জোর করে ক্ষমতায় থাকার ফল ভালো হয় না by মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন
জোর
করে ক্ষমতায় থাকার ফল কারও জন্যই ভালো হয়নি। জনগণের ইচ্ছার বাইরে যারাই
ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে, তারাই ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে; সম্মান
নিয়ে তারা ঘরে ফিরতে পারেননি। ক্ষমতাসীনরা যেনতেনভাবে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা
করছে, এজন্য নিজেদের স্বার্থে সংবিধান সংশোধন করেছে; নির্বাচনে কেউ আসুক
বা না আসুক সংবিধানের দোহাই দিয়ে তারা নির্বাচন করতে চায়। সরকার বিভিন্ন
ক্ষেত্রে তাদের শোচনীয় ব্যর্থতার সমাধান খোঁজার পরিবর্তে নিত্যনতুন
সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। তারা জেনেশুনে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে
একটা চরম নৈরাজ্য ও অচলাবস্থা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। সব দলের অংশগ্রহণে
সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা সরকারের কর্তব্য। কিন্তু মনে
হয় সরকার ইচ্ছা করেই তা করছে না। তারা বিরোধী দলকে নির্বাচন থেকে দূরে
রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু সরকারের এ পরিকল্পনা কোনোদিনই বাস্তবায়ন হবে না।
রাজনীতিকদের অবশ্যই একটি দল থাকে, থাকে দলের আদর্শ, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি; তথাপি একজন রাজনীতিকের চিন্তা থাকতে হয় সর্বজনীন, সবার চিন্তাই তাকে করতে হয়। এ বাস্তবতা যদি রাজনীতিকরা উপলব্ধি না করেন, তাহলে জাতি বিভক্ত হয়, চূড়ান্তভাবে তা রাষ্ট্র ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ ঠিক এমন একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। অপরিণামদর্শী রাজনীতির কারণে এখানে ধর্মে-ধর্মে বিরোধ তৈরি হয়েছে, ভাইয়ে-ভাইয়ে বিরোধ তৈরি হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে, ধর্মের প্রবর্তকদের অশালীন ভাষায় গালমন্দ করা হয়েছে, ধর্মীয় উপাসনালয় জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে; সর্বোপরি রাষ্ট্রের পরতে পরতে বিরোধ ও হিংসা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। একই ধর্ম ও ভাষার মানুষের মধ্যে এমন বিভক্তি তৈরি করা নিশ্চয় একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। এ বিভক্তির ফলে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ছে রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে। দেশের শিল্পোৎপাদন, কর্মসংস্থান ও অর্থনীতি আজ বিপর্যয়ের পথে। সম্ভাবনাময় তৈরি পোশাক শিল্প চোখের সামনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে দেখা দিয়েছে মারাÍক স্থবিরতা। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, জিডিপি নিচের দিকে নামছে।
যুদ্ধাপরাধের বিচার ও নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে আছে। ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে আছেন দেশের রাজনীতিকরাও। অনিবার্য সংঘাত ও রক্তপাতের আশংকা করছে দেশবাসী, যা ধ্বংস করে দেবে তাদের সব স্বপ্ন ও সম্ভাবনা। ধ্বংস করবে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ধারা, মানুষ হারাবে তাদের ভোটের অধিকার। ধ্বংস করা রাজনীতিকদের কাজ নয়, রাজনীতিকদের কাজ গড়া। যেটুকু উন্নতি বাংলাদেশের হয়েছে, তা জাতি হিসেবে আমরা এক থাকার কারণেই হয়েছে আর এটি করেছেন রাজনীতিকরাই। এখনও যে বিপদ বাংলাদেশের সামনে কড়া নাড়ছে, রাজনীতিকদের ঐক্যই এ বিপদ থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনতে পারে।
সংবিধান, আইন সবকিছুই পরিবর্তন সম্ভব হয়- যখন সবাই এক হয়। কাজেই এখন রাজনীতিকদের এক হওয়ার সময়, সময় দেশপ্রেম জাগ্রত করার; সময় বিশ্বকে দেখিয়ে দেয়ার, কারণ বিশ্বের নজর কাড়ছে এখন বাংলাদেশ। এ দেশের জন্য জাতিসংঘ এগিয়ে এসেছে, আমেরিকা এগিয়ে এসেছে; এগিয়ে এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আরব বিশ্ব, চীন, ভারত, কানাডা ও অন্যসব রাষ্ট্র। এসব দেশ বাংলাদেশের ভালো চায়; বাংলাদেশের শান্তি ও স্থিতি অব্যাহত রাখার স্বার্থেই রাজনৈতিক সংকট সমাধানে তারা এগিয়ে এসেছে। তাদের উপলব্ধিতে হয়তো বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই তারা একটি পক্ষপাতহীন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এ দেশের রাজনীতিকদের পরামর্শ দিয়েছে। সুতরাং রাজনীতিকদের উচিত এসব দেশের আবেগের মূল্য দেয়া।
একটা মোটামুটি মানের নির্বাচন হলেই বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। সেই অর্থে বিএনপির লক্ষ্য হওয়া উচিত কোনোভাবেই নির্বাচন ভণ্ডুল হতে না দেয়া। নির্বাচন ভণ্ডুল হলে বেনিফিশিয়ারি হবে বর্তমান শাসক দল- এতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশে একটা বিশৃংখল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে যাওয়ার সমূহ আশংকা রয়েছে। কাজেই বিচক্ষণতার সঙ্গে আর কিছুদিন পার করাই হবে যুক্তিযুক্ত। তাতে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকবে। ঠিক এ জায়গাটিতে বিএনপিকে পা ফেলতে হবে কঠিন হিসাব কষে, অত্যন্ত সাবধানে। গভীর পর্যবেক্ষণ করতে হবে ক্ষমতাসীনদের কার্যক্রম। ক্ষমতাসীনরা এখন কিছুটা গোঁয়ার্তুমিভাব দেখালেও শেষ পর্যন্ত তাদের কৌশল কী হয় সেটিই দেখার বিষয়। পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়ার পর কর্মীদের মনোবল অটুট রাখতেই ক্ষমতাসীন দল হার্ডলাইনের কৌশল নিয়েছে। কিন্তু এই হার্ডলাইন শেষ পর্যন্ত তারা ধরে রাখতে পারবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন না। এমন একটা সন্ধিক্ষণ আসবে, যখন তারা ফুটো বেলুনের মতো চুপসে যাবে। ওই সময়টার জন্য বিএনপিকে অপেক্ষা করতে হবে।
যে কোনো ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলার সক্ষমতা বিরোধী জোটের অবশ্যই আছে। কিন্তু সেই আন্দোলনের সুফল বিএনপির ঘরে আসতে হবে, বিএনপিকে বেনিফিশিয়ারি হতে হবে। বিএনপিকে মনে রাখতে হবে, নির্বাচন যদি অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে যায়; তাহলে মানুষ বর্তমান সরকারের দুর্নীতি-দুঃশাসন ভুলে যাবে। তখন হয়তো দেখা যাবে পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে গেছে, ক্ষমতাসীন দল জনগণের কাছে আবার গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। বিএনপির রাজনীতির অসাবধানতা ও স্পর্শকাতরতার সুযোগটিই নিতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল। তাই তারা কোনো সংলাপ বা সমঝোতায় আসতে চাচ্ছে না। তারা মনে করছে, সংলাপে বসলেই রাজনৈতিকভাবে বেনিফিশিয়ারি হবে বিএনপি। তাই তারা গোঁয়ার্তুমি করছে; আন্দোলনের মুরোদ নেই, সরকার হটানোর শক্তি নেই বলে বিএনপিকে উসকে দিচ্ছে। ইতিহাসের নজিরবিহীন কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ ও খালেদা জিয়ার বারবার আহ্বানের পরও সংলাপ-সমঝোতায় সরকার কোনো সাড়া দেয়নি। ফলে সংকটের কোনো সমাধানও হয়নি। তাতে জাতীয় জীবনে কেউ স্বস্তিতে নেই- না সরকারি দল, না বিরোধী দল। সবার মধ্যেই একটা অজানা শংকা কাজ করছে। মানুষকে শংকায় রাখা রাজনীতিকদের কাজ নয়। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, এ অবস্থা হল কেন আজ? কেন জাতিকে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে? এ জাতি আর কত রক্ত দেবে? কত মূল্য পরিশোধ করবে? যারা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন, এর জবাব তাদেরই দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে গিয়ে বলেছেন, দেশের জন্য যে কোনো ত্যাগ তিনি স্বীকার করবেন। সে ত্যাগ স্বীকারটা কী সেটি তিনি পরিষ্কার করেননি। তার এই ত্যাগ স্বীকারটা হতে পারে মেয়াদ শেষে আর একদিনও ক্ষমতায় না থাকা এবং একটি পক্ষপাতহীন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম করা। বর্তমান সময়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের জন্য এটুকু ত্যাগ যদি স্বীকার করেন, তাহলে রাজনীতির উচ্চ আসনে তিনি অধিষ্ঠিত হবেন। দেশের ক্রান্তিকালে মানুষ প্রধানমন্ত্রীর ত্যাগ মনে রাখবে। একটা অনিবার্য ধ্বংস থেকে দেশ ও জাতি রক্ষা পাবে।
মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
রাজনীতিকদের অবশ্যই একটি দল থাকে, থাকে দলের আদর্শ, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি; তথাপি একজন রাজনীতিকের চিন্তা থাকতে হয় সর্বজনীন, সবার চিন্তাই তাকে করতে হয়। এ বাস্তবতা যদি রাজনীতিকরা উপলব্ধি না করেন, তাহলে জাতি বিভক্ত হয়, চূড়ান্তভাবে তা রাষ্ট্র ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ ঠিক এমন একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। অপরিণামদর্শী রাজনীতির কারণে এখানে ধর্মে-ধর্মে বিরোধ তৈরি হয়েছে, ভাইয়ে-ভাইয়ে বিরোধ তৈরি হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে, ধর্মের প্রবর্তকদের অশালীন ভাষায় গালমন্দ করা হয়েছে, ধর্মীয় উপাসনালয় জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে; সর্বোপরি রাষ্ট্রের পরতে পরতে বিরোধ ও হিংসা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। একই ধর্ম ও ভাষার মানুষের মধ্যে এমন বিভক্তি তৈরি করা নিশ্চয় একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। এ বিভক্তির ফলে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ছে রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে। দেশের শিল্পোৎপাদন, কর্মসংস্থান ও অর্থনীতি আজ বিপর্যয়ের পথে। সম্ভাবনাময় তৈরি পোশাক শিল্প চোখের সামনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে দেখা দিয়েছে মারাÍক স্থবিরতা। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, জিডিপি নিচের দিকে নামছে।
যুদ্ধাপরাধের বিচার ও নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে আছে। ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে আছেন দেশের রাজনীতিকরাও। অনিবার্য সংঘাত ও রক্তপাতের আশংকা করছে দেশবাসী, যা ধ্বংস করে দেবে তাদের সব স্বপ্ন ও সম্ভাবনা। ধ্বংস করবে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ধারা, মানুষ হারাবে তাদের ভোটের অধিকার। ধ্বংস করা রাজনীতিকদের কাজ নয়, রাজনীতিকদের কাজ গড়া। যেটুকু উন্নতি বাংলাদেশের হয়েছে, তা জাতি হিসেবে আমরা এক থাকার কারণেই হয়েছে আর এটি করেছেন রাজনীতিকরাই। এখনও যে বিপদ বাংলাদেশের সামনে কড়া নাড়ছে, রাজনীতিকদের ঐক্যই এ বিপদ থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনতে পারে।
সংবিধান, আইন সবকিছুই পরিবর্তন সম্ভব হয়- যখন সবাই এক হয়। কাজেই এখন রাজনীতিকদের এক হওয়ার সময়, সময় দেশপ্রেম জাগ্রত করার; সময় বিশ্বকে দেখিয়ে দেয়ার, কারণ বিশ্বের নজর কাড়ছে এখন বাংলাদেশ। এ দেশের জন্য জাতিসংঘ এগিয়ে এসেছে, আমেরিকা এগিয়ে এসেছে; এগিয়ে এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আরব বিশ্ব, চীন, ভারত, কানাডা ও অন্যসব রাষ্ট্র। এসব দেশ বাংলাদেশের ভালো চায়; বাংলাদেশের শান্তি ও স্থিতি অব্যাহত রাখার স্বার্থেই রাজনৈতিক সংকট সমাধানে তারা এগিয়ে এসেছে। তাদের উপলব্ধিতে হয়তো বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই তারা একটি পক্ষপাতহীন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এ দেশের রাজনীতিকদের পরামর্শ দিয়েছে। সুতরাং রাজনীতিকদের উচিত এসব দেশের আবেগের মূল্য দেয়া।
একটা মোটামুটি মানের নির্বাচন হলেই বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। সেই অর্থে বিএনপির লক্ষ্য হওয়া উচিত কোনোভাবেই নির্বাচন ভণ্ডুল হতে না দেয়া। নির্বাচন ভণ্ডুল হলে বেনিফিশিয়ারি হবে বর্তমান শাসক দল- এতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশে একটা বিশৃংখল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে যাওয়ার সমূহ আশংকা রয়েছে। কাজেই বিচক্ষণতার সঙ্গে আর কিছুদিন পার করাই হবে যুক্তিযুক্ত। তাতে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকবে। ঠিক এ জায়গাটিতে বিএনপিকে পা ফেলতে হবে কঠিন হিসাব কষে, অত্যন্ত সাবধানে। গভীর পর্যবেক্ষণ করতে হবে ক্ষমতাসীনদের কার্যক্রম। ক্ষমতাসীনরা এখন কিছুটা গোঁয়ার্তুমিভাব দেখালেও শেষ পর্যন্ত তাদের কৌশল কী হয় সেটিই দেখার বিষয়। পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়ার পর কর্মীদের মনোবল অটুট রাখতেই ক্ষমতাসীন দল হার্ডলাইনের কৌশল নিয়েছে। কিন্তু এই হার্ডলাইন শেষ পর্যন্ত তারা ধরে রাখতে পারবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন না। এমন একটা সন্ধিক্ষণ আসবে, যখন তারা ফুটো বেলুনের মতো চুপসে যাবে। ওই সময়টার জন্য বিএনপিকে অপেক্ষা করতে হবে।
যে কোনো ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলার সক্ষমতা বিরোধী জোটের অবশ্যই আছে। কিন্তু সেই আন্দোলনের সুফল বিএনপির ঘরে আসতে হবে, বিএনপিকে বেনিফিশিয়ারি হতে হবে। বিএনপিকে মনে রাখতে হবে, নির্বাচন যদি অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে যায়; তাহলে মানুষ বর্তমান সরকারের দুর্নীতি-দুঃশাসন ভুলে যাবে। তখন হয়তো দেখা যাবে পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে গেছে, ক্ষমতাসীন দল জনগণের কাছে আবার গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। বিএনপির রাজনীতির অসাবধানতা ও স্পর্শকাতরতার সুযোগটিই নিতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল। তাই তারা কোনো সংলাপ বা সমঝোতায় আসতে চাচ্ছে না। তারা মনে করছে, সংলাপে বসলেই রাজনৈতিকভাবে বেনিফিশিয়ারি হবে বিএনপি। তাই তারা গোঁয়ার্তুমি করছে; আন্দোলনের মুরোদ নেই, সরকার হটানোর শক্তি নেই বলে বিএনপিকে উসকে দিচ্ছে। ইতিহাসের নজিরবিহীন কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ ও খালেদা জিয়ার বারবার আহ্বানের পরও সংলাপ-সমঝোতায় সরকার কোনো সাড়া দেয়নি। ফলে সংকটের কোনো সমাধানও হয়নি। তাতে জাতীয় জীবনে কেউ স্বস্তিতে নেই- না সরকারি দল, না বিরোধী দল। সবার মধ্যেই একটা অজানা শংকা কাজ করছে। মানুষকে শংকায় রাখা রাজনীতিকদের কাজ নয়। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, এ অবস্থা হল কেন আজ? কেন জাতিকে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে? এ জাতি আর কত রক্ত দেবে? কত মূল্য পরিশোধ করবে? যারা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন, এর জবাব তাদেরই দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে গিয়ে বলেছেন, দেশের জন্য যে কোনো ত্যাগ তিনি স্বীকার করবেন। সে ত্যাগ স্বীকারটা কী সেটি তিনি পরিষ্কার করেননি। তার এই ত্যাগ স্বীকারটা হতে পারে মেয়াদ শেষে আর একদিনও ক্ষমতায় না থাকা এবং একটি পক্ষপাতহীন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম করা। বর্তমান সময়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের জন্য এটুকু ত্যাগ যদি স্বীকার করেন, তাহলে রাজনীতির উচ্চ আসনে তিনি অধিষ্ঠিত হবেন। দেশের ক্রান্তিকালে মানুষ প্রধানমন্ত্রীর ত্যাগ মনে রাখবে। একটা অনিবার্য ধ্বংস থেকে দেশ ও জাতি রক্ষা পাবে।
মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
No comments