ব্যাংকের যোগসাজশে হল-মার্কের আরেক জালিয়াতি by অনিকা ফারজানা
রুগ্ণ শিল্প দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের সুদ
মওকুফ করে দিয়েছে জনতা ব্যাংক। আর সেই প্রতিষ্ঠানটি কিনে নিয়েছেন বহুল
আলোচিত হল-মার্ক গ্রুপের তানভীর মাহমুদ। তিনি প্রতিষ্ঠানটি কিনেছেন আবার
জালিয়াতি করা অর্থ দিয়ে।
আর এতে সহায়তা করেছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারাই।
হল-মার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ জালিয়াতি করে সোনালী ব্যাংক থেকে তুলে নিয়েছেন প্রায় দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এ কাজে আরও ২৯টি ব্যাংককে ব্যবহার করেছেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম জনতা ব্যাংক। তানভীর মাহমুদ জনতা ব্যাংকের খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে কিনেছেন জনতা ব্যাংকের টাকা দিয়েই।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ধাতুর প্রলেপযুক্ত (গ্যালভানাইজড) তার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মুশনাওয়্যার প্রোডাক্ট লিমিটেড নিয়েই যত ঘটনা। কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই না করেই এবং রুগ্ণ শিল্প হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করে দেয় জনতা ব্যাংক। এরপর ‘রুগ্ণ’ এই প্রতিষ্ঠানটিই ৩৫ কোটি টাকা দিয়ে কিনে নেন তানভীর মাহমুদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ সামগ্রিক বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বা সঠিক উপায়ে যাচাই-বাছাই না করে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যখন খেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ করে দেয়, তখন অবশ্যই ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। এ ধরনের কার্যকলাপ আর্থিক খাতে সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ে বলেই হল-মার্কের মতো ঘটনার জন্ম হয়।’ এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘অন্যথায় বিনিয়োগ তথা অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাবকে এড়ানো যাবে না।’
জনতা ব্যাংক থেকে পাওয়া নথি থেকে জানা যায়, জনতা ভবন করপোরেট শাখা থেকে ২০০৫ সালে মুশনাওয়্যারের মালিক মো. মাহবুবুর রহমান প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়েছিলেন। জনতা ব্যাংকের ওই শাখার সুপারিশে মুশনা লিমিটেডকে ১৬ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়। গত ছয় বছরে ওই ঋণের সুদের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা।
এরপর মুশনা লিমিটেডকে ‘রুগ্ণ শিল্প’ উল্লেখ করে মাহবুবুর রহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ২০৫তম সভায় ওই প্রতিষ্ঠানের শতভাগ সুদ মওকুফ করে দেওয়া হয়।
জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুশনাওয়্যার একটি তারকাঁটা বানানোর প্রতিষ্ঠান। এটি খেলাপি প্রতিষ্ঠান। এর থেকে অর্থ আদায় করা হলো মূল কথা। ঋণের অর্থ ফেরত পেতেই তাদের সুদ মওকুফ করা হয়েছে। আমরাও আমাদের মূল অর্থ ফেরত পেয়ে গেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অর্থ ফেরত দিয়ে এবং বন্ধক ছাড়িয়ে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক তাঁর প্রতিষ্ঠান কার কাছে বেচলেন, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়।’
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে কোনো রকম যাচাই-বাছাই করেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। মুশনা লিমিটেডের ঋণের বিপরীতে মেয়াদোত্তীর্ণের আগে আরোপিত সুদের ৯৪ দশমিক ৩০ শতাংশ বাবদ আট কোটি ২২ লাখ ৬১ হাজার ৬৮৭ টাকা, মেয়াদোত্তীর্ণ-পরবর্তী আরোপিত সুদের শতভাগ বাবদ ৭০ লাখ ছয় হাজার ৭৭৪ টাকা এবং অনারোপিত সুদের শতভাগ বাবদ তিন কোটি ২৮ লাখ ৭৪ হাজার ১১৯ টাকা—সব মিলিয়ে ১২ কোটি ২১ লাখ ৪২ হাজার ৭৭১ টাকা মওকুফ করে দেয় জনতা ব্যাংক।
জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এম আমিনুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুশনা লিমিটেডের বিষয়ে শাখা পর্যায় থেকে প্রতিবেদন এসেছিল, তাতে প্রতিষ্ঠানটিকে রুগ্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর সুদ মওকুফ কমিটির প্রতিবেদন ও সুপারিশের ভিত্তিতে মুশনার সুদ মওকুফ করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকের ঋণ দেওয়া অর্থ ফেরত পাওয়াটাই মূল কথা। আর এ ধরনের বহু প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সুদ মওকুফ করে বা আইনি সাহায্য নিয়ে ঋণের অর্থ ফেরত আনা হয়েছে।’
এদিকে ঋণ মওকুফের আবেদন মঞ্জুরের মাত্র দেড় মাসের মাথায় ‘রুগ্ণ শিল্প’ মুশনা লিমিটেডকে হল-মার্কের স্বত্বাধিকারী তানভীর মাহমুদের কাছে সাড়ে ৩৫ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেন মাহবুবুর রহমান। ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর তানভীর ২৩ কোটি পাঁচ লাখ ১২ হাজার ২৬১ টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে এবং নগদে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা মাহবুবুর রহমানকে দিয়েছেন। বাকি ছয় কোটি ৯৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৩৯ টাকা পরে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন তানভীর।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের শেরাটন শাখায় খোলা ভুয়া ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্র বা এলসির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকেই ওই অর্থ তুলে নেন তানভীর। কিন্তু সোনালী ব্যাংকের ওই শাখা কর্তৃপক্ষ জানে না যে উত্তোলিত অর্থ দিয়ে তানভীর আমদানি করা পণ্যের মূল্য পরিশোধ না করে আরেকটি প্রতিষ্ঠান কিনেছেন। এ বিষয়ে শেরাটন শাখার ডিজিএম আবুল হাশেম বলেন, ‘সোনালী ব্যাংক থেকে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির জন্য ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই অর্থ দিয়ে গ্রাহক কী করল, তা আমাদের জানার কথা নয়।’
ব্যাংক সূত্রগুলো জানায়, পুরো ঘটনার সঙ্গে দুই ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরই যোগসাজশ রয়েছে। ফলে সুদ মওকুফ থেকে শুরু করে জালিয়াতির অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কেনাবেচা হয়েছে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই।
হল-মার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ জালিয়াতি করে সোনালী ব্যাংক থেকে তুলে নিয়েছেন প্রায় দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এ কাজে আরও ২৯টি ব্যাংককে ব্যবহার করেছেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম জনতা ব্যাংক। তানভীর মাহমুদ জনতা ব্যাংকের খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে কিনেছেন জনতা ব্যাংকের টাকা দিয়েই।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ধাতুর প্রলেপযুক্ত (গ্যালভানাইজড) তার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মুশনাওয়্যার প্রোডাক্ট লিমিটেড নিয়েই যত ঘটনা। কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই না করেই এবং রুগ্ণ শিল্প হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করে দেয় জনতা ব্যাংক। এরপর ‘রুগ্ণ’ এই প্রতিষ্ঠানটিই ৩৫ কোটি টাকা দিয়ে কিনে নেন তানভীর মাহমুদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ সামগ্রিক বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বা সঠিক উপায়ে যাচাই-বাছাই না করে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যখন খেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ করে দেয়, তখন অবশ্যই ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। এ ধরনের কার্যকলাপ আর্থিক খাতে সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ে বলেই হল-মার্কের মতো ঘটনার জন্ম হয়।’ এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘অন্যথায় বিনিয়োগ তথা অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাবকে এড়ানো যাবে না।’
জনতা ব্যাংক থেকে পাওয়া নথি থেকে জানা যায়, জনতা ভবন করপোরেট শাখা থেকে ২০০৫ সালে মুশনাওয়্যারের মালিক মো. মাহবুবুর রহমান প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়েছিলেন। জনতা ব্যাংকের ওই শাখার সুপারিশে মুশনা লিমিটেডকে ১৬ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়। গত ছয় বছরে ওই ঋণের সুদের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা।
এরপর মুশনা লিমিটেডকে ‘রুগ্ণ শিল্প’ উল্লেখ করে মাহবুবুর রহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ২০৫তম সভায় ওই প্রতিষ্ঠানের শতভাগ সুদ মওকুফ করে দেওয়া হয়।
জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুশনাওয়্যার একটি তারকাঁটা বানানোর প্রতিষ্ঠান। এটি খেলাপি প্রতিষ্ঠান। এর থেকে অর্থ আদায় করা হলো মূল কথা। ঋণের অর্থ ফেরত পেতেই তাদের সুদ মওকুফ করা হয়েছে। আমরাও আমাদের মূল অর্থ ফেরত পেয়ে গেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অর্থ ফেরত দিয়ে এবং বন্ধক ছাড়িয়ে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক তাঁর প্রতিষ্ঠান কার কাছে বেচলেন, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়।’
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে কোনো রকম যাচাই-বাছাই করেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। মুশনা লিমিটেডের ঋণের বিপরীতে মেয়াদোত্তীর্ণের আগে আরোপিত সুদের ৯৪ দশমিক ৩০ শতাংশ বাবদ আট কোটি ২২ লাখ ৬১ হাজার ৬৮৭ টাকা, মেয়াদোত্তীর্ণ-পরবর্তী আরোপিত সুদের শতভাগ বাবদ ৭০ লাখ ছয় হাজার ৭৭৪ টাকা এবং অনারোপিত সুদের শতভাগ বাবদ তিন কোটি ২৮ লাখ ৭৪ হাজার ১১৯ টাকা—সব মিলিয়ে ১২ কোটি ২১ লাখ ৪২ হাজার ৭৭১ টাকা মওকুফ করে দেয় জনতা ব্যাংক।
জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এম আমিনুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুশনা লিমিটেডের বিষয়ে শাখা পর্যায় থেকে প্রতিবেদন এসেছিল, তাতে প্রতিষ্ঠানটিকে রুগ্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর সুদ মওকুফ কমিটির প্রতিবেদন ও সুপারিশের ভিত্তিতে মুশনার সুদ মওকুফ করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকের ঋণ দেওয়া অর্থ ফেরত পাওয়াটাই মূল কথা। আর এ ধরনের বহু প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সুদ মওকুফ করে বা আইনি সাহায্য নিয়ে ঋণের অর্থ ফেরত আনা হয়েছে।’
এদিকে ঋণ মওকুফের আবেদন মঞ্জুরের মাত্র দেড় মাসের মাথায় ‘রুগ্ণ শিল্প’ মুশনা লিমিটেডকে হল-মার্কের স্বত্বাধিকারী তানভীর মাহমুদের কাছে সাড়ে ৩৫ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেন মাহবুবুর রহমান। ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর তানভীর ২৩ কোটি পাঁচ লাখ ১২ হাজার ২৬১ টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে এবং নগদে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা মাহবুবুর রহমানকে দিয়েছেন। বাকি ছয় কোটি ৯৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৩৯ টাকা পরে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন তানভীর।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের শেরাটন শাখায় খোলা ভুয়া ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্র বা এলসির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকেই ওই অর্থ তুলে নেন তানভীর। কিন্তু সোনালী ব্যাংকের ওই শাখা কর্তৃপক্ষ জানে না যে উত্তোলিত অর্থ দিয়ে তানভীর আমদানি করা পণ্যের মূল্য পরিশোধ না করে আরেকটি প্রতিষ্ঠান কিনেছেন। এ বিষয়ে শেরাটন শাখার ডিজিএম আবুল হাশেম বলেন, ‘সোনালী ব্যাংক থেকে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির জন্য ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই অর্থ দিয়ে গ্রাহক কী করল, তা আমাদের জানার কথা নয়।’
ব্যাংক সূত্রগুলো জানায়, পুরো ঘটনার সঙ্গে দুই ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরই যোগসাজশ রয়েছে। ফলে সুদ মওকুফ থেকে শুরু করে জালিয়াতির অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কেনাবেচা হয়েছে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই।
No comments