জাসদ ও গণবাহিনীর ঠিকুজি by সৈয়দ আবুল মকসুদ
[প্রথম পর্ব >> সংসদে সংগীত, কবিতা ও গণবাহিনী by সৈয়দ আবুল মকসুদ]
শেষ পর্ব >> তথ্যমন্ত্রীর ভাষায় তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ‘রাজনৈতিক শয়তান’।তাঁকে মন্ত্রী অব্যাহতভাবে প্রতিদিন ‘জঙ্গিবাদী’ বলে গালাগাল করছেন।আমরা না জানলেও তথ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি জানেন খালেদা জিয়া একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী বিন লাদেনের মতো।একজন বয়স্ক মহিলাকে প্রকাশ্য জনসভায় ‘শয়তান’, ‘জঙ্গিবাদীদের মা’ প্রভৃতি বলা ভালো শোনায় না।
শেষ পর্ব >> তথ্যমন্ত্রীর ভাষায় তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ‘রাজনৈতিক শয়তান’।তাঁকে মন্ত্রী অব্যাহতভাবে প্রতিদিন ‘জঙ্গিবাদী’ বলে গালাগাল করছেন।আমরা না জানলেও তথ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি জানেন খালেদা জিয়া একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী বিন লাদেনের মতো।একজন বয়স্ক মহিলাকে প্রকাশ্য জনসভায় ‘শয়তান’, ‘জঙ্গিবাদীদের মা’ প্রভৃতি বলা ভালো শোনায় না।
তথ্যমন্ত্রী অনেক দিন থেকে খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার কথা বলছেন।মাইনাসের রাজনীতি তাঁরাই শুরু করেন অক্টোবর ১৯৭২। ’৭২-৭৫-এ মাইনাস করার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন একজন—শেখ মুজিবুর রহমান। সে পরিকল্পনা অতি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। দ্বিতীয়বার মাইনাসের আওয়াজ ওঠে বর্তমান শতাব্দীর প্রথম দশকে। এবার দুজন—খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা। জনতার চাপে সে পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। গণতন্ত্রের ক্লাবের সদস্যপদ হারানোর পর এবার খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার কথা শোনা যাচ্ছে। খালেদা জিয়াকে শারীরিক বা রাজনৈতিকভাবে মাইনাস বা বিয়োগ করা সম্ভব, কিন্তু ইতিহাস থেকে মাইনাস করা যাবে না।
খালেদা জিয়া ইতিহাসে কতটুকু জায়গা পাবেন, তা এখন বলা যাবে না।তাঁকে তাঁর সমসাময়িকরা অশালীন ভাষায় সংসদে এবং সংসদের বাইরে যদি গালাগাল করেন, তাতেও কিছু বলার নেই। কারণ, আমরা নিজের কানে শুনেছি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা টুঙ্গিপাড়ার মরহুম শেখ লুৎফর রহমান ও মরহুমা সায়রা খাতুনের ছেলেটিকেও একদিন ‘বাংলার মীরজাফর’সহ নানা অশ্রাব্য অভিধায় সম্বোধন করা হয়েছে পল্টন ময়দান থেকে। কোনো ইতিহাসবিদের বাবারও সাধ্য নেই ইতিহাসের সর্বোচ্চ আসন থেকে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলেন। তিনিই যখন মাফ পাননি, খালেদা তো তাঁর চেয়ে কত ছোট।
কোনো জ্যোতিষী জাসদের ঠিকুজি বা জন্মপঞ্জিকার খাতা নিয়ে বসে যাক—তা দলের নেতাদের কাম্য নয়। জাসদ নেতারা দাবি করতেন তাঁরা বিপ্লবী দল। বিপ্লব এক জিনিস আর সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও প্রতিহিংসামূলক নাশকতা আর এক জিনিস। বিপ্লবের জন্য তাঁরা বেছে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে। ’৭৪-এর ১৭ মার্চ। থানা, রক্ষীবাহিনী, বিডিআর ক্যাম্পসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনসুর আলীর বাসভবন আক্রমণ।
ওই দিন সন্ধ্যার আগেই ঢাকা নগরের পথঘাট জনশূন্য হয়ে যায়। সারা রাত আমি ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে ছিলাম। বাসস-এর বিশেষ প্রতিনিধি গোলাম তাহাবুরও ছিলেন অনেক রাত পর্যন্ত। আরও ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস শাখার এম সফিউল্লাহ, পরে তিনি রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন। সাড়ে তিন বছর আমি বঙ্গবন্ধুকে মেজাজ খারাপ করতে দেখিনি। সেদিনই দেখলাম তাঁর মেজাজ খুবই খারাপ। তিনি মস্কো যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। চীনপন্থী বিপ্লবীরা তো ছিলেনই, নব্য বিপ্লবীদের কারণে বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছিল।
সংসদে কাজী সাহেব ও খান সাহেবের বাহাস আওয়ামী লীগের নেতারা সংগত কারণেই উপভোগ করে থাকবেন। বিষয়টি সেখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থন করে রোববার জাসদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে হাসানুল হক ইনু ও শরীফ নুরুল আম্বিয়া এক বিবৃতিতে তাঁদের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তাঁদের বিবৃতির বক্তব্যের তথ্যগত মূল্য রয়েছে। তাঁরা বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালে যখন সংসদীয় রাজনীতি অনুপস্থিত, তখন প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েই জাসদ গণবাহিনী গঠন করে। গণবাহিনী সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করেছিল। কখনো গোপন ষড়যন্ত্র বা বেইমানির পথে পা বাড়ায়নি। বরং সে সময় যারা চাটুকারিতার আড়ালে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, তারাই খোন্দকার মোশতাক বা কাজী ফিরোজ রশীদের মতো প্রথম সুযোগেই বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের পিঠে ছোবল হানে।’ [সমকাল]
কেন ’৭৫-এ সংসদীয় রাজনীতি অনুপস্থিত ছিল এবং কেন সংসদীয় রাজনীতি চলাকালেই তাঁরা ‘গণবাহিনী’ গঠন করেছিলেন, সে ব্যাখ্যায় তাঁরা যাননি। গণবাহিনীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাঁরা অকপটে স্বীকার করেছেন, ‘গণবাহিনী সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করেছিল।’ অস্ত্রের জোরে বঙ্গবন্ধুর সরকারকে দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা নিশ্চয়ই সম্ভব ছিল না। তা ছাড়া, ’৭৪ সালেই যদি গণবাহিনী গঠন করা হবে, ’৭২-৭৪-এ ২০ হাজার নেতা-কর্মী নিহত হলেন কেন এবং কার হাতে।
সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু মার্চে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। ওই নির্বাচনেরও জাসদ বিরোধিতা করে। আক্রোশটা বঙ্গবন্ধুর ওপর।জানুয়ারিতে জাসদ সভাপতি মেজর এম এ জলিল এক বিবৃতিতে উসকানিমূলক বক্তব্য রাখেন। সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করেন।তিনি বলেন:
‘আজ যখন বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর প্রতি দৃষ্টিপাত করি, তখন সত্যই মর্মাহত হতে হয়—হৃদয় নিংড়ায়ে কান্না আসে। কারণ, যেসব বীর সৈনিকেরা সবকিছু বিসর্জন দিয়ে স্বাধীনতাসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, আজ তাদের দুঃখের সীমা নেই, তাদের ঘর নেই, খাবার নেই, এমনকি অনেকেই রাজাকার বলে ধিক্কার পাচ্ছে। যুদ্ধের সময় শত্রুর ঘরে গ্রেনেড ফাটাতে গিয়ে সেই চার্জে আজ তারা অনবরত জেলেও যাচ্ছে। আবার সেদিনের ঘটনা, লে. কর্নেল যিয়াউদ্দিনকে ও লে. কর্নেল তাহেরকে আর্মি থেকে বিনা বিচারে Dismiss করা হয়েছে। অন্যায়, অবিচার ও দুর্নীতির একটা সীমা থাকে, বঙ্গবন্ধু। হয়তো এইভাবে ধীরে ধীরে একদিন বাংলার গোটা সামরিক বাহিনী স্তিমিত হয়ে যাবে। কিন্তু কেন? এটা কি তাহলে তোমার ক্ষমতা লোভের প্রকাশ, না কোনো বন্ধু মহলের কুইঙ্গিত।’
নির্বাচনের ছয় মাস পরে ১ সেপ্টেম্বর ’৭৩ এক প্রচারপত্রে জাসদ বলে, ‘ভারতের পঁচাত্তরটি বিড়লা-টাটাদের প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী ও বর্তমান সোভিয়েতের ব্রেজনেভ কোসিগিন প্রতিক্রিয়াশীল চক্রে’র প্রতিনিধি শেখ মুজিবের ‘ফ্যাসিস্ট জাতীয় বিশ্বাসঘাতক সরকারকে উৎখাত করার জন্য, ঘুণে ধরা এই সমাজব্যবস্থাকে ভেঙে নূতন সমাজের ভিৎ রচনা করার জন্য আমাদের জীবন উৎসর্গ করবো।’ এ জাতীয় বিবৃতির ভাষায় সরকারের প্রতি যেমন সাধারণ মানুষের ঘৃণার সৃষ্টি হতো, তেমনি বোকা সরল গোছের অনেক তরুণ মনে করত রুশ বিপ্লব ও চীনের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের চেয়ে বড় কোনো বিপ্লব এল বলে এবং মুজিবের পতন আসন্ন।
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছিল: ‘জাতীয় মুক্তিযুদ্ধকে একপর্যায়ে স্তব্ধ করে দিয়ে বিদেশী শক্তির সহায়তায় বর্তমান ক্ষমতাসীন চক্র যেদিন বাংলার মসনদে উড়ে এসে জুড়ে বসল, সেদিন থেকেই এ দেশের মানুষের আরেক দুঃখের রজনী শুরু হলো। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন দীর্ঘ নয় মাসের সমস্ত আশা সমস্ত স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যেতে দেখল মানুষ।’
‘মেহনতী মানুষের সার্বিক মুক্তির’ লক্ষ্যে ‘ফ্যাসিস্ট মুজিব সরকারের উৎখাত’ দাবি করে ১৯৭৪-এ জাসদ এক প্রচারপত্রে ঘোষণা করে: ‘স্বৈরাচারী ক্ষমতাসীন চক্রের গত তেত্রিশ মাস দুঃশাসনের ফলে সোনার বাংলা আজ শ্মশান বাংলায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক সকল দিক থেকে সম্পূর্ণরূপে পঙ্গু ও অকর্মণ্য করে দেবার এক সুগভীর চক্রান্ত চালানো হয়েছে।...হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদেরকে ফ্যাসিবাদী কায়দায় জেলখানায় আটক রেখে তাদের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি মেজর এম এ জলিল, সাধারণ সম্পাদক জনাব আ স ম আবদুর রব ও দলীয় নেতৃবৃন্দ জনাব রুহুল আমিন ভূঁইয়া, জনাব এম এ আউয়াল, জনাব মেসবাহ উদ্দীন আহমদ ও মমতাজ বেগমসহ দলের অসংখ্য নেতা ও কর্মীরা আজ কারান্তরালে আটক।...বিদেশী স্বার্থ হাসিলের জন্য ক্ষমতাসীন চক্র বাংলাদেশের জাতীয় অস্তিত্বকে পর্যন্ত বিপদজনক পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ প্রশ্নে শেখ মুজিবচক্রের “মেনিমুখো” নীতি বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্নে এক মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। আগামী অক্টোবরে কিংবা নভেম্বরে ফারাক্কা বাঁধ চালু হলে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ক্রমেই মরুভূমিতে পরিণত হবে।’
বঙ্গবন্ধু হত্যা–পরবর্তী পরিস্থিতির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে চেয়েছে জাসদ। তার বহু দলিল রয়েছে। ১৫ নভেম্বর ১৯৭৫ জাসদ ‘দেশবাসীর প্রতি আহ্বান’-এ বলে: ‘১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধের পরপরই ভারতীয় সেনাবাহিনীর অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে যেয়ে এবং ১৯৭২ সালের মে মাসে শেখ মুজিবের ভারত-রাশিয়া ঘেঁষা আত্মঘাতী নীতি ও কুশাসনের বিরোধিতা করায় আমাদেরকে জেলজুলুমসহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।...সত্যিকারের “জনতার গণতন্ত্র” প্রতিষ্ঠাকল্পে ১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করি।...শেখ মুজিবের ফ্যাসিবাদী কার্যকলাপ প্রতিরোধের জন্য আমরা খুবই গোপনে অথচ তৎপরতার সাথে গড়ে তুলি সারা দেশব্যাপী মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, প্রাক্তন সৈনিকদের সমবায়ে “বিপ্লবী গণবাহিনী”।অতি গোপনে আমরা সংগঠিত করি বাংলাদেশের প্রতিটি সেনানিবাসের সৈনিক ভাইদেরকে “বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার” মাধ্যমে।এসবের খানিকটা আঁচ করতে পেরে শেখ মুজিব আমাদেরকেসহ জাসদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, জাতীয় কৃষক লীগের ১০ হাজারেরও বেশি কর্মীকে কারাগারে নিক্ষেপ করে।হত্যা করে এক হাজারেরও অধিক কর্মীকে।’
এই বক্তব্যের সঙ্গে জাসদ ‘দেশ ও জাতির সামনে তিনটি মারাত্মক প্রশ্ন’ উত্থাপন করে। তার প্রথমটির ভাষা: ‘ভারত-রাশিয়া-আমেরিকা বিশেষ করে ভারতের আগ্রাসননীতির বিরুদ্ধে আমরা গোটা দেশ ও জাতি রুখে দাঁড়াব কি না?’ তারপর আট দফা ‘কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জঙ্গি জাতীয় ঐক্য’ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তার প্রথমটি: ‘ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে “জনতার প্রতিরক্ষা কমিটি” গঠন করতে হবে। যেন কোনো ভারতীয় চর, চোরাচালানী ও পাচারকারী এ দেশের মাটিতে পা ফেলতে না পারে।’ এক হাজার সাত শ শব্দের ‘আহ্বান’ শেষ হয়েছিল ‘খোদা হাফেজ বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগানে।
এই জাতীয় বক্তব্য জিয়াউর রহমানের ক্ষমতাকে সুসংহত করতে সর্বোচ্চ শক্তি জোগায়। একাত্তরে যাদের বয়স ছিল ৪০-এর কাছাকাছি তাদের অনেকের মধ্যে ঐতিহাসিক কার্যকারণে ভারতবিরোধী ও হিন্দুবিরোধী একটি মনোভাব ছিল। কিন্তু ২৫ বছরের কম তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভারতবিরোধী চেতনাকে সুদৃঢ় করেন জাসদ নেতারা।তা থেকে জাতি এখনো মুক্ত হয়নি।
পরোক্ষে জিয়ার নীতি-আদর্শ সমর্থন পেলেও জাসদ নেতাদের তাঁর সরকার কঠোর চাপে রাখে। মেজর জলিল, রব, আখলাকুর রহমান, কর্নেল তাহের, ইনুসহ বহু নেতা-কর্মীকে বিনা বিচারে জেলে রাখে। তাহেরের ফাঁসির দুই মাস আগে ‘জাসদ ও বিপ্লবী গণবাহিনী’ থেকে দেশবাসীর প্রতি যে আহ্বান জানানো হয়, তার শিরোনাম: ‘ভারতীয় হামলা রুখে দাঁড়াও: গ্রামে-গঞ্জে শহরে-নগরে প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোল’/ ‘বিপ্লবী গণবাহিনী ও বিপ্লবী সিপাহীরা এক হও’। বলা বাহুল্য, তত দিনে সিপাহীরা কেউ আর জাসদের পক্ষে নেই, জিয়ার পক্ষে চলে গেছেন। ওই ইশতেহারে একটি ১২ দফা দাবি জানানো হয়েছিল। তার প্রথম দফা: ‘ভারতীয় আগ্রাসননীতির বিরুদ্ধে শহরে-নগরে, গ্রামে-গঞ্জে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’ দ্বিতীয় দফা: ‘বিপ্লবী গণবাহিনী বিপ্লবী-সিপাহী-শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ ১২ নম্বর দাবি: ‘ভারত-রাশিয়া-আমেরিকা বিশেষত ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সমস্ত গোপন ও অসমচুক্তি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।’ শেষ হয়েছিল ‘বিপ্লব অনিবার্য। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক’ কথা দিয়ে।
জাপার কাজী সাহেব গণবাহিনী নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছেন, তা সরকারের শরিক দলকে ‘আনন্দচিত্তে জবাই’ করার বিষয় নয়। জাসদ ও গণবাহিনীর ঠিকুজি ঘাঁটার বিষয়ও নয়। ইতিহাসের আলোচ্য বিষয়। ইতিহাস নিয়ে বেশি খোঁড়াখুঁড়ি করতে গেলে কেঁচো নয়, বেরিয়ে পড়ে সাপ।
[প্রথম পর্ব >> সংসদে সংগীত, কবিতা ও গণবাহিনী by সৈয়দ আবুল মকসুদ]
সৈয়দ আবুল মকসুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক৷
সৈয়দ আবুল মকসুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক৷
No comments