এনডিএ ছাড়লেনই নীতিশ
রত্যাশামতোই এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে এল জনতা
দল (সংযুক্ত)। কয়েক দিনের চূড়ান্ত রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা শেষে গতকাল রোববার
দুপুরে রাজ্যপাল ডি ওয়াই পাতিলের সঙ্গে দেখা করে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী
নীতিশ কুমার জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন।
রাজ্যপালকে নীতিশ কুমার আরও জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভায় থাকা বিজেপির ১১
সদস্যকেও বরখাস্ত করছেন তিনি। নীতিশ কুমার এ অবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার
প্রমাণ দিতে ১৯ জুন রাজ্য বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডাকার অনুরোধও করেছেন
রাজ্যপালকে। বিজেপির পক্ষ থেকে কেউ কেউ বিধানসভা ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের
দাবি জানালেও দলের রাজ্য সভাপতি সুশীল কুমার মোদি বলেছেন, আস্থা ভোটের আগের
দিন তাঁরা সারা রাজ্যে ‘বিশ্বাসঘাত দিবস’ পালন করবেন। গতকাল রোববার দিনভর
বিহারের রাজনীতি ছিল সরগরম। বেলা সাড়ে ১১টায় নীতিশ কুমার মন্ত্রিসভার
বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠকে স্বাভাবিক কারণেই বিজেপি সদস্যরা গরহাজির ছিলেন। এক
ঘণ্টা পর জেডিইউ নেতৃত্ব বৈঠক করে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তে আনুষ্ঠানিকতার
সিলমোহর দিয়ে দেন। বেলা দুইটায় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বিচ্ছেদের
সিদ্ধান্তের কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। তারপর সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিজেপির
গোয়া-সিদ্ধান্ত আমদের এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে।’ নীতিশ কুমার বলেন,
তিনি মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছিলেন কিন্তু বিজেপির মন্ত্রীরা কাজ করতে
অস্বীকার করায় তাঁদের বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জনতা দলের
(সংযুক্ত) এই ঘোষণার পর বিহার ও গোটা ভারতের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ ও
মেরুকরণ সৃষ্টি হতে চলেছে। কংগ্রেস ইতিমধ্যেই নীতিশকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শক্তি
হিসেবে জাহির করেছে। কংগ্রেস যে এ অবস্থাকে কাজে লাগাতে চায়, শনিবার
কাশ্মীরে কংগ্রেসের সহসভাপতি রাহুল গান্ধীর মন্তব্যেই তা স্পষ্ট হয়েছিল।
পরে দলের মুখপাত্র ভক্তচরণ দাসও বুঝিয়ে দেন, নীতিশ তাঁদের জোটে স্বাগত।
নীতিশের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়তে ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়,
সীতারাম ইয়েচুরিরা উদ্যোগী হয়েছেন। নীতিশের এই জোট ছেড়ে যাওয়ায়
বিজেপির প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘গোয়ায় এত
তাড়াহুড়ো করে মোদিকে আবাহন করা না হলে এভাবে এত দিনের এক বন্ধুকে হারাতে
হতো না।’ আদভানি এই আক্ষেপের কথা বলেছেন দলের সভাপতি রাজনাথ সিংয়ের কাছে।
বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজও এই বিচ্ছেদকে দুর্ভাগ্যজনক বলে বর্ণনা করেছেন।
তাঁরা দুজনই মোদিবিরোধী বলে পরিচিত। নীতিশ কুমার ও দলের সভাপতি শারদ যাদব
কেউ-ই কিন্তু এই নেতাদের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি। মনে করা হচ্ছে, মোদির
গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এনডিএতে ভবিষ্যতে অন্য রকম ভাবনা হলে নীতিশেরা বিকল্প
চিন্তার সুযোগটা খোলা রাখছেন। এই মুহূর্তে নীতিশের বড় চ্যালেঞ্জ রাজ্যে
একাধারে বিজেপি ও লালু প্রসাদের মোকাবিলা করে উন্নয়নের রাস্তা মসৃণ রাখা।
পাশাপাশি জাতপাতভিত্তিক এই রাজ্যে নিজের কুর্মী সম্প্রদায়ের ৫ শতাংশ ভোটের
বাইরে মুসলিমদের ১৮ শতাংশ ভোটের বেশিটা টেনে আনা। এ কাজে তাঁর পথের কাঁটা
যে লালু প্রসাদ, তা নীতিশ জানেন। মোদিকে নিয়ে যেমন বিজেপি বাজি খেলেছে,
তেমনই এনডিএ ছেড়ে এসে জনতা দলও (সংযুক্ত) এক বিরাট ঝুঁকি নিল।
No comments