ছোট্ট মেঘ জানে সে কী হারাল?
ছোট্ট মেঘ। বয়স পাঁচ কিংবা পাঁচের একটু বেশি। মায়াময় মিষ্টি চেহারা। বুদ্ধিদীপ্ত দুটি চোখ, সেই চোখে চঞ্চলতার আভাস। মা মেহেরুন রুনির সঙ্গে দৌড়ে দৌড়ে নানির ইন্দিরার রোডের বাসার চার তলায় ওঠা, আবার নেমে যাওয়া ছিল তার নিত্যদিনের খেলা।
আবার কখনো বাবা সাগর সরোয়ারকে রিকশায় রেখেই দৌড় নানির বাসার দিকে। নানির ফ্ল্যাটের আশপাশের বাসার বাচ্চাগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব, খেলাধুলা। সব সময় ব্যস্ত, প্রাণশক্তিতে ভরা একটি শিশু।
মাহীন সরোয়ার মেঘ নামের এই শিশুটি গতকাল রাতের কোনো একসময় হারিয়েছে তার প্রিয় মা-বাবাকে। বাবা সাগর ছিলেন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক এবং মা রুনি এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক।
আজ সকালে মা-বাবাকে রক্তাক্ত অবস্থায় শোয়ার ঘরে দেখে সে নিজেই নানিকে ফোন করেছে। তার নানি নুরুন নাহার মির্জা বলেন, ‘মেঘ আজ সকাল সাতটার দিকে আমাকে ফোন করে। বলে, মা-বাবা মরে গেছে।’
তখন কী সে একবারও ভাবতে পেরেছে, সে কী হারিয়েছে? সেটা ভাবার মতো বয়স কি তার হয়েছে? খবর পেয়ে সকালে সবাই যখন সাগর-রুনি দম্পতির বাসায় ভিড় করেন, তখন মেঘ অনেকটাই শান্ত হয়ে তাকিয়ে ছিল। পরে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এটিএন বাংলা মেঘের সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। মেঘ তাদেরকে বলেছে, ‘তাদের (দুর্বৃত্ত) হাতে ছুরি ছিল, পিস্তল ছিল। আমাকে গুলি করতে চেয়েছিল।’
এই সাংবাদিক দম্পতি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া বাসায় রহস্যজনকভাবে খুন হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাতের কোনো একসময় সাগর-রুনি দম্পতি খুন হন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
তবে পুলিশ জানায়, সাগর-রুনি দম্পতির ছেলে মেঘ গতকাল স্কুল থেকে পিকনিকে যায়। সে ক্লান্ত থাকায় আগেই নিজের ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে সে মা-বাবার শোয়ার ঘরে গিয়ে তাঁদের রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে নানিকে খবর দেয়।
মেঘের বাবা সাগর সরোয়ার গতকাল রাত একটা পর্যন্ত অফিস করেছেন। তিনি একটার পর বাসায় ফেরেন। মা রুনির সকালে অফিস থাকায় তিনি সন্ধ্যার পর থেকেই বাসায় ছিলেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার বেনজীর আহমদ বলেছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করা হবে। কী কারণে তাঁদের খুন করা হয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।
No comments