বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের প্রকৃত অবস্থা দেখেন -প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিরোধীদলীয় নেতা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেশের মানুষের প্রকৃত অবস্থা দেখে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। আজ বৃহস্পতিবার দশম সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে সমাপনী দিনের বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান। রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘একদিন বের হয়ে দেখেন। মানুষ কীভাবে বেঁচে আছে। আপনাকে এ বিষয়ে কেউ বাস্তব কথা বলবে না। সবাই গা বাঁচিয়ে চলবে। আপনাকে নিজের চোখে গিয়ে দেখতে হবে।’
রওশন এরশাদ আরও বলেন, ‘আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আপনি দেশের কথা, জনগণের কথা ভাবেন না কেন? আপনারা এ নিয়ে তিনবার ক্ষমতায়। কেন খাদ্যে ও ওষুধে ভেজালের ওপর গুরুত্ব দেননি। ভুয়া ডাক্তারের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ভেজাল ওষুধ খেলে কি রোগী বাঁচবে। খাদ্যে বিষ বন্ধ না করতে পারলে আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা হলেন কীভাবে? আপনি দেশকে ভালোবাসেন না? আপনি চাইলে এক দিনেই ফরমালিন বন্ধ করতে পারেন। এখন কোরবানির গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে, হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। মুরগিকে খাওয়ানো হচ্ছে ট্যানারির বর্জ্য। এগুলো যারা খাবে, নির্ঘাত তার মৃত্যু হবে। খাদ্যে বিষক্রিয়ায় প্রতি বছর ৪৫ লাখ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আপনি কেবল আওয়ামী লীগের নয়, সারা দেশের প্রধানমন্ত্রী। সারা দেশের কথা ভাবতে হবে।’
বন্যায় দুই লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে এবং এর আর্থিক মূল্য এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা বলে উল্লেখ করেন রওশন এরশাদ। তিনি কৃষকদের ঋণ না দিয়ে আর্থিক সাহায্য, বিনা মূল্যে সার ও বীজ সরবরাহের অনুরোধ জানান।
দরিদ্রদের জন্য সরকারের আবাসন প্রকল্পের সমালোচনা করে রওশন এরশাদ বলেন, এসব আবাসন প্রকল্প না করে ছোট ছোট শিল্প কারখানা তৈরি করতে হবে। এতে দরিদ্ররা নিজেদের আবাসন নিজেরাই তৈরি করে নিতে পারবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না করে আবাসনের ব্যবস্থা করে দিলে তারা না খেয়ে খালি পেটে বাড়িতে বসে থাকবে?
প্রধানমন্ত্রীর বাসার বিদ্যুৎ যায় না, লোডশেডিং কীভাবে বুঝবেন
বিরোধীদলীয় নেতা জানান, বিদ্যুৎ খাতে বছরে লুটপাট হয় দেড় হাজার কোটি টাকা। বছরে ২২০ কোটি টাকার তিন কোটি ঘনফুট গ্যাস চুরি হচ্ছে। বিদ্যুতে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিল বকেয়া। বিদ্যুতের লোডশেডিং সম্পর্কে রওশন এরশাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বাসার বিদ্যুৎ তো যায় না। তিনি কীভাবে বিদ্যুতের লোডশেডিং বুঝবেন।
ব্যাংক ও আর্থিক খাত সম্পর্কে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ব্যাংকগুলো থেকে বিভিন্ন কোম্পানি তিন দশকে প্রায় ৩০ হাজার কোটি ঋণ নিয়েছে। সরকার আদায় করতে পারবে না বলে এগুলোকে এখন আল্লাহর ওয়াস্তে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এনামে-সেনামে ঋণ নিয়ে তারা দেশ ছেড়ে চলে গেছে।
রওশন এরশাদ বলেন, ঢাকার বাইরে প্রতিটি মহাসড়কের অবস্থা বেহাল, চলাচলের অযোগ্য। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। চালকেরা পয়সা দিয়ে লাইসেন্স নিয়েছে, যে কারণে অবিরাম দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। ঢাকা চলাচলের অযোগ্য। রাস্তার দৈর্ঘ্য ২ হাজার ২৮৯ কিলোমিটার। রাস্তার সংখ্যা ৪ হাজার ১০৭টি। ৬০ শতাংশ রাস্তা চলাচলের অযোগ্য। ফুটপাত হকারদের দখলে। যানজট তো আছেই। গুলশান থেকে মতিঝিল যেতে আসতে আট ঘণ্টা সময় লাগে। এর বিকল্প একটা কিছু করতে হবে।
সম্পত্তিতে নারীর অধিকারের প্রসঙ্গ তুলে রওশন এরশাদ বলেন, ছোটকালে বাবার, যৌবনে স্বামীর, বৃদ্ধ বয়সে ছেলের কাছে থাকতে হয়। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
শিক্ষার মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন রওশন এরশাদ। তিনি বলেন, লাখে লাখে জিপিএ পাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করতে পারছে না।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে রওশন এরশাদ বলেন, ‘আপনার কাছে আমার দাবি, আমার কথা আপনাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। দেশের জন্য, জনগণের জন্য ভাবতে হবে।’
No comments