সমুদ্রসীমার রায় কেউ হারেনি কেউ জিতেনি!
বাংলাদেশ-ভারত
বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমার রায়ে দুই দেশেরই জয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তার ভাষায়- ‘এই রায় উভয় রাষ্ট্রের
জন্য বিজয় নিশ্চিত করেছে। এটি বন্ধুত্বের বিজয়। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের
জনগণেরও বিজয়।’ তবে দক্ষিণ তালপট্টি নামে যে দ্বীপের দখল নিয়ে
বাংলাদেশ-ভারতের তিন দশকের বিরোধ সে এলাকা ভারতের দখলে গেছে। দ্যা হেগ-এর
আন্তর্জাতিক স্থায়ী সালিশি আদালত সোমবার উভয় দেশের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে ওই
রায় হস্তান্তর করেন। আদালতের নির্দেশনা মতে ঢাকা ও দিল্লি একসঙ্গে গতকাল
এটি প্রকাশ করে। রায়ের বিস্তারিত জানাতে দুপুরে পররাষ্ট্র দপ্তরে আয়োজিত
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি
ইমাম, মামলার এজেন্ট সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্র
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ডেপুটি এজেন্ট পররাষ্ট্র দপ্তরের মেরিটাইম
ইউনিটের সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার এডমিরাল খুরশেদ আলমসহ মন্ত্রণালয়ের পদস্থ
কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের
মাধ্যমে রায়ের কারিগরি দিকগুলো তুলে ধরেন পররাষ্ট্র দপ্তরের মেরিটাইম
ইউনিটের সচিব। তিনি জানান, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধপূর্ণ এলাকা ছিল
প্রায় ২৫,৬০২ বর্গকিলোমিটার। আদালতের রায়ে এর মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭
বর্গকিলোমিটার পেয়েছে বাংলাদেশ, বাকিটা ভারতের। রায়ের ফলে এক লাখ ১৮ হাজার
৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত
অর্থনৈতিক অঞ্চল ও চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত
মহীসোপানের তলদেশে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট জানানো
হয়, এতদিন বাংলাদেশ ‘দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ’-এর মালিকানা দাবি করলেও এখন আর
সেটির অস্তিত্ব নেই। সমুদ্র হিসাবেই এটি ভাগ হয়েছে। যে অংশে তালপট্টি
অস্তিত্ব ছিল তা আইনগতভাবে ভারতে চলে গেছে বলেও জানানো হয়। প্রায় এক ঘণ্টার
জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্র জয়
ও ভারতের সঙ্গে জয়ের তুলনা, সদ্য ঘোষিত রায়ে বাংলাদেশে অর্জন এবং এক রায়ের
দুই পক্ষের জয় পাওয়া সংক্রান্ত মন্ত্রীর দাবির ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। যে রায়ে
কেউ হারেনি বা কেউ জিতেনি, সেখানে বাংলাদেশের ‘তালপট্টি’ কিভাবে হাওয়া হয়ে
গেল এবং তা আইনগতভাবে ভারতকে ছেড়ে দেয়া হলো-সেই ব্যাখ্যাও চান সাংবাদিকরা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ মামলার এজেন্ট ও ডেপুটি এজেন্ট সব জিজ্ঞাসার জবাব
দেয়ার চেষ্টা করেন। তবে তারা ঘুরে ফিরে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং সেই
বন্ধুত্বের জয়ের বিষয়টি তুলে ধরেন। দীপু মনি বলেন, তালপট্টির অস্তিত্বই
নেই। ভারত এ বিষয়টি আদালতের নজরে এনেছে। তাই সমুদ্র হিসেবে ওই অংশটুকু ভাগ
হয়েছে যা ভারতের দিকে চলে গেছে। তার বক্তব্য চলাকালেই এক সিনিয়র সাংবাদিক
বলে ওঠেন- দ্বীপ হলে কি তা বাংলাদেশের আর সমুদ্র হলে ভারতের? প্রশ্নটি শেষ
হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাস্যরসের সৃষ্টি হয় হলরুম জুড়ে। প্রশ্নোত্তরপর্বে
দু’বছর আগে মিয়ানমারের সঙ্গে পাওয়া রায় ও ভারতের সঙ্গে রায়ের কোন তুলনা
করতে রাজি হননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সংক্রান্ত একাধিক প্রশ্নের জবাবে আবুল
হাসান মাহমুদ আলী বলেন, প্রশ্ন অনেক বেশি হয়ে গেছে। রায়ের মৌলিক দিকগুলো
তুলে ধরা হয়েছে। এ সংক্রান্ত অনেক প্রশ্নের জবাব দেয়া হয়েছে। কোন তুলনায় না
গিয়ে রায় দু’টি বিচার-বিশ্লেষণের ভার তিনি সাংবাদিকদের ওপর ছেড়ে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিরোধের প্রধান বিষয়
ছিল দুই দেশের জলসীমা শুরুর স্থান নির্ধারণ। এছাড়া ভূমিরেখার মূলবিন্দু
থেকে সমুদ্রে রেখা টানার পদ্ধতি নিয়েও মতবিরোধ ছিল। ভারত সমদূরত্বের
ভিত্তিতে রেখা টানার পক্ষে মত দিলেও বাংলাদেশ ন্যায্যতার ভিত্তিতে রেখা
টানার দাবি জানায়। বাংলাদেশের দাবি ছিল, বঙ্গোপসাগর ও ভূমির মূলবিন্দু থেকে
সমুদ্রের দিকে ১৮০ ডিগ্রির সোজা রেখা যাবে। তবে ভারত বলে- সমুদ্রতট
বিবেচনায় এ রেখা হবে ১৬২ ডিগ্রি থেকে। বাংলাদেশের দাবি বেশির ভাগ
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেও দাবি করা হয়। সেখানে জানানো হয়, আদালতের পাঁচ
বিচারকের মধ্যে ভারতীয় বংশোদভূত বিচারক পেমারাজু শ্রীনিবাস রাও ঘোষিত রায়ের
কিছু অংশের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। বাকি চার বিচারক রুডিগার ভোলফ্রাম,
টমাস এ মেনশাহ এবং আইভান শিয়েরার জ্যঁ-পিয়ের কৎয়ের মতামত অনুসারে
সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায়টি হয়েছে। ওই রায় মেনে নেয়ার জন্য ভারত
সরকারকে সাধুবাদও জানানো হয়।
র্যাডক্লিফের
ম্যাপ মতেই রায়: সংবাদ সম্মেলনে মেরিটাইম ইউনিট সচিব বলেন, ভারতের সঙ্গে
সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তিতে ১৯৪৭ সালে প্রণীত র্যাডক্লিফের ম্যাপ বিবেচনায়
নিয়েছে আদালত। সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
সমুদ্রে বাংলাদেশের দাবি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন,
সীমান্ত নদী হাড়িয়াভাঙ্গা, যেটি সমুদ্রে পতিত হয়েছে- র্যাডক্লিফের ম্যাপ
অনুযায়ী সেখান থেকে সমুদ্রসীমা শুরু। ভারত উপস্থাপন করেছিল হাড়িয়াভাঙ্গা
নদীটি রায়মঙ্গলে আছে। সেখান থেকে সমুদ্রসীমা শুরুর দাবিও করেছিল। এ দু’টোই
ছিল মূল বক্তব্য। ১৯৪৭ সালে র্যাডক্লিফ যে ম্যাপ প্রণয়ন করেছিলেন বা
আমাদের ইন্ডিপেন্টেন্ডস অ্যাওয়ার্ডে যে কথাগুলো বলে গেছেন সেই অনুযায়ী এটি
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এবং সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হওয়ার কথা। রায়ে স্পষ্ট
বলা আছে বাংলাদেশ রায়মঙ্গল নদী দিয়ে বাংলাদেশ যেমন অবাধে সমুদ্রে চলাচল
করতে পারে ঠিক তেমনি পশ্চিমের হাড়িয়াভাঙ্গা নদীটি ভারতে প্রবেশের জন্য দিয়ে
দিয়েছে। এটি সত্য যে, হাড়িয়াভাঙ্গা নদীটা তাদের দিকে চলে গেছে। তবে আদালত
ভারত প্রস্তাবিত সম-দূরত্ব পদ্ধতি মানেনি বলে জানান সচিব। ১০টি ব্লক নিয়ে
ভারতের যে বিরোধ ছিল ওই রায়ের মধ্য দিয়ে ৪টি ব্লক সমন্বয় করতে হবে বলে
জানিয়েছেন তিনি।
৫ বছর ৯ মাসের আইনি লড়াই: তিন দশকের বেশি সময় ধরে আলোচনার পর মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০০৯ সালের ৮ই অক্টোবর সালিশি আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ জার্মানির হামবুর্গ ভিত্তিক সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে (ইটলস) মামলা করে। এর রায় আসে ২০১২ সালের ১৫ই মার্চ। ভারতের সঙ্গে চূড়ান্ত শুমারি হয় ২০১৩ সালের ৯ থেকে ১৮ই ডিসেম্বর। এ দিনে উভয় পক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। শুনানি শেষে আদালতের মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। কার্যবিধির ১৫ ধারা অনুযায়ী, ৬ মাস পর অর্থাৎ জুনে এটি হওয়ার কথা থাকলেও ৭ই জুলাই রায়টি হস্তান্তর হয়। একই সময়ে আদালতের সেক্রেটারি জেনারেল হুগো এইচ সিবলেজ দু’দেশের প্রতিনিধির কাছে রায়ের কপি হস্তান্তর করেন। নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মোহাম্মদ বেলাল ও ভারতের রাষ্ট্রদূত রাজেশ নন্দন প্রসাদ নিজ নিজ দেশের পক্ষে তা গ্রহণ করেন। ওই রায় প্রকাশের মধ্য দিয়ে ৫ বছর ৯ মাসের আইনি লড়াইয়ের সমাপ্তি ঘটলো।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আশাবাদ: রায় প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যা যা উভয় রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল তা আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে অবশেষে নিষ্পত্তি হলো। মন্ত্রী বলেন, ওই রায় উভয় রাষ্ট্রের নিজ নিজ সমুদ্র সীমানা চিহ্নিত করে দিয়েছে যার বিরুদ্ধে আপিল করার কোন সুযোগ নেই। এই রায়ের মাধ্যমে ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সম্পর্কিত বাংলাদেশের মামলার পরিসমাপ্তি ঘটলো। আন্তর্জাতিক আইনগত প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিনের বিরাজমান এই সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে ভারতের সদিচ্ছাকে সাধুবাদ জানান তিনি।
মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা: ২০১৩ সালের ৯ই ডিসেম্বর দ্য হেগের পিস প্যালেসে বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা নির্ধারণ মামলার চূড়ান্ত শুনানিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন এজেন্ট দীপু মনি, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলম। শুনানিতে বাংলাদেশের পক্ষে কৌঁসুলি হিসেবে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পল রাইখলার ও লরেন্স মার্টিন, যুক্তরাজ্যের অধ্যাপক জেমস ক্রাফোর্ড, ফিলিপ স্যান্ডস ও অ্যালান বয়েল এবং কানাডার অধ্যাপক পায়াম আখাভান। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করা হয়। মামলায় বাংলাদেশের এজেন্ট ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, আজ আমাদের আনন্দের দিন। ন্যায্যতার জয় হয়েছে। আর তাই বলে দু’পক্ষেরই জয় হয়েছে। এটা উইন-উইন সিচুয়েশন। আমাদের যা দরকার আমরা তা পেয়েছি। প্রতিবেশী দেশও তাদের যা পাওয়ার তা পেয়েছে।” দীপু মনি বলেন, আজকের দিনটি ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য গৌরবের। মামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। দীর্ঘ এ লড়াইয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থার সহায়তা পেয়েছি। বিশেষ করে কমনওয়েলথ-এর। আজকের এই দিনে আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
৫ বছর ৯ মাসের আইনি লড়াই: তিন দশকের বেশি সময় ধরে আলোচনার পর মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০০৯ সালের ৮ই অক্টোবর সালিশি আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ জার্মানির হামবুর্গ ভিত্তিক সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে (ইটলস) মামলা করে। এর রায় আসে ২০১২ সালের ১৫ই মার্চ। ভারতের সঙ্গে চূড়ান্ত শুমারি হয় ২০১৩ সালের ৯ থেকে ১৮ই ডিসেম্বর। এ দিনে উভয় পক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। শুনানি শেষে আদালতের মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। কার্যবিধির ১৫ ধারা অনুযায়ী, ৬ মাস পর অর্থাৎ জুনে এটি হওয়ার কথা থাকলেও ৭ই জুলাই রায়টি হস্তান্তর হয়। একই সময়ে আদালতের সেক্রেটারি জেনারেল হুগো এইচ সিবলেজ দু’দেশের প্রতিনিধির কাছে রায়ের কপি হস্তান্তর করেন। নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মোহাম্মদ বেলাল ও ভারতের রাষ্ট্রদূত রাজেশ নন্দন প্রসাদ নিজ নিজ দেশের পক্ষে তা গ্রহণ করেন। ওই রায় প্রকাশের মধ্য দিয়ে ৫ বছর ৯ মাসের আইনি লড়াইয়ের সমাপ্তি ঘটলো।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আশাবাদ: রায় প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যা যা উভয় রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল তা আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে অবশেষে নিষ্পত্তি হলো। মন্ত্রী বলেন, ওই রায় উভয় রাষ্ট্রের নিজ নিজ সমুদ্র সীমানা চিহ্নিত করে দিয়েছে যার বিরুদ্ধে আপিল করার কোন সুযোগ নেই। এই রায়ের মাধ্যমে ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সম্পর্কিত বাংলাদেশের মামলার পরিসমাপ্তি ঘটলো। আন্তর্জাতিক আইনগত প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিনের বিরাজমান এই সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে ভারতের সদিচ্ছাকে সাধুবাদ জানান তিনি।
মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা: ২০১৩ সালের ৯ই ডিসেম্বর দ্য হেগের পিস প্যালেসে বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা নির্ধারণ মামলার চূড়ান্ত শুনানিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন এজেন্ট দীপু মনি, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলম। শুনানিতে বাংলাদেশের পক্ষে কৌঁসুলি হিসেবে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পল রাইখলার ও লরেন্স মার্টিন, যুক্তরাজ্যের অধ্যাপক জেমস ক্রাফোর্ড, ফিলিপ স্যান্ডস ও অ্যালান বয়েল এবং কানাডার অধ্যাপক পায়াম আখাভান। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করা হয়। মামলায় বাংলাদেশের এজেন্ট ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, আজ আমাদের আনন্দের দিন। ন্যায্যতার জয় হয়েছে। আর তাই বলে দু’পক্ষেরই জয় হয়েছে। এটা উইন-উইন সিচুয়েশন। আমাদের যা দরকার আমরা তা পেয়েছি। প্রতিবেশী দেশও তাদের যা পাওয়ার তা পেয়েছে।” দীপু মনি বলেন, আজকের দিনটি ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য গৌরবের। মামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। দীর্ঘ এ লড়াইয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থার সহায়তা পেয়েছি। বিশেষ করে কমনওয়েলথ-এর। আজকের এই দিনে আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
No comments