জামায়াতকে পুনর্বাসন করতেই এ রায়: গণজাগরণ মঞ্চ
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। রায় ঘোষণার পর গণজাগরণ মঞ্চের তিনটি অংশ আলাদাভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও সমাবেশ করে। সমাবেশ থেকে দু’টি অংশ আলাদা কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। শাহবাগে রাস্তায় অবস্থান কর্মসূচি পালনের সময় পুলিশি হামলার শিকার হয়েছে মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারসহ বেশ কয়েকজন কর্মী। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। শাহবাগে সমাবেশ থেকে ইমরান এইচ সরকার বলেন, সরকার জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করেই এই রায় দিয়েছে। আমরা এই রায় মানি না। দেশবাসী এই রায় মানে না। সরকার জামায়াতকে পুনর্বাসন করতেই এই রায় ঘোষণা করেছে। ডা. ইমরান আরও বলেন, ফাঁসির রায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না। তিনি দেশবাসীকে রায় প্রত্যাখ্যান করে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান। এদিকে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শাহবাগে আবারও অবস্থান নিয়েছে মঞ্চের দুই পক্ষ। মঙ্গলবার থেকে শাহবাগে অবস্থান করছেন মঞ্চের ডা. ইমরানের নেতৃত্বাধীন অংশ। সকাল থেকে কামাল পাশার নেতৃত্বাধীন পক্ষও অবস্থান নেয়। দুই পক্ষ ঘোষণা করেছে আলাদা আলাদা কর্মসূচি। এর আগে রায় ঘোষণার পর রায়ে সন্তুষ্ট না হয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন ডা. ইমরানের নেতৃত্বাধীন অংশের কর্মীরা। এতে শাহবাগ মোড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দশটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় পুলিশ তাদের ওপর জলকামান এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে ডা. ইমরানসহ চার জন আহত হন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। মঞ্চের কর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। প্রায় ১০ মিনিট পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। হামলার বিষয়ে পুলিশের রমনা জোনের এসি শিবলী নোমান বলেন, মঞ্চের বিক্ষোভ মিছিলে আমরা বাধা দিইনি। কিন্তু তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে যান চলাচলে বাধা দেয়ায় আমরা তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দিয়েছি। তখন মঞ্চের অপর পক্ষ জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণসংগীত পরিবেশন করছিলেন। তারা ডা. ইমরানদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় তাৎক্ষণিক নিন্দা জানান।
কর্মসূচি: মঞ্চের কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় বিকালে প্রতিবাদী সমাবেশের আয়োজন করেন ডা. ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বাধীন অংশ। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ডাকসু’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সম্পা বসু, কেন্দ্রীয় খেলাঘরের সাবেক সভাপতি তাহমিনা সুলতানা সাথী, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেক, যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, মঞ্চের অন্যতম সংগঠক মারুফ রাসুল প্রমুখ। সমাবেশে ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী বলেন, স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে ফাঁসি দেয়া হলো না। এর প্রতিবাদ জানালে নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পুলিশ হামলা করেছে। এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে হামলায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আমরা দীর্ঘ কাল ধরে যুদ্ধাপরাধী পোষার কলঙ্ক বয়ে চলছি। জাতিকে এই অভিশাপ ও কলঙ্ক থেকে মুক্ত করতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। সমাবেশ শেষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন আরিফ জেবতিক। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ বিকাল চারটায় শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও রাত দশটা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি এবং আগামীকাল শুক্রবার বিকাল চারটায় শাহবাগ জাদুঘরের সামনে গণসমাবেশ। এরপর কর্মসূচি ঘোষণা করেন কামাল পাশা পক্ষ। তারা শুক্রবার বিকাল চারটায় জাদুঘরের সামনে সমাবেশের ঘোষণা দেন। আবারও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে মঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাত্রসংগঠনগুলো। শত চেষ্টা করেও এক করতে পারেন নি মঞ্চের অন্য দুইপক্ষকে। এ বিষয়ে ছাত্র মৈত্রীর বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, মঞ্চ আলাদা আলাদা থাকলে কোন দাবিই আদায় করা যাবে না। আগেও অনেক চেষ্টা করেছি। এখনও করছি। তাদের কোন কর্মসূচি রয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এখনও সবাইকে একসাথে করার প্রক্রিয়া চলছে। যদি না হয় তবে আলাদা কর্মসূচি ঘোষণা করবো। যদি তারা সঙ্গে আসে তবে স্বাগতম।
ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিল: এদিকে রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে একটি মিছিল শুরু হয়ে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ঢাবি শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ প্রমুখ।
No comments