সিটি করপোরেশন নির্বাচন: তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া বিএনপিতে মানুষ নির্ভরতা খুঁজছে by খন্দকার মোশাররফ হোসেন
চার সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ফলাফল
বিশ্লেষণ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী
ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সিটি
করপোরেশন নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও যেকোনো ধরনের নির্বাচনের
ফলাফল জাতীয় নির্বাচনে কোনো না কোনো প্রভাব ফেলে। আর সরকারের শেষ সময়ে
একসঙ্গে চারটি সিটি নির্বাচন হওয়ায় এর ফল হবে সুদূরপ্রসারী। এককথায় বলতে
গেলে এই নির্বাচনের ফল বলে দিচ্ছে, বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে
নির্বাচনের জন্য যে আন্দোলন করছে, তা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে; আর
সরকারের কর্মকাণ্ড, ব্যর্থতা, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ধর্মীয় অনুভূতিতে
আঘাত করাকে সাধারণ মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিএনপির রাজনীতির দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে, দলটি নির্বাচনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। একমাত্র নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে শেষ মুহূর্তে বিএনপি সরে দাঁড়িয়েছিল। এই সরকারের আমলে ছয়টি সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। দুটিতে নির্দলীয় প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগ কোথাও জিততে পারেনি। এতেই প্রমাণিত হয়, সরকারের প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নেই। সরকারদলীয় সাংসদ বা স্থানীয় নেতাদের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আছে। তারা সরকার ও তাদের দলীয় স্থানীয় নেতাদের কর্মকাণ্ড দেখে বুঝতে পেরেছে, এঁরা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। মানুষ নির্ভরতা খুঁজে পেতে চেয়েছে বিএনপির কাছ থেকে। এই ফলাফল বিএনপির জন্য একটা বার্তাও। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ভবিষ্যতে তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। বিএনপির প্রতি জনগণ যে আস্থা দেখিয়েছে, তাকে ধরে রাখতে হবে।
এই নির্বাচনে বিএনপির প্রাপ্তি অনেক। বিএনপি চেয়েছিল, প্রতিটি স্থানে যেন দলের একজন প্রার্থী অংশ নেন। সেটা হয়েছে। এরপর ১৮ দলও একক প্রার্থী দিতে পেরেছে। দলের ও জোটের সবাই একসঙ্গে কাজ করেছেন। বরিশালে মেয়র আহসান হাবিব ও বিএনপির নেতা মজিবর রহমানের মধ্যে সম্পর্ক ভালো নয়, এটা সবাই জানতেন। কিন্তু এই নির্বাচনে তার বিরূপ প্রভাব দেখা যায়নি।
একইভাবে সিলেটে দল ও জোটে কিছু অনৈক্য ছিল, সেটাও দূর হয়েছে। নির্বাচনে ১৮-দলীয় জোটের এই ঐক্যবদ্ধ অবস্থান জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এখন আমরা গাজীপুর নির্বাচনে জয়ের জন্য কাজ করব। সরকারের সাহস থাকলে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন দিক। জনগণ সরকারকে লাল কার্ড দেখিয়ে দেবে।
এবারের নির্বাচনে ধর্মীয় অনুভূতি ভীষণভাবে কাজ করেছে। সরকার আলেম-ওলামা ও শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের ওপর যে নির্যাতন করেছে, তা সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। নির্বাচনে প্রচারণা চালাতে গিয়ে এটা প্রত্যক্ষ করেছি। তা ছাড়া শাহবাগে কিছু মানুষের হইহুল্লোড় ও পত্রিকা, টেলিভিশনের বড় বড় শিরোনামের ভাষা সাধারণ মানুষের ভাষা নয়। এটা প্রমাণিত হয়েছে।
চার সিটিতে নির্বাচনের পর টেলিভিশনে আওয়ামী লীগের সমর্থক কিছু বুদ্ধিজীবী বলা শুরু করেছেন, এই নির্বাচনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাঁরা সম্ভবত জানেন না, স্থানীয় নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন এক নয়। তাঁরা সম্ভবত সিটি নির্বাচনের সময় মাঠের চিত্র কী ছিল, তা জানেন না।
আমরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে দেখেছি, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ ও প্রশাসন কীভাবে সরকারদলীয়দের পক্ষে কাজ করেছে। কিন্তু বিএনপির পক্ষে জনস্রোতের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। সরকারদলীয় প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন একের পর এক। তাঁদের কিছুই বলা হয়নি। অথচ বিএনপির প্রার্থীদের সামান্য কর্মকাণ্ডে কথায় কথায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, বিএনপির আন্দোলনের প্রতি মানুষের সমর্থন ভোটের মাধ্যমে পাওয়া গেছে। ভোট বিএনপির নেতা-কর্মীদের মনোবল দারুণভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন আন্দোলন আরও গতিশীল হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া জাতীয় নির্বাচন হবে না।
এখন সরকার বলছে, তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন নেই। এ কথা তো আমরাও বলেছি ’৯৫ ও ’৯৬ সালে। কিন্তু তখন তো ওই সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা তা মানেননি। আমাদের সময়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাসকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ হানিফ নির্বাচিত হয়েছিলেন। চট্টগ্রামে বিএনপির নেতা মীর নাছিরকে হারিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
আমাদের রাজনীতিবিদদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের সংকটের কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়েছিল। এখন সেই আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে এসেছে—এমনটা ভাবার কি কোনো কারণ আছে?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন: সদস্য, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি।
বিএনপির রাজনীতির দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে, দলটি নির্বাচনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। একমাত্র নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে শেষ মুহূর্তে বিএনপি সরে দাঁড়িয়েছিল। এই সরকারের আমলে ছয়টি সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। দুটিতে নির্দলীয় প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগ কোথাও জিততে পারেনি। এতেই প্রমাণিত হয়, সরকারের প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নেই। সরকারদলীয় সাংসদ বা স্থানীয় নেতাদের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আছে। তারা সরকার ও তাদের দলীয় স্থানীয় নেতাদের কর্মকাণ্ড দেখে বুঝতে পেরেছে, এঁরা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। মানুষ নির্ভরতা খুঁজে পেতে চেয়েছে বিএনপির কাছ থেকে। এই ফলাফল বিএনপির জন্য একটা বার্তাও। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ভবিষ্যতে তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। বিএনপির প্রতি জনগণ যে আস্থা দেখিয়েছে, তাকে ধরে রাখতে হবে।
এই নির্বাচনে বিএনপির প্রাপ্তি অনেক। বিএনপি চেয়েছিল, প্রতিটি স্থানে যেন দলের একজন প্রার্থী অংশ নেন। সেটা হয়েছে। এরপর ১৮ দলও একক প্রার্থী দিতে পেরেছে। দলের ও জোটের সবাই একসঙ্গে কাজ করেছেন। বরিশালে মেয়র আহসান হাবিব ও বিএনপির নেতা মজিবর রহমানের মধ্যে সম্পর্ক ভালো নয়, এটা সবাই জানতেন। কিন্তু এই নির্বাচনে তার বিরূপ প্রভাব দেখা যায়নি।
একইভাবে সিলেটে দল ও জোটে কিছু অনৈক্য ছিল, সেটাও দূর হয়েছে। নির্বাচনে ১৮-দলীয় জোটের এই ঐক্যবদ্ধ অবস্থান জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এখন আমরা গাজীপুর নির্বাচনে জয়ের জন্য কাজ করব। সরকারের সাহস থাকলে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন দিক। জনগণ সরকারকে লাল কার্ড দেখিয়ে দেবে।
এবারের নির্বাচনে ধর্মীয় অনুভূতি ভীষণভাবে কাজ করেছে। সরকার আলেম-ওলামা ও শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের ওপর যে নির্যাতন করেছে, তা সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। নির্বাচনে প্রচারণা চালাতে গিয়ে এটা প্রত্যক্ষ করেছি। তা ছাড়া শাহবাগে কিছু মানুষের হইহুল্লোড় ও পত্রিকা, টেলিভিশনের বড় বড় শিরোনামের ভাষা সাধারণ মানুষের ভাষা নয়। এটা প্রমাণিত হয়েছে।
চার সিটিতে নির্বাচনের পর টেলিভিশনে আওয়ামী লীগের সমর্থক কিছু বুদ্ধিজীবী বলা শুরু করেছেন, এই নির্বাচনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাঁরা সম্ভবত জানেন না, স্থানীয় নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন এক নয়। তাঁরা সম্ভবত সিটি নির্বাচনের সময় মাঠের চিত্র কী ছিল, তা জানেন না।
আমরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে দেখেছি, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ ও প্রশাসন কীভাবে সরকারদলীয়দের পক্ষে কাজ করেছে। কিন্তু বিএনপির পক্ষে জনস্রোতের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। সরকারদলীয় প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন একের পর এক। তাঁদের কিছুই বলা হয়নি। অথচ বিএনপির প্রার্থীদের সামান্য কর্মকাণ্ডে কথায় কথায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, বিএনপির আন্দোলনের প্রতি মানুষের সমর্থন ভোটের মাধ্যমে পাওয়া গেছে। ভোট বিএনপির নেতা-কর্মীদের মনোবল দারুণভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন আন্দোলন আরও গতিশীল হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া জাতীয় নির্বাচন হবে না।
এখন সরকার বলছে, তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন নেই। এ কথা তো আমরাও বলেছি ’৯৫ ও ’৯৬ সালে। কিন্তু তখন তো ওই সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা তা মানেননি। আমাদের সময়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাসকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ হানিফ নির্বাচিত হয়েছিলেন। চট্টগ্রামে বিএনপির নেতা মীর নাছিরকে হারিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
আমাদের রাজনীতিবিদদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের সংকটের কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়েছিল। এখন সেই আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে এসেছে—এমনটা ভাবার কি কোনো কারণ আছে?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন: সদস্য, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি।
No comments