ট্যানারি ব্যবসায়ীদের আশা পশু কোরবানি রেকর্ড ছাড়াবে by এম এম মাসুদ
আগামী ১৬ই অক্টোবর পবিত্র ঈদুল আজহা। অন্য
দিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগের বছরগুলোর তুলনায় এবারের
কোরবানির ঈদে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি পশু জবাই হবে বলে ধারণা করছেন
ট্যানারি মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
তাদের মতে, গত সাড়ে ৪ বছরে
কোরবানির ঈদে দেশে পশু জবাই এর পরিমাণ কিছুটা সমান্তরাল থাকলেও এবার
দৃশ্যপট হবে পুরো ভিন্ন। কারণ নির্বাচনী বছর হওয়ায় গত বছরগুলোর চেয়ে পশু
কোরবানির রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।
মালিক-ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার নির্বাচনী বছর হওয়ায় সার্বিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই চামড়ার দর নির্ধারণ করা হয়েছে। শনিবার দর নির্ধারণের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন ব্যবসায়ীরা। ঢাকার গরুর চামড়া দর নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। সে হিসেবে ২০ বর্গফুট গরুর একটি চামড়ার ক্রয়মূল্য ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা দাঁড়ায়। চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে প্রায় ৪৮ শতাংশ মূল্য সংযোজন হয়। ফলে মূল্য সংযোজনের পর চামড়ার মূল্য দাঁড়ায় ২,৫৫০ টাকা থেকে ২,৭০০ টাকায়। তবে ঢাকার বাইরে দর ধরা হয়েছে বর্গফুট প্রতি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। তাছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার দর ধরা হয়েছে বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।
আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পদপ্রার্থীরা জানান, প্রতিবার ঈদে কোরবানির পশু জবাই করা হয়। তবে নির্বাচনী বছর হওয়ায় এবারের ঈদে একটু বেশি কোরবানির পশু জবাই হওয়ার আশা করছি। কারণ, এই কোরবানির মধ্য দিয়ে এক সঙ্গে দু’টোই হবে। ঈদও হবে নির্বাচনী কাজও হবে।
ট্যানারি সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছর সারা দেশ থেকে ৯০ লাখ পিস গরু, ৪ লাখ পিস ছাগল ও ভেড়া এবং দেড় লাখ পিস মহিষের চামড়া সংরক্ষণ করেছেন তারা। তবে এবার এর পরিমাণ আরও বাড়বে। এ ব্যাপারে লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান হাজী বেলাল হোসেইন বলেন, আমরা ধারণা করছি গত সাড়ে ৪ বছরে কোরবানি ঈদগুলোতে যে পরিমাণ পশু কোরবানি হয়েছে এবার তার থেকে অনেক বেশি কোরবানি হবে। তবে এটি কোন খুশির খবর নয়। পশু কোরবানি বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়বে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের সংখ্যাও। তিনি বলেন, প্রতি বছরই মৌসুমী ব্যবসায়ীদের নিয়ে বড় ধরনের সঙ্কটের মুখোমুখি হয় পুরো চামড়া সেক্টর।
বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, গত বছরগুলোর তুলনায় এবার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পশু বেশি কোরবানি হবে। ফলে চামড়াও সংগ্রহ হবে বেশি। তিনি বলেন, আমাদের মোট চাহিদার ৫০ ভাগেরও বেশি চামড়া এই সময়টাতেই সংগ্রহ হয়। ফলে সব দিক থেকেই সচেতন থাকতে হয়। কিন্তু অন্যবারের তুলনায় এবারের পরিস্থিতিটা একেবারে ভিন্ন। কারণ মূলত মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই এই ৫ মাস চামড়ার মৌসুম। এ সময় বিদেশী বায়ারদের অর্ডারও বেশি থাকে। আর শীতের কারণে চামড়া মজুদও হয় বেশি। কিন্তু এখন মওসুম নেই। ফলে বিদেশী অর্ডার এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদাও অনেক কম। আর এসব কিছু বিবেচনা করেই সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। তবে বরাবরের মতো এবারও চামড়া কেনার অর্থ সঙ্কটের কথা বললেন ট্যানারির মালিকেরা। তারা বলেন, শুধুমাত্র ঈদের এই মওসুমে আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকার চামড়া কিনতে হয়। এর বিপরীতে ঋণ দেয়া হয় আড়াইশ’ থেকে ৩০০ কোটি টাকা। তাও আবার দু’টি কিস্তিতে। ফলে অর্থের সংস্থান করতে অনেক বিপাকে পড়তে হয়। এ ব্যাপারে সভাপতি শাহীন আহমেদ আরও বলেন, এ বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মতো ব্যাংক লোনের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো কত টাকা দেবে তা এখনো জানা যায়নি। তিনি বলেন, গত বছর চামড়া কিনতে ৩৫৫ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছিল ট্যানারি মালিকেরা।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এ গ্রেড টু এইচ গ্রেডের চামড়া প্রতি স্কয়ার ফিট বিক্রি হচ্ছে ১ ডলার ৪০ সেন্টে অর্থাৎ ১০৮ টাকা ৫০ পয়সার কম। গত দু’মাস আগে এর দাম ছিল প্রতি স্কয়ার ফিট ১ ডলার ৫০ সেন্টেরও উপরে অর্থাৎ ১১৬ টাকা ২৫ পয়সারও বেশি। সে হিসাবে দেখা গেছে, এখন চামড়ার আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল হয়নি। এ ব্যাপারে লেদার গুডস এন্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান হাজী বেলাল হোসেইন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দরের নিম্নমুখী প্রবণতা এখনও কাটেনি।
No comments