বিশাল থেকে বিশালতর হচ্ছে হজের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড by আসজাদুল কিবরিয়া
ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম হলো পবিত্র
হজ। গত বছর প্রায় ৩২ লাখ মানুষ হজব্রত পালন করেছেন। অবশ্য এ বছর হাজির
সংখ্যা অনেক কমে ২০ লাখে নেমে এসেছে, যার মধ্যে সৌদি আরবের বাইরে থেকেই
এসেছেন প্রায় ১৫ লাখ।
পবিত্র মক্কা নগরে অবকাঠামো নির্মাণকাজের জন্য সৌদি সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা হাজির নির্ধারিত সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। আবার মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রম) ভাইরাস সংক্রমণের ফলে অনেকেই হজে যাচ্ছেন না। হাজির সংখ্যা কম হওয়ায় হজভিত্তিক অর্থনৈতিক লেনদেন এবার কিছুটা কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বস্তুত হজ উপলক্ষে যে বিরাট ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছে, তা প্রতিবছরই বাড়ছে। আর হজকেন্দ্রিক আর্থিক লেনদেন থেকে সৌদি আরব মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করছে। আরব নিউজ-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১২ সালে হজ ও উমরাহ মিলিয়ে সৌদি আরবের অন্তত এক হাজার ৬৫০ কোটি ডলার আয় হয়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকৃত আয় আরও অনেক বেশি।
আবার হজের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সৌদি আরবের মোট দেশজ উপাদনের প্রায় ৬ শতাংশ জোগান দেয়। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে চারটি শহর—মক্কা, মদিনা, জেদ্দা ও তায়েফের অর্থনীতি পরিচালিত হয় হজ ও উমরাহর ওপর।
গালফ নিউজ-এর এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, হজকেন্দ্রিক আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ অন্তত তিন হাজার কোটি ডলার। বিজনেস মনিটর ইন্টারন্যাশনালের সমীক্ষা অনুসারে হজের সময় উপহারসামগ্রী ও স্মারক বেচাকেনার পরিমাণ অন্তত ১১০ কোটি ডলার। এসব সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে টুপি, তসবিহ, জায়নামাজ, স্কার্ফ, হিজাব ইত্যাদি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রগ্রেসিভ পলিসি ইনস্টিটিউটের ‘ট্রেড ফ্যাক্ট অব দ্য উইক’ প্রকাশনায় ২০০৯ সালেই বলা হয়েছিল, হজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক অনুষ্ঠান। এতে বলা হয়, চাইলে আরও লাখ লাখ মানুষ এসে যোগ দিতে পারেন। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে পুণ্যার্থীর সংখ্যা সীমিত রাখা হয়।
অন্যদিকে বিলেতের গার্ডিয়ান পত্রিকা হজকে অভিহিত করেছে মন্দারোধক (রেসেশন প্রুফ) অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে। হজের মৌসুমে শুধু জেদ্দায় বাদশাহ আবদুল আজিজ বিমানবন্দরে যে পরিমাণ বিমান ওঠা-নামা করে, তা অন্য কোনো বৈশ্বিক অনুষ্ঠানে হয় না। এই বিমানবন্দরের পরিসরও ব্যাপকভাবে বাড়ানো হচ্ছে যেন ২০৩৫ সাল নাগাদ এখানে বছরে আট কোটি যাত্রী ওঠা-নামা করতে পারে। অবশ্য এর মধ্যে অর্ধেকই হজ ও সারা বছরে উমরাহর জন্য আসা ব্যক্তি হবেন। বর্তমানে এই বিমানবন্দরে বছরে ৩০ লাখ যাত্রী ওঠা-নামা করতে পারে।
হজ ও উমরাহর জন্যই বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেলের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১১ সালে যেখানে দেশটিতে আড়াই লাখ হোটেল কক্ষ ছিল, তা ২০১৫ সাল নাগাদ তিন লাখ ৪৩ হাজারে উন্নীত হতে যাচ্ছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিজনেস মনিটর ইন্টারন্যাশনাল।
মক্কা শহরে কোনো কোনো বিলাসবহুল হোটেলে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত এত দামি রাজকীয় স্যুট আছে, যার জন্য প্রতি রাতে পাঁচ হাজার ডলার পর্যন্ত ভাড়া গুনতে হয়।
মরক্কো, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, আলজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য প্রভৃতি দেশ থেকে আসা হাজিরা অনেকেই দামি ও বিলাসবহুল হোটেলে থাকেন। অন্যদিকে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশ থেকে হজ পালনের জন্য যাঁরা যান, তাঁদের সিংহভাগই সাধারণ ও মধ্যম মানের হোটেলে থাকেন।
তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তারের কল্যাণে এখন বিভিন্ন দেশের হাজিরা দেশ থেকে মুঠোফোনের সিম কার্ড নিয়ে যান। আবার অনেকে মক্কা-মদিনায় গিয়ে সিম কার্ড সংগ্রহ করেন। এখান থেকে ভালো ব্যবসা হয়।
আবার লেনদেনের জন্য নগদ অর্থের বদলে ইলেকট্রনিক পদ্ধতি বা কার্ডের ব্যবহারও বাড়ছে। বাংলাদেশ থেকেও অনেক হাজি ভিসা বা মাস্টার ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড নিয়ে যান। কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক হজ প্রিপেইড কার্ড প্রবর্তন করেছে।
আরব নিউজ-এর আরেক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গড়ে প্রতিবছর ৭০ লাখ তীর্থ পর্যটক সৌদি আরব সফর করেন। এর এক-তৃতীয়াংশই আসেন হজ মৌসুমে। বাকিরা সারা বছর প্রধানত উমরাহ পালনের জন্য। গড়ে প্রতি তীর্থ পর্যটকের ১০ হাজার ডলার ব্যয় করতে হয়।
No comments