অল্পদৈর্ঘ্য নাটক ফিক্সিং কিং কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ: খায়রুল বাবুই চিত্রপ্রদান: জুনায়েদ

চরিত্র
শামসু: সভাপতি, টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটি
আরিফ: মালিক, ঢাকা কাউ টিম
বিধান: ফিল্ডিং কোচ, ঢাকা কাউ টিম
সাইফুল: অভিযুক্ত খেলোয়াড়
মিজানুর: সাইফুলের বাবা
এবং ঢাকা কাউ টিমের অন্য সব সদস্য।

দৃশ্য-১
চরিত্র: শামসু ও আরিফ।

[মঞ্চে শামসু পায়চারি করছেন। ভীষণ চিন্তিত।]

শামসু: না না না, এ হতে পারে না। আই কান্ট বিলিভ...। হোয়ার ইজ আ-রি-ফ...
আরিফ: ইয়েস স্যার, আই অ্যাম হিয়ার...
শামসু: এসব কী শুনছি?
আরিফ: কী, স্যার?
শামসু: আপনি ঢাকা কাউ টিমের মালিক। চারদিকের হাউকাউ শুনতে পাচ্ছেন না?
আরিফ: দ্য কাউ ইজ অ্যা ডোমেস্টিক অ্যানিমেল স্যার, পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি।
শামসু: তাহলে যাকে আমার সামনে হাজির করতে বলেছিলাম, করেছেন?
আরিফ: জি স্যার, আই গট হিম। ব্যাকস্টেজে বসিয়ে রেখেছি।
শামসু: কী-ই-ই! টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির সভাপতি হয়ে আমি দাঁড়িয়ে আছি আর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আপনি বসিয়ে রেখেছেন? হাউ ডেয়ার ইউ...
আরিফ: সরি, স্যার। শারীরিকভাবে আমি যতটা উইক, তার চেয়ে বেশি উইক ইংরেজিতে। কাইন্ডলি আমার সঙ্গে বাংলিশে কথা বলবেন।
শামসু: ওকে। নিয়ে আসুন ওকে।
আরিফ: দ্য কাউ ইজ অ্যা ডোমেস্টিক অ্যানিমেল স্যার, এক্ষুনি আনছি।
[আরিফ দৌড়ে ব্যাকস্টেজে চলে যাবেন। মঞ্চের আলো নিভে যাবে।]

দৃশ্য-২
চরিত্র: শামসু, আরিফ, মিজানুর ও বিধান।

[শামসু মঞ্চে দাঁড়িয়ে উদাস হয়ে কী যেন ভাবছেন। মিজানুরকে নিয়ে আরিফ মঞ্চে উঠবেন।]

আরিফ: এই যে স্যার, নিয়ে এসেছি।
শামসু: কে এই লোক? এ তো ঢাকা কাউ টিমের অভিযুক্ত খেলোয়াড় সাইফুল নয়।
আরিফ: ঠিক ধরেছেন। স্যার, জানতে চেয়েছিলাম, সাইফুল যদি আসতে না চায়, তখন কী করব? উত্তরে আপনি কী বলেছিলেন মনে পড়ে?
শামসু: হুঁ। বলেছিলাম, সাইফুল আসবে না মানে, আমার নাম বললে ওর বাপ আসবে...
আরিফ: ইউ আর কারেক্ট স্যার, ইনি মিজানুর রহমান। সাইফুলের বাপ।
মিজানুর: আপনি কে, জনাব?
আরিফ: উনি বিপিএলের সম্মানিত সভাপতি শামসু।
মিজানুর: বিপিএল কী, জনাব?
শামসু: মূর্খ মানব। নিউট্রন বোমা বোঝো, বিপিএল বোঝো না? বিপিএল হচ্ছে ‘ব্যাচেলর পোলাপানের লিগ’।
মিজানুর: তা আমার পোলা কী করেছে, জনাব?
শামসু: কী করেছে মানে? মহা অন্যায় করেছে।
মিজানুর: মহা অন্যায়? ব্যাচেলর পোলাপানের লিগ চলার মধ্যেই বিয়ে করে ফেলেছে নাকি, জনাব?
শামসু: মুখ সামলে কথা বলুন, সাইফুলের বাপ। এ কাকে ধরে এনেছেন, আরিফ?
আরিফ: অভিযুক্ত ব্যক্তির বাপকে, স্যার। কথায় আছে, পাপ ছাড়ে না বাপকেও...
শামসু: আপনাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। ঢাকা কাউ টিমের ফিল্ডিং কোচ বিধান কোথায়?
আরিফ: কোথায় আবার, পাড়ার মেয়েদের আশপাশে ফিল্ডিং মারছে বোধ হয়...
বিধান: স্যার, আমি আপনার পেছনেই আছি।
শামসু: সব সময় তো আমার পেছনেই লেগে থাকেন। এবার ফ্রন্টলাইনে আসুন। যান, সাইফুলকে ধরে আনুন। এক্ষুনি।
মিজানুর: অবজেকশন, জনাব। কী করেছে আমার সাইফুল?
শামসু: আপনার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে টাকা খেয়ে ম্যাচ ফিক্সিং করেছে।
মিজানুর: হতেই পারে না, জনাব। সাইফুলকে জন্ম থেকে চিনি। সে কখনোই ম্যাচ ব্যবহার করে না। সব সময় লাইটার ব্যবহার করে।
শামসু: সময় গেলে সাধন হবে না। আরিফ, মিজানুর সাহেবকে নিয়ে যান। আর সাইফুলসহ ঢাকা কাউ টিমের সব খেলোয়াড়কে হাজির করুন। বিধান, আপনি যান, ম্যাজিক ফ্যানটা নিয়ে আসুন। ডেমু ট্রেনের বেগে যাবেন, বুলেটের গতিতে আসবেন। ক্লিয়ার?
বিধান: ক্লিয়ার।
আরিফ : দ্য কাউ ইজ অ্যা ডোমেস্টিক অ্যানিমেল স্যার, অল ক্লিয়ার।
[সবাই ব্যাকস্টেজে চলে যাবে। মঞ্চের আলো নিভে যাবে।]

দৃশ্য-৩

চরিত্র: শামসু, আরিফ, বিধান, সাইফুল ও ঢাকা কাউ টিমের সব সদস্য।
[মঞ্চের মাঝখানে টেবিলের ওপর একটি ছোট্ট ফ্যান। সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে।]

শামসু: শোনেন, মুখের কথায় বিশ্বাস নেই। আজ পরীক্ষায় প্রমাণ হয়ে যাবে, কে বা কারা সত্যিই ব্যাচেলর পোলাপানের লিগের ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত। কে সেই ফিক্সিং কিং!
বিধান: স্যার, পরীক্ষার নিয়মটা ব্রিফ করলে ভালো হয়।
শামসু: হুঁ। সবাই একবার করে এই ম্যাজিক ফ্যানে ফুঁ দেবেন। কেউ যদি সত্যিই ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে ফ্যানটি ঘুরবে। যে যত বেশি টাকার বিনিময়ে ফিক্সিং করেছেন, তাঁর ফুঁতে ফ্যানটি তত বেশি ঘুরবে। আর যদি কেউ নিরপরাধ হন, তাহলে ফ্যান ঘুরবে না। ক্লিয়ার?
আরিফ: দ্য কাউ ইজ অ্যা ডোমেস্টিক অ্যানিমেল স্যার, অল ক্লিয়ার।

[সব খেলোয়াড় একবার করে ম্যাজিক ফ্যানে ফুঁ দিলেন। কারও ফুঁতে ফ্যান ঘুরল না। সবশেষে এলেন সাইফুল। তিনি ফুঁ দিতেই ফ্যানটি ঘুরতে শুরু করল। দুই পাক ঘুরে থামল।]

শামসু: অতএব, কী বোঝা গেল? সাইফুল সত্যিই অপরাধী। ঠিক আছে, এবার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বিধান ও আরিফ আপনারাও ফুঁ দেন।

[বিধান ও আরিফ পরস্পরের দিকে অস্বস্তি নিয়ে তাকালেন। প্রথমে বিধান ফুঁ দিতেই শাঁই করে টানা পাঁচ পাক ঘোরার পর থামল ফ্যানটি। এরপর ফুঁ দিলেন আরিফ। টানা ছয় পাক ঘুরল ফ্যানটি। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরাতেই শামসু দেখলেন, অন্য সবাই তাঁর দিকে তাকিয়ে। ইশারায় তাঁকে ফুঁ দিতে বলছেন।]

শামসু: ইয়ে... অযথা আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন আপনারা। ওকে, নিয়ম সবার জন্যই সমান। আমিও ফুঁ দিচ্ছি...

[অতঃপর বিপিএল আয়োজক কমিটির সভাপতি শামসু ফুঁ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাজিক ফ্যানটি দুর্বার গতিতে ঘুরতে শুরু করল। নো থামাথামি!]
শেষ

No comments

Powered by Blogger.