মৃত্যুকূপ চৌগাছা by নূর ইসলাম
যশোরের চৌগাছায় আততায়ীদের হাতে একের পর
চেয়ারম্যান খুন হওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এখানকার নির্বাচিত
জনপ্রতিনিধিরা। জীবনের ভয়ে ইতিমধ্যে অনেকে এলাকা ছাড়তে শুরু করেছেন।
পরিবার-পরিজনের
নিরাপত্তার কথা ভেবে নিশ্চুপ মামলার বাদী নিহত চেয়ারম্যানদের স্ত্রীরাও।
অন্যদিকে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে খুনিরা। মামলা
তুলে নেয়ার জন্য তারা বাদীদের চাপ দিচ্ছে। একই সঙ্গে তারা বিভিন্ন অপরাধে
মেতে উঠছে। রাজনৈতিক প্রভাব আর অর্থের জোরে ম্যানেজ হয় স্থানীয় পুলিশ
প্রশাসন। সব মিলে যশোরের চৌগাছা জনপ্রতিনিধিদের মৃত্যুকূপে পরিণত হচ্ছে।
স্থানীয় এক পরিসংখ্যানে গত একযুগে এ উপজেলার ৩ জন চেয়ারম্যান ও ৮ জন ইউপি
মেম্বারসহ ৩০ জন খুন হয়েছে। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন আরও কয়েক জন।
জমাজমি সংক্রান্ত বিরোধ, মাদক চোরাচালান, সীমান্ত ঘাট দখল, বিল-বাঁওড় ও সরকারি জলমহল দখল, স্থানীয় ভাবে প্রভাব বিস্তার, অস্ত্র ব্যবসাসহ নানা কারণে দেশের সীমান্তবর্তী এ উপজেলায় খুন-খারাবি নতুন কোন ঘটনা নয়। কারণে অকারণে এখানে ঘটে খুনোখুনির মতো ঘটনা। তুচ্ছ কারণে প্রাণ দিতে হয় অনেক নিরীহ মানুষকে। ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ার কারণে এখানে অস্ত্র পাওয়া যায় অনেক সহজ। ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় এখানে অস্ত্র পাওয়া যায়। ৫৫ কিলোমিটারের সীমান্ত পথে রয়েছে একাধিক চোরাচালান ঘাট। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা এসব ঘাটের নিয়ন্ত্রক। ভারতীয় পণ্যের পাশাপাশি এসব ঘাট দিয়ে হরহামেশায় দেশে ঢোকে অস্ত্র আর মাদকদ্রব্য। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের পাশাপাশি পুলিশের গ্রীন সিগন্যালে চলে এ অবৈধ ব্যবসা। এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, পুলিশের খাতার দাগি আসামি, রাজনৈতিক দলের অস্ত্রবাজ ক্যাডার ও মাস্তানরা এসব ঘাটের মালিক। মাসিক চুক্তিতে তারা এসব ঘাট নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘাট দখলকে কেন্দ্র করে গত দুই যুগে চৌগাছার সীমান্তবর্তী মাসিলা, আন্দুলিয়া, মাকাপুর, শাহাজাদপুর, নাইড়া, গইড়া, কাবিলপুর, বেড়গোবিন্দপুর, চানপাড়া, চৌগাছা, সিংহঝুলি, গরীবপুর, জাহাঙ্গীরপুর, জগন্নাথপুর, কয়ারপাড়া, জামিরা, জামলতা, মাড়ুয়া, মির্জাপুর, হাকিমপুর, পাতিবিলা, নারায়ণপুর, চাঁদপুর, কুলেমশ্মিমপুর, ভাদ্রা, ফতেপুর, আংশিংরিপুকুরসহ বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে ৫০ জন মার্ডার হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত একযুগে চৌগাছা উপজেলার পাশাপোল ও সিংহঝুলি ইউনিয়ন পরিষদের ৩ জন চেয়ারম্যান খুন হয়েছেন। এছাড়া চৌগাছার হাকিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান, জগদীশপুর ইউপি চেয়ারম্যান, পাতিবিলা ইউপি চেয়ারম্যান, সুখপুকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও নারায়ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান বেশ কয়েক দফা সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে এসব হামলা ও হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে রাজনীতি। স্থানীয় একটি রাজনৈতিক পরাশক্তি নিজেদের নিরাপদ রাখতে সবসময় প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দিতে চায়। নিজেদের রাস্তা পরিষ্কার রাখতে যখনই প্রয়োজন তারা জঞ্জাল পরিষ্কার করে। আর এজন্য ব্যবহার করা হয় অস্ত্রবাজ ক্যাডারদের। এসব অস্ত্রবাজ ক্যাডারের হাতেই ২০০২ সালের ২৪শে জুলাই সিংহঝুলি ঝাউতলা বাজারে প্রকাশ্যে খুন হন ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আশরাফ হোসেন আশা। এরপর নিহত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পার্শ্ববর্তী পাশাপোল ইউপি চেয়ারম্যান ইমাম হাসান টুটুল। ২০০৯ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর রাতে তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে গুলি করে ও বোমা মেরে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। সর্বশেষ গত ২রা সেপ্টেম্বর দুপুর আড়াইটার সময় নিজ ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে খুন হন সিংহঝুলি ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিল্রুর রহমান মিন্টু। সূত্র বলছে, এ তিন নেতাই ছিলেন বেশ জনপ্রিয় এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। তাদের অবস্থান ছিল মাদক ও চোরাচালান এবং অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীদের বিপক্ষে। তারা জনগণের মঙ্গল কামনা করতেন। জনস্বার্থের কাছে তারা ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়াকে তুচ্ছ ভাবতেন। তাদের হৃদয় সবসময় জনকল্যাণে ব্যাকুল থাকতো। এ কারণে দ্রুত তাদের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। রাজনৈতিক সহকর্মীরা বলছেন, এই জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে স্থানীয় এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা কালো টাকা ও অস্ত্রের জোরে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দিতেই হত্যার মতো জঘন্য কাজ করছেন। তার ইঙ্গিতেই সন্ত্রাসীরা এসব জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতাকে হত্যা করতে সাহস পাচ্ছে। একই সঙ্গে এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে যারা প্রতিবাদমুখর হচ্ছেন তাদের সন্ত্রাসীরা গডফাদারের নির্দেশে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। চরমপন্থি কানেকশন থাকায় এসব সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। ফলে তারা একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন বলেও মনে করছেন অনেকে। এদিকে দলীয় এসব নেতা হত্যার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতকর্মীরা দলের সেক্রেটারি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম হাবিবকে দায়ী করলেও অতীতের মতো হাবিব সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, তার জনপ্রিয়তায় ক্ষুব্ধ হয়ে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এমন কথা বলছেন। তিনি দাবি করেন তিনি কখনও কোন হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারণ হয়ে দাঁড়াতে হবে এমন কোন কাজ করেন না। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তার নিজের জীবনও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একর পর এক দলের স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা খুন হওয়ায় তিনি নিজেও আতঙ্কে আছেন। সন্ত্রাসীরা যে কোন সময় তার উপরও হামলা করতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এদিকে নিজের জীবন রক্ষার্থে এস এম হাবিব সর্বদা গ্যানম্যান ও পুলিশ প্রটেকশন নিয়ে চলাফেরা করেন। তার চানপাড়ায় গ্রামের বাড়ির প্রবেশ দ্বারে বসানো হয়েছে পুলিশি প্রহরা। তিনি জানান, তার মতো উপজেলার আরও অনেক জনপ্রতিনিধি বিশেষ করে ইউপি চেয়ারম্যানরা রয়েছেন আতঙ্কে। মিন্টুর মতো এতো বড় একজন সাহসী চেয়ারম্যানকে সন্ত্রাসীরা যেভাবে প্রকাশ্যে হত্যা করেছে তাতে করে অন্যদের মনে আতঙ্ক ও ভয় বিরাজ করছে। এদিকে নিরাপত্তার কারণে বর্তমানে এ উপজেলার অনেক ইউপি চেয়ারম্যান এলাকা ছেলে উপজেলা সদরে বা জেলা সদরে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে এসব হত্যাকাণ্ডের কোন বিচার না হওয়ায় খুনিরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশ রাজনীতি করেছে এমন অভিযোগ করে নিহত মিন্টুর ভাই জিয়াউর রহমান রিন্টু বলেন, রাজনৈতিক শক্তি আর পুলিশ প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে চৌগাছার সন্ত্রাসীরা চরমভাবে বেপরোয়া। তারা প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর মামলার বাদীকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। না হলে তারা পাল্টা মামলা মোকদ্দমা করে বাদী ও নিহতের স্বজনদের হয়রানি করে। ফলে শেষ পর্যন্ত খুনিদের বিজয় ঘটে। খুনিদের কাছে হেরে গিয়ে নিহতদের স্বজনরা থেমে যায়। ঘটে আবারও নতুন কোন ঘটনা। শিমু সৌরভ হত্যাকাণ্ড নিয়েও হয়েছে রাজনীতির নোংরা খেলা। যার শিকার চেয়ারম্যান মিন্টু। রিন্টু দাবি করেন, তার ভাই হত্যার সঙ্গে এস এম হাবিব গং জড়িত। এ ব্যাপারে তাদের কাছে তথ্য প্রমান আছে অথচ পুলিশ প্রশাসন এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে নির্জলা মিথ্যাচার করে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। এদিকে নিহত মিন্টুর মা মাজেদা বেগমতার ছেলে হত্যার বিচার দাবি করে বলেন, খুনি যতই শক্তিশালী আর ক্ষমতাধর হোক না কেন তাকে আটক করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এদিকে, মিন্টু খুন হওয়ার ২ দিন পর ৯ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন নিহত মিন্টুর স্ত্রী। পুলিশ ইতিমধ্যে এ মামলার এজাহারভুক্ত তিন আসামি তুহিন, টিপু ও আমিরুলকে আটক করেছে। এর মধ্যে টিপু ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে।
জমাজমি সংক্রান্ত বিরোধ, মাদক চোরাচালান, সীমান্ত ঘাট দখল, বিল-বাঁওড় ও সরকারি জলমহল দখল, স্থানীয় ভাবে প্রভাব বিস্তার, অস্ত্র ব্যবসাসহ নানা কারণে দেশের সীমান্তবর্তী এ উপজেলায় খুন-খারাবি নতুন কোন ঘটনা নয়। কারণে অকারণে এখানে ঘটে খুনোখুনির মতো ঘটনা। তুচ্ছ কারণে প্রাণ দিতে হয় অনেক নিরীহ মানুষকে। ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ার কারণে এখানে অস্ত্র পাওয়া যায় অনেক সহজ। ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় এখানে অস্ত্র পাওয়া যায়। ৫৫ কিলোমিটারের সীমান্ত পথে রয়েছে একাধিক চোরাচালান ঘাট। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা এসব ঘাটের নিয়ন্ত্রক। ভারতীয় পণ্যের পাশাপাশি এসব ঘাট দিয়ে হরহামেশায় দেশে ঢোকে অস্ত্র আর মাদকদ্রব্য। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের পাশাপাশি পুলিশের গ্রীন সিগন্যালে চলে এ অবৈধ ব্যবসা। এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, পুলিশের খাতার দাগি আসামি, রাজনৈতিক দলের অস্ত্রবাজ ক্যাডার ও মাস্তানরা এসব ঘাটের মালিক। মাসিক চুক্তিতে তারা এসব ঘাট নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘাট দখলকে কেন্দ্র করে গত দুই যুগে চৌগাছার সীমান্তবর্তী মাসিলা, আন্দুলিয়া, মাকাপুর, শাহাজাদপুর, নাইড়া, গইড়া, কাবিলপুর, বেড়গোবিন্দপুর, চানপাড়া, চৌগাছা, সিংহঝুলি, গরীবপুর, জাহাঙ্গীরপুর, জগন্নাথপুর, কয়ারপাড়া, জামিরা, জামলতা, মাড়ুয়া, মির্জাপুর, হাকিমপুর, পাতিবিলা, নারায়ণপুর, চাঁদপুর, কুলেমশ্মিমপুর, ভাদ্রা, ফতেপুর, আংশিংরিপুকুরসহ বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে ৫০ জন মার্ডার হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত একযুগে চৌগাছা উপজেলার পাশাপোল ও সিংহঝুলি ইউনিয়ন পরিষদের ৩ জন চেয়ারম্যান খুন হয়েছেন। এছাড়া চৌগাছার হাকিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান, জগদীশপুর ইউপি চেয়ারম্যান, পাতিবিলা ইউপি চেয়ারম্যান, সুখপুকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও নারায়ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান বেশ কয়েক দফা সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে এসব হামলা ও হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে রাজনীতি। স্থানীয় একটি রাজনৈতিক পরাশক্তি নিজেদের নিরাপদ রাখতে সবসময় প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দিতে চায়। নিজেদের রাস্তা পরিষ্কার রাখতে যখনই প্রয়োজন তারা জঞ্জাল পরিষ্কার করে। আর এজন্য ব্যবহার করা হয় অস্ত্রবাজ ক্যাডারদের। এসব অস্ত্রবাজ ক্যাডারের হাতেই ২০০২ সালের ২৪শে জুলাই সিংহঝুলি ঝাউতলা বাজারে প্রকাশ্যে খুন হন ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আশরাফ হোসেন আশা। এরপর নিহত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পার্শ্ববর্তী পাশাপোল ইউপি চেয়ারম্যান ইমাম হাসান টুটুল। ২০০৯ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর রাতে তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে গুলি করে ও বোমা মেরে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। সর্বশেষ গত ২রা সেপ্টেম্বর দুপুর আড়াইটার সময় নিজ ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে খুন হন সিংহঝুলি ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিল্রুর রহমান মিন্টু। সূত্র বলছে, এ তিন নেতাই ছিলেন বেশ জনপ্রিয় এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। তাদের অবস্থান ছিল মাদক ও চোরাচালান এবং অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীদের বিপক্ষে। তারা জনগণের মঙ্গল কামনা করতেন। জনস্বার্থের কাছে তারা ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়াকে তুচ্ছ ভাবতেন। তাদের হৃদয় সবসময় জনকল্যাণে ব্যাকুল থাকতো। এ কারণে দ্রুত তাদের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। রাজনৈতিক সহকর্মীরা বলছেন, এই জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে স্থানীয় এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা কালো টাকা ও অস্ত্রের জোরে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দিতেই হত্যার মতো জঘন্য কাজ করছেন। তার ইঙ্গিতেই সন্ত্রাসীরা এসব জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতাকে হত্যা করতে সাহস পাচ্ছে। একই সঙ্গে এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে যারা প্রতিবাদমুখর হচ্ছেন তাদের সন্ত্রাসীরা গডফাদারের নির্দেশে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। চরমপন্থি কানেকশন থাকায় এসব সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। ফলে তারা একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন বলেও মনে করছেন অনেকে। এদিকে দলীয় এসব নেতা হত্যার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতকর্মীরা দলের সেক্রেটারি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম হাবিবকে দায়ী করলেও অতীতের মতো হাবিব সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, তার জনপ্রিয়তায় ক্ষুব্ধ হয়ে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এমন কথা বলছেন। তিনি দাবি করেন তিনি কখনও কোন হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারণ হয়ে দাঁড়াতে হবে এমন কোন কাজ করেন না। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তার নিজের জীবনও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একর পর এক দলের স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা খুন হওয়ায় তিনি নিজেও আতঙ্কে আছেন। সন্ত্রাসীরা যে কোন সময় তার উপরও হামলা করতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এদিকে নিজের জীবন রক্ষার্থে এস এম হাবিব সর্বদা গ্যানম্যান ও পুলিশ প্রটেকশন নিয়ে চলাফেরা করেন। তার চানপাড়ায় গ্রামের বাড়ির প্রবেশ দ্বারে বসানো হয়েছে পুলিশি প্রহরা। তিনি জানান, তার মতো উপজেলার আরও অনেক জনপ্রতিনিধি বিশেষ করে ইউপি চেয়ারম্যানরা রয়েছেন আতঙ্কে। মিন্টুর মতো এতো বড় একজন সাহসী চেয়ারম্যানকে সন্ত্রাসীরা যেভাবে প্রকাশ্যে হত্যা করেছে তাতে করে অন্যদের মনে আতঙ্ক ও ভয় বিরাজ করছে। এদিকে নিরাপত্তার কারণে বর্তমানে এ উপজেলার অনেক ইউপি চেয়ারম্যান এলাকা ছেলে উপজেলা সদরে বা জেলা সদরে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে এসব হত্যাকাণ্ডের কোন বিচার না হওয়ায় খুনিরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশ রাজনীতি করেছে এমন অভিযোগ করে নিহত মিন্টুর ভাই জিয়াউর রহমান রিন্টু বলেন, রাজনৈতিক শক্তি আর পুলিশ প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে চৌগাছার সন্ত্রাসীরা চরমভাবে বেপরোয়া। তারা প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর মামলার বাদীকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। না হলে তারা পাল্টা মামলা মোকদ্দমা করে বাদী ও নিহতের স্বজনদের হয়রানি করে। ফলে শেষ পর্যন্ত খুনিদের বিজয় ঘটে। খুনিদের কাছে হেরে গিয়ে নিহতদের স্বজনরা থেমে যায়। ঘটে আবারও নতুন কোন ঘটনা। শিমু সৌরভ হত্যাকাণ্ড নিয়েও হয়েছে রাজনীতির নোংরা খেলা। যার শিকার চেয়ারম্যান মিন্টু। রিন্টু দাবি করেন, তার ভাই হত্যার সঙ্গে এস এম হাবিব গং জড়িত। এ ব্যাপারে তাদের কাছে তথ্য প্রমান আছে অথচ পুলিশ প্রশাসন এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে নির্জলা মিথ্যাচার করে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। এদিকে নিহত মিন্টুর মা মাজেদা বেগমতার ছেলে হত্যার বিচার দাবি করে বলেন, খুনি যতই শক্তিশালী আর ক্ষমতাধর হোক না কেন তাকে আটক করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এদিকে, মিন্টু খুন হওয়ার ২ দিন পর ৯ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন নিহত মিন্টুর স্ত্রী। পুলিশ ইতিমধ্যে এ মামলার এজাহারভুক্ত তিন আসামি তুহিন, টিপু ও আমিরুলকে আটক করেছে। এর মধ্যে টিপু ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে।
No comments