবেগ। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর এ ব্যপারে কিছু করা যায় কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।’
রায় ঘোষণার পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে এক প্রতিক্রিয়ায় সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ বিবেচনায় নিয়ে রায় দিয়েছেন। আপিল বিভাগের রায় সবাইকে মেনে নিতে হবে।’
সাঈদীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সাঈদীর বিরুদ্ধে করা মামলাটি ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা। রায় পর্যালোচনা করে এর বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করা হবে। এখনো বিশ্বাস করি, আসামি ন্যায়বিচার পাবেন।’
রায়ে সংক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট জানিয়ে সাঈদীর অপর আইনজীবী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হবে।
সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রায়ে সন্তুষ্ট নই। আমরা প্রত্যাশিত ন্যায়বিচার পাইনি। আশা করেছিলাম তিনি খালাস পাবেন। পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর পুনর্বিবেচনার আবেদন করব।’
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন সাঈদী গ্রেপ্তার হন। ওই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ২৮ মার্চ দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর আপিলের শুনানি শুরু হয়।
No comments